পানি শূন্যতা দূর করবে যেসব খাবার
পানি শূন্যতা দূর করবে যেসব খাবার

পানিশূন্যতা দূর করবে যেসব খাবার গুলো, বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

আমাদের ত্বকে ও শরীরে দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা যদি নিয়মিত সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও পরিচর্যা না করি। বাহিরে থেকে কঠোর পরিশ্রম করার ফলে অথবা দুরে কোথায় ভ্রমনে যাওয়ার সময় যদি যানজটে পড়ে থাকি, তাহলে আমাদের শরীর থেকে অনেক ঘাম বের হয়। এবং আরও বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত পানিশূন্যতায় ভুগি।

যা অবশ্যই প্রতিরোধ করা দরকার কারণ দেহের পানিশূন্যতা যদি বেশি পরিমাণে দেখা দেয়, তাহলে শরীরে নানান সমস্যা হতে পারে। যেমন শক্তি কমে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যাওয়া এবং আরও সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন পানিশূন্যতা দূর করার উপায়, অর্থাৎ পানিশূন্যতা দূর করবে যেসব খাবার।

পানিশূন্যতার লক্ষণ ও সমস্যা গুলো কী কী?

পানিশূন্যতার লক্ষণ ও সমস্যা গুলো যদি আমরা বুঝতে বা ধরতে পারি, তাহলে খুব সহজেই প্রতিরোধ করতে পারবো। এটি সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় গ্রীষ্মকালে। পানিশূন্যতার কারণে শরীরে অনেক সমস্যা দেখা দেয়, বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই অবশ্যই লক্ষণ বা সমস্যা গুলো আগে চিহ্নিত করতে হবে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক, পানিশূন্যতার জন্য যে লক্ষণ ও সমস্যা গুলো হয়ে থাকে –

• প্রচণ্ড পানির তৃষ্ণা পাওয়া।
• মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
• মাথা ব্যথা বা যন্ত্রণা করা।
• মনোযোগের অভাব হওয়া।
• মুখে দুর্গন্ধ হওয়া।
• প্রসাব হলুদ হওয়া।
• মেজাজ খারাপ হওয়া।
• দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া।
• পেশিতে টান ধরা।
• চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া।
• বারবার মিষ্টি খেতে চাওয়া।
(সুত্রঃ উকিপিডিয়া)

এছাড়াও রয়েছে সাধারণ অস্বস্তি, ক্ষুধা হ্রাস, প্রস্রাবের পরিমাণ হ্রাস , বিভ্রান্তি, অব্যক্ত ক্লান্তি এবং খিঁচুনি হওয়া। প্রাথমিকভাবে এই লক্ষণ বা সমস্যা গুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে যে আপনি পানিশূন্যতার সমস্যায় ভুগছেন। এবং তাঁরজন্য খুব দ্রুত কার্যকরী উপায়ে এর প্রতিরোধ করা করতে হবে। এই সমস্যা গুলো সবারই মাঝে মাঝে দেখা দেয়, তবে সবচেয়ে বেশি ৫০ বছরের বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়। কারণ এই বয়সের মানুষরা শরীরের তৃষ্ণার সংবেদন হ্রাস পায় এবং বয়সের সাথে ক্রমশ কমতে থাকে।

আর এখন আমরা পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করার কার্যকরী উপায় গুলো জানবো। উপরোক্ত সমস্যা গুলো সমধান করার প্রধান উপকরন হচ্ছে পুষ্টিকর কিছু খাবার। অর্থাৎ এমন কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার রয়েছে যেগুলোতে যথেষ্ট পানি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা পানিশূন্যতা দূর করতে এক বিশেষ ভূমিকা রাখে। এখন সে খাবার গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

পানিশূন্যতা দূর করবে যেসব খাবার

০১। পানি
০২। আপেল
০৩। দুধ বা দই
০৪। শসা
০৫। তরমুজ
০৬। লিচু
০৭। আঙ্গুর
০৮। কমলা লেবু
০৯। ডাব
১০। লেবুর শরবত
১১। টমেটো
১২। গ্রিন টি

০১। পানি

পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করার জন্য প্রধান ও অন্যতম উপকরণ হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি। প্রতিদিন নিয়মিত ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন। বেশি ওজন হলে অথবা আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হলে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বেশি খেতে পারেন। চেষ্টা করুন সময় মতো পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার, দিনের শুরুতে অর্থাৎ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ২ গ্লাস বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত পানি খেয়ে নিবেন যা পানিসুশূন্যতা দূর করতে অনেক অবদান রাখবে।

০২। আপেল

পানিশূন্যতা দেখা দিলে নিয়মিত একটি আপেল খাবেন, কার্যকরী উপকার পাবেন। আপেল পানিজাতীয় ফল গুলোর মধ্যে অনেক জনপ্রিয়। একটি ভালো ও স্বাস্থ্যকর আপেলে প্রায় ৮০% পানি থাকে যা শরীরের জন্য অতিব দরকারি। আপেলের রয়েছে অনেক উপকারিতা। এটি পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’ ত্বক সুন্দর রাখতে ভূমিকা রাখে। ত্বকের পানি শূন্যতার দরকারে নিয়মিত আপেল খেতে পারেন।

০৩। দুধ বা দই

দুধ সবচেয়ে পুষ্টিকর পানিজাতীয় খাবার, এবং দুধের একটা অংশ দিয়েই দই তৈরি করা হয়। এটি আমাদের শরীর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটি খাবার। এর রয়েছে বেশ আশ্চর্যজনক উপকারিতা। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘বি’ ও ক্যালসিয়াম হার গঠন ও মজবুতে সাহায্য করে। আর যেহেতু এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত পানি, তাই এটি নিঃসন্দেহে পানিশূন্যতা দূর করবে। তাই উপরোক্ত সমস্যার সমাধানের জন্য মাঝে মাঝে দুধ বা দই খাওয়ার চেষ্টা করুন।

০৪। শসা

শসা একটি রুচিশীল খাদ্য। পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করতে অবশ্যই ছোট বড় সবাইকে কচি শসা খাওয়া উচিত। একটি শসাতে পানি রয়েছে ৯৬.২৩ শতাংশ। যা অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। প্রতিবেলা খাবারের সাথে শসার সালাদ রাখতে পারেন অথবা যখন পানি তৃষ্ণা বেশি দেখা দিবে তখনও একটা শসা খেতে পারেন। এটি যথেষ্ট কার্যকরী একটি খাবার তাই উপরোক্ত সমস্যার জন্য অবশ্যই শসা খাওয়া উচিত। এছাড়াও অন্ততপক্ষে ১/২ দিন পর পর নিয়মিত শসা খেতে পারলে অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

০৫। তরমুজ

তরমুজ একটি গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু, রুচিশীল ও পানীয় ফল। অপরদিকে গরমকালেই কিন্ত বেশি পানির ঘাটতি দেখা দেয়। তাই এটি হচ্ছে গরমকালের জন্য একটি প্রয়োজনীয়, অত্যন্ত দরকারি, কার্যকরী একটি খাবার। এই ফলে ৬% চিনি এবং ৯২% জল এবং অনন্য উপাদান ২%। আরও অনেক ধরনের ভিটামিন ও রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত জল থাকার কারণে এটি পানিশূন্যতা দূর করতে এক বিশেষ ভূমিকা রাখে।

০৬। লিচু

লিচুও একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ, ওজন কমানোর জন্য অনেকেই লিচু খেতে থাকেন। এছাড়াও শরীরে শক্তি যোগাতে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে এর রয়েছে যথেষ্ট ভূমিকা। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ কিলোক্যালরি শক্তি ও ১৬ গ্রাম শর্করা রয়েছে। আরও আছে ৭১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ১৭০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ১৪ এবং ইত্যাদি। এবং এর মধ্যেও রয়েছে যথেষ্ট পানি, যা উপরোক্ত সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করবে।

০৭। আঙ্গুর

সব ফলের মধ্যে আঙ্গুর ফলের দাম একটু বেশিই। তাই অনেকেই এটি খুব বেশি খাই না, কিন্ত এর রয়েছে অনেক উপকার। এতে প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফরফরাস, লৌহ, খনিজ, পটাশিয়াম, থিয়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ভিটামিন-এ, বি, সি উপাদান রয়েছে। তাছাড়া প্রতি কেজি আঙ্গুর থেকে প্রায় ৪৫০ ক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায় (সুত্রঃ উকিপিডিয়া)। আঙ্গুর ফলে রয়েছে অনেক পানি, যা শরীরের পানির ঘাটতি অপসারণ করে। তাই অন্ততপক্ষে গরমকালীন সময়ে কিছু দিন পর পর আঙ্গুর ফল খাওয়া উচিত।

০৮। কমলা লেবু

লেবু জাতীয় রসালো ফল গুলোর মধ্যে কমলা অন্যতম। ৮৭ শতাংশ পানিসমৃদ্ধ কমলালেবুর রস অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও রুচিশীল। কমলায় বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। এর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম এবং এর পাতলা ত্বকে আঁশ রয়েছে। যা শরীরের জন্য অতিব জরুরি। এটি পানির চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, হার্ট সুস্থ থাকে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।

০৯। ডাব

পানিশূন্যতা দূর করার আরেকটি জনপ্রিয় ও অন্যতম খাবার হচ্ছে ডাব। ডাবের পানিতে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৬.৭ ক্যালোরি তথা ৭০ কিলো জুল খাদ্যশক্তি রয়েছে এবং পানি রয়েছে ৯৫.৫% (সুত্রঃ উকিপিডিয়া। এছাড়াও ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমানে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে। শরীরে অতিরিক্ত পানিশূন্যতা দেখা দিলে ডাবের পানি খেতে পারেন। কারণ এটি পানির ঘাটতি দূর করা ছাড়াও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করবে।

১০। লেবুর শরবত

লেবুর শরবত একটি আদর্শ স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়। আমাদের দেশে লেবু একটি জনপ্রিয় খাবার। এটি সালাদ বানিয়ে খাওয়া যায় এবং শরবত তৈরি করে ও খাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে উপকারি হচ্ছে শরবত। পানিশূন্যতা দূর করতে লেবুর শরবতের ভূমিকা অনন্য। একগ্লাস বিশুদ্ধ ও জীবাণুমুক্ত লেবর শরবত খেতে শরীরের দুর্বলতা ও ক্লান্তি যেন এক নিমিষেই চলে যাবে। মাত্র একটি মাঝারি আকৃতির লেবু থেকে চল্লিশ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বা এসকরবিক এসিড পাওয়া যা একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। ভিটামিন ‘সি’ দেহের রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এবং এটি দামে সস্তা ও সবসময় পাওয়া যায়, যার ফলে খুব সহজেই সংগ্রহ করে প্রতিদিন খাওয়া সম্ভব হবে।

১১। টমেটো

সবজি এবং সালাদ হিসেবে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ টমেটোর বেশ চাহিদা। টমেটোতে রয়েছ ৯৪.৫ শতাংশ পানি। টমেটোর রয়েছে খুব উপকারিতা। আকর্ষণীয়তা, ভাল স্বাদ, উচ্চ পুষ্টিমান এবং বহুবিধ উপায়ে ব্যবহারযোগ্যতার কারণে সর্বত্রই এটি জনপ্রিয়। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, লাইকোপেন, ক্যারোটিন, রিবোফ্লোবিন, ক্যালসিয়াম, লোহা ইত্যাদি থাকে। পানিশূন্যতার জন্য অবশ্যই টমেটো খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

১২। গ্রিন টি

গ্রিন টি শরীরের জন্য অনেক উপকারি। গ্রিন সবসময় খাওয়া যায়, তবে শীতকালে খেতে পারলে যথেষ্ট তৃপ্তি পাওয়া যায়। শীতের সময় পানিশূন্যতা দেখা দিলে গ্রিন খেতে পারেন। শরীরকে চাঙা করতে চা বা কফি বিশেষ সহায়ক। এটি হৃৎযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়ায় এবং শরীরকে করে তুলে আরও উদ্দীপ্ত। সকালের নাস্তার পর ও বিকালে ১ কাপ গ্রিন টি খেলে শরীর স্বাস্থ্য অনেকটা সতেজ ও উৎফুল্ল থাকে।

যেকোনো সমস্যারই সমাধান রয়েছে, শরীরে পানির অভাব দেখা দিলে বা পানিশূন্যতায় পড়লে, প্রাথমিকভাবে উপরের স্বাস্থ্যকর পানীয় খাবার গুলো নিয়মিত খাওয়া চেষ্টা করবেন। কার্যকরী উপকার পাবেন। এবং তারপরে ও যদি সমস্যা সমাধান না হয়ে প্রকট হয়, তাহলে অবশ্যই খুব দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

পানিশূন্যতা দূর করবে যেসব খাবার খাবার গুলো সম্পর্কে কার্যকরী তথ্য জানতে পারেছেন।

আরও জানুন –

প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত ও এর উপকারিতা

২০টি শাক সবজির গুণাগুণ ও উপকারিতা

নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here