সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার উপকারিতা
সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার উপকারিতা

সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ও কার্যকরী তথ্য এবং কিছু জনপ্রিয় সামুদ্রিক মাছের নাম জানতে, পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

সামুদ্রিক মাছের যথেষ্ট উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও, আমরা অনেকেই খাই না। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ পুকুর, খাল – বিল, নদী – নালার মাছ খেতে অভ্যস্ত। কিন্ত সামুদ্রিক মাছ খাই না, জানিও না এর বিস্মকর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।

আপনি যদি বাহিরের দেশ গুলোতে যান, দেখবেন তাদের প্রায় সব মাছই হচ্ছে সামুদ্রিক। সামুদ্রিক মাছ অনেকেরই প্রিয় খাবার। কারণ ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ বিচারে সামুদ্রিক মাছ কোন অংশেই কম নয়। সামুদ্রিক মাছে আছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ। এছাড়াও মাছে চর্বি, খনিজ তেল, আয়রণ, ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস পাওয়া যায়। মাছের শতকরা ২৩ ভাগই আমিষ।

এই মাছের স্বাদের চেয়েও বড় বিষয় হলো, গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী উপকারিতা। নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ খেলে বেশ কিছু সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যায়। তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। আসলে অরিতিক্ত কোন খাবারই শরীরের জন্য ভালো না।

কিছু জনপ্রিয় সামুদ্রিক মাছের নাম

০১। রূপচান্দা ০২। ইলিশ মাছ ০৩। ফলিচান্দা ০৪। ট্যাঁকচান্দা ০৫। হাউস পাতা ০৬। উড়ুক্ক মাছ ০৭। পেখম ময়ূরী ০৮। ফাঁসা ০৯। মাইট্যা মাছ ১০। কালো পোয়া ১১। প্রজাপতি ১২। সোনালী বাটা ১৩। সাদা পোয়া ১৪। পটকা ১৫। কোরাল ১৬। রাঙা কই ১৭। মুইচ্চা হাঙর ১৮। থুট্রা হাঙর ১৯। করাতি হাঙর ২০। হাতুড়ি হাঙর ২১। সামুদ্রিক চিংড়ি ২২। কামিলে মাছ ২৩। ছুরি মাছ ২৪। টোনা মাছ ২৫। নানচিল কোরাল ২৬। ভেটকি মাছ ২৭। মেঘা ওলুয়া ২৮। সামুদ্রিক লবস্টার ২৯। Catfish ৩০। Goat Fish

বিঃ দ্রঃ ইলিশ সাগরের মাছ হলেও ডিম পাড়তে ঝাঁকে ঝাঁকে তারা নদীতে ঢোকে। তাই ইলিশ মাছ সাগর ও নদী উভয়ই জায়গায় পাওয়া যায়।

সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার উপকারিতা

০১। হৃদরোগ থেকে বাঁচাবেঃ

সামুদ্রিক মাছ মানুষের হৃদযন্ত্র সুরক্ষিত রাখতে বিরাট ভূমিকা রাখে। হৃদযন্ত্র অচল ও অকার্যকর হয়ে যাওয়ার যে ঝুঁকি প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় যেসব কারণে তার বিরুদ্ধে লড়াই করে সামুদ্রিক মাছের উপাদানগুলো। সামুদ্রিক মাছে আছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এটি রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল LDL ও VLDL কমায় এবং উপকারী কোলেস্টেরল HDL বাড়িয়ে দেয়। ফলে হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমতে পারেনা এবং রক্তনালী পরিষ্কার, সুপরিসর থাকায় রক্ত চলাচল বাধাহীন থাকে। যা আপনাকে হৃদরোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করবে।

০২। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ

নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই মাছে থাকা বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে থাকে। যারা সামুদ্রিক মাছ বেশি খান তাদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই কমে যাওয়ার হার প্রায় ৪০ শতাংশ। তাই নিয়মিত খাওয়া উচিত, বিশেষ করে বেড়ে উঠা ছেলে মেয়েদেরকে। এটি বাচ্চাদের মস্তিষ্কের গঠন উন্নত করে ও স্মৃতি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

০৩। দেহের বৃদ্ধি ও হাড় গঠন করেঃ

আমিষ ও প্রোটিনের উৎস বলা হয় মাছকে। সামুদ্রিক মাছে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিনসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যকরী উপাদান হাড় গঠন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সামুদ্রিক মাছের আমিষ সহজে পরিপাকযোগ্য। এ ছাড়া দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়রোধে এটি এক বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই প্রতিদিন না খেলে, অন্ততপক্ষে ২/৩ দিন পর পর খাওয়া উচিত। শরীর সাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

০৪। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখেঃ

ইতোমধ্যে জেনেছি, সামুদ্রিক মাছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, খনিজ তেল, আয়রণ থাকার পাশাপাশি প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। এই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শরীরের অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এবং এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে অবদান রাখে। এই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রেটিনার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করার মধ্যে দিয়ে সার্বিকভাবে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এইজন্য নিয়মিত এই মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে এবং বাচ্চাদেরকেও খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

০৫। ডায়বেটিস রোগীর জন্য উপকারীঃ

ডায়বেটিস রোগীদের জন্য অনেক ধরনের প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে সামুদ্রিক মাছ ও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ, ডায়বেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়মিত মাছ খাওয়া যেতে পারে।

০৬। বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ

উপরোক্ত উপকারিতা গুলো ছাড়াও এই মাছ আমাদের দেহের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গবেষণাগারে পরিচালিত পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন কার্প, তেলাপিয়া, ক্যাটফিশ ইত্যাদি চাষকৃত মাছের উত্তম পুষ্টির জন্য খাদ্যের প্রোটিন ৩৫-৪৫% শক্তি যোগায়।

কাজেই নির্বাচিত খাদ্যে ৩০-৪০% প্রোটিন থাকলে তা মাছের পুষ্টির চাহিদা মেটায়, তবে মাছের উত্তম বৃদ্ধির জন্য প্রোটিনে সব ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড থাকাও আবশ্যক। (সূত্রঃ উকিপিডিয়া) এইজন্য নিয়মিত মাছ খাওয়া উচিত, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ খাওয়ার চেষ্টা ও অভ্যস্ত করতে হবে।

আরও জানুন –

কোন মাছে কি গুণাগুণ ও পুষ্টিগুণ আছে জেনে নিন

চিনি কি ক্ষতিকর, কেন বর্জন করা উচিত

চুল পড়ার কারণ ও কার্যকরী সমাধান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here