ঘুম থেকে উঠে যে কাজ করা উচিত
ঘুম থেকে উঠে যে কাজ করা উচিত

ঘুম থেকে উঠে যে কাজ করা উচিত, আপনার কী এই বিষয়ে সঠিক ধারণা আছে। অর্থাৎ সকালে ঘুম ভাঙার পর কি কি কাজ করা উচিত, যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক সহায়ক ও কাজে লেগে থাকার একটা কৌশল।

সকালে যদি সুস্থ ও সতেজভাবে আপনি ঘুম থেকে উঠতে পারেন, তাহলে এই দিনটি আপনার খুব ভালোভাবে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।

আমরা অনেকেই সকালে উঠে খুব তারাহুরা করে অফিসে চলে যাই, স্কুলে চলে যাই অর্থাৎ যার যার কাজের জন্য বাহিরে চলে যাচ্ছি। নিচ্ছি না কিছুটা ব্রিশাম, ভালো খাবার দাবার খাচ্ছি না এবং কিভাবে আসলে কাজগুলো করা উচিত, কি কি কাজ করতে হবে, তার একটা প্লানিং, এইসব কিছুই করছি না। ফলে আমরা মনোযোগ দিয়ে কাজ গুলো করতে পারছি না, বেশীক্ষণ কাজে লেগে থাকতে পারছি না, অর্থাৎ একটা সময় কাজে বিরক্তি লাগে, শরীরে দুর্বলতা চলে আছে। এতে করে অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনাও থাকে। আমদেরকে অবশ্যই কিছু নিয়ম নীতি মেনে কাজ করতে হবে, তাহলে সফলতার চরম শিখরে পৌঁছাতে পারবো।

ঘুম থেকে উঠে যে কাজ করা উচিত বা কিভাবে প্রতিদিন সকালটা শুরু করবেন এই সম্পর্কে আপনাদেরকে অবশ্যই জেনে নেওয়া উচিত।

প্রতিদিন সকালে উঠে যে ৭ টি কাজ ধাপে ধাপে করবেন।

০১। মুখ ধৌত করে ভালোভাবে সতেজ হন।

সকালে ঘুম ভাঙার পর সবার উচিত, ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে নেওয়া। অর্থাৎ ব্রাশ করে, মুখ ধৌত করে সতেজ হওয়া বোঝাচ্ছি। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তি যুগ, স্মার্ট ফোনেই পাওয়া যাচ্ছে অনেক কিছু। এখন আপনারা অধিকাংশ মানুষই ঘুম থেকে উঠে বিছানায় শুয়েই ফেইসবুক ব্যবহার করা শুরু দিচ্ছেন, ইমেইল চেক করছেন, হোয়াটঅ্যাপ এর দ্বারা প্রিয় মানুষ গুলোর সাথে কথা শুরু করে দিচ্ছেন, আবার অনেকেই আছে ইউটিউব ভিডিও দেখা শুরু করছেন। এইভাবে আমরা ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যম গুলোর দ্বারা নিজেকে একেবারে হারিয়ে ফেলি।

কিন্ত একবারও ভেবেছেন কি? এই মুহূর্তে আপনার কি করা উচিত ছিল আর আপনি কি করছেন? কিভাবে সময় নষ্ট করছেন। তারপর বন্ধু-বান্ধুবের বা প্রিয় মানুষটির সাথে চ্যাট করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে পারে, আপনি কোন কারণে হতাশায় পড়ে যেতে পারেন, তাহলে তো পুরো দিনটাই খারাপ যাবে। তাই এইসব বাদ দিয়ে খুব সকালে ঘুম ভাঙার পরপরই বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হন। ১০/১৫ মিনিট সময় নিয়ে ব্রাশ করুন, হাত-মুখ ধৌত করুন ও ফ্রেশ হওয়ার অন্যান্য কাজ গুলো শেরে নিন।

০২। ১/২ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন।

ভালোভাবে সতেজ হওয়ার পর, ১/২ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন এইটা স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে। শরীর ভালো রাখাঁ, মন ফ্রেশ রাখা ছাড়াও অনেক ধরনের উপকার করে থাকে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এইটা প্রায় অধিকাংশ মানুষই করি না। আমরা নিয়ম নীতি অবহেলা করে চলি, নিজেকে সবসময় অগোছালো করে রাখি। এইজন্যই আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় না, এবং শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া বাস্তব জীবনেও এর প্রভাব নেতিবাচক ভাবে পড়ে, কাজে মন বসে না, একটু কাজ করলেই শরীরে ক্লান্তি চলে আসে, আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।

তাই সবার উচিত ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হওয়ার পর, ১/২ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি খাওয়া। এর রয়েছে যতেষ্ট উপকারিতা। যেমন-

• শরীরের কান্তি ভাব চলে যাবে।
• পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে।
• ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে।
• ওজন কমাতে সহায়তা করে।
• কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
• হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
• মস্তিষ্ক হবে সচল রাখবে।

এছাড়াও সকালে খালি পেটে ১/২ গ্লাস পানি খেলে আরও নানান সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই এই সামান্য কাজটি করতে কখনও ভুল করবেন না।

০৩। ৩০ মিনিট হাঁটুন বা জগিং করুন।

শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে নিয়মিত সকালে শারীরিক ব্যায়াম করা। প্রতিদিন সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন, যতেষ্ট উপকার পাবেন। আপনি যদি সফল ব্যক্তিদের দিকে তাকান, দেখবেন প্রায় সবাই সকালে শারীরিক বায়ামের প্রতি খেয়াল রাখতেন এবং নিয়মিত করার চেষ্টা করতেন। বিল গেটসের কথা যদি বলেন, তিনি দিনের শুরুটাই করেন শরীরচর্চার মাধ্যমে। ফলে খুব সহজেই শরীর ও মন সতেজ করতে পারতেন। সকালে হাঁটতে বা জগিং করতে পারলে, অনেক উপকার পাওয়া যায়, এইটা আমরা অনেকেই জানি কিন্ত কইজনই বা জগিং করতে যায়। তাই অবশ্যই শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য, কিছু কার্যকারী উপকার গ্রহন করার জন্য সকালে ৩০ মিনিট হাঁটুন বা জগিং করুন।

সকালে শারীরিক বায়ামের কিছু উপকারিতা দেওয়া হলঃ

• মানসিক চাপ ও মন-মরা ভাব দূর করে।
• ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
• শরীরের অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়।
• ব্যায়াম মাংস পেশিকে সবল করে।
• চর্বির আধিক্য বা বাড়তি চর্বি কমায়।
• রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে যতেষ্ট ভূমিকা রাখে।
• স্মরন শক্তির বৃদ্ধি ঘটায়ও সাহায্য করে।

তাহলে কেনই বা সকালে শারীরিক ব্যায়ামের জন্য ৩০ মিনিট সময় রাখবেন না। এই ৩০ মিনিটের হাঁটা আপনার শরীর ও মন অনেক ভালো রাখবে। তাই অবশ্যই সকালে নিয়মিত নির্দিষ্ট একটা সময়ে হাঁটার চেষ্টা করুন।

শারীরিক বায়ামের ১৫ টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে – এখানে কিল্ক করুন!

০৪। পুষ্টিকর খাবার দিয়ে সকালে নাস্তা করুন।

আপনি শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখা বা মন মানসিকতা সতেজ করার জন্য যত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করেন না কেন, স্বাস্থ্যকর বা পুষ্টিকর খাবার না খেলে, কোন কিছু কাজে দিবে না। কারণ বেঁচে থাকার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে খাবার, আর ভালো ও সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার প্রয়োজন।

তাই পুষ্টিকর খাবার দিয়ে সকালে নাস্তা করুন। কারণ সকালে যদি আপনার শরীরে যতেষ্ট পরিমাণে শক্তি না অর্জন না করা পারেন। তাহলে আপনার অন্যান্য কাজ গুলো ঠিক ভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন না, অফিসে গিয়ে বেশিক্ষন থাকতে মন চাইবে না, কাজে ক্লান্তি ও বিরক্ত চলে আসবে। এবং যারা পড়াশুনা করে, সকালের পুষ্টিকর খাবার না খেলে মনই বসবে না, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সঠিকভাবে ও মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে কষ্ট হবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য ও মন দিয়ে কাজ করার জন্য সকালের স্বাস্থ্যকর খাবার কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

০৫। ১০/১৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া উচিত।

সকালে ঘুম থেকে উঠে ৪ টি কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। ভালোভাবে ফ্রেশ হয়েছেন, ১/২ গ্লাস খালি পেটে পানি খেয়েছেন, ৩০ মিনিট হেঁটেছেন বা জগিং করেছেন শারীরিক বায়ামের জন্য তারপর পুষ্টিকর খাবার দিয়ে সকালের নাস্তা সম্পন্ন করলেন, দেহের শক্তি সঞ্চারণ করার জন্য ১০/১৫ মিনিট বিশ্রাম নেওয়া উচিত। পরিশ্রমের পর সবাইকেই বিশ্রাম নিতে হয়, না হলে শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। এবং যদি ঠিকভাবে ঠিকসময়ে বিশ্রাম না নেন, তাহলে পরবর্তী কাজে পর্যাপ্ত শক্তি পাবেন না।

তাই চেষ্টা করতে হবে কোন কাজ শুরু করার পূর্বে, নিজের শরীর অথবা মনকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম দেওয়া। তাহলে যতেষ্ট এনার্জি পাওয়া যাবে এবং সঠিকভাবে শুরু করতে পারবেন।

০৬। একনজরে ফেইসবুক, ইমেইল চেক করুন।

বর্তমানে আমরা ফেইসবুক ও ইমেইল ছাড়া চিন্তায় করতে পারি না, বিশেষ করে যারা অনলাইন প্রফেশনাল আছে, তাদেরতো অবশ্যই ফেইসবুক ইমেইল চেক করতে হয়, এছাড়াও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো ও চেক করতে হয়।

এইগুলো ব্যবহার করা যেমন অপকার রয়েছে ঠিক তেমনই অনেক উপকার ও রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে এখন যেকোনো খবর খুব সহজেই পাওয়া যায়। কিন্ত এখানে সমস্যা হচ্ছে, আমরা আসলে ফেইসবুক, টুইটার, ইউটিউব ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম গুলোতে আসক্ত হয়ে যায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করে ফেলি, তাও আবার অপ্রয়োজনীয় জিনিস দেখে। অর্থাৎ সময় তো নষ্ট করছি সেইটা আবার অকার্যকরী বা অপ্রয়োজনীয় ব্যাপারে, তাই লাভের চেয়ে অনেকখানি ক্ষতি হয়, এইটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি না। তাই অবশ্যই ফেইসবুক চালানোর সময় খুব খেয়াল থাকতে হবে।

এবং প্রয়জনের তাগিদে অবশ্যই আমাদের ব্যবহার করা উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে করা যাবে না। ৬ নাম্বার ধাপে এসে একনজরে ফেইসবুক, ইমেইল ও অন্যান্য সাইটগুলো চেক করা নেওয়া ভালো।

০৭। সারাদিনের সব কাজের পরিকল্পনা করা।

এখন হচ্ছে আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করার পালা। অর্থাৎ আপনি কি পড়াশুনা করেন, অফিসে জব করেন অথবা ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন, যাই করেন না কেন সারাদিনের সব কাজের একটা ভালো পরিকল্পনা করুন, কার্যকরী একটা রুটিন তৈরি করুন। যার উপর ভিত্তি করে আপনি সারাদিন চলবেন। তাই অবশ্যই মন মেজাজ ভালো রেখে, সবকিছু চিন্তাভাবনা করে সুন্দর করে সাজিয়ে সারাদিনের একটা রুটিন তৈরি করুন, যেন লাইফে ভালো কিছু করতে বা বড় হতে যতেষ্ট ভূমিকা পালন করে।

যদি আপনি এইভাবে সকালটা শুরু করতে পারেন, সুস্থ শরীর ও মন মানসিকতা সাথে জীবনে অনেক ভালো কিছু করতে পারবেন, যতেষ্ট উন্নত হতে পারবেন এবং সাফল্যের উচ্চ শিখরে খুব সহজেই পৌঁছাতে পারবেন।

জেনে নিন, সকালে ঘুম থেকে উঠে যে ৫টি কাজ করা উচিত না, এখানে ক্লিক করুন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here