মাছ খাওয়ার উপকারিতা
মাছ খাওয়ার উপকারিতা

মাছ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে যথেষ্ট আমরা জানি, এছাড়াও অতিরিক্ত মাছ খাওয়ার রয়েছে কিছু ক্ষতিকর দিক। বিস্তারিত ও কার্যকরী তথ্য জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

মাছ আমাদের দেশের প্রধান খাবার হিসেবে পরিচিত। মাছে ভাতে বাঙালি এ দেশের প্রচলিত ও জনপ্রিয় একটি প্রবাদ। মাছ মানবদেহে অন্যতম আমিষ যোগানদাতা। মাছে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। মাছে এত পরিমাণ পুষ্টিগুণ থাকে যে, সাস্থ্য রক্ষায় এটির ভূমিকা অতুলনীয়।

মাছে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন সহ যথেষ্ট পরিমাণ চর্বি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস ইত্যাদি কার্যকরী উপাদান।

মাছ খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে অনেক আবার পাশাপাশি অতিরিক্ত মাছ খাওয়ার রয়েছে কিছু ক্ষতিকর দিক। মাছ খাওয়ার আগে উপকার ও ক্ষতিকর দিক গুলো অবশ্যই জানা জানা দরকার।

মাছ খাওয়ার উপকারিতা

০১। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।

আমরা জানি, ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। অর্থাৎ ভিটামিন এ অভাবে দৃষ্টিশক্তি লোপ পায় ও কমে যায়। ছোট মাছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ রয়েছে। যা রাতকানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাছে থাকা ওমেগো থ্রি ফ্যাটি এসিড দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বেড়ে উঠা ছেলে মেয়েদের নিয়মিত মাছ খেতে দিন বিশেষ করে ছোট মাছ। ওমেগো থ্রি ফ্যাটি এসিড মনোযোগ এবং বুদ্ধি বাড়াতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে।

০২। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।

বিভিন্ন ধরনের মাছে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ, যা আমাদের শরীরের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন। সামুদ্রিক মাছেও রয়েছে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর উপাদান। নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ খেলে শরীরে ডিএইচএ ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। এই উপাদানটি ফ্যাটি এসিড উন্নতিতে ভালো কাজ করে। যা স্মৃতিশক্তি এছাড়া ছোট মাছ খেলেও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। তাহলে বেড়ে উঠা ছেলে মেয়েদের ছোট মাছ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।

০৩। প্রস্টেট ক্যান্সার দূর করে।

বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার দূর করতে মাছ যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। লো ফ্যাট’ ডায়েট অনুসরণ করার পাশাপাশি প্রতিদিন যদি সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যায়, তাহলে প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। এইজন্য নিয়মিত খাবারের তালিকায় মাছ রাখার চেষ্টা করতে হবে।

০৪। মানসিক চাপ কমায়।

বর্তমানে মানসিক অবসাদ বেড়েই চলছে। বিশেষ করে বেড়ে যাদের বয়স কম তারাই সবচেয়ে বেশি ড্রিপেশনের শিকার। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আমাদের দেহের অনেকটা ক্ষতি করে। মানসিক চাপ কমাতে মাছ এক অনন্য ভূমিকা রাখে। মাছের ‘ওমেগা থ্রি’ ফ্যাটি এসিড শরীরে প্রবেশ করার পর ‘ফিল গুড’ হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে মানসিক চাপ কমতে থাকে দ্রুত; সেই সঙ্গে মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এই সমস্যা কমাতে নিয়মিত মাছ খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলুন।

০৫। স্টোক প্রতিরোধ করে।

স্টোক একটি মারাত্মক সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অন্তত সপ্তাহে একদিন মাছ খান তাদের স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা ১৩ শতাংশ কম, যারা মাছ একবারেই খান না তাদের তুলনায়। যদি প্রতিদিন অল্প পরিমাণ মাছ খান, তাহলে স্টোক হওয়ার সম্ভবনা অনেক খানি কমে যাবে।

০৬। হার্ট ভালো ও সুস্থ রাখে।

হার্ট ভালো ও সুস্থ রাখতে মাছের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অপরিসীম। আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ হার্টের সমস্যায় ভুগেন। এবং প্রতিনিয়ত হার্টের রোগীর বেড়ে চলছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনি প্রতিদিন ছোট মাছ খেতে পারেন। মাছে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সালফারসহ নানান ধরনের উপাদান যা হার্টের অনেক জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত। অ্যামেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, যারা নিয়মিত মাছ খেয়ে থাকেন, তাদের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৫০% কমে যায়।

০৭। ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে।

দৈনন্দিন আমাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী মা এবং প্রসূতি মায়েদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা আরও বেশি। হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত দরকারি। শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না থাকলে, দেহ দুর্বল হয়ে যাবে ও ক্লান্তি চলে আসবে। ছোট মাছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম রয়েছে। কাঁটাসহ ছোট মাছ কালসিয়ামের এক অনন্য উপাদান। মলা, ঢেলা, চাঁদা, ছোট পুঁটি, ছোট চিংড়ি, কাচকি ইত্যাদি জাতীয় মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে। এইজন্য প্রতিদিন ছোট মাছ স্বল্প পরিমাণ হলেও খাওয়া উচিত।

০৮। ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করে।

সুস্থ, সুন্দর ও সবল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য ভিটামিন ডি আমাদের জন্য অপরিহার্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভিটামিন ডি প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমানে প্রয়োজন। মাছে অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি যথেষ্ট ভিটামিন ডি রয়েছে। এই ভিটামিন হাড়কে শক্ত করার পাশাপাশি আরও অনেক ধরনের উপকার করে থাকে। বিশেষ করে ছোট মাছ গুলোতে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত অল্প পরিমাণ করে মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।

অতিরিক্ত মাছ খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিক

মাছ খাওয়ার যেমন উপকারিতা রয়েছে, ঠিক তেমনি অপকারিতা বা কিছু ক্ষতিকর দিক ও রয়েছে। আসলে নানান প্রজাতির মাছ রয়েছে, এক এক মাছে এক এক রকম পুষ্টিগুণ রয়েছে। কিছু মাছ আছে যা শরীরের অনেক উপকার করে থাকে, সুস্থ থাকার জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখে আবার কিছু তেমন উপকারি নয়। তবে মাছ অতিরিক্ত খেলে অনেক সমস্যা ও হয়ে যেতে পারে।

অতিরিক্ত মাছ খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিক
অতিরিক্ত মাছ খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিক

অতিরিক্ত মাছ খাওয়ার ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং কখন খাওয়া যাবে না, সেই সম্পর্কে জানবো।

• গর্ভাবস্থায় সামদ্রিক মাছ খেলে এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

• এক গবেষণায় দেখা যায়, হাঙ্গর, সোর্ডফিশ, টুনাসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছে অতিরিক্ত পরিমাণে পারদসহ অন্যান্য খনিজ পদার্থ থাকে, যা দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

• এই ধরনের মাছে কিছু বিষাক্ত উপাদান থাকে যা ছোট শিশু ও বাচ্চাদের স্নায়ুতন্ত্র গঠনে সমস্যা করে থাকে।

• অরিতিরিক্ত মাছ খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আমরা জানি মাছে যথেষ্ট ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় যা শরীরের জন্য অনেক উপকারি। কিন্ত তারপরেও অতিরিক্ত খেলে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা পাল্টে যেতে পারে। এর ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে।

এইজন্য অবশ্যই আপনাকে মাছ খাওয়ার ব্যপারে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। কোন মাছ কি উপাদান আছে এবং কোন মাছে কি পুষ্টিগুণ এই সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। পরিশেষে বলতে চাই, ভালো ও সুস্থ মাছ দেখে শুনে খাবেন, তবে অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

আশা করি, মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন।

আরও জানুন –

কোন মাছে কি গুণাগুণ ও পুষ্টিগুণ আছে জেনে নিন

টমেটো খাওয়ার ৭টি বিস্ময়কর উপকারিতা

ভিটামিন এ রয়েছে যেসব খাবারে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here