আমরা অনেকেই জানি, প্রতিদিন সকালে ১টি সেদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে যথেষ্ট। তারপরেও আমাদের মধ্যেই প্রচুর লোক আছে যারা সকালে ডিম খেতে পছন্দ করে না। বিভিন্ন সমস্যা, অহেতুক কারণ দেখিয়ে অনেকে তো আবার ডিম খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে।
কিন্ত ডিমের রয়েছে অনেক কার্যকরী উপকারিতা। যা আমাদের শরীর সুস্থ, সুন্দর, সবল ও শক্তিশালী করার জন্যে খুব দরকার। আমরা অনেকেই ব্যস্ততার কারণে সকালের নাস্তা ঠিকমত খাই না। ভালো করে নাস্তা না করতে পারলেও অন্তপক্ষে ১টি সেদ্ধ ডিম খেয়ে বাহিরে বের হওয়া উচিত। এর ফলে দেহে পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যাবে। যা আপনার কার্যক্ষমতা বাড়াবে কয়েকগুণ।
আচ্ছা যারা সকালে ডিম খাচ্ছেন না, অনেকে খাওয়াই ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্ত আপনারা কি আসলেই জানেন ডিমের উপকারিতা বা অপকারিতা কতটুকু? প্রতিদিন সকালে ডিম খেলে কি হয়?
ডিম সম্পর্কে আগে আপনাকে ভালো করে জানা প্রয়োজন। তারপর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা কতটুকু। এখানে আপনি জানতে পারবেন প্রতিদিন সকালে ১ টি সেদ্ধ ডিম খাওয়া ৫টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা। যা প্রত্যেকটা মানুষের জানা দরকার। বিশেষ করে বেড়ে উঠা ছেলে মেয়েদের, যদি শরীরের ফিটনেস উপযুক্ত ও ভালো রাখতে চান। তাহলে শুরু করা যাক।
ভাঁজা ডিম খাবেন নাকি সেদ্ধ খাবেন, কখন খাবেন?
অবশ্যই সব সময় চেষ্টা করবেন প্রতিদিন সকালে খুব বেশি না ১টি করে সেদ্ধ ডিম খাওয়ার জন্য। ভাঁজা ডিম খেলে ও সমস্যা নাই এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। ভাঁজা ডিম অনেকটা রুচিশীল, খেতে ভালো লাগে কিন্ত সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা ও কার্যকারীতা ভাঁজা ডিমের চেয়ে অনেক গুন বেশি।
সকালে অথবা রাতে খেতে পারলে উপযুক্ত ফল পাবেন, সঠিক ও কার্যকরী উপকার হয়। তবে সকালে খেতে পারলেই সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাই। অর্থাৎ সবসময় সকালে একটি সেদ্ধ ডিম খাবেন যদি স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চান। এবং বিশেষ করে নিচের গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা যদি গুলো পেতে চান। একটা সেদ্ধ ডিমে রয়েছে অনেক ধরনের ভিটামিন, অ্যামিনো অ্যাসিড, ফ্যাট, প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম সহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা সহজেই শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখে সাহায্য করে।
আসলে একটা সেদ্ধ ডিম কম বেশি অনেক ধরণের উপকার করে থাকে। তবে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি উপকার গুলো তুলে ধরা হয়েছে, যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং আপনার জীবনকে করবে আরও স্বাস্থ্যবান, সুখী ও সুন্দর।
সেদ্ধ ডিম খাওয়ার ৫টি উপকারিতা
০১। শরীরে শক্তি ও হজম ক্ষমতা বাড়ায়
০২। মাংস পেশি গঠন ও হাড় মজবুত রাখে।
০৩। চোখের ভালো রাখে ও জ্যোতি বৃদ্ধি করে।
০৪। ওজন কমাতে সাহায্য করে।
০৫। চুল ও ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে।
০১। শরীরে শক্তি ও হজম ক্ষমতা বাড়ায়।
শরীরে শক্তি ও হজম ক্ষমতা বাড়াতে অনেক খাবারই রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রতিদিন সকালে ১টি সেদ্ধ ডিম খাওয়া। ডিমে রয়েছে প্রচুর ভিটামিনসহ আরও অনেক পুষ্টিকর উপাদান যা খুব সহজেই শরীরের শক্তি ও হজম ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত সকালে একটি করে সেদ্ধ ডিম খেতে পারলে শরীর স্বাস্থ্য অনেক খানি ভালো রাখে। সারাদিন সুস্থ ও সবল ভাবে চলার ক্ষেত্রে এটি বিরাট ভূমিকা রাখে।
এটিতে আছে ভিটামিন বি ১২, যা সব খাবারকে শক্তিতে রুপান্তর করে এবং হজমের ক্ষমতা অনেক গুণ বাড়ায়। তাই সবারই উচিত সকালের নাস্তায় একটা করে সেদ্ধ ডিম রাখা। নাস্তা না খেতে পারলেও একটা ডিম অবশ্যই খাওয়া দরকার।

০২। মাংস পেশী গঠন ও হাড় মজবুত রাখে।
মাংস পেশী গঠনে ও সেদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। আজকার প্রায় সবাকেই পেশির ব্যথা সহ্য করতে হয়। আপনি কি জানেন, এই অসহনীয় ব্যথা থেকে মুক্তির উপায় হতে পারে ১টি সেদ্ধ ডিম।
এটির রয়েছে প্রায় ৬/৭% প্রোটিন, এছাড়া ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন রয়েছে পর্যাপ্ত। এর ফলে দেহের মাংস পেশি গঠন করতে ও হাড় শক্ত, মজবুত রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এবং এটিতে আছে ভিটামিন ডি, এবং ক্যালসিয়াম যা দাঁত ও হাড় ভালো রাখে । শুধু তাই নয়, ভিটামিন ডি খাবার থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহন করতে অনেক সহায়তা করে। এবং এটির রক্তের মাত্রা সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
যার ফলে হাড়ের ক্ষয় কম হয় মাংস পেশির গঠন করে এবং সহজেই শরীরকে সুস্থ, সবল রাখে। তাই চেষ্টা করবেন নিয়মিত সকালে ১ সেদ্ধ ডিম খাওয়া।

০৩। চোখ ভালো রাখে ও জ্যোতি বৃদ্ধি করে।
চোখের ভালো রাখতে, দৃষ্টিশক্তি এবং জ্যোতি বাড়াতে ডিমের অবদান অনেক। তাই নিয়মিত সকালের নাস্তায় ডিম রাখুন, চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করুন।
আমরা সবাই জানি ভিটামিন এ রাতকানার ঝুঁকি প্রতিরোধ করে। ভিটামিন এ রেটিনায় আলো শুষে নিতে যথেষ্ট সহায়তা করে এবং রাতকানার ঝুঁকি প্রতিরোধ করে।
অর্থাৎ চোখ সুস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে ভিতামিন এ। একটা সেদ্ধ ডিমে থেকে প্রায় ৭০-৭৫ মি. গ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যাই। যেহেতু ডিমে রয়েছে ভিটামিন এ, সেহেতু নিঃসন্দেহে চোখের জন্য অনেক ভালো ও জ্যোতি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এবং এটিতে রয়েছে আরও পুষ্টিকর উপাদান, যা চুখের জন্য খুবই উপকারি, চোখের ছানি পড়া রোধ করে। (সূত্রঃ উকিপিডিয়া) তাই কেনই বা ডিম খাচ্ছেন না।

০৪। ওজন কমাতে সাহায্য করে।
আমরা অনেকেই জানি না যে, ডিম আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। বেশ কিছু বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন ডিমের প্রধান গুণই হচ্ছে ওজন কমানো। আবার কিছু মানুষ বলে থাকে, ওজন বাড়ানোর জন্য ডিম খেতে। প্রকৃতপক্ষে সকালে একটি ডিম খেলে সারাদিনের ক্ষুধা কমে যাই, যার ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হই না। অতিরিক্ত খাবার না খেলে ওজন সঠিক এবং খুব নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে খুব সহজেই আপনি ওজন কমাতে পারবেন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
একটা সেদ্ধ ডিম শরীর থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালরি কমাতে পারে। অনেক সমিক্ষা ও বিশেষজ্ঞরা বলছে, নির্দিষ্ট পরিমাণে দেহের ওজন, দেহের ফ্যাট এবং কোমরে জমে থাকা মেদের পরিমাণ কমাতে ডিম বিরাট ভূমিকা রাখে। তাই যদি আপনি ওজন কমানোর উপায় খুঁজে থাকেন, ডিম খেতে পারেন এটি আপনাকে বিশেষ সাহায্য করবে।
আরও জেনে নিন ওজন কমাতে সহায়তা করে যে খাবারগুলো, এখানে কিল্ক করুন!

০৫। চুল ও ত্বক ভালো রাখতে সহায়তা করে।
চুল ও ত্বকের জন্য অনেক কার্যকরী খাবার রয়েছে। সেই তালিকাই ডিমও আছে। অর্থাৎ চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে ডিম যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। প্রোটিন এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ত্বক ও চুলের জন্য অনেক কার্যকরী, চুলের পুষ্টি যোগায়। যেহেতু ডিমে আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ক্যালসিয়াম ও প্রোটিন, সেহেতু চুলের জন্য ডিম অনেক উপকারি। এবং ডিমের কুসুম চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অনেক সহায়ক।
চুলের যত্নের জন্য ডিম অনেক ভাবে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ ডিম ভেঙ্গে সাথে আরও কিছু কার্যকরী উপাদান দিয়ে, ভালো ভাবে মিশিয়ে ও চুলের জন্য ব্যবহার করা যায়। যার ফলে চুলের উজ্জ্বল বহুগুণে বৃদ্ধি পায় ও ভালো থাকে।
এছাড়াও নিয়মিত একটা সেদ্ধ ডিম খেলেও উপকার পাওয়া যাই। এবং চুল ও ত্বকের জন্য ও ভালো কাজ করে। তাহলে বুঝতেই পারছেন মাত্র ১টি সেদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা কত!

শেষ কথাঃ
সেদ্ধ ডিম নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উপকারি ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার। এবং সব বয়সের মানুষের জন্যই এটি অনেক সহায়ক, বিশেষ করে বেড়ে উঠা ছেলে মেয়েরদের জন্য সবচেয়ে বেশি কার্যকারী। ডিমে থাকা যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের কারণে, এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন অনেক চিকিৎসকরায় সকালের নাস্তার তালিকায় একটি করে সেদ্ধ ডিম রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ডিম খাওয়া নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের মতবাদ ও পরিবর্তন হয়েছে, অর্থাৎ ডিম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এই মতে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। তাইতো শরীর সুস্থ সবল ও উপযুক্ত রাখতে ডিমের ভূমিকা অপরিসীম। এইজন্য প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকেই উঠেই নাস্তার সাথে একটা সেদ্ধ ডিমের ব্যবস্থা করবেন।
আরও জানুন –
চুলের পুষ্টি ও উপকারের জন্য ১০টি খাবার
প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত ও এর উপকারিতা
২০টি শাক সবজির গুণাগুণ ও উপকারিতা