গরমে যে খাবার খাবেন
গরমে যে খাবার খাবেন

গরমে যে খাবার খাবেন, জানেন কি? এই গরমে শরীর সাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে, শরীরের দুর্বলতা হ্রাস করাসহ আরও বিভিন্ন ধরনের উপকার পেতে, নিচের খাবার গুলো খাওয়া উচিত।

শীতকালে শরীর সুস্থ, সতেজ ও উৎফুল্ল রাখাটা যেমন যথেষ্ট কঠিন একটা কাজ, ঠিক তেমনি গরমকালে শরীর ভালো রাখা ও অনেক কষ্টসাধ্য একটা কাজ। এই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অসুস্থ হয় গরমকালে। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা হয়ে যায়। রোদের তেজে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে বাজে অবস্তা হয়ে যায়। আর দেহের শক্তি তো কমতেই থাকে এবং ত্বকের ও অনেক ক্ষতি হয়। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই অবশ্যই আমাদেরকে ভালো ও পুষ্টিকর খাবার খেতে বিশেষ করে ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার একটু বেশি খেতে হবে। গরমের সময় প্রকৃতিগত পরিবর্তনের কারণে সাধারণ জ্বর, ডেঙ্গু জ্বর, চিকন গুনিয়া, ঠান্ডা, কাশি, গলা ব্যথা ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা একটু মাত্রারিতিক্ত হয়ে থাকে। মানুষের অসচেতনতার কারণে খাদ্য সম্পর্কিত দীর্ঘমেয়াদি রোগ হয়। যেমন- ১. শরীরের অতিরিক্ত ওজন, ২. ডায়াবেটিস, ৩. ইনসুলিন রেসিসটেন্স, ৪. উচ্চ রক্তচাপ, ৫. হৃদরোগ।

শরীর সাস্থ ভালো রাখা মন মেজাজ ঠিক রাখা যায় না। কাজ করতে গেলে মন বসে না, অগোছালো মনে হয় অর্থাৎ গরমে সব কিছু একাকার হয়ে যাই। গরমে শরীর ও ফিটনেস উপযুক্ত রাখতে, মন মেজাজ উৎফুল্ল ও ভালো রাখতে অনেক কার্যকরী উপায় রয়েছে। যেগুলো ঠিক ঠাক ভাবে করতে পারলে অনেক কাজে আসবে। তবে যায় করেন না কেন, আপনাকে এই গরমের সময় অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাবার খেতে হবে। এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো এই গরমে অবশ্যই নিয়মিত খাওয়া উচিত।

এই গরমে শরীর স্বাস্থ্য ও মন ভালো ও সতেজ রাখতে যে ৬ ধরনের খাবার অবশ্যই আপনাকে খেতে হবে তাঁর তালিকা নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন কেন খাওয়া উচিত, কি কি উপাদান রয়েছে যা শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।

গরমে যে ৬ ধরনের খাবার নিয়মিত খাবেন

০১। বিশুদ্ধ পানি
০২। লেবুর শরবত
০৩। ডাব
০৪। শসা
০৫। দই
০৬। ফলের রস

০১। বিশুদ্ধ পানি

এই গরমে শরীর সুস্থ রাখতে অবশ্যই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। রাস্তা ঘাটে যেখানে সেখানের পানি খাওয়া যাবে না। আর আমরা জানি গরমের তাপে শরীর থেকে অনেক ঘাম বের হয়। ঘামের সাথে গরমে বা খাটাখাটনিতে শরীরে ঘাম হয়, এটাই স্বাভাবিক। ঘাম শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কিছু মানুষের সাধারণত ব্যায়াম, গরম আবহাওয়া, ভয় বা রাগের কারণে শরীর ঘামার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। তবে গরমকালে সবারই ঘাম বের হয়। ঘাম মাত্রাতিরিক্ত হলে অনেক সমস্যা হবে। ঘাম সাথে প্রয়োজনীয় তরল পদার্থ গুলো বের হয়ে যায়। ফলে শরীরের শক্তি কমে যায়। তাই বিশুদ্ধ পানি খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে ও কিছুটা দুর্বলতা কেটে যায়।

০২। লেবুর শরবত

আমরা সবাই জানি লেবুর শরবত খেলে শরীর সুস্থ থাকে আরও সতেজ লাগে। লেবুর শরবতের অনেক কার্যকরী উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য অনেক উপকারি। এটি খেলে এক নিমিষেই শরীরের ক্লান্তি চলে আসে। হ্যাঁ প্রায় সবাই লেবুর শরবত খেতে থাকি। কিন্ত বিশুদ্ধ ও পরিষ্কার লেবুর শরবত যেইটা সঠিক কাজ করে, সেইটা কম মানুষই খাই। আমরা গরমের সময় বেশির ভাগ রাস্তা ঘাটে থাকা অবস্তায় লেবুর শরবত খেতে থাকি। যেইটা আধৈা বিশুদ্ধ কিনা আমরা জানি না। একটা কথা মনে রাখবেন ভালো খাবার ভালো ভাবে না খেতে পারলে শরীর সুস্থের চেয়ে অসুস্থ বেশি হয়ে যাবে। তাই সবসময় চেষ্টা করতে হবে গরমের সময় বাসায় লেবুর শরবত খাওয়া। বাজার থেকে লেবু কিনে বাসায় বিশুদ্ধ পানি দ্বারা শরবত বানিয়ে খান। ফলে এই গরমে অনেক উপকার পাবেন ও শরীরে শক্তি বৃদ্ধিসহ আরও মন মেজাজ ঠাণ্ডা রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

০৩। ডাব

গরমের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডাব। সবচেয়ে পরিষ্কার, সতেজ এবং সুস্বাদ পানীয় খাবার হচ্ছে ডাব। শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, দেহের পর্যাপ্ত শক্তি ধরে রাখতে এই গরমে অবশ্যই ডাব খাওয়া উচিত। কারণ ডাব একটি পানি জাতীয় খাবার, এটি খেলে শরীরের পানি শূনতা প্রতিরোধ করে ও দুর্বলতা হ্রাস করতে ও বিশেষ ভূমিকা রাখে। আসলে ডাবে রয়েছে অনেক কার্যকরী উপাদান যা ছেলেদের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য এক বিশেষ ভূমিকা রাখে। ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এটি যথেষ্ট পরিমাণে কাজ করে থাকে। ডাবের পানিতে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরিক অ্যাসিড, পটাশিয়ামসহ আরও অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। ডাবের পানিতে প্রতি ১০০ গ্রামে ১৬.৭ ক্যালোরি তথা ৭০ কিলো জুল খাদ্যশক্তি রয়েছে। তাই এই গরমে অবশ্যই নিয়মিত ডাব খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে আর হ্যাঁ এই সময়ে ডাব সব জাইগাতেই পাওয়া যায়।

ডাবের পানি পানের ১০টি বিস্ময়কর উপকারিতা জানতে, এখানে ক্লিক করুন!

০৪। শসা

এই গরমের মধ্যে সবাই শসা খেতে পছন্দ করে। পানি বা ঠাণ্ডা জাতীয় গুলোর মধ্যে শসা অন্যতম। এটির রয়েছে অনেক উপকারিতা। শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও এর রয়েছে যথেষ্ট ভূমিকা। এটা আর্দ্রতা রক্ষা করে, অল্প ক্যালরি ও উচ্চ আঁশ সম্পন্ন। শরীর খুব বেশি উত্তপ্ত হলে শসা ঠাণ্ডা করতে সাহায্য করে। এই ফলে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে এবং জলের পরিমাণ বেশি থাকে । খোসা সহ একটি কাচা শশা’র প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালরীর পরিমাণ ২০ কিলো ক্যালরী। শসা দেহের পানিশূনতা দূর করে, দেহের ভেতর-বাইরের তাপ শোষক, বিষাক্ততা দূর করে, প্রাত্যহিক ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, ও ওজন কমাতে সাহায্য করা ছাড়াও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই কেনই বা শসা খাবেন না। গরমকালে ঠিক ভাবে থাকতে চাইলে নিয়মিত শসা খাওয়ার বিকল্প কিছু নেই।

০৫। দই

পানীয় জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে আরেকটি অন্যতম জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে দই। দধি বা দই হল এক ধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য যা দুধের ব্যাক্টেরিয়া গাঁজন হতে প্রস্তুত করা হয়। মানুষ ৪৫০০ বছর ধরে দই প্রস্তুত করছে এবং তা খেয়ে আসছে। সারা পৃথিবীতেই এটি পরিচিত। পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে এর রয়েছে অনেক সুনাম। দইরে রয়েছে কিছু বিস্ময়কর উপকারিতা। পেট গরম হলে, পেটে গ্যাস হলে, এমনকি সর্দি হলে দই খেতে পারেন দেখবেন অনেকটা কমে যাবে। মন মেজাজ, শরীর ঠাণ্ডা ও শিশুদের মস্তিষ্ক সতেজ রাখতে ও এর অনন্য ভূমিকা রয়েছে। দইয়ে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, রাইবোফ্ল্যাভিন, ভিটামিন B6 এবং ভিটামিনB12 এ সহ আরও কিছু উপাদান। এক গবেষণায় দেখা গেছে দই খেলে মানব দেহে পাকস্থলীর উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বা প্রোবায়োটিক্স-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বিষাক্ত রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীর সুরক্ষিত থাকবে। তাই এই গরমে শরীর সুস্থ রাখার জন্য দই খেতে পারেন।

০৬। ফলের রস

শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে, দুর্বলতা দূর করতে ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ফলের রস অনেক ভূমিকা রাখে। গরমের সময় মৌসমী ফলের রস খেতে পারেন মাঝে মাঝে, তাহলে শরীরের ক্লান্তি যেমন দুর করবে ঠিক তেমনি শক্তি বাড়াতে ও হজম ক্ষমতা সহ আরও অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে ও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। গরমের ফলের তালিকা গুলো হচ্ছে, আপেল, কমলা, মাল্টা, লিচু, আমলকী, পেয়ারা, আঙ্গুর, ও কলা সহ আরও কিছু পানি জাতীয় ফল রয়েছে। যেগুলো বাসায় তৈরি করে খেতে পারলে অনেক উপকার পাওয়া যায়, বাসায় না বানিয়ে খেতে পারলে রাস্তা ঘাটে খাবেন না এতে ভালোর চেয়ে খারাপ হয়ে যাবেন আরও। তবে বাহিরে খেলে ও ভালো রেস্টরেন্টে দেখে শুনে খেতে পারেন।

আরও জানুন –

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here