স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ গুলো যদি আপনার জানা থাকে, তাহলে আপনি খুব সহজেই প্রতিরোধ করতে পারবেন। দিন দিন আপনার স্মৃতিশক্তি কি কমে যাচ্ছে? আপনি কি জানতে চান কেনো স্মৃতিশক্তি লোপ পাচ্ছে? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য উপযুক্ত। এখানে আপনি জানতে পারবেন স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার ৭টি বিশেষ কারণ বিস্তারিত তথ্য সহকারে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ গুলো প্রতিরোধ করার উপায়

আপনি কিছুক্ষণ আগে কি করলেন সেইটা যদি মনে না থাকে, অথবা কোন পড়াশোনা করলে বা কাজ করে থাকলে যদি মনে না থাকে। তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্মৃতিশক্তি ভালো না, দুর্বল হয়ে পরেছে। আর এটি অসুস্থ হওয়া মানে আপনার সবকিছু অসুস্থ হয়ে যাওয়া একই কথা। তাই অবশ্যই আপনার স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণগুলো জানা উচিত।

০১। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত না ঘুমানো।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার বা দুর্বল হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত না ঘুমানো। কম ঘুমানো বা রাত্রি জেগে থাকার ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। আমরা অনেকেরই এই অভ্যাস রয়েছে- ইচ্ছে করে রাত জেগে থাকা, ঘুমানোর খুব প্রয়োজন হলেও, না ঘুমাতে যাওয়া এবং বিভিন্ন কাজের চাপে কম ঘুমানো। আপনি জানেন কি এইভাবেই প্রতিনিয়ত নষ্ট করছেন আপনার স্মৃতিশক্তি।

এক গবেষণায় বলা হয়েছে, সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত না ঘুমালে আমাদের মস্তিষ্কের সিন্যাস্টিক প্লাস্টিসিটি উন্নত করে, ফলে মস্তিষ্কের সিন্যান্স দুর্বল হয়ে পড়ে যা নিউরনের সংযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে ধীরে ধীরে আমাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। আর এইভাবেই একটা সময় এটি নিতান্তই কমে যায়। তাই ঘুমকে অবহেলা নয়, পর্যাপ্ত ঘুমান প্রতিদিন। অর্থাৎ নিয়মিত অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন।

০২। সর্বদা মানুসিক চাপে থাকলে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানসিক চিন্তা করা। মাত্রাতিরিক্ত মানুসিক চাপের ফলে আপনার শরীর ও মস্তিষ্ক খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে যাবে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সব সময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন সবসময় নিজেকে মানুসিক চাপ মুক্ত রাখার জন্য কারণ এটি যথেষ্ট ক্ষতিকর। হ্যাঁ এটি স্মৃতিশক্তি কমাতে ও বিরাট ভূমিকা রাখে। অনেকেই বলবেন মানসিক চাপ কেউ ইচ্ছে করে নেয় না, অটোমেটিকেলি চলে আসে। কিন্তু একেবারেই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চাপ নেয়ার ভুল কাজটি কিন্তু আপনিই করে থাকেন।

কারণে অকারণে অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিয়ে থাকেন এবং দুশ্চিন্তা করতে থাকেন। আর এর ফলে শরীরের অনেক ক্ষতি হয় এবং পাশাপাশি স্মৃতিশক্তি বিলপ্ত হয়ে যায়। তাই যেকোনো কাজ নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মানসিক টেনশন না করাই ভালো।অতিরিক্ত মানসিক চাপের অর্থ মস্তিষ্কের ওপর অনেক বেশি মাত্রায় চাপ ফেলা। তাই মানসিক চাপ নিয়ে লাভ হচ্ছে না, বরং ক্ষতিই হচ্ছে আপনার।

০৩। পুষ্টিকর খাবারের অভাব।

নিয়মিত পুষ্টিকর খাবারের অভাবে স্মৃতিশক্তি অনেকটা লোপ পায়। আমাদের ৫টি মৌলিক উপাদানের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার। খাবার ছাড়া আপনি বেঁচেই থাকতে পারবেন না ঠিক যেমন সত্য, ঠিক নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার না খেলে ও অসুস্থ পরবেন খুব সহজেই। তাই শরীর স্বাস্থ্য, মস্তিষ্ক সুস্থ, সতেজ ও ভালো রাখতে অবশ্যই আমাদের নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে।

শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি জন্য অবশ্যই আপনাকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার জন্য অনেকে খাবারই দায়ী। যেমন – কেক, সাদা চিনি, পাস্তা, বাবলগাম বা চিউইংগাম, রেড মিট বা মাংস এবং মাখন এইসব খাবার ব্রেইনের উপর কিছুটা প্রভাব ফেলে।

০৪। হতাশা ও একাকীত্ব থাকলে।

হাতাশা ও একাকীত্ব থাকলে ব্রেইনের উপর চাপ পরে, যার ফলে মস্তিষ্ক অনেকটা ক্ষতি হয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই হতাশা থাকে। হতাশা মানুষকে সাফল্য থেকে দূরে ফেলে দেয়। হতাশাগ্রস্ত মানুষ কখনও ভালো কিছু করতে পারে না, কোন কাজ ঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে পারে।

সবসময় চিন্তা করতে আর বার বার ভাবে এইটা করবো নাকি ওইটা করবো, এইরকম করতে করতে একটা সময় জীবনে অনেক বড় সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। এছাড়াও এটি শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর বেশি হতাশায় বা একাকীত্ব থাকলে ব্রেইন অনেকটা চাপ সৃষ্টি হয় ফলে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি কমে যেতে থাকে। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার এটিও একটি বিশেষ কারণ।

০৫। পরিবেশ দূষিত থাকলে।

ভালো কিছু করতে হলে, ক্রিয়েটিব কিছু তৈরি করতে হলে, অবশ্যই আপনাকে ওইরকম পরিবেশই থাকতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি উপযুক্ত একটা পরিবেশে না থাকেন, তাহলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সুম্মখীন হতে হবে। শুধু তাই নয়, শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ও স্মৃতিশক্তি, মন মানসিকতা সতেজ রাখার জন্য ও বিশেষ ভূমিকা রাখে একটা উপযুক্ত পরিবেশ।

অর্থাৎ এককথায় যদি বলা চলে, আপনি যদি খারাপ পরিবেশে থাকেন, খারাপ মানুষের সাথে চলাফেরা করেন, অযথা অলস ভাবে সময় কাঁটিয়ে দেন এবং সবসময় বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা করেন তাহলে আপনার স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে কমে যাবে। তাই এটি সুস্থ ও ভালো রাখতে অবশ্যই আপনাকে ভালো একটা পরিবেশে থাকতে হবে এবং সবসময় পজিটিব মানুষের সাথে চলাফেরা করতে, মন খুলে হাসাহাসি করতে হবে।

০৬। মস্তিষ্কে টিউমার বা ইনফেকশন হলে।

মস্তিষ্কে টিউমার বা ইনফেকশন হলে স্মৃতিশক্তি কমে যায়। মস্তিষ্কের টিউমার বা ব্রেইন টিউমার হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন মানুষের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক কোষ তৈরি হয়। ব্রেইনের জন্য এটি একটি ক্ষতিকর রোগ। এই টিউমার দুই প্রকারের হয় যার একটি হচ্ছে ম্যালিগ্যান্ট বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার এবং অপরটি হচ্ছে বেনাইন টিউমার।

এটি শরীর খারাপ করতে একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে, এছাড়াও এটি খুব সহজেই স্মৃতিশক্তি কমিয়ে ফেলে। তাই অবশ্যই নিজেকে সতেচন রাখতে হবে, মস্তিষ্কে টিউমার বা ইনফেকশন যেন না হয় খেয়াল রাখতে হবে। তার জন্য প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, বিভিন্ন পরীক্ষা – নিরীক্ষা করতে হবে।

০৭। দীর্ঘস্থায়ী অ্যালকোহল সেবন।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে সর্বশেষ পয়েন্ট হচ্ছে অ্যালকোহল সেবন। হ্যাঁ, স্মৃতিশক্তি কমানোর জন্য এটিও একটি অন্যতম কারণ। এখন তো ধূমপানকে অনেকে ফ্যাশন মনে করে। আমরা অনেকেই ধূমপান করে থাকি। অনেক সময় কয়েকজন আড্ডা দেয়ার সময় একসাথে ধূমপান করে থাকি। একসময় এটিতে আসক্ত হয়ে যায় যার ফলে বিরাট ক্ষতি হতে পারেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এ ধরণের বদ অভ্যাসে স্মৃতিশক্তি অনেক দুর্বল হয়ে যাবে।

অ্যালকোহল পানের ফলে আপনার মস্তিষ্কে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর কোনো প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি সামান্য অ্যালকোহল পানের ফলেও আপনার মস্তিষ্কের কোষগুলো দূর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং স্মৃতিভ্রংশ হতে পারে। সিগারেটের নেশাও কিন্তু স্মৃতিশক্তিকে দুর্বল করে তোলে আর এগুলো সর্বদাই আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here