বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
বাদাম

আমরা অনেকেই হইতো কিছু জানি বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে, এককথায় অসাধারণ। বাংলাদেশের মধ্যে বাদাম অতি জনপ্রিয় স্বাস্থ্যসম্মত ফল। নিয়মিত বাদাম খাওয়ার অনেক আশ্চর্যজনক উপকারিতা রয়েছে, যা আমরা অনেকেই জানি না। স্বাস্থ্যকর বা পুষ্টিগুণ এবং শরীর ভালো রাখার জন্য বাদাম খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। কারণ এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, ভিটামিন সি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, ফাইবার, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম সহ আরও অনেক ধরনের কার্যকরী উপাদান।

নানান ধরনের বাদাম রয়েছে, তবে এই ৫ ধরনের বাদাম অনেক জনপ্রিয়।
০১। কাজু বাদাম, ০২। পেস্তা বাদাম, ০৩। কাঠ বাদাম, ০৪। চিনা বাদাম, ০৫। দেশী বাদাম

পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবার শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। বাদাম খাওয়ার উপকারিতা, বাদাম খেলে কি হয়, এই সম্পর্কে অবশ্যই আমাদের জানা উচিত। নিচে বাদাম খাওয়ার ১০টি উপকারিতে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে।

বাদামের ১০টি উপকারিতা

০১। শরীরে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি বাদাম ও শরীরে শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রোটিন ও খনিজ পদার্থসহ আরও অনেক কার্যকারী উপাদান, যা শরীরের দুর্বলতা দূর করে আরও শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে। রাস্তা ঘাটে, বা কোন পার্কে বাদাম সবসময় পাওয়া যায়। তাই যখন বন্ধু বা কাছের মানুষ নিয়ে আড্ডা দেওয়ার সময় এক মুষ্টি বাদাম খেয়ে নিন। এতে করে আড্ডা ও হয়ে গেল মজার সাথে শরীরে এনার্জি ও বৃদ্ধি করা যাবে।

০২। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

বাদাম খাওয়ার উপকারিতা অনেক উপকারিতার মধ্যে এটি খুবই অন্যতম। অনেকেই আছেন, ওজন কমানোর বা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করছেন। অনেক টাকা খরচ করছেন, সময় ব্যয় করছেন, তারপরেও সবকিছু ঠিক ভাবে হচ্ছে না। তাদের জন্য রয়েছে বাদাম। অর্থাৎ আপনি যদি খুব সহজ উপায়ে ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে চান, তাহলে নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে বাদাম খেতে পারেন। ১৫/২০ টা ভালো বাদাম, পরিষ্কার করে রাতে একটা বাটিতে ভিজিয়ে রাখুন, ৬/৭ ঘণ্টা ভিজানোর পর সকালে ঘুম থেকেই উঠেই খেয়ে ফেলুন। সকালে বাদাম খেলে ক্ষুধা লাগে কম, ফলে খাবার খুব বেশি খেতে মন চাই না। এবং ওজনও কমতে শুরু করবে।

০৩। হার্ট ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।

যদি আপনি শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকতে না পারেন, পর্যাপ্ত না ঘুম্যান এবং চাপ মুক্ত না থাকেন, তাহলেই বুঝবেন আপনার হার্ট অসুস্থ হতে শুরু করছে। ওমেগা-৩ একটি হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষাকারী ফ্যাটি অ্যাসিড। যা হার্টের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখে। আর বাদামে রয়েছে পর্যাপ্ত ওমেগা-৩ অ্যাসিড যা খুব সহজেই পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন ই ও অন্যান্য কিছু মূল্যবান উপাদান। যা হার্ট জাতীয় কিছু সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত এক মুঠো বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন, ফলে আপনার শরীরে শক্তি যোগানোর পাশাপাশি হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।

০৪। মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে ও এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চাইলে অবশ্যই নিয়মিয় বাদাম খেতে হবে। আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা কগনিটিভ পাওয়া, সহজ কথায় বললে মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে ও এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এবং এটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন বি যা ব্রেইন সতেজ রাখে। তাই সবারই উচিত নিয়মিত বাদাম খাওয়া বিশেষ করে ছোট ছেলে মেয়েদের কে অবশ্যই খাওয়া অভ্যাস করতে হবে। এবং এটি সব বেশি খাওয়া প্রয়োজন ছাত্র ছাত্রীদের। ফলে তাদের ব্রেইন ভালো থাকবে এবং এর ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

জেনে নিন – ১০টি সাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে যা সবার নিয়মিত খাওয়া উচিত, এখানে কিল্ক করুন!

০৫। হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

হজম ক্ষমতা যদি না থাকে, তাহলে জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং আপনি খুব খারাপ ভাবে অসুস্থ হয়ে যাবেন। তাই অবশ্যই শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে সবার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। হজম ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য রয়েছে কিছু পুষ্টিকর বা স্বাস্থ্যকর খাবার এবং সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাদাম। বাদাম হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে থাকে। কারণ অনেকবার গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠে খালী পেটে জলে ভেজানো কাজু বাদাম খেলে দেহের অন্দরে বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ ভালোভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। তাই কেনই খাবেন না নিয়মিত ১০/১২ টা বাদাম!

০৬। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেশি বেশি বাদাম খাওয়া উচিত। যারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা একটু বেশি করে অথবা যারা টেনশন করে বেশি, তাদের নিয়মিত ১ মুঠো করে বাদাম খাওয়া আবশ্যক। শরীরে যদি পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। একাধিক রির্সাচ করে দেখা গেছে শরীরে এই খনিজ গুলোর ঘাটতি দেখা দিলে খুব কম সময়ের মধ্যেই ব্লাড প্রেসার মারাত্মক বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। আর যদি অনেক দিন এই সমস্যা দেখা দেয় এবং এর প্রতিরোধ না করেন, তাহলে অনেক বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যেতে পারে। এবং যেহেতু বাদামে অনেক ধরনের ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম আছে। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাদাম মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

০৭। ত্বক চুল ভালো ও উজ্জ্বল রাখে।

ত্বক চুল ভালো ও উজ্জ্বল কে না রাখতে চাই? ত্বক ও চুল সারা শরীরের সৌন্দর্যের অর্ধেক বহন করে। তাই সবাই চাই ত্বক ও চুল সুস্থ, সুন্দর ও আরও উজ্জ্বল রাখতে। তাঁরজন্য অবশ্যই প্রথমত এইগুলোর যত্ন নিতে হবে খুব ভালোভাবে। তারপর কিছু পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে নিয়মিত। কারণ এমন কিছু খাবার আছে বিশেষ করে পানি জাতীয় যা ত্বক সুস্থ ও কোমল রাখতে সাহায্য করে। এবং বাদাম ও তাই, অর্থাৎ বিভিন্ন রির্সাচে দেখা গেছে বাদামে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা ত্বক ও চুল সুস্থ, সুন্দর ও আরও উজ্জ্বলতা বাড়াতে যতেষ্ট সহায়তা করে থাকে। তাই বাড়তি বয়সের ছেলে-মেয়েদের বিশেষ করে যা ত্বক ও চুল ভালো রাখতে চান তাদের অবশ্যই প্রতিদিন বাদাম খাওয়া আবশ্যক।

০৮। হাড় সুস্থ, শক্ত ও মজবুত রাখে।

হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে ও বাদামের ভূমিকা অতুলনীয়। যাদের দেহে বিভিন্ন ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, প্রোটিন ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম ঘাটতি দেখা দেয় তাদের হাড়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন হাড় অসুস্থ হয়ে পড়ে, নরম ও দুর্বল হয়ে যায়, অনেকে আবার খুব বেশি হাটাহাটি বা চলাফেরা করতে পারে না, এইরকম নানান সমস্যা দেখা দেয়। অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বাদামে ও রয়েছে যতেষ্ট প্রোটিন ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম, যা খুব সহজেই হাড় সুস্থ ও শক্ত ও মজবুত রাখে। তাই প্রতিদিন ১২/১৫ টা ভালো বাদাম খেতে পারলে, এই সমস্যা অনেকখানি লাগব হবে।

০৯। ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

হ্যাঁ, বাদাম ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। বাদামে রয়েছে যতেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা খুব সহজেই বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে বাঁচাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যেকোনো খাবার হজমের পর খাদ্যের কিছু উচ্ছিষ্ট আমাদের শরীরে থেকে যায়। যাকে ফ্রি র্যাডিকেলস বা মৌল বলে, এই ফ্রি র্যাডিকেলস শরীরের কিছু কোষ নষ্ট করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার এই ধরনের মৌলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। শরীরে ক্যানসারের কোষ উৎপাদন কম হয়। ফলে প্রতিদিন ১ মুঠো অর্থাৎ ১২.১৫ বাদাম খেলে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কম থাকে।

১০। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

উপরোক্ত উপকার গুলো ছাড়াও বাদাম বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যেমন দেহের পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে এর ভূমিকা অনন্য, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে, গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি উপকার হচ্ছে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, কোষেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ক্লান্তি দূর করে, মেজাজ ভালো রাখে, শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ত্বকের নানা সমস্যায় খুব উপকারি, এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধসহ নানান সমস্যা সমাধান করে শরীরকে সুস্থ ও ভালো রাখে। তাই কেনই বা প্রতিদিন বাদাম খাবেন না? বিকেলে বসে কাছের মানুষের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় খেয়ে নিতে পারেন ১ মুঠো বাদাম, যা আমার স্বাস্থ্য আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

আপনারা এতুক্ষন বাদাম খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কার্যকারী ও প্রয়োজনীয় তথ্য জানলেন। সব ধরনের বাদাম খাবেন নিয়মিত, তবে কাজু বাদাম একটু বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here