md-riduwan-molla

প্রতিটি মানুষের সফলতার পেছনে একটি গল্প থেকে যায়। কোন কিছু শুরু করার সাথেই সাথেই কি সফলতা এসে হাতছানি দেয়? না, সফলতা রাতারাতি ধরা দেয় না। কঠোর পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে সফলতাকে অর্জন করে নিতে হয়। আমরা অনেক সফল ব্যক্তিদের চিনি কিন্তু আমরা কি জানি তাদের সফলতার পেছনের গল্পগুলো? হ্যাঁ, আজকে আমরা জানবো একজন সফল গ্রাফিক ডিজাইনার কিভাবে সফল হয়েছেন তার পেছনের গল্প। 

আজকে আমরা যার সফলতার পেছনের গল্প জানবো তিনি একাধারে একজন সফল গ্রাফিক ডিজাইনার এবং টিষ্টিও নামে একটা স্টার্ট-আপ কোম্পানির ফাউন্ডার এবং সিইও। এছাড়াও তিনি মাইক্রোস্টক সাইটে নিজের গ্রাফিক্স প্রডাক্ট সেল করেন, বিভিন্ন ক্লায়েন্ট বেজড মার্কেটে কাজ করেন এবং অ্যামাজনে বই পাবলিশ করেছেন। 

একজন সফল গ্রাফিক ডিজাইনার ব্যার্থতাই যার সফলতার উৎস – মোঃ রিদুয়ান মোল্লা

তার সফলতার পেছনের গল্প ট্রেন্ডি বাংলার পাঠকদের শুনানোর জন্য ট্রেন্ডি বাংলার পক্ষ থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছি এবং তিনি অত্যন্ত গুছিয়ে আমাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তাহলে চলুন তার প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমেই তার সফলতার পেছনের গল্প জেনে নেয়া যাক। 

# আপনার পরিচয় এবং কি নিয়ে কাজ করছেন ? 

আমি মোঃ রিদওয়ান মোল্লা। আমি নিজেকে একজন ডিজাইনার হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। এছাড়া টিষ্টিও নামে আমার একটা স্টার্ট আপ কোম্পানি আছে এখানে আমি ফাউন্ডার এবং সিইও হিসেবে আছি। আমরা বেশ কিছু ভিন্ন বিজনেস নিয়ে কাজ করি এর মধ্যে গ্রাফিক্স প্রোডাক্ট সেল করা, অ্যামাজন এবং ক্লাইন্ট সার্ভিস অন্যতম। 

# আপনার কাজের সেক্টরে আপনি কতোটা সফল?

সফলতার সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেকরকম। আমার আজকের পজিশন অনেকের কাছে স্বপ্ন আবার অনেকের কাছেই সাধারণ ব্যাপার। তবে আমি সবসময় নিজেকে সফল ব্যক্তি হিসেবে ভাবতে পছন্দ করি। যে কাজের মধ্যেই সুখ নিহিত থাকে সেখানে অখুশি থাকার সম্ভাবনা সীমিত। 

# আজকের পজিশনে আসার পেছনের গল্পটা জানতে চাই  

আজকের সফল গ্রাফিক ডিজাইনার হয়ে ওঠা আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলো এই সেক্টরে কাজ করা। এর  কারণ হলো আমি যে অঞ্চল থেকে আসছি সেখানে ইন্টারনেট ব্যাপারটা মানুষ বুঝলো এই তো সেদিনের কথা। তবে পড়া লেখার জন্য আমি নওগাঁয় চলে আসি। সেখান থেকে মূলত ইন্টারনেট, কম্পিউটার এসব ব্যাপার সম্পর্কে ধারনা লাভ করি এবং এইসব ব্যাপার গুলো ধীরে ধীরে শিখতে থাকি। গ্রাফিক্স ডিজাইনের প্রতি অন্যরকম একটা টান কাজ করত সবসময়। তবে পর্যাপ্ত গাইডলাইন অভাবে আর পড়ালেখার চাপে সে পথের যাত্রাটা শুরুটা হয় অনেক দেরিতে। অনেক ভালো স্টুডেন্ট হওয়া স্বত্তেও কেনো জানি ভালো রেজাল্ট ব্যাপার টা আমার ধরা দেয়নি কোনসময়। কোচিং এ যেখানে বাঘা বাঘা ছাত্রদের সাথে ফাইট করে প্রথম দ্বিতীয় হতাম সেখানে কলেজে বরাবরই কোন না কোন বিষয়ে ফেল।

এটা হয়তো নিয়তির বিধান ছিলো। যায় হোক আশানরুপ ভাবে আমি উচ্চ মাধ্যমিকে খুব ভালো করে ফেল মারলাম। এই জায়গাটাই আসলে জীবনের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে ফ্যামিলি থেকে তেমন একটা প্রেসারে পড়তে হয়নি। তবে আত্মীয় স্বজন আর পাড়া প্রতিবেশীর থেকে যে ব্যবহার পেয়েছি সে সময় তা হয়তো অনেকেই সহ্য করতে পারতোনা। আমি বাসা থেকে বের হয়ে কয়েকজন বন্ধুদের নিয়ে মাঠের পাশে বাগানে বসলাম। যেখানে ওদের বুক ফুলিয়ে বলতে শুরু করলাম দেখ ভাই আমি তো এখন এক বছর পিছায়া গেলাম তবে এমন কিছু একটা করবো যে আমি দশ বছর সামনে আগায়ে যাব।

যায় হোক যেমন কথা তেমন কাজ গ্রাফিক ডিজাইন শেখার জন্য রিসোর্স খুঁজতে শুরু করলাম। তবে দুঃখের ব্যাপার রিসোর্স বলতে তেমন কিছুই নাই শহরে। তবে শুরু তো যেকরেই হোক করতেই হবে সে উদ্দেশ্যে একটি স্টুডিওতে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করলাম। আমার গুরু ছিলেন চন্দন দাদা। উনি হাতে ধরে ধরে বিভিন্ন কাজ দেখাতেন এবং শিখিয়ে দিতেন ।  যেমন ছবি এডিট করা, ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করা ইত্যাদি। আমি সকাল বেলা ষ্টুডিও যেতাম সবার আগে।

গিয়ে দোকান খুলতাম। সকাল বেলা চা বিস্কুট, দুপুরে এক প্লেট খিচুড়ি আর রাতে বাসায় খেতাম। শহরে আমি নানু বাসায় থাকতাম। বেশিরভাগ সময় দেখা যেত রাত ৩-৪ টা বাজতো বাসায় যাইতে। চন্দন দাদা বাইকে করে বাসায় এগিয়ে দিয়ে আসতো। নানু বয়স্ক হওয়ায় তারা আগেই ঘুমায় পড়তো। আমি প্রাচীর টপকায়ে বাসায় ঢুকতাম। একটা ডুপ্লিকেট চাবি থাকতো সবসময় আমার কাছে। এইভাবেই চলতে থাকলো কাজ শেখা পাশাপাশি পড়াশুনা। সে অনেক বিস্তর ঘটনা বলতে গেলে শেষ হবে না। 

উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করে অবশেষে আমি ঢাকা চলে আসি ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার জন্য।কিন্তু মনে মনে ফন্দি ছিল আগে আমি গ্রাফিক ডিজাইন শিখবো। তাই আমার টার্গেট অনুযায়ী সবার আগে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যাই এবং নিজের কম্পিউটার কিনে ফেলি। 

আর শুরু অমানুষের মত কাজ করা। অমানুষ বলছি একারণে যে মানুষ মানুষের তুলনায় কয়েকগুন পরিশ্রম করে তাকে আর কি বা বলি। যাই হোক এর পর থেকে একেকটা স্টেপে এক এক চ্যালেঞ্জ শুরু। আমি চ্যালেঞ্জ নিতেই পছন্দ করি। এখন আমার বলতে বিন্দুমাত্র সংকোচ লাগে না আমি একসময় টাকার অভাবে অনাহারে রাত পার করেছি। তবে এমন না যে আমি দরিদ্র পরিবারের সন্তান। আমার যা সম্পদ আছে এমন সম্পদের মালিক অনেকেই শুয়ে বসে দিন কাটায়। তবে ওই যে এই লাভ চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জের কথা বলতে গিয়ে আরেকটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো।

আমি মূলত ২০১৬ এর মাঝামাঝি থেকে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দেই। তবে আমার সবসময় ইচ্ছা ছিলো অনেক বড় কিছু করার। ফ্রিল্যান্সিং করে আসলে ভালো ভাবে জীবন চালানো যায় তবে অনেক বড় কিছু করতে গেলে টিম না নিয়ে করা সম্ভব নয়। যাই হোক ১৮ সালে এসে টিষ্টিও এর কো ফাউন্ডার আশিককে নিয়ে শুরু করলাম। তো তখন যে ব্যাপারটা খেয়াল করলাম যে আমার ৬ ডিজিটের ইনকাম তো তখন যে ব্যাপারটা খেয়াল করলাম যে আমার ৬ ডিজিটের ইনকাম আমার বড় শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পেটে খিধা না থাকলে যা হয় আর কি। 

ক্লায়েন্টের কাজের প্রেসারে নতুন কিছু শুরু করা তো দূরের কথা ভাবার ও সময় হয় না বললেই চলে। আমি যেটা করলাম সেটা হলো ২৫০+ রিভিউ সহ একাউন্ট ডিলেট এবং আরেকটি ২০০+ রিভিউ সহ একাউন্ট অনিদিস্ট কালের জন্য বন্ধ আর পার্মানেন্ট ক্লাইন্টদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ক্যানসেল করে দিলাম। ব্যাপারটা ভীষণ বোকামি টাইপ কাজ হলেও আমার জন্য জরুরি ছিল।

ইনকামের রাস্তা বন্ধ হলে তো যেভাবেই হোক কিছু একটা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি ধাক্কা ছাড়া জীবনে বড় কিছু করা সম্ভব না। ধাক্কা পরিবার বা অন্য কোথাও থেকে না পেলে নিজে নিজেই ক্রিয়েট করা উচিত। যেটা আমি করেছিলাম। বাধা জীবনে অনেক ছিল আছে থাকবে। এগুলোকে কখনোই তোয়াক্কা করিনি। একেকটা বাধা মানুষকে সফলতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। 

আজকের অবস্থানে আসার পিছনে প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষভাবে অনেক মানুষ জড়িত। তবে তিন জনের কথা না বললেই নয়। আশিক যে আমার ব্যবসার শুরু থেকে সাথে দিয়েছে , ফয়সাল মোস্তফা ভাই যিনি বড় স্বপ্ন দেখতে সাহস জাগিয়েছে আর শিশির ভাই যিনি সবসময়ের জন্য আমার শুভাকাংখী ।

# আপনি যেই সেক্টরে কাজ করে সফল হয়েছেন, তার ভবিষ্যৎ কেমন?

আমরা প্রতিটা সেক্টরেই আলহামদুরিল্লাহ সফল। ভবিষ্যৎ এর কথা বলতে গেলে গ্রাফিক্স প্রোডাক্ট সেলিং বিজনেস আর ক্লাইন্ট ওয়ার্ক এভারগ্রীন। এগুলোর চাহিদা ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে ব্যবসার ধরণে পরিবর্তন আসবে।পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে।তাহলে আর পিছিয়ে পরার সুযোগ থাকবে না। আর অ্যামাজন কেডিপির ভবিষ্যৎ সামনে বেশ উজ্জ্বল। সময় উপজোগী বই পাবলিশ করতে পারলে হিউজ অপর্চুনিটি ক্রিয়েট করা সম্ভব হবে।

# টিষ্টিও নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি ? 

আমাদের প্ল্যান হলো টিষ্টিওকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করানো এবং মাইক্রোস্টকে নিজেদেরকে টপ ১০ কন্ট্রিবিউটারের লিস্টে যোগ করানো। এছাড়া অ্যামাজন ভালো ভালো বই পাবলিশ করা যাতে খ্যাতনামা পাবলিশারদের সাথে কম্পিট করে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারি। 

# যারা নতুন শুরু করতে চায় তাদের জন্য কিছু দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ  

নতুনদের জন্য জন্য বলতে চাই কাজে ফোকাস করো । কে কি বললো, কে কি ভাবলো এসব নিয়ে চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নাই। মনে রেখে যারা তোমাকে দেখে হিংসা করে তাদের ক্ষমতা নাই তোমার পজিশনে আসার। নিজের কাজকে ততটাই ভালোবাসা যতটা নিজেকে। বিশ্বাস কর আজকে তুমি যে স্বপ্ন দেখো একসময় তা তোমার কাছে সাধারণ ব্যাপার মনে হবে। কাজেই এগিয়ে যাও সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here