কালোজিরার ১০টি উপকারিত
কালোজিরার ১০টি উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

কালোজিরা বিশ্বজুড়ে বহুবর্ষজীবী ভেষজ হিসাবে পরিচিত। কালোজিরা হল একটি পাতলা গাছ যা চীন, ভারত, মধ্য প্রাচ্য এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে মাটিতে ভালো জন্মে। উদ্ভিদের ফলের ধরণের জন্য এটিকে জিরা বীজ বলা হয় এবং এটি মশলা হিসাবে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।

কালোজিরার গুনাগুন প্রচুর তাই বর্তমান সময়ে এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। গবেষণাতে দেখা যায় যে, কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা দুই-ই রয়েছে, তাই কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম গুলো যথাযথ মেনে চলা উচিৎ।

প্রমাণ হিসাবে দাবি করা হয়েছে যে এতে সব ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে, আবার অতিরিক্ত খেলে তা শরীরের বেশকিছু সমস্যাও তৈরি করতে পারে।

কালোজিরার বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলি আপনার হজম, প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং রক্ত সঞ্চালনের সাথে সম্পর্কিত। কালজিরা এর কিছু উপকারিতা ক্লিনিকাল স্টাডি দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানে কালোজিরা ব্যবহার ব্যাপক। আজকের এই লেখাতে আমরা কালোজিরার ১০টি উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব। তো, চলুন জেনেই এর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে।

কালোজিরার ১০টি উপকারিতা

১। স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে

কালোজিরা আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে আরও কার্যকর হতে উদ্দীপিত করে । এর ফলে আপনার অঙ্গগুলির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। বিশেষত, সেই সকল অঙ্গগুলো যা আপনার স্মৃতি শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন এক চা চামচ পুদিনা পাতার রস, দুই চামচ মধু, এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার করে নিয়মিত খাবেন। এটি আপনার দুশ্চিন্তা দূর করবে। অন্যদিকে, এটি আপনার মেধা বাড়াতে সাহায্য করবে সাধারণ সময়ের তুলনায় তিনগুণ হারে। কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। এটি মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

২। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে

কিছু চিকিৎসক ডায়াবেটিসের সমস্যা কমানোর জন্য হ্রাস কালোজিরা খাওয়ার পরামর্শ দেন, যেমন টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এটি বেশ কার্যকর। কালোজিরা হাই ব্লাড সুগার এবং ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। টাইপ 2 ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে, কালোজিরা হার্টের জটিলতাগুলি কমাতে সহায়তা করে। এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেয়ে দেখুন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া রং চা বা গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে খেলে উপকার পাবেন।আপনি যদি ইতিমধ্যে ডায়াবেটিসের ওষুধ খেয়ে থাকেন তবে কালোজিরা খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।

৩। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে

টানা ২ মাস ধরে কালোজিরা নিয়মতি খেলে তা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের রক্তচাপকে হ্রাস করে। গবেষণাতে দেখা গিয়েছে যে, কালোজিরা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখতে বেশ কার্যকর। কালোজিরার বীজের গুঁড়ো তেলের চেয়ে শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালিজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। এভাবে ২ মাস খেলে আপনি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন বলে চিকিতসকেরা মতামত দেন।

৪। পুরুষের বন্ধ্যাত্ব রোধ করে

বন্ধ্যাত্ব পুরুষদের খুবই খারাপ একটি সমস্যা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বিশ্বে প্রতি দশজন পুরুষের মধ্যে ২ জন পুরুষ এই সমস্যাতে ভুগছে। এটির সমাধানে কালোজিরা দারুণভাবে সহায়তা করতে পারে। কালোজিরার তেলে প্রতিদিন ১ চামচ খাওয়ার ফলে কোনও বিরূপ প্রভাব ছাড়াই বীর্যের গুণগত মান উন্নত হয়। এক্ষেত্রে, কালোজিরার তেল বানানোর উপায় গুলো জেনে রাখা ভাল। কালোজিরা শুক্রাণু বৃদ্ধি করে। এটি শুক্রাণুর গুণমান এবং গতিশীলতার উন্নতি করে। তাই পুরুষের বন্ধ্যাত্ব রোধে এটি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।

৫। ওজন কমাতে সাহায্য করে

যারা ডায়েটে থাকেন তাদের জন্য প্রায়শই গরম জল, মধু এবং লেবুর এক সাথে মিশিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এবার এই মিশ্রণে এক চিমটি গুঁড়ো কালোজিরা মেশান। দেখবেন এটি অতি দ্রুত আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করছে। কালোজিরা আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা অতিরিক্ত চর্বিগুলোকে গলিয়ে রেচন প্রক্রিয়া শরীর থেকে বের করে দেয়। অন্যদিকে, কালোজিরায় আছে বিশেষ ধরনের ফাইবার বা আঁশ, যা অতিরিক্ত খাওয়া হজম করতে সহায়তা করে। এভাবে, আপনি খুবই সহজেই আপনার অতিরিক্ত ওজন কমাতে পারেন।

৬। প্রদাহ রোধ করে

কালোজিরার বীজে প্রদাহ প্রতিষেধক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিশ্বের বহু নামকরা চিকিতসকেরা মতামত দিয়েছেন যে কালো বীজের তেল বাতজনিত প্রদাহ কমাতে ব্যাপক কার্যকর। কালোজি্রার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুনাগুন প্রদাহ এবং ব্যথা হ্রাস করে। তবে কালোজিরার তেল ব্যবহারের নিয়ম গুলো আপনাকে মনে রাখতে হবে এবং সেই নিয়ম অনুযায়ী তা খেতে হবে, যদি আপনি সঠিক উপকার টি পেতে চান। গবেষণায় দেখা যায়, নিয়ম অনুযায়ী খেলে এটি মস্তিষ্কের প্রদাহও সফলভাবে কমিয়ে দেয়। তাই চিকিতসকেরা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন দু চামচ কালোজিরা তেল হালকা কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়ার জন্য।

৭। অনিয়মিত মাসিক সমস্যায়

মাসিক বা পিরিয়ড নারীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দরকারী একটি বিষয় । এটি একজন নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দেশের অনেক নারীকে অনিয়মিত পিরিয়ডের বা মাসিক চক্রের সাথে মোকাবিলা করতে হয়। এই সমস্যা তাদের জন্য অনেক ঝামেলার এবং ঝুকির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে। তাই এর সমাধান আপনি খুজতে পারেন কালোজিরাতে। এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক কাপ চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার করে খেলে অনিয়মিত মাসিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

৮। বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে

অনেক মা বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে চান কারণ অনেক সময় দেখা যায় তাদের বুকে সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে দুধ তৈরি হচ্ছে না। এট একটি ভয়াবহ সমস্যা কিন্তু সহজেই সমাধান করা সম্ভাব। এটি আমরা সকলেই জানি যে, স্তন পানকারী বাচ্চাদের যথেষ্ট পরিমাণে দুধের প্রয়োজন হয় যেহেতু দুধই তাদের একমাত্র পুষ্টির উৎস। তাই যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের জন্য মহৌষধ হতে পারে কালিজিরা। মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালিজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে।

৯। আমাশয় নিরাময়ে

আমাশয় খুব প্রচলিত একটি রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাধারণ ক্ষেত্রে এই রোগ জীবনসংশয়কারী না হলেও খুব বিরক্তিকর ও যন্ত্রণাদায়ক। এই রোগে একবার আক্রান্ত হলে ভোগান্তি থেকে সহজে নিরাময় পাওয়া যায় না। আমাশয় রোগের চিকিৎসা করতে কালোজিরার ব্যবহার অনেক পুরোনো। এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু সহ দিনে ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ খাবেন। এভাবে খেলে আপনি সহজেই আমাশয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন।

১০। শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি করতে

প্রারম্ভিক শৈশব হচ্ছে সেই সময়টা যখন শিশুর যত্ন ও বেড়ে ওঠার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি খেয়াল করা প্রয়োজন। শিশুর জন্মের পর প্রথম আট বছর তার বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। এটি সময়টি পরিবর্তনের এবং সে পরিবর্তন শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের। তাই তাদের সঠিক বৃদ্ধিতে মা বাবাকে অনেক যত্নশীল এবং সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

এক্ষেত্রে কালোজিরা দারুণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দুই বছরের অধিক বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অনেক কাজ করে এটি। তবে দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত নয়।

কালোজিরার গুনাগুন ও স্বাস্থ্য উপকারিতা অপরিসীম। তবে এক্ষেত্রে একটা কথা আমাদের জেনে রাখা ভাল, আর তা হল গর্ভাবস্থায় ও দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত নয়। তবে বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করা যাবে। নিয়ম মেনে কালোজিরা খেলে আপনি অনেক উপকার পাবেন তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here