চুলের জন্য খাবার
চুলের জন্য খাবার

চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও গোঁড়া আরও শক্ত, মজবুত করতে অবশ্যই এর সঠিক পরিচর্যা এবং যত্ন করতে হবে। চুলকে বলা হয় সৌন্দর্যের প্রতীক। আর এইটা ধরে রাখার জন্য নিয়মিত চুলের সঠিক যত্ন নিতে হবে।
সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য জল-তেলের সঠিক ব্যবহার তো করতেই হবে, সাথে যদি কিছু উপকারি ও কার্যকরী পুষ্টিকর খাবার খাওয়াও প্রয়োজন। চুল ভালো ও সুন্দর রাখার জন্য কিছু খাবার রয়েছে যা অনেক কার্যকরী।

চুল যদি মাথা থেকে কোন পুষ্টি উপাদান না জোগাড় করতে পারে, কোন শক্তি না পাই, তাহলে শুধু শ্যাম্পু আর তেল দিয়ে চুল পড়া কমানো যাবে না। প্রতিটা চুল শরীর থেকে শক্তি জোগাড় করে বড় হচ্ছে, তাই যদি প্রয়োজন মতো পুষ্টিকর উপাদান সংগ্রহ করতে পারে, তাহলেই সুস্থ সুন্দর চুল রাখা যাবে।

চুলের পুষ্টির জন্য, সুস্থ সুন্দর চুলের জন্য এবং চুলের গোঁড়া শক্ত করার জন্য ১০টি প্রয়োজনীয় খাবারের তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ

চুলের পুষ্টির জন্য ১০টি খাবার

০১। গাজর
০২। বাদাম
০৩। পালং শাক
০৪। শসা
০৫। ডিম
০৬। পানি ও দুধ
০৭। কমলা লেবু
০৮। পেয়ারা
০৯। সামুদ্রিক মাছ
১০। মটরশুঁটি

০১। গাজর

চুলের উপকারের জন্য প্রধান খাবার হচ্ছে গাজর। পুষ্টিগুণে ভরা একটি গাজরে রয়েছে অনেক উপাদান, যা আমাদের নিয়মিত প্রয়োজন। চুলের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির জন্য অনেক উপকারি। গাজরে প্রচুর ভিটামিন এ ও সি রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে অনেক উপাদান। গাজরের এই ভিটামিন মাথার ত্বকে ‘সিবাম’ নামের একটা তৈলাক্ত রাসায়নিক উৎপাদনে সাহায্য করে। চুলের গোঁড়া আরও শক্ত, মজবুত ও মোটা করতে গাজর বিশেষ ভূমিকা রাখে। এইজন্য নিয়মিত ২/৩ টি জীবাণুমুক্ত গাজর খাওয়ার চেষ্টা করুন। চুলের যত্নের পাশাপাশি আরও অনেক উপকারে আসবে।

০২। বাদাম

চুলের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন বাদাম খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি৩, ফলিক অ্যাসিড ও প্রোটিনসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু রয়েছে। অনেক ধরনের বাদাম রয়েছে। এইসব বাদাম পুষ্টি উপাদান এবং তেল ত্বক, চুল, মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ডের জন্য দারুণ উপকারী। সকালে বাদাম ভিজানো বাদাম খেতে পারেন অথবা বিকালে আড্ডা দেওয়ার সময়ও ১০/১৫ টি ভালো বাদাম খেতে পারেন। যথেষ্ট উপকার পাওয়া যাবে, নিয়মিত বাদাম খেতে পারলে।

০৩। পালং শাক

অনেকেই বলে থাকে, চুলের জন্য সবচেয়ে উপকারি খাবারটি হচ্ছে পালং শাক। কারণ বিভিন্ন ভিটামিন ও নানা খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ পালংশাক। এতে আছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট। তাজা এবং অল্পসেদ্ধ করে খেলে বেশি এন্টিঅক্সিডেন্ট লাভ করা যায়। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, এবং ভিটামিন সি যা চুল ভেঙ্গে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করে ও চুলের বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই চুলের জন্য পালং শাক খেতে পারেন।

০৪। শসা

পানি জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে শসা অন্যতম। শসাতে আছে যথেষ্ট পরিমাণে সিলিকা, সালফার এবং ভিটামিন-এ সহ বেশ কিছু খনিজ উপাদান। এই উপাদান গুলো চুলের বৃদ্ধি করতে, চুল পড়া বন্ধ করতে ও চুলের স্বাস্থ্য আরও উজ্জ্বল করতে যথেষ্ট সহায়তা করে। কাঁচা শসা গুলো শরীরের জন্য অনেক উপকারি। এবং এর উপাদান নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। তাই পানিশূন্যতা দূর করার ও ব্রেইন সতেজ রাখার পাশাপাশি, চুলের যত্নে প্রতিদিন ১/২ শসা খেতে পারেন।

০৫। ডিম

চুলের যত্নে প্রতিদিন সকালে সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন। প্রোটিনের অভাবে চুল পড়ে যায় এবং ডিমে সবচেয়ে বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক দরকারি একটি খাবার। ডিম অনেক ভাবে খাওয়া যায়, তবে সেদ্ধ করে খেলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। ডিমে রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সালফার, ফসফরাস ইত্যাদি। চুলের প্রোটিনের জোগান দিতে ডিম খাওয়া উচিত।

০৬। পানি ও দুধ

পানি ও দুধ শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ যা বলার অপেক্ষা রাখে না। চুলপড়া হ্রাস করতে, স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, মাথার বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং সেই সাথে চুলের গোড়া শক্ত, মজবুত ও মোটা করার আমিষ, প্রোটিন, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ ও বি, সি থাকা প্রয়োজন। পানি ও দুধ জাতীয় খাবারে এইগুলো রয়েছে পর্যাপ্ত। পনির, দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবারে ভিটামিন-ডি চুলের গোড়ার সঠিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

০৭। কমলা লেবু

ভিটামিন সি এর প্রধান উৎস হচ্ছে কমলা লেবু। ভিটামিন সি’র অভাবে চুলের গোঁড়া দুর্বল হয়ে যায়। ফলে চুল ভঙ্গুর, দুর্বল ও চিকন হয়ে যায়। ভিটামিন সি’র অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলে। এইজন্যই কমলা লেবু খাওয়া দরকার। ভিটামিন সি চুলের যত্নের পাশাপাশি আরও অনেক উপকারি।

০৮। পেয়ারা

পেয়ারা একটি রুচিশীল ফল, যা সবাই পছন্দ করে। পেয়ারাতে পাওয়া যায় ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া যে কোন ইনফেকশন থেকে পেয়ারা শরীরকে সুস্থ রাখে। এবং ইতোমধ্যে উপরের পয়েন্টে বলে আসছি, ভিটামিন সি চুলের যত্নে কতটা উপকারি।

০৯। সামুদ্রিক মাছ

চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে নিয়মিত নির্দিষ্ট ওমেগা এসিড দরকার হয়। উচ্চ মাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডযুক্ত মাছ ত্বক ও চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের চুল প্রায় ৩ শতাংশ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের তৈরি। সামুদ্রিক মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের উত্তম উৎস। এছাড়াও মাছে সবচেয়ে বেশি আমিষ পাওয়া যায় যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

১০। মটরশুঁটি

চুল ভালো রাখতে আরেকটি বিশেষ খাবার হচ্ছে মটরশুটি। ভিটামিন, প্রোটিনের পাশাপাশি আয়রিন কারণে ও চুল পড়ার সমস্যা হতে পারে। মটরশুঁটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত আয়রন। এক কাপ শুঁটিতে ৮ মি.গ্রা আয়রন থাকে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিবেলার খাদ্য তালিকায় এক কাপ পরিমাণ মটরশুঁটি খেতে পারেন। এটি বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতেও ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম মটরশুটি থেকে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। তাই নিঃসন্দেহে এটিও শরীরের জন্য যথেষ্ট উপকারি।

এখানে আরও জানতে পারবেন –

চুলের যত্ন নেওয়ার কিছু প্রয়োজনীয় টিপস

মোটা হওয়ার ৭টি সহজ ও কার্যকরী উপায়

প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত ও এর উপকারিতা

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here