অনলাইন ব্যবসার আইডিয়া
২০টি অনলাইন ব্যবসার আইডিয়া এবং কিভাবে শুরু করবেন

অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হওয়ার জন্য ব্যবসা হতে পারে আপনার অন্যতম পাথেয়। অনলাইন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে সরাসরি কাজ করাটা, সেক্ষেত্রে হতে পারে চমৎকার একটি উপায়। আমরা এটা সকলেই অবগত যে, যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্বেও শুধুমাত্র পর্যাপ্ত সুযোগের অভাবে অসংখ্য শিক্ষিত যুবক বেকার অবস্থায় হতাশ হয়ে বসে আছে। কিন্তু,

হতাশার বেদনাকে কাটিয়ে তাদের জন্য সুযোগ রয়েছে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার। এই জন্য কম বিনিয়োগে ব্যবসার ধারণা নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করব। এই লিখা থেকে আপনি পাবেন লাভজনক ২০টি অনলাইন ব্যবসায়ের ধারণা। শুধু তাই নয়, আমরা আপনাকে বিস্তারিতভাবে জানাব আপনি কিভাবে শুরু করবেন অনলাইন ব্যবসা। অন্যান্য আর সকল ব্যবসার মত অনলাইন ব্যবসা করার নিয়ম গুলো আমাদের জানা থাকা দরকার। চলুন তাহলে জেনে নিই, এই সকল ব্যবসাগুলোর বিস্তারিত তথ্য।

১। অনলাইনে পোশাক বিক্রয়

স্বল্প পুজিতে আপনি করতে পারেন অনলাইনে পোশাক ব্যবসা। এই ব্যবসাতে আপনার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে পন্যকে সম্ভাব্য ক্রেতার নিকট আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করার দক্ষতা। বর্তমানে এই ব্যবসা ধারণাটি বহুল প্রচলিত। তাই এই ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ ভালো প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। তবে, আকর্ষণীয় ডিজাইন, উন্নতমানের কাপড়, সঠিক মূল্য, এবং সময়মত ডেলিভারি নিশ্চিত করতে পারলে আপনি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।

২। অনলাইনে পাঠদান

অনলাইনে পাঠ দান করার মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারেন, ভালো পরিমাণ এর অর্থ। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে, অনলাইন শিক্ষা দান কর্মসূচি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা, স্বল্প ব্যয়, শিক্ষা সামগ্রীর যথাযথ ব্যবহার এবং সঠিক কোর্স ডিজাইন আপনার অনলাইনে শিক্ষা দান করার কাজটি্কে করতে পারে সফল। এক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হতে পারে আপনার অন্যতম হাতিয়ার। অনলাইনে কোর্স বিক্রি এখন অনেকেরই আয়ের প্রধান উৎস।

৩। ড্রপ শিপিং

এই ব্যবসায় আপনার নিজের কোনও পণ্য না থাকলেও চলবে। আপনাকে শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে এবং এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্ডার নিয়ে অন্য কোম্পানির পণ্য আপনি বিক্রি করবেন। তাই আপনার গুদামজাতকরারও প্রয়োজন হবে না। তাই কোন ধরণের প্রাথমিক বিনিয়োগ ছাড়াই আপনি বেশ কিছু লাভ করতে পারবেন।

৪। ই-বুক লেখা

আপনার লেখার দক্ষতা থাকলে ঘরে বসে লিখতে পারেন ই-বুক। বেশ কিছু অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে, যেখানে আপনি আপনার এই বইগুলো পাবলিশ করতে পারেন। অ্যামাজনের কিন্ডল্ ডিরেক্ট পাবলিশিং এই ধরণের কাজের উপযুক্ত ক্ষেত্রে ।যে বিষয়ে লিখছেন তা সম্পর্কে আপনার স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন, প্রয়োজন আগ্রহও। যে বিষয়টি নিয়ে লিখবেন তার সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখুন এবং প্রয়োজনীয় গবেষণা করে তবেই লিখুন, কারণ পাঠকের কাছে তা আকর্ষনীয় হতে হবে।

৫। অনলাইন ডেটা এন্ট্রির কাজ

সকল ধরণের প্রতিষ্ঠানের জন্য ডাটা এন্ট্রি অতীবও প্রয়োজনীয় একটি কাজ। একেকটি সংস্থার প্রচুর পরিমাণে ডেটা এন্ট্রির কাজ থাকে। এই কাজগুলোর সবচেয়ে বড় দিক নির্ভুল হওয়া। অনলাইন ডেটা এন্ট্রির মাধ্যমে উপার্জন হতে পারে আপনার জন্য সাবলম্বী হওয়ার ভাল একটি উপায়।

৬। অনলাইন চাকুরিদাতা

বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য, আপনি অনলাইন যোগ্য চাকুরীপ্রার্থী খুঁজে বের করতে পারেন। সকল প্রক্রিয়া শেষ করে সে সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য নিয়োগ সম্পন্ন করে, আপনিও আয় করতে পারেন। আর এই সকল কাজের জন্য অনলাইনই হতে পারে আপনার সঠিক অবলম্বন।

৭। অনলাইনে পাইকারি পণ্য বিক্রয়

দেশ এবং বিদেশ থেকে স্বল্প মূল্যে পণ্য ক্রয় করে তা অনলাইনে বিক্রয় করতে পারেন ক্রেতাদের নিকট। এক্ষেত্রে অনলাইনে বিক্রয় করার কারণে আপনার বিক্রয়জনিত খরচ ও কম হবে তাই লাভের পরিমাণ নিশ্চিতভাবে খানিকটা বেশিই হবে।

৮। ইউটিউব ভিডিও ব্লগিং

দারুন সব কন্টেন্ট নিয়ে ভিডিও তৈরি করে তা ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করতে পারেন আপনার কন্টেন্ট যত ভাল হবে আপনার ভিডিওর দর্শকও বাড়বে তত। ইউটিউব ভিডিও ব্লগিং এর আয় বেশ লোভনীয়।

৯। ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট

বর্তমান সময়ে হরহামেশা মানুষ তার নিজের অথবা প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করে। অন্যদিকে অনেকেই তাদের ওয়েবসাইটকে আপডেট করে। এই জন্য তাদের দরকার হয় ওয়েব ডিজাইনিং এ পারদর্শী লোকদের। আপনিও এই কাজে দক্ষ হয়ে আয় করতে পারেন অনেক ভাল পরিমাণের টাকা।

১০। সফটওয়্যার উন্নয়ন এবং নিরীক্ষণ

এই ব্যবসা ধরণটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সফটওয়্যার তৈরি এবং নিরীক্ষণের মাধ্যমে অনেকেই প্রচুর টাকা আয় করছে। ভাল মানের সফটওয়্যার উন্নয়ন করতে পারলে তা বিক্রয় করে আপনিও পেতে পারেন অনেক টাকা।

১১। ভিডিও এডিটর

বিজ্ঞাপনী সংস্থা, টেলিভিশন, এবং অন্যান্য আরো অনেক প্রতিষ্ঠানে একজন দক্ষ ভিডিও এডিটরের খুব বেশি দরকার হয়। আপনি অনলাইনে তাদেরকে এই ধরণের সেবা প্রদানের মাধ্যমে প্রচুর লাভ করতে পারেন।

১২। ডোমেইন হোস্টিং প্রোভাইডার

দিন দিন ওয়েবসাইট তৈরির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর এই জন্য অবশ্যই হোস্টিং এবং ডোমেইনের প্রয়োজন হয়। আপনি এই সার্ভিসটি প্রদান করে স্বল্প পুজিতে অনেক টাকা আয় করতে পারেন।

১৩। স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং

পণ্য বিক্রয়, ব্রান্ডিং এবং ক্রেতা-বিক্রেতা সম্পর্ক স্থাপনে স্যোশাল মিডিয়া মার্কেটিং এর কোন বিকল্প নেই। তাই এখনকার সময় গুলোতে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। তাই আপনি এই কাজে দক্ষ হলে, আপনার জন্য দারুন লাভজনক আয়ের পথ হতে পারে এটি।

১৪। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)

এসইও হল কোনও নির্দিষ্ট তথ্য খোজা হলে তা ব্যবহারকারীদের কাছে ওয়েবসাইট বা ওয়েব পৃষ্ঠার সন্ধান বাড়িয়ে ওয়েবসাইট ট্র্যাফিকের গুণগত মান এবং পরিমাণ বাড়ানোর প্রক্রিয়া। গুগলের সার্চ রেজাল্টে প্রথম হওয়া সকল ওয়েবসাইট মালিকদের স্বপ্ন। আর এই কাজটি সঠিক প্রক্রিয়াতে সফলভাবে সম্পন্ন করে অধিক অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

১৫। অনলাইনে ছবি বেচাকেনা

আপনি চাইলে বিভিন্ন ধরনের ছবি তুলে তা অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। কারন বিভিন্ন সময় ব্যবসার জন্য অনেক ছবির প্রয়োজন হয় তখন ব্যবসায়িরা এ ধরনের ছবি তখন ক্রয় করে থাকে। এর মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারেন।।

১৬। এফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল একধরণের পারফরম্যান্স-ভিত্তিক বিপণন যা ব্যবসায় একটি অনুমোদিত বা তার নিজস্ব বিপণনের প্রচেষ্টা দ্বারা আনা প্রতিটি দর্শনার্থী বা গ্রাহকের জন্য এক বা একাধিক অনুমোদিতকে পুরস্কৃত করে। সারা জীবন আয় করার মতো ব্যবসা হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং। এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনি অনলাইনে বিভিন্ন পণ্য বা সেবার লিংক শেয়ার করে অর্থ ইনকাম করতে পারেন।

১৭। ভার্চুয়াল সহকারী

ভার্চুয়াল সহকারী সাধারণত স্ব-কর্মসংস্থানযুক্ত এবং কোনও হোম অফিস থেকে ক্লায়েন্টদের কাছে পেশাদার প্রশাসনিক, প্রযুক্তিগত বা সৃজনশীল সহায়তা সরবরাহ করে। এর মধ্যে মেইল করা, গ্রাহকের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, বিল পেমেন্ট, কোম্পানির কর্মীদের অফিস ট্যুরের টিকিট কাটা সব কিছুই থাকতে পারে।

১৮। ওয়েবসাইট থিম বিক্রয়

ওয়েবসাইট থিম হল আপনার ওয়েবসাইটের সামগ্রিক চেহারা, অনুভূতি এবং স্টাইল। এর মধ্যে রঙ স্কিম, লেআউট এবং শৈলী উপাদানগুলির মতো জিনিস অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সংক্ষেপে, আপনার ওয়েবসাইট থিমটি আপনার ব্র্যান্ডের প্রত্যক্ষ উপস্থাপনা এবং এটি আপনার ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই ওয়েবসাইট থিম তৈরি ও বিক্রয় একটি অনন্য আয়ের পথ হতে পারে আপনার জন্য।

১৯। ভয়েস ওভার আর্টিস্ট

এটি প্রায়শই সিনেমা, টিভি শো, নাটক বা অন্যান্য উপস্থাপনাগুলিতে ব্যবহৃত হয়। ভয়েস ওভার হ’ল তথ্য ভয়েস অভিনেতা যিনি একটি স্ক্রিপ্ট থেকে পড়েছেন এবং পরে এটি দৃশ্যের সাথে যুক্ত হয়। আপনার কন্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গী যদি ভাল হয়, উচ্চারণ হয় স্পষ্ট তাহলে এই অনলাইন ব্যবসার কথা ভাবতে পারেন।

২০। অনলাইন কনসালটেন্সি

কেন অনলাইনে ব্যবসায় লাভজনক তার প্রকৃত উদাহরণ হতে পারে অনলাইন কনসালটেন্সি। এটি একটি বিশাল শব্দ। কোন একটি কাজের যথেষ্ট জ্ঞান থাকলে এটি করা সম্ভব। কোনও নির্দিষ্ট বিষয়ে সুনির্দিষ্ট জ্ঞানের অধিকারী প্রত্যেকেই একজন সফল অনলাইন কনসালটেন্ট হতে পারেন। এতে আয়ের সুযোগও ব্যাপক রয়েছে।

অন্যান্য আর সকল ব্যবসার মতই অনলাইন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে ভাল মন্দ দিক বুঝার বিষয় রয়েছে। তাই শুরুতেই অনলাইন ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে রাখা বাঞ্চনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here