UI ডিজাইনার
সফল UI এবং UX ডিজাইনার

UI/UX ডিজাইনার সিলেটের সৌমিত্র সবুজ, যিনি মাত্র ৩ বছরের মধ্যেই নিজেকে সাফল্যের স্তরে নিয়ে গেছেন। কঠোর পরিশ্রম আর অসাধারণ মেধা খাটিয়ে নিজের জীবন ও ফ্যামিলিকে করেছেন সুখী।

আসলে যারা কঠিন পথকে পাড়ি দিয়ে ভালো একটা অবস্থানে চলে আসে, তাদের জীবন অনেক সুখকর হয়। সফলতা মানুষকে প্রাকৃতিকভাবে আনন্দ দেয় যা কখন হিসাব করে বুঝানো যাবে না। সব মানুষের জন্ম সফলতার জন্য হয় না, যারা কঠিন ও অসম্ভব পথকে কঠোর পরিশ্রম দ্বারা সম্ভব করে এবং উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করে তাদের জন্যই সফলতা। প্রাথমিক অবস্থায় আপনি যতটুকু সঠিক পরিশ্রম করবেন, বাকি জীবনে ঠিক ততটুকুই সুখে কাটাতে পারবেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা একটা কথা বলেছিলেন –

“আমাকে আমার সফলতা দ্বারা বিচার করো না; ব্যর্থতা থেকে কতবার আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা দিয়ে আমাকে বিচার করো।“

মানুষের জীবনে ব্যর্থতা থাকবেই, তাই বলে হাল ছেড়ে দিলে হবে না। যারা সফল হয়েছেন, হচ্ছেন তাদেরকে একটু দেখুন কেউ সহজেই সফল হয়নি। দিনের পর দিন যথেষ্ট পরিশ্রম করে, বিভিন্ন সমস্যা, বাঁধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে, নিজের মেধাকে বিকশিত করে বড় হয়েছেন।

আজকে UI/UX ডিজাইনার সিলেটের সৌমিত্র সবুজের অসাধারণ সফলতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো, পাশাপাশি নতুনদের জন্য রয়েছে খুব কার্জকরী কিছু দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ। তাহলে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন, আশা করি আপনার জন্য অনেক হেল্পফুল হবে এবং নতুন কিছু জানতে পারবেন।

সফল সিলেটি UI/UX ডিজাইনার সৌমিত্র সবুজ
অফডেতে গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি

সফল UI/UX ডিজাইনার সৌমিত্র সবুজ

আমি সৌমিত্র সবুজ, একজন সিলেটি UI/UX ডিজাইনার । বর্তমানে Cleverclip (সুইজারল্যান্ডের একটা কোম্পানি) এ UI/UX ডিজাইনার হিসেবে কর্মরত আছি, পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করছি এছাড়াও আমার ছোট একটা টিম আছে Twinkle Creative নামে। আমরা ডিজিটাল প্রোডাক্ট ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস দিয়ে থাকি। কাজের পাশাপাশি টুকটাক পড়াশুনাও করছি, সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সটিতে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে আছি।

বর্তমানে কি কি নিয়ে কাজ করছেন?

UI/UX ডিজাইনের ক্ষেত্রটা আসলে অনেক অনেক বিশাল, সেই বিশাল ক্ষেত্র থেকে আমি ওয়েবসাইট ডিজাইন, মোবাইল এপ ডিজাইন, ডাশবোর্ড ডিজাইন নিয়ে কাজ করছি। এছাড়াও আমার কোম্পানিতে সব ইন্টারেক্টিভ প্রোডাক্টের রিসার্চ, আইডিয়াশন, ইউজার ফ্লো তৈরি, ওয়য়ারফ্রেম তৈরি, ইউজার ফিডব্যাক ইমপ্লিমেন্টশনসহ যাবতীয় প্রোডাক্ট লাউঞ্চিংযের কাজ করে থাকি। (কোডিং ছাড়া)

সফল UI, UX ডিজাইনার
দিনের বেশির ভাগ সময় যেখানে কাটে

আপনার কাজের সেক্টরে কতটা সফল?

সফলতার সংজ্ঞাটা এক একজনের কাছে এক একরকম, আমি আমার কাজের সেক্টরে কতোটুকু সফল জানি না তবে আজ আবার ব্যাক্তিগত জীবনে বা পারিবারিক জীবনে যতোটুকুই উন্নতি করতে পেরেছি সেটা এই সেক্টরের সাথে যুক্ত হয়েই। এখন পর্যন্ত যা অর্জন করেছি সেগুলো দিয়েই আমার লাইফস্টাইল যেমন পরিবর্তন করেছি, অপরদিকে আমার ফ্যামিলিতেও অনেক অবদান রেখেছি। সফল কিনা বলতে পারছি না তবে ঈশ্বর সুখি রেখেছেন এটুকু বলতে পারি। জিবনের লক্ষ্য তো এখানেই শেষ নয়, কাজ করে যাচ্ছি আশা করি সামনে হয়তো আরও ভালো কিছু হবে।

সিলেটি UI/UX ডিজাইন
থিমফরেস্টে কাজ শুরু করার পর এটাই ছিলো আমার নতুন কাজের জায়গা

কিভাবে আপনি আজকের পজিশনে আসতে পেরেছেন?

আমি আমার পিসিতে প্রথম ফটোশপ ইন্সটল দেই ২০১৭ সালে। এর আগে ফটোশপ কি চিনতাম না কখনও ঘাটাঘাটি করি নি তাই জানাও হয় নি। ২০১৭ সালে গ্রাফিক্স ডিজাইনের একটা সরকারি কোর্সে ভর্তি হয়েছিলাম কোর্স শেষ করার পর বছরখানের ফটোশপ নিয়েই ঘাটাঘাটি করতাম কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হতো না কারন কোনো গাইডলাইন পাচ্ছিলাম না।

তখন আমার Core I3 আর ৪ জিবি র‍্যামের একটা পিসি ছিলো আমার পিসিতে ভালোভাবে ব্রাউজিং করা যেতো না এতো স্লো ছিলো, সেই পিসিতে আমি ফটোশপ দিয়ে কাজ করেছি অনেক কষ্ট লাগতো আমার পিসি দিয়ে কাজ করতে। কারণ ১০ মিনিটের কাজ করতে ১ ঘন্টা লাগতো। তারউপর মাঝে মাঝে যদি কাজের ফাঁকে কারেন্ট চলে যায় তাহলে তো কেল্লা ফতে পুরো সময়টাই মাটি কারন আমার UPS ছিলো না, পিসি আপডেট করি নি, UPSও কিনি নি কারন ইচ্ছা ছিল নিজে ইনকাম করে তারপর কিনবো।

তারপর ২০১৭ এর শেষের দিকে ইউনিভার্সিটিতে UI/UX ডিজাইনের উপর একটি ওয়ার্কশপ হয়। ওয়ার্কশপ নিয়েছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় দাদা সূর্য সেন দাস রাজ এবং শেখ আল রায়হান ভাই। এর আগে UI/UX সম্বন্ধে টুকটাক পড়াশুনা করেছিলাম কিন্তু অই ওয়ার্কশপে কিভাবে UI/UX ডিজাইন নিয়ে ক্যারিয়ার গড়া যায় সেটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল।

তাছাড়াও অনেক রিসোর্স পেয়েছিলাম সেদিন। মূলত সেদিন থেকেই আমার UI/UX ডিজাইনে মুভ করা। সেদিন বাসায় এসে কীভাবে কাজ করবো সেটার জন্য আগামী কয়েকমাসের প্ল্যান বানিয়েছিলাম আর কাজ শুরু করে দিলাম।

UI/UX ডিজাইনার সৌমিত্র সবুজ
শুরুটা ছিলো এখান থেকেই

আসলে শুরু করাটাই ছিলো সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ তখন আমার ভার্সিটিতে রেগুলার ক্লাস থাকতো তারউপর আমার টিউশনিও ছিলো সবকিছুর পরে বাসায় এসে সারারাত কাজ করছি কোনো কোনো দিন, না ঘুমিয়ে কিংবা ৩-৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে ক্লাস করতে গেছি।

এভাবে কয়েকমাস যাওয়ার পর থিমফরেস্টে কাজ শুরু করি থিমফেরেস্টে টেমপ্লেট এপ্রুভের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় শুরুর দিকে আমি ২-৩ টা রিজেক্ট খেয়েছিলাম রিজেক্ট খাওয়ার পর হতাশ হয়েছি অনেক কিন্ত ভেঙ্গে পড়িনি।

প্রথম ওয়েবসাইট টেমপ্লেট এপ্রুভের অনুভূতি

২০১৮ সালের আগস্ট মাসের ৩১ তারিখ আমার প্রথম ওয়েবসাইট টেমপ্লেট থিমফরেস্টে এপ্রুভ হয়। সেইদিনের অনুভূতিটা এখনও স্পষ্ট মনে আছে বিগত কয়েকমাসের কষ্ট এক মুহূর্তেই ভুলে যাই।

তারপর ৪ মাসে এক এক করে ২০-২২ টার মতো ওয়েবসাইট টেমপ্লেট এপ্রুভ করাই। থিমফরেস্টে কাজ শুরু করার পরে কিছু কিছু ইনকাম করা শুরু করি আর আমার পিসিটাও আপগ্রেট করি এবং কাজের জায়গায়ও একটু আপডেট করি। ২০১৮ থেকেই বাড়ি থেকে টাকা পয়সা আনা মোটামোটি বাদ দিয়ে দেই, নিজের টাকা দিয়ে নিজে চলার চেষ্টা করি।

২০১৯ এর শুরুর দিকে আমি ElectronThems নামে কুষ্টিয়ার একটা কোম্পানিতে UI Designer হিসেবে জয়েন করি তারা মূলত আমার থিমফরেস্ট দেখেই আমাকে হায়ার করেছিলো আর সেটাই আমার প্রথম কোনো অফিশিয়াল জব ছিলো। ২০১৯ সাল থেকে আমি আমার খরচটা ভালোভাবে চালিয়ে ভার্সিটির খরচ চালিয়ে ঘরের ছোটোকাটো খরচে কন্ট্রিবিউট করা শুরু করি।

২০১৯ এর সেপ্টেম্বরে ElectronThemes থেকে লিভ নেই আর ড্রিবলে আমার পোর্টফলিও মেরামতের কাজ শুরু করি। ড্রিবলে কয়েকমাস কাজ করার ফলস্বরুপ ড্রিবল মিটাআপ-২০১৯, সিলেটে বেস্ট এপ ডিজাইনার এওয়ার্ড পাই। তারপর ২০১৯ এর শেষের দিকে Roytter নামের একটা কানাডিয়ান কোম্পানির ঢাকা অফিস থেকে নক পাই, নক পাওয়ার কিছুদিন পর ইন্টারিভিউ দেই এবং সিলেক্টও হয়ে যাই।

টিম Roytter এর সাথে UI/UX ডিজাইন
টিম Roytter এর সাথে

সিলেক্ট হওয়ার পর জয়েন করবো কি করবো না সেটা নিয়ে একটু দ্বিধায় পড়ে যাই। কারণ ঢাকায় এর আগে কখনও তেমন একটা থাকা হয় নি। তারপর সেই কোম্পানি সিলেট থেকে আরেকজন সিনিয়র ডিজাইনার আজিজ ভাইকেও হায়ার করে, আজিজ ভাই জয়েন করছে শুনে আমি আর পিছপা হই নি ২ দিন পরেই জয়েন করি।

জয়েন করার সময় আমার সেমিস্টার ফাইনাল চলে কিন্তু আমার কাছে পড়াশুনা থেকে তখন ক্যারিয়ার বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো তাই পরীক্ষা বাদ দিয়েই ঢাকা চলে যাই। কিন্তু ঢাকায় বেশিদিন থাকা হয়নি তিন মাস পরে ঢাকা থেকে সিলেট মুভ করি আর পুরোদমে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করি আর পোর্টফলিও নিয়ে আবার কাজ শুরু করি। তারপর এই বছরের মে মাসে Cleverclip থেকে নক পাই, ইন্টারভিউ দেই এবং সিলেক্টও হয়ে যাই।

জয়েন করার পরে আমি কাদের কাদের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছিলো সেটা জানতে পারি, যাদের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিলো সেখানে যদিও এশিয়ার তেমন কাউকে পাইনি কিন্তু সেই ডিজাইনারদের প্রোফাইল এর তুলনায় আমার প্রোফাইল কিছুই না আমার কাছে মনে হয়েছিলো। কারণ এমনও কেন্ডিডেট পেয়েছিলাম যাদের ড্রিবলে ফলোয়ার ২০ হাজারের উপরে সেই তুলনায় আমার ড্রিবল ফলোয়ার ১ হাজার।

আমার কোম্পানির হায়ারিং প্রসেস থেকে একটা জিনিস খুব ভালোভাবে শিখতে পেরেছিলাম, শুধুমাত্র ভালো কাজ জানলে আর ড্রিবলে বিহান্সে অনেক ফলোয়ার থাকলেই হয় না, কাজের প্রসেস, কমিউনিকেশন, ডিটেইলস আরও অনেক কুটিনাটি ও সাপোরটিভ জিনিস লাগে ।

সিলেটি ডিজাইনারদের সাথে আড্ডার মুহূর্ত
সিলেটি ডিজাইনারদের সাথে আড্ডার মুহূর্ত

আমি আজ কিছুই না তবে যেটুকুই করেছি সেটার জন্য অনেক অনেক কষ্ট করতে হয়েছে, আমি চাইলেই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারতাম, ঘুরতে যেতে পারতাম, সারারাত পাপজি খেলে সময় কাটিয়ে দিতে পারতাম, গেইম অফ থ্রুন্স দেখে রাতের পর রাত পার করে দিতে পারতাম। সেগুলা না করে সেই সময়টা নিজের কাজের জন্য ক্যারিয়ায়ের জন্য দিয়েছি। আর সেটার ফলসরুপ ঈশ্বরের কৃপায় যা পেয়েছি সেটাতে আমি অনেক সন্তুষ্ট।

এই ছোট ক্যারিয়ারে Airbnb, Pinterest, Flightcar এর মতো প্রথম সারির কোম্পানির ক্লাইন্টের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে।

UI/UX ডিজাইনের ভবিষ্যৎ কেমন?

ডিজাইন ইন্ডাস্ট্রির সাম্প্রতিক যে ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে সেটা দেখে নিঃসন্দেহে বলা যায় UI/UX এর ভবিষ্যৎ আরো অত্যাধুনিক হবে এবং প্রযুক্তির সব খাতেই UI/UX ডিজাইন বা প্রোডাক্ট ডিজাইন নিরবিচ্ছিন্নভাবে যুক্ত হবে।

যেহেতু বর্তমান বিশ্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ভিআর), অগমেন্টেড রিয়েলিটি (এআর), ভয়েস এবং ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) ভিত্তিক ডিভাইসের সাথে আরো সহজ হয়ে উঠছে, সেক্ষেত্রে বলাই যায় UI/UX ডিজাইনারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই।

কিন্তু এতো খুশি হওয়ার কিছু নাই কারণ কেনো বলছি, ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন আমরা এখন যেভাবে ডিজাইন করি সেভাবে ডিজাইন করা হবে না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমান অ্যালগরিদম UI সেক্টরটা অনেকটাই আমাদের সেক্টরটা দখল করতে পারে। আমরা কিছু অ্যাপ্লিকেশন যেমন Uiizard, Sketch to Code এবং অন্যান্য আসন্ন সফটওয়্যার দেখেছি। তাই, নিজেকে ওই রকমই আপডেট করে নিতে হবে।

যদিও UX ডিজাইনাররা বৃহত্তর ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এবং এর ইউজারের প্রোডাক্ট ইউজের উপর কাজ করে থাকি তবুও UX ডিজাইনের প্রসেসেও অনেক পরিবর্তন আসবে আর আমাদের সেই প্রসেসগুলার সাথে নিজেদের আপডেট করতে হবে।

স্মার্ট হোমের সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত যদিও আমাদের দেশে এখনও সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি। কিন্তু উন্নত বিশ্বে স্মার্ট হোম অনেক বেশিই পরিচিত। স্মার্ট হোমকে আরও উন্নত করতে সেখানে অবশ্যই ভালো UI/UX ইমপ্লিমেন্টেশনও প্রয়োজন এবং আমাদের সেভাবেই কাজ করতে হবে।

এআই এবং আইওটি-এর মতো প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে প্রচুর ডিভাইসে ব্যবহৃত UI/UX এর সাথে ভবিষ্যতে আমাদের লাইফস্টাইল আরও উন্নত হবে। সময় যত এগিয়ে যাচ্ছে এবং প্রযুক্তির বিবর্তনের সাথে সাথে গুগল হোম, আমাজন অ্যালেক্সা এবং নেস্ট বিকশিত হতে থাকবে এবং সেখানে আমাদের UI/UX ডিজাইনারদেরই কাজ করতে হবে।

যেহেতু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সিস্টেম প্রতিনিয়ত আরো সমন্বিত হয়ে উঠছে (উদাহরণস্বরূপ ভিআর কন্ট্যাক্ট লেন্স, আইডেন্টিফিকেশন ডিভাইস বা ন্যানোবট) সেক্ষেত্রে চোখ বুঝে বলা যায় বিশাল টেলিভিশন সেট এবং এখনকার যে বিশাল বিশাল সিনেমার সেগুলা পর্দা অদৃশ্য হয়ে যাবে আর সেগুলার জায়গা অগমেন্টেড রিয়েলিটি দখল করবে।

UI/UX ডিজাইনের ভবিষ্যৎ অনেকটাই উন্নত, এবং সেদিন দূরে নয় যখন টেকনলজির প্রতিটি সেক্টরেই UI/UX ডিজাইন ছড়িয়ে পরবে।

আজিজ ভাইরের সাথে Roytter অফিসে
আজিজ ভাইরের সাথে Roytter অফিসে

UI/UX শিখে কি শুধু ফ্রিল্যান্সারই হওয়া যায়?

অবশ্যই না!
দেশি বিদেশি অনেক কোম্পানি আছে যারা UI/UX ডিজাইনার হায়ার করে থাকে। এছাড়া এখন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অনেক আইটি ফার্ম তৈরি হচ্ছে, স্টার্ট আপ তৈরি হচ্ছে। একটা আইটি ফার্ম বা একটা স্টার্ট আপ যদি কোনো ডিজিটাল প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে তবে সেখানে অবশ্যই UI/UX ডিজাইনারে সাহায্য প্রয়োজন। সুতরাং, UI/UX ডিজাইন শিখে আপনাকে যে শুধু ফ্রিল্যান্সিং করতে হবে এমন না। আপনি স্কিল্ড হলে যেকোনো জায়গায় কাজ করতে পারবেন। UI/UX ডিজাইনারের ইন হাউজ জবের অভাব নাই আমাদের দেশে।

ভবিষ্যতে আপনার প্লান কি, আর কি করতে যাচ্ছেন?

ভবিষ্যৎ প্ল্যান বলতে, আরও ভালো জায়গায় নিজেকে দেখার ইচ্ছা তো অবশ্যই আছে, প্রথম সারির কোনো কোম্পানিতে জব করার ইচ্ছা আছে যদি রিমোট হয় আর কি। আর যেহেতু আমার একটা টিম আছে এখন আমি আমার টিমকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই। অন্যান্য টিম থেকে আমার টিমটা একটু আলাদা কারণ আমি আজ বলেই কাল টিম খুলে ফেলে নি।

আমি মানুষজনকে ফিল্টার করেছি যাচাই বাছাই করেছি তারপর টিম খুলেছি, আমার টিমে সব ধরনের মানুষ আছে কেউ কাজ ভালো পারে, সবাই ক্লাইন্টের ব্রিফ ভালো বুঝতে পারে আর আমি আমার টিম নিয়ে অনেক আশাবাদী। ভবিষ্যতে Twinkle Creative নামের আমার একটা ব্র্যান্ড হবে সেটা নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।

জেন স্মাইলি (পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী লেখিকা) বলেছিলেন,

“আমার অভিজ্ঞতা বলে শ্রেষ্ঠ মোটিভেশন হল সত্যিকার ইচ্ছা। সত্যিকার ইচ্ছা থাকলে কোনও বাধাই মানুষকে থামাতে পারে না।”

খুব নিখুঁত ও সঠিকভাবে সবকিছু বুঝে শুনে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি, আশা করি একদিন হবে।

UI এবং UX ডিজাইনার
UI এবং UX ডিজাইনার সবুজ

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে কি কি বিষয় জানা উচিত?

আজকাল অনেকেই দেখতে পাই ফ্রিল্যান্সিং এর প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করতে। মোটামোটি শুরুর দিকে সবারই ধারণা থাকে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে একাউন্ট খুলে ফেললেই হাজার হাজার ডলার ইনকাম করা যায়, ডলার ইনকাম শুরু তারপর কাজ শিখে যাবে।

ভাই, Freelancing is not an easy job। জিনিসটা দেখে অনেক সহজ মনে হলেও জিনিসটা ততোটাই কঠিন। আপনি ১ ডলার ইনকাম করতে চাইলেও সেটার জন্য অনেক রাতের ঘুম হারাম করে দিতে হবে। ঘুম হারাম করে দিতে হবে কেনো বলছি, কারন অই রাত জেগে পরিশ্রম করে আপনি যে কাজ শিখবেন অই কাজের জন্য আপনি ১ ডলার পাবেন কিনা নিশ্চিত না, এমনি এমনি কেউ আপনাকে ডলার দিবে না ভাই।

শুরু করার আগে, আপনাকে প্রচুর ঘাটাঘাটি করতে হবে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অনেক অনেক সেক্টর আছে। আপনাকে দেখতে হবে কোন সেক্টরটা আপনার ভালো লাগে, কোন কাজ করতে আপনার ভালো লাগে, কোন কাজ করতে বিরক্ত লাগে না।

ঘাটাঘাটির পরে যখন দেখবেন কোনো একটা কাজ করতে আপনার ভালো লাগতেছে সারাদিন অই কাজ নিয়ে বসে থাকলেও আপনার বিরক্ত লাগতেছে না ব্যাস প্রথম ধাপ শেষ।

এখন পরের ধাপ হচ্ছে অই কাজটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করা, কীভাবে অই কাজে মাস্টার হওয়া যায় সেটার প্ল্যান করা, সব থেকে ভালো হয় ছোট ছোট টার্গেট সেট করে এগিয়ে যাওয়া । সেটা হতে পারে এমন, আপনি নেক্সট ২ মাস কি করবেন সেটার প্লান করে রাখলেন। তারপর নেক্সট ৪ মাস কি করবেন সেটার প্লান করবেন এরকম ১ বছর কাজ করুন মিনিমাম।

পাশাপাশি অনলাইনে কোর্সও করে নিতে পারেন (লিন্ডা, উডেমি থেকে), আর ভুলেও কোচিং সেন্টারে ৩০০ টাকায় ৫০০ টাকায় কাজ শিখার কথা ভাববেন না এগুলা ভাওতাভাজি।

এক বছর পর যখন দেখবেন আপনি মোটামোটি ভালোই কাজ করছেন, তখন আপনি আস্তে আস্তে মার্কেট প্লেসে যেতে পারেন। ছোট ছোট কাজ গুলোতে বিড করবেন আর ক্লাইন্টের কাছ থেকে ভালো রিভিউ যাতে পাওয়া যায় সেজন্য কাজ পাওয়ার পর সঠিকভাবে শেষ করে ডেলিভারি দিবেন।

সবচেয়ে বড় কথা, অনেক অনেক কষ্ট করতে হবে ভাই মানুষজন অনেককিছু শুনাবে আপনাকে অইগুলায় কান না দিয়ে আপনার কাজ করে যেতে হবে। একদিন যখন সফল হবেন তখন এই কষ্ট গুলোর জন্য নিজেই নিজেকে বাহবা দিবেন।

ড্রিবল মিট আপ ২০১৯ সিলেটে
ড্রিবল মিট আপ ২০১৯ সিলেটে

নতুনদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ শেয়ার করেন

নতুনদের জন্য বলবো, কাজ শিখুন ভালোভাবে কাজ জানলে কাজের অভাব নাই। মার্কেটপ্লেসে বলেন আর ডাইরেক্ট ক্লাইন্ট বলেন সবাই কোয়ালিটি চায়। আপনার কাজে কোয়ালিটি থাকলে ক্লাইন্টই আপনাকে খোঁজে বের করবে।

আর যখন একটা কাজের অফার পাবেন, তখন ভালোভাবে বুঝার চেষ্টা করবেন ক্লাইন্ট আপনার কাছ থেকে আসলে কি চাচ্ছে না বুঝলে ক্লাইন্টকে বার বার জিজ্ঞেস করবেন তবুও অর্ধেক বুঝে অর্ধেক না বুঝে কাজ শুরু করবেন না। আর কাজের সাথে নিজেকেও উন্নত করতে হবে সবদিক দিয়ে প্রফেশনাল হতে হবে, বাইরের ক্লাইন্টের সাথে কাজের ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন অনেক মেটার করে তাই এটার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

মনে রাখবেন, ক্লাইন্ট আপনার পেছনে যে ডলার খরচ করছে সেটা তার ইনভেস্টম্যান্ট, সে এখান থেকে লাভবান হতে চাইবেই, তাই সবসময় ক্লাইন্টকে নিজের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করবেন।

কষ্ট করে যারা এতোটুকু ইতিহাস পড়েছেন সবার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা, সবাই আমার জন্য আশীর্বাদ/দোয়া করবেন যাতে আরও অনেক অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারি। আর সবাই ভালো থাকবেন ভালোভাবে কাজ করবেন আর উপরওয়ালার প্রতি বিশ্বাস রাখবেন।

ধন্যবাদ

2 COMMENTS

  1. সব টুকু লেখা পড়েছি, খুব ভালো লেগেছে, দুআ রইলো ভাই ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here