কাঁচা লবণ খাওয়ার ক্ষতি
কাঁচা লবণ খাওয়ার ক্ষতি

আমরা প্রতিনিয়ত কাঁচা লবণ খাচ্ছি যা দিন দিন শরীরের জন্য ভয়ংকর হচ্ছে। কাঁচা লবণ খাওয়ার রয়েছে অনেক ক্ষতিকর দিক, যা এই আর্টিকেল আমরা বিস্তারিত জানবো।

সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ১ গ্রাম এবং শিশুদের জন্য আরও কম লবণ গ্রহণই যথেষ্ট। কিন্ত আমাদের দেশের অধিকাংশ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানষ গড়ে দিনে ৭-১০ গ্রাম লবণ গ্রহণ করে থাকে। আবার কিছু কিছু মানুষ এর চেয়ে বেশি লবণ খেতে থাকে।

সম্প্রতি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট পরিচালিত প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে লবণ গ্রহণের গড় পরিমান দিনে ১৬ গ্রাম। যা আমদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, দেহের অনেক ক্ষতি করে থাকে। যদি লবণ গ্রহণের পরিমাণ অর্ধেক কমানো যায়, তাহলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের বিশ্বের প্রায় ২৫ লাখ লোকের মৃত্যু প্রতিহত করা সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক দিনে ৬ গ্রাম (এক চা চামচের সমপরিমাণ) বা তারও কম লবণ গ্রহণ করতে পারেন এবং শিশুদের জন্য এই পরিমাণ আরও কম হওয়া বাঞ্ছনীয়। অধিক লবণ গ্রহণের ফলে আমরা যে সকল রোগে ভুগে থাকি তা বর্ণনা নিম্নে দেওয়া হলোঃ

কাঁচা লবণ খাওয়ার ক্ষতিকর দিক গুলো

০১। উচ্চ রক্তচাপঃ

সারা বিশ্বে প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। স্ট্রোক এবং কিডনি রোগের জন্য উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম একটি প্রধান ঝুঁকি। উচ্চ রক্তচাপের হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করা। বিশ্বের যেসব জনগোষ্ঠী লবণ কম খায় তাদের শতকরা ৮০ ভাগের উচ্চ রক্তচাপ থাকে না।

উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ অধিক লবণ গ্রহণের ফলে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে থাকে। লবণ কম গ্রহণ করলে রক্তচাপ কম হয় এবং হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। দীর্ঘদিন যাবত লবণ গ্রহণ করলে তা বৃদ্ধ বয়সে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা প্রতিরোধে সহায়তা করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে বাচ্চাদের কোন ভাবেই অধিক লবণ খেতে দেওয়া যাবে না। কারণ উচ্চ রকচাপ শৈশব থেকেই শুরু হয়। বিশ্বের প্রতি বছর উচ্চ রক্তচাপে ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। এই মৃত্যুর ঝুঁকি কম লবণ গ্রহণ করে অনেক্তা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

০২। হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিওরঃ

করোনারী হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অন্নতম প্রধান কারণ হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের ফলে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে হার্টের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের ফলে আমাদের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় এবং হার্ট অ্যাটাকের এবং হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি বেড়ে যায়। লবণ কম গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে, ফলশ্রুতিতে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি কমে।

০৩। অস্টিওপোরোসিসঃ

হাড়ের কার্যক্ষমতার জন্য ক্যালসিয়াম অপরিহার্য উপাদান। হাড়ের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে লবণ গ্রহণের একটা বিরাট ভুমিকা আছে। অধিক লবণ গ্রহণের প্রস্রাবের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম নির্গমন বাড়িয়ে দেয়। ফলে আমাদের হাড়ের ক্যালসিয়াম ক্ষয়ে হাড় পাতলা হয়ে যায় যাকে অস্টিওপোরোসিস বলে।

০৪। পাকস্থলীর ক্যান্সারঃ

অধিক লবণ গ্রহণের ফলে পাকস্থলীর ত্বক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ফলশ্রুতিতে Helicobacter Pylori নামে এক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকশন হতে পারে। যার দরুন পাকস্থলীর আলসার এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার হয়। যেসব দেশের জনগোষ্ঠী বেশি লবণাক্ত খাদ্য গ্রহণ করে, তাদের মধ্যে পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতার হাড় অধিক থাকে।

০৫। কিডনি রোগঃ

উচ্চ রক্তচাপ মূত্রে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যা কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করার জন্য একটা প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান। যারা কিডনি রোগী, অধিক লবণ গ্রহণ তাদের রোগকে বাড়িয়ে দেয়। যেহেতু অতিরিক্ত লবণ প্রস্রাবের মাধ্যমে ক্যালসিয়ামের নির্গমন বাড়িতে দেয় সেহেতু অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের কারনে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। এছাড়া অধিক লবণ গ্রহণের শারীরিকভাবে স্থুল হওয়ার প্রবণতা বাড়ে এবং অ্যাজমার উপসর্গসমূহ বৃদ্ধি পায়।

কিভাবে আমরা অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করে থাকিঃ

আমাদের খাদ্যভ্যাসে কিছু বিষয় অতঃপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে। যা নিছক অভ্যাস কিংবা শখ। যেমন টেবিলে লবণদানি রাখা। ভাত-তরকারীর সাথে একটু আলগা লবণ অধিকাংশ লোকেরই খুব পছন্দ। অনেকের আবার খাওয়া শুরু করার পূর্বেই জিহ্বাতে একটু লবণ দিয়ে নেয়। তরকারি রান্না করার সময় একটু যেন বেশিই লবণ আমরা ব্যবহার করে থাকি। এছাড়া খাবারকে সুস্বাদু করার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের উপাদান যেমন – কেচাপ, সয়া সস, টেস্টিং সল্ট, সালাদ বানালে উপকরণ ব্যবহার করি। যেগুলোর মধ্যে অনেক লবণ থাকে।

লবণের কাজ খাদ্যকে পচন থেকে রক্ষা করা। এজন্য প্রক্রিয়াজাত এবং সংরক্ষিত খাবারে অধিক লবণ থাকে। বর্তমানে ব্যস্ত জীবনযাত্রার জন্য অনেকে বাজার থেকে উচ্চ লবণযুক্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার কিনে আনেন। শুঁটকি মাছ, নোনা ইলিশ মাছে প্রচুর লবণ থাকে। আমরা সিদ্ধ ডিম কিংবা বিভিন্ন কাঁচা ফলমূল খেতে গেলে লবণ দিয়ে খাই, যার কোন প্রয়োজন নেই। মোট কথা, লবণ খাওয়া নিয়ে আমরা তেমন চিন্তাই করি না। শুধু জিহ্বার স্বাদের জন্য আমরা আমদের মারাত্মক ক্ষতি ডেকে এনে থাকি।

চাইনিজ, ফাস্টফুড, সূপ, তেলে ভাজা খাবার, কাবাব সহ বিভিন্ন মজাদার খাদ্যে এত বেশি লবণ থাকে যে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি কর।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কিছু চাইনিজ খাবারে ২০ গ্রামেরও বেশি লবণ থাকে অর্থাৎ প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণের কয়েক গুণ। আমরা আমদের প্রিয় অনেকে খাবারই খুব তৃপ্তির সাথে খেয়ে আসি এবং এই সকল খাবারে লবণের পরিমাণটা আমাদের সরিএর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এভাবে আমরা ঘরে বাইরে বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করে আমরা নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকি এবং অসুস্থ জীবন যাপন করি।

কিভাবে কাঁচা লবণ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করবোঃ

একটু সদিচ্ছা থাকলেই অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

০১। খাবারের সাথে আবার অতিরিক্ত লবণ একদমই খাবেন না।
০২। টেবিলে লবণদানি রাখা আজ থেকে বিরত থাকুন।
০৩। রান্না করার সময় খাবারে অল্প লবণ গ্রহণ করুন।
০৪। ফাস্টফুড, রেস্টুরেন্ট এবং ক্যান্টিনের খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
০৫। এবং শুঁটকি মাছ, আচারজাতীয় খাবার কম খান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here