অনলাইনে ক্যারিয়ার
অনলাইনে ক্যারিয়ার

অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার সুবিধা অসুবিধা ও ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে নিখুঁত বিস্তারিত তথ্য জানতে, পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

আজকাল অনেক শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা আছে যারা গতানুগতিক চাকুরী, ব্যবসা ইত্যাদি বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখেন। এরকম স্বপ্ন দেখা মানুষদের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেসব নতুন দিগন্তের সম্ভাবনা দুয়ার খুলেছে তার বিস্তৃতি আসলে অল্প পরিসরে বোঝানো রীতিমতো অসম্ভব বিষয়।

অনলাইনে ক্যারিয়ার বলতে আমরা যা বুঝি,তা হলো ইন্টারনেট ব্যবহার করে আপনার কম্পিউটার এর সাহায্যে কোন পার্টটাইম অথবা ফুলটাইম জব অথবা ব্যবসা করা।

অনলাইনে ক্যারিয়ার প্ল্যাটফর্ম বা ক্ষেত্র আসলে অসংখ্য এবং অগণিত। প্রতিদিন নিত্য নতুন আইডিয়া নিয়ে অনেক উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী ছেলেমেয়েরা ও অনলাইনে আসছে এবং নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র উদ্ভাবন করছে।

আজকের আর্টিকেলে আমরা অনলাইন ক্যারিয়ারের সুবিধা ,অসুবিধা এবং ক্ষেত্র সমূহ আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

অনলাইনে ক্যারিয়ারের সুবিধাঃ

অনলাইন ক্যারিয়ারের সুবিধা অনেক,সবচেয়ে বড় কথা আপনি নিজের ঘরে বসে বাহিরের কাজ করবেন তাও টাকার বিনিময়ে, এর চেয়ে বড় সুবিধা আর কি হতে পারে?

অনলাইন ক্যারিয়ারের আরো কয়েকটি সুবিধা নীচে দেওয়া হলো-

১. নিজের ইচ্ছামতো সময়ে কাজ করার স্বাধীনতা আপনি কেবল অনলাইনেই পাবেন।

২. কোথায় বসে কাজ করবেন,কখন কাজ করবেন,কতক্ষণ কাজ করবেন এসব নির্ধারণ করার ক্ষমতা আপনার হাতেই থাকবে।

৩. কোন কাজ করবেন,কিভাবে কাজ করবেন সম্পূর্ণ আপনার হাতে থাকে।

৪. একই প্রতিষ্ঠান এর হয়ে কাজ না করে একের অধিক প্রতিষ্ঠান এর হয়ে কাজ করতে পারবেন এবং নিজের ইচ্ছামতো কাজের রেট ও ফিক্স করতে পারবেন।

৫. যেহেতু অনলাইনের বেশির ভাগ কাজই প্রজেক্ট ভিত্তিক,তাই অল্প সময়ে অধিক টাকা উপার্জনের উপায় আপনি অনলাইন জবেই পাবেন।

৬. সর্বোপরি যেহেতু দলীয় ভাবে কাজ করার সুযোগ থাকে তাই দেশী-বিদেশী বিভিন্ন দলগত একটা সুন্দর সম্পর্ক মেইনটেইন করার সুযোগ ও আপনি এ সেক্টর থেকেই পাবেন।

অনলাইনে ক্যারিয়ারের অসুবিধাঃ

অনলাইন ক্যারিয়ারের অসুবিধার মধ্যে স্বাস্থ্য গত ঝুঁকিটাই বেশী। যাই হোক,চলুন অনলাইন কাজের কিছু অসুবিধা দেখে নেই।

১. অনলাইন ক্যারিয়ারের প্রথম অসুবিধা হলো অনেকেই বুঝতেই পারেনা অনলাইন ক্যারিয়ারের এত সেক্টর থেকে কোনটা বেছে নিবে। এবং এই না বুঝেই যে কোন কাজ সিলেক্ট করার কারনে অনেকেই মাঝ পথে যেয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেয় এবং হতাশায় ভুগে।

২. অনলাইনে কাজ করার কারনে দিন-রাত সবসময় নিজের ঘরে নিজের কম্পিউটারে সামনেই বসে থাকতে হয়, যার কারনে নিজের ঘরে থেকেও পরিবার আত্নীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরা, সোশ্যাল কোন প্রোগ্রামে উপস্থিত না হয়ে ধীরে ধীরে অসামাজিক খেতাব ধারণ করা ইত্যাদি।

৩. জব সিকিউরিটি নামক কোন নিশ্চয়তা অনলাইনে আসলে তেমন থাকে না। গতানুগতিক চাকরির ক্ষেত্রে সারা মাস আর যাই হোক অন্তত মাস শেষে একটা ফিক্সড স্যালারি পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। কিন্তু অনলাইন ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে এমন কোন সুযোগ আসলে খুব কম থাকে।

৪. সারা রাত জেগে কাজ করার কারনে ইনসোমনিয়া, মুটিয়ে যাওয়া, স্ট্রেস ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি রোগ অনলাইন কর্মীদের অনেক বেশী হয়।

৫. দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে কাজ করার ফলে চোখের এবং কোমরের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া ঘর থেকে কম বের হওয়ার কারনে শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব ও হতে পারে।

১০ উপায়ে অনলাইনে ইনকামঃ

যদিও অনলাইন ইনকামের ক্ষেত্রে অনেক উপায় রয়েছে তবুও নির্বাচিত ১০ উপায়ে অনলাইনে ইনকাম করার সুযোগগুলো দেখে নেই চলুন-

১. ফ্রিল্যান্সিংঃ

অনলাইন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইট হলো ফ্রিল্যান্সিং। মূলত আপনার বিভিন্ন দক্ষতার প্রেক্ষিতে আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে একাউন্ট খুলতে হবে। অতঃপর কোন কাজদাতার প্রয়োজন হলে আপনাকে নক করবে এবং আপনার সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে কাজের বিস্তারিত ঠিক করে নিবে।

২. এফিলিয়েট মার্কেটিংঃ

এই পদ্ধতিতে আয় করার জন্য আপনার একটা নিজের ওয়েবসাইট অথবা ব্লগ সাইট লাগবে। এরপর এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য অন্য কোন প্রতিষ্ঠান এর লিংক আপনার ওয়েবসাইট এ দিতে হবে।যখন আপনার ওয়েবসাইট এর কোন দর্শক এসব লিংকে ক্লিক করবে এবং ওই সকল প্রতিষ্ঠান এর কোন পণ্য কিনবে মূলত তখন থেকেই আপনার প্রফিট আসা শুরু হবে।

৩. ইউটিউবঃ

যদি অনলাইন ক্যারিয়ারের অন্য সকল কাজে আপনি বেটার ফিল না করেন তাহলে ইউটিউব কে আপনার অনলাইন ক্যারিয়ারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নিতে পারেন। আপনাকে শুধু আপনার ক্যামেরা দিয়ে সৃজনশীল উপায়ে ভিডিও করা জানতে হবে এবং তাতে সম্পাদনা করতে ও জানতে হবে।
ইউটিউবে আপনার প্রতিটি ভিডিও এক হাজার ভিও হলেই আপনার টাকা দেওয়া শুরু করবে গুগল কর্তৃপক্ষ্য।

৪. ব্লগিং এবং কন্টেন্ট রাইটিংঃ

যাদের লিখালিখির শখ আছে তারা চাইলে ব্লগিং করে ও অনলাইনে ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করতে পারেন। অনলাইনে ব্লগিং দুভাবে করা যায়,নিজের ব্লগ সাইট খুলে সেখানেও লিখতে পারেন আবার বিভিন্ন ফ্রি প্ল্যাটফর্ম (যেমন ওয়ার্ডপ্রেস) আছে চাইলে সেখানেও ফ্রি ব্লগ শুরু করতে পারেন।

যাদের ইংরেজিতে ভালো লিখতে পারেন এবং ইংরেজি বলতে পারেন তারা চাইলেই কন্টেন্ট রাইটিংএ ও ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে হয় আপনাকে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসের কোথাও একাউন্ট খুলতে হবে অথবা লোকাল কোন ক্লায়েন্ট এর সাথে কাজ করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট এর নির্দেশনা অনুযায়ী আপনাকে বিভিন্ন ধরনের নিস বা টপিক নিয়ে লিখতে হবে। প্রথমদিকে হয়তো আপনি এ খাত থেকে তেমন টাকা পাবেন না কিন্তু সময় যত যেতে থাকবে আস্তে আস্তে আপনার অভিজ্ঞতার সাথে সাথে ইনকামের পরিমাণ ও বাড়তে থাকবে।

৫. ই-কমার্সঃ

আমাদের দেশেই আজকাল অনেক নারীই আছেন যারা ঘর গৃহস্থালী, বাচ্চাকাচ্চা ইত্যাদি সামলিয়েও অনলাইনে সুন্দর করে নিজের সোশ্যাল পেজ খুলে সেখানে কেনা বেচার ব্যবসা করছেন। অনলাইনে কেনা বেচার এই ব্যবসা কেই ই-কমার্স বলে। শুধু মেয়েরা না,অনেক ছেলেরাও ই কমার্সের মাধ্যমে অনেক সফল বিজনেস করছে আমাদের দেশে।

৬. গ্রাফিকস ডিজাইনঃ

আজকাল গ্রাফিক্স ডিজাইনার দের অনেক চাহিদা রয়েছে অনলাইন জগতে। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যাদের কাছে গ্রাফিক্স এর কাজ বিক্রি করা যায়, এছাড়াও মার্কেট প্লেসেও একাউন্ট খুলে চুক্তি ভিত্তিক গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ ও করা যায়।

৭. সোশ্যাল মিডিয়াঃ

সোশ্যাল মিডিয়া এখন আর শুধু আড্ডাবাজির জায়গা নয়,বরংচ এখান থেকেও আপনি টাকা উপার্জন করতে পারেন।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিকল্পক হিসেবে আপনি তাদের ব্র‍্যান্ডের প্রচারণার জন্য বিভিন্ন কন্টেন্ট, অথবা ভিডিও শেয়ার করতে পারেন। এর ফলে কোম্পানি কর্তৃক উপযুক্ত সম্মানী ও পাবেন অবশ্যই।

৮. অনলাইন টিউটরঃ

যদি টিউটর হিসেবে আপনি যথেষ্ট দক্ষ হোন,তাহলে আপনার জন্য অনলাইন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে টিউশনি ও করানোর সুযোগও রয়েছে।তবে এ জন্য আপনাকে আগে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। আর একবার উত্তীর্ণ হয়ে গেলেই ব্যাস টাকা আসা শুরু।

৯. অনুবাদকের কাজঃ

যাদের ইংরেজির পাশাপাশি অন্যান্য ভাষা যেমন স্প্যানিশ,ফ্রেঞ্চ, এরাবিক এরকম বিভিন্ন ভাষার উপরে দক্ষতা আছে তারা চাইলে এসব ভাষা থেকে ইংরেজি অথবা ইংরেজি থেকে এসব ভাষা অনুবাদের কাজ করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সার সাইটগুলোতে অনুবাদকের একাউন্ট খুলে অথবা অনুবাদের বিভিন্ন সাইট আছে সেখানে ও অনুবাদকের ক্যারিয়ার শুরু করা যেতে পারে।

১০. ভার্চুয়াল সহকারীর কাজঃ

এই জব অনেকটা অফিসের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট এর জব এর মতই, পার্থক্য শুধু আপনি বাসায় বসেই অনলাইনে আরেকজনের কর্পোরেট কাজ করে দিবেন। এখানে আপনি কি কাজ করবেন সেটা ঠিক করবে আপনার ক্লায়েন্ট।

অনলাইনে কাজ শিখুনঃ

মজার ব্যাপার হলো অনলাইন বিভিন্ন কাজ আপনি অনলাইনেও শিখতে পারেন। তথ্য-প্রযুক্তি ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন আছে যারা একদম ফ্রি অথবা টাকার বিনিময়ে আপনাকে বিভিন্ন অনলাইন কাজের উপর প্রশিক্ষণ দিবে।

ঘরে বসেই গুগল হ্যাংওভার অথবা টিম ভিওয়ারের মাধ্যমে সরাসরি স্ক্রিন শেয়ারের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান আপনাকে ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন,কন্টেন্ট রাইটিং,এসইও,সোশ্যাল মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং ইত্যাদি শেখাবে।

বিভিন্ন ই-বুক, পেনড্রাইভের মাধ্যমে অথবা এসব ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কন্টেন্ট, ভিডিও টিউটোরিয়াল বিনামূল্যে অথবা টাকার বিনিময়ে আপনি নিজেই ঘরে থেকে স্টাডি করতে পারবেন এবং মাস শেষে অনলাইন পরীক্ষা দিয়ে নিজের সার্টিফিকেট ও অর্জন করতে পারবেন।

তাছাড়া আরো একটা সুবিধার কথা না বললেই না,অনেক সময় দেখা যায় যে প্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইন কোর্স করলেন তারাই আপনার পরীক্ষার ফলাফল এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে আপনাকে বিভিন্ন অনলাইন কাজেও নিযুক্ত করে নিতে পারে।

আসলে অনলাইন এ কাজের কোন অভাব নেই। দিন যত যাচ্ছে অনলাইনে কাজের পরিধি ততই দ্রুত গতিতে বাড়ছে। অনলাইন কাজের এত বড় মার্কেট এ তাই আজকের তরুণ তরুণী রা নিজেদের ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করার জন্য সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও নিচ্ছেন।

আমাদের দেশে ও হাজার হাজার তরুণ তরুণী আছে যারা অনলাইন ক্যারিয়ারের স্বপ্নে বিভোর হয়ে কোনরকম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অথবা কাজ করার বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা ছাড়াই অযথা ছুটে চলছেন অনলাইন ক্যারিয়ার নামক সোনার হরিণের পেছনে।ফলাফল স্বরুপ, কিছুদিনের মধ্যেই কোন কূলকিনারা না পাওয়া এবং হতাশায় আকন্ঠ নিমজ্জিত হওয়া!!

পরিশেষে যারা অনলাইনে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চান,তাদের উদ্দেশ্য একটাই বক্তব্য –
ভালো করে কাজ শিখে,বুঝে শুনে তারপর এ সেক্টরে আসুন, বিশ্বাস রাখুন কাজ না পাওয়ার কোন হতাশা আপনাকে একদম ছুঁতে পারবে না।

আরও জানুন –

ডোমেইন এবং হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত

সঠিক উপায়ে গুগল সার্চ করার নিয়ম

ইন্টারনেট কি, কিভাবে কাজ করে? এর সুফল ও কুফল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here