আপেল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে হইতো কিছু জানেন, এইজন্যই মাঝে মাঝে আপেল খেয়ে থাকেন তাই না। প্রকৃতপক্ষে, এটির আশ্চর্যজনক উপকারিতা সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা আমাদের অনেকেরই নেয়। আর এইজন্যই নিয়মিত খাই না, খাওয়ার তেমন গুরুত্ব ও দেয় না।
আসলে আমরা প্রতিদিন কত কিছুই না খেয়ে থাকি। হোটেল, রেস্টুরেন্ট গেলেই কত ধরনের খাবার খেয়ে থাকি, রাস্তায় আড্ডা দিতে বসলেই চা, কফি খাওয়া শুরু করে দেই আরও নানান কিছু। অবশ্যই খাবেন এইসব, তবে একটু চিন্তা করা উচিত আপনি কি আদৌ জানেন, এই খাবার গুলো স্বাস্থ্যকর কিনা, এইসব খাবার খেলে শরীরে পুষ্টি যোগায় কিনা, শরীর ও মন শক্ত, সবল ও সতেজ রাখে কিনা?
অবশ্যই আপনাকে এই ব্যাপার গুলো ভালোভাবে জানা উচিত, অর্থাৎ স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করতে হবে, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, শরীর ভালো রাখার জন্য। আশা করি বুঝতে পারছেন কি বুঝাতে চেয়েছি। শরীর ও মন ভালো, সুস্থ্য রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে প্রতিদিন। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে গরুর দুধ, পেয়ারা, আপেল ও অন্যান্য কিছু ফল গুলো অন্যতম। যদি প্রতিদিন ১ টি করে আপেল খেতে পারেন, তাহলে শরীর স্বাস্থ্য অনেক উন্নতির দিকে ধাবিত হবে।
এখানে আপনি জানতে পারবেন একটি আপেলে কেমন পুষ্টি রয়েছে এবং কি পরিমাণ উপকারিতা পাওয়া যায়। তাহলে শুরু করা যাক –
আপেল খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
০১। শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে।
০২। পানি শূন্যতা দূর করে।
০৩। ত্বক ভালো ও সুস্থ রাখে।
০৪। হজম ক্ষমতা বাড়ায়।
০৫। ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
০৬। পাকস্থলি ও লিভার সুস্থ রাখে।
০৭। ওজন কমাতে সাহায্য করে।
০৮। দাঁত মজবুত ও পরিষ্কার করে।
০৯। হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
১০। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আপেল খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ও প্রয়োজনীয় তথ্য নিচে দেওয়া হয়েছে।
০১। শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে।
দেহের জন্য আপেল খাওয়ার উপকারিতা অনেক এটি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে শক্তি অপচয় করতে হয় এবং করে থাকি। তাই শরীরের শক্তি বজায় রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত প্রতিদিন। পুষ্টিকর খাবার গুলোর মধ্যে আপেল ও রয়েছে।
এটিতে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, খাদ্য শক্তি, আমিষ, শর্করা, ফাইবার, চর্বি ও ফসফরাস। অর্থাৎ আপেলে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান থাকার ফলে দেহের শক্তি বৃদ্ধি সহ অনেক উপকার করে।(সূত্রঃ উকিপিডিয়া) তাই যারা সারাদিন বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে, তাদেরকে নিয়মিত ১ টি করে আপেল খাওয়া উচিত। বিশেষ করে ছেলেদের প্রতিদিন ১ টি করে আপেল অবশ্যই খাওয়া দরকার।
০২। পানিশূন্যতা দূর করে।
পানি সবারই দরকার হয়, দৈনিক ন্যূনতম ২ লিটার পানি পান করা উচিত একজন সুস্থ মানুষের। আপেল পানিশুন্যতা দূর করতে এবং তৃষ্ণা মিটাতে সাহায্য করে। কারণ এটি একটি পানি জাতীয় ফল, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। পানিশূন্যতার কারনে অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এবং এটি পানিশূন্যতা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
একটা কথা মনে রাখবেন, পানি জাতীয় খাবারের পর অর্থাৎ যেসব খাবারে পানি রয়েছে, তাঁর সাথে যদি আবার পানি খাওয়া হয়, তাহলে সামান্য সমস্যা হবে। শরীর থেকে পিএইচ মাত্রা কমে যায় এবং এর ফলে হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। তাই সবসময় চেষ্টা করবেন যেসব খাবারে পানি রয়েছে তাঁর সাথে সাথে পানি না খাওয়া।
শরীরের পানিশূন্যতার দূর করবে যেসব খাবার জানতে এখানে ক্লিক করুন!
০৩। ত্বক ভালো ও সুস্থ রাখে।
আপেল ত্বক নরম, মসৃণ ও ভালো রাখতে সহায়তা করে। বিভিন্ন চিকিৎসকরা বলে থাকে, মুখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ত্বক মলিন ও মসৃণ রাখতে আপেল অনেক কার্যকরী ও বিশেষ ভূমিকা রাখে।
এবং নিয়মিত আপেল খেলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে ও সাহায্য করে। তাই কেনই বা আপেল নিয়মিত খাবেন না। ত্বক ভালো রাখতে সবাই চাই, সুস্থ সুন্দর এর জন্য আমরা অনেক উপায় অবলম্বন করে থাকি। কিন্ত দৈনিক মাত্র ১টি পরিষ্কার ফরমালিন মুক্ত আপেল যদি খান, তাহলে এটিই আপনাকে ভালো ও সুস্থ রাখতে অনেকখানি ভূমিকা রাখবে।
০৪। হজম ক্ষমতা বাড়ায়।
আপনি কী খাবার হজম হওয়া নিয়ে চিন্তায় আছেন, খাদ্য ঠিক মতো হজম হচ্ছে না? তাহলে প্রতিদিন নিয়মিত ১ অথবা ২ টি করে আপেল খান, দেখবেন হজম ক্ষমতা খুব সহজেই বৃদ্ধি পাবে। সবুজ বা লাল আপেলে থাকে অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদান।
এই বিভিন্ন উপাদান গুলো শরীর সুস্থ্য, সতেজ ও ভালো রাখার এক এক ধরনের কাজ করে থাকে। হজম ক্ষমতা বাড়লে, আপনার শরীর সুস্থ্য থাকবে এবং মুখের রুচিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। আর হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য ১টি আপেল সকালে উঠে খেতে পারেন, অনেক কার্যকর উপকার পাবেন।
০৫। ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
অনেক ধরনের ক্যানসার হয়ে থাকে, আপেল ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে সাহায্য করে থাকে। আপেলের মধ্যে পেকটিন জাতীয় একটি উপাদান থাকে, এছাড়াও আরও অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। ফলে ব্রেস্ট ক্যানসার সহ আরও কিছু ক্যানসার দূর করতে সহায়তা করে। তাই ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি ১/২ টি করে আপেল খেতে পারেন।
০৬। পাকস্থলি ও লিভার সুস্থ রাখে।
যেহেতু আপেল একটি পানি জাতীয় খাবার, সেহেতু পাকস্থলী ও লিভার সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে। পাকস্থলী অসুস্থ হয়ে গেলে, বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। বর্তমানে অনেক ধরনের খাবার অপরিষ্কার থাকে, এবং আমরা এই অপরিষ্কার খাবার গুলোি খেয়ে থাকি বেশি, ফলে পাকস্থলী ও লিভার অসুস্থ করতে পারে। এছাড়াও আরও কারণে এইসব নষ্ট হতে পারে।
যদি পাকস্থলী ও লিভার অসুস্থ থাকে, তাহলে আপনি কখনই স্বাস্থ্যবান হতে পারবেন না। শরীরের ফিটনেস উপযুক্ত রাখতে পারবেন না। তাই অবশ্যই প্রতিদিন ১/২ টি করে ভালো ও স্বাস্থ্যকর আপেল খাওয়া উচিত। এটি পাকস্থলী ও লিভার পরিষ্কার রাখতে যতেষ্ট ভূমিকা রাখে।
০৭। ক্যানসার প্রতিরোধ করে।
অনেক ধরনের ক্যানসার হয়ে থাকে, আপেল ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করে সাহায্য করে থাকে। আপেলের মধ্যে পেকটিন জাতীয় একটি উপাদান থাকে, এছাড়াও আরও অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। ফলে ব্রেস্ট ক্যানসার সহ আরও কিছু ক্যানসার দূর করতে সহায়তা করে। তাই ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি ১/২ টি করে আপেল খেতে পারেন।
০৭। ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপেল যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ওজন কমানোর চেষ্টা কারী কিন্ত কম নয়, প্রচুর মানুষ রয়েছে যারা ওজন কমানোর জন্য অনেক চেষ্টা করছে। অনেকে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করছে, রওিং মেশিন, ট্রেডমিল মেশিন, এবি মেশিন এবং বিভিন্ন ধরনের ওজন কমানোর চাইকেল ক্রয় করছে, ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছে।
কিন্ত আপনি কি জানেন কিছু আপনার ওজন খাবারের মাধ্যমে খুব সহজেই কমাতে পারবেন। ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনেক খাবার রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আপেল। প্রতিদিন যদি ১/২ টি করে আপেল খেতে পারেন, তাহলে আপনার ক্ষুধা কমে যাবে, যার ফলে খাবার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এবং শরীর, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অনেক ভূমিকা রাখবে, ওজন কমে যাবে।
ওজন কমানোর ১০টি কার্যকারী খাবার সম্পর্কে জানতে, এখানে কিল্ক করুন!
০৮। দাঁত মজবুত ও পরিষ্কার করে।
দাঁত সাদা, শক্ত ও মজবুত রাখতে অনেক খাবারই ভূমিকা রাখে। তবে তাঁর মধ্যে আপেল হচ্ছে অন্যতম। যখন আমরা আপেল চিবাতে শুরু করি, তখন দাঁতের কোণায় থাকা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া গুলো বেরিয়ে আসে। ফলে দাঁত ক্ষয় হওয়ার সম্ভবনা কমে যাই, পরিষ্কার ও সাদা ঝকঝকে হয়ে যাই। দাঁত সুন্দর, পরিষ্কার, শক্ত, সুস্থ ও ঝকঝকে রাখতে আপেল যতেষ্ট ভূমিকা রাখে।
০৯। হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে।
হার্ট ভালো রাখতে বিরাট ভূমিকা রাখে আপেল। প্রতিদিন ১/২ টি করে ভালো ও পরিষ্কার আপেল খেতে পারলে হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। আমরা প্রায় অনেকেই হার্টের সমস্যায় সম্মুখীন হয়। আর সমাধানের জন্য আমরা ডাক্তারের কাছে যাই এবং আরও কত কি করে থাকি। তবে ডাক্তাররাই পরামর্শ দিয়ে থাকে ভালো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার জন্য।
হার্ট সুস্থ রাখার জন্য কিছু খাবারের কথা ও বলে থাকে, আর সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আপেল। তাহলে বুঝতেই পারছেন আপেল ফলের গুরুত্ব কতটুকু, কেন প্রতিদিন আপেল খাওয়া উচিত। তবে সবসময় চেষ্টা করতে ভালো মানের আপেল গুলো কিনার জন্য, অর্থাৎ ফরমালিন মুক্ত আপেল ক্রয় করতে হবে, যেন খেলে আবার উপকারের চেয়ে অপকার না হয়।
১০। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রায় অনেক খাবারই আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করে থাকে। তার মধ্যে আপেল অন্যতম, কারন এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানের ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আরও অনেক অনেক স্বাস্থ্যকর উপাদান। ফলে অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম।
ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি, প্রতিদিন ১/২ টি পরিষ্কার ও ফরমালিন মুক্ত ভালো আপেল খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে, দাঁত মজবুত ও ত্বক ভালো রাখে, পানি শূন্যতা দূর করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং আরও অনেক উপকার হয়ে থাকে।
শেষ কথাঃ
যেকোনো বয়সের মানুষ আপেল খেতে পারেন, তবে বিশেষ করে বেড়ে উঠা ছেলে মেয়েদের জন্য অবশ্যই নিয়মিত খাওয়া উচিত। খুব ভালো এবং স্বাস্থ্যকর খাবার এটি, দেহের অনেক সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করবে। আপেল খাওয়ার সময় কখন, অনেকেই জিজ্ঞাসা করতে পারেন? আসলে আপেল সবসময় খেতে পারেন কোন সমস্যা নাই, তবে রাতে খেতে পারলে সবচেয়ে ভালো অথবা সকালে ঘুম থেকে উঠেও খেতে পারেন।
আরও জানুন –
পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর সহজ ৫টি উপায়
শরীরের যত্ন নেওয়ার ১০টি পরামর্শ
চুলের যত্ন নেওয়ার কিছু প্রয়োজনীয় টিপস