অ্যান্ড্রয়েড ১০ এর সুবিধা ও ফিচার
অ্যান্ড্রয়েড ১০ এর সুবিধা ও ফিচার

অ্যান্ড্রয়েড ১০ এর সুবিধা ও ফিচার সমূহের বিস্তারিত ও কার্যকরী তথ্য জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

সেপ্টেম্বরে এন্ড্রয়েড ১০ নামের নতুন অপারেটিং সিস্টেমটি বাজারে এনেছে গুগল। এই এন্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমটিতে লাইভ ক্যাপশন, স্মার্ট রিপ্লাই, সাউন্ড এম্পলিফায়ার, জেস্টার নেভিগেশন, ডার্ক থিম, প্রাইভেসি কন্ট্রোল, লোকেশন কন্ট্রোল, সিকিউরিটি আপডেট, ফোকাস মোড, ফ্যামিলি লিংক সহ অনেক নতুন ফিচার রয়েছে।

যাই হোক, অনেকেই হয়তো নতুন এই এন্ড্রয়েড ১০ এর ফিচার বা সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত এখনো তেমন জানেন না। আজকের আর্টিকেলে আমরা তাই এন্ড্রয়েড ইউজার দের সুবিদার্থে এন্ড্রয়েড ১০ এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

এন্ড্রয়েড ১০ কি?

প্রথমেই জানি,এন্ড্রয়েড ১০ কি? এন্ড্রয়েড ১০ হলো অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের ১০তম রিলিজ বা প্রকাশ এবং ১৭ তম সংস্করণ। এন্ড্রয়েড এর এই সংস্করণ টি প্রকাশিত হয়েছিলো সেপ্টেম্বর এর ৩ তারিখ ২০১৯ সালে।

এন্ড্রয়েড ১০ এর মাধ্যমেই গুগল আনুষ্ঠানিকভাবে এন্ড্রয়েড এর অপারেটিং সিস্টেমের নামকরণে মিষ্টান্নের নাম দেওয়া বন্ধ করেছে এবং এর পরিবর্তে একটি সহজ সংখ্যাসূচক নামকরণ প্রকল্পে স্থানান্তরিত হয়েছে।
যেমন, অ্যান্ড্রয়েড কিউ এর অফিসিয়াল নামকরণ করা হয়েছে বর্তমান “অ্যান্ড্রয়েড ১০” দিয়ে।

হ্যাঁ, এটি কিছুটা অন্যরকম মনে হতে পারে, তবে এই ধরনের নামকরণ সামগ্রিকভাবে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য গুগলের একটি বড় রিব্র্যান্ডের সম্পুর্ন অংশ।

এন্ড্রয়েড ১০ এর ফিচার সমূহঃ

নতুনত্ব, সুরক্ষা এবং গোপনীয়তা এবং ডিজিটাল ভালো থাকাকে কেন্দ্র করে এন্ড্রয়েড ১০ এর নিন্মোক্ত ফিচার বা সুবিধা সমূহ আপনার জানা উচিৎ।

০১। অ্যান্ড্রয়েড ১০ এর সুবিধা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। অর্থাৎ অ্যাপল এবং গুগল উভয়ই সরাসরি তাদের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে আরও অ্যাক্সেসিবিলিটি বৈশিষ্ট্য যোগ করে চলেছে, এটি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক বিষয়।

এন্ড্রয়েড ১০ এর সাহায্যে গুগল লাইভ ক্যাপশনিং নামে কিছু রোল করছে। এটি লাইভ ট্রান্সক্রাইব থেকে আলাদা, গুগল এই বছরের শুরুর দিকে পিক্সেল ফোনে এই রোলটি আউট করে। এন্ড্রয়েড ১০ এর স্মার্ট রিপ্লাই এর এই রোল এর জন্য একটি সিঙ্গেল ট্যাপের সাথে সাথে এখন লাইভ ক্যাপশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে কোন ভিডিও, পডকাস্ট এবং অডিও বার্তাগুলি কোনও অ্যাপ্লিকেশন, এমনকি আপনার নিজের রেকর্ড করা স্টাফগুলিতেও ক্যাপশন দেবে।

এছাড়াও, যখন কেউ আপনাকে কোনও ঠিকানা বা ইউটিউব ভিডিও সহ একটি মেসেজ পাঠায়, আপনি তখন গুগল ম্যাপে এটি সরাসরি খুলতে এবং নেভিগেট করতে পারেন বা ইউটিউবেও ভিডিওটি সরাসরি খুলতে পারেন—এমনকি আপনাকে কোন টেক্সট কপি পেস্ট ও করতে হবে না শুধুমাত্র স্মার্ট লাইভ ফিচারটির কারণে।

এই স্মার্ট লাইভ ওএস- ক্যাপাবল চমৎকার বৈশিষ্ট্যটি সম্পূর্ণ নতুন, স্থানীয় স্পিচ অ্যানালাইজারের উপর নির্ভর করে যা ডিভাইসে বক্তৃতাকে সম্পুর্ন স্বীকৃতি দেয়।

০২। যদি আপনার চোখের উপর আর আপনার ফোনের ব্যাটারির উপর ফোনের উজ্জ্বল আলোর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে চান তাহলে আপনার ফোনের ভেতর অন্ধকার ডেকে নিয়ে আসুন এন্ড্রয়েড ১০ এর ডার্ক থিম দিয়ে। ডার্ক থিমের কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর রঙিন অবজেক্ট গুলো আপনার চোখকে শুধু শান্তিই এনে দিবে না, পাশাপাশি আপনার ফোনের ব্যাটারিটাকেও কম খরচ করতে সাহায্য করবে।

আপনি আপনার পুরো ফোনের জন্য বা ফটো এবং ক্যালেন্ডারের মতো নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য ডার্ক থিম চালু করতে পারেন এন্ড্রয়েড ১০ অপারেটিং সিস্টেম এর সাহায্যে।

০৩। নতুন জেস্টার (অঙ্গভঙ্গি) নেভিগেশন এর মাধ্যমে আপনি এজ টু এজ পর্দার সুবিধা এই অপারেটিং সিস্টেম থেকে নিতে পারেন। সাধারণ এই সোয়াইপগুলির সাহায্যে আপনি পিছনের দিকে যেতে পারেন, হোমস্ক্রিনটি টানতে পারেন এবং খুব সহজেই যে কোন ফাংশনের স্ক্রিনে যেতে পারেন।

০৪। এই অপারেটিং সিস্টেমে, আপনার ফোন সেটিংসের অধীনে একটি নতুন প্রাইভেসি বিভাগে ওয়েব এন্ড এপ এক্টিভিটি এবং এড সেটিংসের মতো গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণগুলি এক জায়গায় পেয়ে যাবেন।এছাড়াও, গুগল প্লে সিস্টেম আপডেটের সাথে, গুরুত্বপূর্ণ সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসির সংস্থাগুলি এখন একইভাবে আপনার অ্যাপ্লিকেশন এ আপডেট করে গুগল প্লে থেকে আপনার ফোনে সরাসরি প্রেরণ করা যাবে।

সুতরাং কোনও সম্পূর্ণ ওএস আপডেটের জন্য অপেক্ষা না করেই এই ফিক্সগুলি এভেলেভেইল হওয়ার সাথে সাথেই আপনি আপনার ফোনে সেগুলির আপডেট পেয়ে যাবেন।

০৫। বর্তমানে ফ্যামিলি লিঙ্ক হলো এন্ড্রয়েড ১০ চালিত প্রতিটি ডিভাইসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাবা মায়েরা এই টুলস গুলো ব্যবহার করে প্রতিদিনের বাচ্চাদের অন স্ক্রিনের সময় সীমা, ডিভাইসের রেস্ট টাইম, নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনের সময়সীমা এবং আরও অনেক কিছু যেমন ডিজিটাল গ্রাউন্ড নিয়ম সেট করতে পারেন। তারা তাদের ডিভাইসে বাচ্চাদের ইনস্টল করা অ্যাপ্লিকেশনগুলির পাশাপাশি বাচ্চারা কিভাবে তা ব্যবহার করছে সেটাও পর্যালোচনা করতে পারেন।

০৬। এই অপারেটিং সিস্টেমে গুগল ফোকাস মোড নামে একটি নতুন বৈশিষ্ট্যে বিটা অ্যাক্সেসের অফার দিচ্ছে, যা ডিজিটাল ওয়েলবাইং এবং ডু নট ডিস্টার্ব এর মধ্যে পাওয়া অ্যাপ টাইমারগুলির একটি অদ্ভুত হাইব্রিড হিসেবে আপনি ইউজ করতে পারবেন।

ফোকাস মোড আপনাকে এমন কিছু অ্যাপের সেটকে কালো তালিকাভুক্ত করতে দেয় যেগুলো আপনি অপ্রয়োজনীয় এবং বিরক্তিকর মনে করেন। তারপরে, আপনি ফোকাস মোড টগল করার সময়, সেই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ধূসর হয়ে যায় এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই এপসগুলি আপনাকে আর কোন নোটিফিকেশন প্রেরণ করবে না এবং আপনি যদি আবার সেগুলি চালু করার চেষ্টাও করেন, আপনি এমন একটি পপ-আপ পাবেন যা মৃদুভাবে আপনাকে পরামর্শ দিবে, “আরে, আপনি না এখনই এই এপস কে ফোকাস করতে চেয়েছেন?”

০৭। এন্ড্রয়েড ১০ প্রফেশনাল হিয়ারিং এইডগুলির জন্য একটি নতুন ধরণের সাপোর্ট অফার করে। যেসব লোকেরা লিসেনিং ডিভাইস পরিধান করে,এপসটি তাদের জন্য দারুণ কাজ করে। এটি স্ট্যান্ডার্ড স্বল্প রেঞ্জের ব্লুটুথ বাদ দিয়ে অন্য কোনও নির্দিষ্ট ব্লুটুথ চ্যানেলের মাধ্যমে ফোনে সংযোগ স্থাপনের কাজটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে। ফলে এন্ড্রয়েড ডিভাইস গুলোতে সংযোগের জন্য এটি আরও বেশী কার্যকর হয় এবং পাশাপাশি এটি ব্যাটারি-বান্ধব ও হয়।

এন্ড্রয়েড ভার্সন কিভাবে আপডেট করবেনঃ

আপনার যদি এন্ড্রয়েড ফোন থাকে তবে আপনি অবশ্যই এন্ড্রয়েড সংস্করণগুলির আপডেট প্রক্রিয়াটির সাথে পরিচিত হবেন। যাই হোক, তবুও চলুন জেনে নেই এন্ড্রয়েড ভার্সন কিভাবে আপডেট করবেন।
প্রথমে, আপনার ডিভাইসের বর্তমান এন্ড্রয়েড সংস্করণটি পরীক্ষা করুন।

আপনি আপনার সেটিংস অ্যাপটিতে আপনার ডিভাইসের এন্ড্রয়েড সংস্করণ নম্বর, সিকিউরিটি আপডেট লেভেল এবং গুগল প্লে সিস্টেম লেভেল খুঁজে পাবেন। যাই হোক, এই আপডেটগুলি এভেইলেভেল হলে আপনি এমনিতেই আপনার ডিভাইসে নোটিফিকেশন পাবেন। এখন আপনি যা করতে পারেন তা হলো, এই আপডেটগুলি কোন অবস্থায় আছে তা চেক করতে পারেন।

এবার এন্ড্রয়েড ১০ আপডেট করুন নিন্মলিখিত উপায়ে-

• আপনার ফোনের সেটিংস এপসটি খুলুন।
• ক্লিক করুন, সিস্টেম >এডভান্সড > সিস্টেম আপডেট।
• আপনার “অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণ” এবং “সিকিউরিটি প্যাচ লেভেল” দেখুন।
• নীচে-ডান কোণায় আপডেটের জন্য চেক আলতো চাপুন এবং চেকটির জন্য অপেক্ষা করুন।
• আপনার সিস্টেমটি আপ টু ডেট হিসাবে বা একটি আপডেট মুলতুবি হিসাবে ফিরতি রিপোর্ট করবে।
• আপনি যদি Wi-Fi এ থাকেন তবে আপডেটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউনলোড হবে। আপনি যে কোনও সময় এটিকে পজ বা বিরতি দিতে পারেন।
• আপনি যদি মোবাইল ডেটাতে থাকেন তবে আপনাকে অবিলম্বে আপডেটটি ডাউনলোড করতে বেছে নিতে হবে।
• একবার আপডেট ডাউনলোড হয়ে ব্যকগ্রাউন্ডে ইনস্টল হয়ে গেলে এন্ড্রয়েড এর এই ভার্সন টি ইনস্টল করতে আপনার ফোনটিকে রিব্যুট করার জন্য একটি নোটিফিকেশন পাবেন।
• ব্যাস,একবার রিব্যুট হয়ে গেলে আপনি এন্ড্রয়েড ১০ এপসটি আপনার ডিভাইসে উপভোগ করতে পারবেন।

পরিশেষে, প্রায় আড়াই বিলিয়ন এন্ড্রয়েড অনুরাগীদের জন্য এন্ড্রয়েড ১০ এর বিভিন্ন সুসংবাদ কিন্তু সহজেই থামছে না।

এই বছরের গোড়ার দিকে, অ্যান্ড্রয়েডের পণ্য পরিচালনার পরিচালক স্টিফানি কুথবার্টসন বলেছিলেন যে তৎকালীন অ্যান্ড্রয়েড কিউ “প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটি উপর ফোকাস করে প্রায় ৫০ টির মতো আরো নতুন বৈশিষ্ট্য এবং পরিবর্তন আনবে”।

তার কথার সত্যতা অনুযায়ী, নতুন প্রাইভেসি এবং সিকিউরিটির বৈশিষ্ট্যগুলির একটা সম্পুর্ণ হোস্ট প্রকৃতপক্ষে এন্ড্রয়েড ১০ রিলিজের অংশ হিসাবে অলরেডি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আপনার ফোনের গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করতে, আপনার ফোনটি কাস্টমাইজ করতে এবং আপনার কাঙ্ক্ষিত ফাংশন গুলো সম্পন্ন করার জন্য সমস্ত নতুন উপায় হলো, এন্ড্রয়েড ১০।  আপনি শুধু একে আপনার চাহিদা মোতাবেক ব্যবহার করুন।

আশা করি, অ্যান্ড্রয়েড ১০ এর সুবিধা ও ফিচার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

আরও জানুন –

এন্ড্রয়েড ফোনের সকল সমস্যা সমাধান ও ১০টি টিপস

অপারেটিং সিস্টেম কি ও কিভাবে কাজ করে বিস্তারিত জানুন

অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার সুবিধা অসুবিধা ও ক্ষেত্রগুলো জেনে নিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here