ভ্রমণের সেরা টিপস
ভ্রমণের টিপস এবং বাংলাদেশের ১০টি দর্শনীয় স্থান

ভ্রমন সব সময়ই আনন্দের। এর মাধ্যমে দেখার ও শেখার সুযোগও রয়েছে বিস্তর। ভ্রমণের সেরা টিপস আপনার জানা থাকলে অনেক কিছু আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে। ভ্রমনের উপকারিতা ও গুরুত্ব বলে শেষ করা যায় না। তাই ভ্রমন পিপাসুরা সারা বছরই কোন না কোন জায়গাতে ঘুরে বেড়ায়। এতে করে তারা শারিরিক ও মানসিকভাবে হয়ে উঠে সমৃদ্ধ। কেন ঘুরাঘুরি করা উচিত তা এখন আর কারো অজানা নাই। ভ্রমন ভালবাসার কথা বললে শুরুতেই আসবে বাংলাদেশের নাম।

ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ এশিয়ার একটি সুন্দর ছোট দেশ বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণ এখনও পর্যটনের ক্ষেত্রে বিকশিত হয়নি। এখানে ঘুরে দেখার মতো অনেক সুন্দর জায়গা থাকলেও এটি বিশ্বের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এখানকার লোকেরা অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও অতিথিপরায়ণ। তারা সর্বত্র পর্যটকদের স্বাগত জানায় এবং তাদের সহায়তা করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, বৃহত্তম চা বাগান এবং কিছু আশ্চর্যজনক বিদেশী প্রাণীজগতেরও আবাসস্থল। এদেশের মানুষ বন্ধুত্বপূর্ণ এবং এদের আকর্ষণীয় সংস্কৃতি রয়েছে। এখানে অনেক কিছু করার আছে। আপনি ট্রেকিং এবং অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরের মতো জিনিসগুলি অনায়াসেই করতে পারেন। আপনার ভ্রমনের বেশিরভাগ সময় সুন্দর সবুজ পাহাড়, ঝলকানি নদী এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখেই কেটে যাবে।

একটি দেশের সেরা জায়গাগুলির একটি তালিকা তৈরি করা সবসময় কঠিন একটি কাজ। বাংলাদেশে আমার দেখার অভিজ্ঞতা থেকে, আমি এই তালিকাটি তৈরি করেছি। সেই অনুযায়ী আপনার জন্য বাংলাদেশের ১০টি দর্শনীয় স্থান এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ অনেক ক্ষেত্রেই অপরাজেয়। বাংলাদেশ এক স্বর্গরাজ্য মাত্র ডিসকাওয়ার হওয়ার অপেক্ষায়

ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় টিপসঃ

শুরুতেই আমরা ভ্রমণ প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় টিপস নিয়ে কথা বলব। ভ্রমণ শুরু করার আগে আপনার নিচে দেয়া কাজগুলো করে নেয়া উচিৎ।

• তালিকা করে আপনা ব্যাগ গুছিয়ে ফেলুন।
• রাতের জন্য হালকা ও আরামদায়ক পোশাক নিন। বিশেষ করে যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার আবহাওয়া অনুযায়ী হলে ভাল।
• ক্যামেরা ,এক্সট্রা ব্যাটারি, মেমোরি কার্ড, চার্জার নিয়েছেন কিনা চেক করুন।
• একটা ছোট মাল্টিপ্লাগ, সাথে থ্রি-পিন থেকে টু-পিন কনভার্টার সাথে রাখুন।
• আপনি যে স্থানে যাবেন সেখানকার আবহাওয়ার সম্পর্কে আগে থেকে খোজখবর নিয়ে রাখুন।
• স্যান্ডেল-জুতা পলিথিন বা কাগজে মুড়িয়ে লাগেজের একপাশে রাখতে পারেন। খেয়াল করবেন একেবারে নতুন কিংবা শক্ত জুতা হলে আপনি ভালোভাবে হাঁটতে পারবেন না বা হাঁটলে পায়ে ফোসকা পড়ে যাবে।
• পরিমাণমত টাকা পয়সা আগে থেকে গুছিয়ে নিন। সাথে ডেবিট বা ক্রেডিট থাকলে তা আপনার জন্য সুবিধাজনক হবে।
• হালকা ম্যাগাজিন বা বই সাথে নিলে ভালো হয়। প্লেন বা ট্রেনে বসে পড়তে পারবেন।
• ক্যাপ/হ্যাট, ছোট্ট ছাতা প্রয়োজন অনুযায়ী সঙ্গে নিন। রুমাল, ওয়েট টিস্যু খুবই কাজে লাগে, তাই সঙ্গে রাখুন। হালকা শুঁকনো খাবার ও পানি রাখা অত্যন্ত জরুরি।
• প্রয়োজনীয় ওষুধ অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।
• আপনার ঠিকানা, যেখানে যাবেন তার ঠিকানা, নিকটতম কোনো বন্ধু অথবা আত্মীয়স্বজনের নম্বর আপনার পকেট বা মানিব্যাগে রাখতে পারেন।
• থাকার স্থান এবং যাতায়াতের পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রাখুন। বাস, প্লেন, ট্রেনের টিকেট সঙ্গে আছে কিনা তা রওয়ানা হওয়ার আগে দেখে নিন।

বাংলাদেশের ১০টি দর্শনীয় স্থান

১। কক্সবাজার

কক্সবাজার বাংলাদেশের পর্যটন আকর্ষণ। ঘন জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়ের মনোরম পটভূমির বিপরীতে বঙ্গোপসাগরের নীল জল আপনাকে মুগ্ধ করবে। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। এর মোট দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। চট্টগ্রামের ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত, এই জায়গাটির নামটি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন হীরাম কক্সের কাছ থেকে পেয়েছে। এখানে পাবেন উঁচু পাহাড়, বিশাল ঢেউ, আশ্চর্য শঙ্খ, সুন্দর প্যাগোডা, বৌদ্ধ মন্দির এবং উপজাতি । হাঙ্গরবিহীন সৈকতটির স্নান, রোদে পোড়া, সাঁতার কাটা এবং সার্ফিংয়ের জন্য নিজস্ব খ্যাতি রয়েছে। সাথে দেখবেন বিস্তীর্ণ সমুদ্রের পেছনে ডুবে যাওয়া সূর্যের শ্বাসরুদ্ধকর সৌন্দর্য ।

২। সুন্দরবন

সুন্দরবন শব্দের অর্থ একটি সুন্দর বন।, “সুন্দরী” গাছ থেকে এই বনের নাম হয়েছে। এই বনটি মূলত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত তবে আপনি এখানে দাগযুক্ত হরিণ, নোনতা জলের কুমির এবং বিভিন্ন ধরণের পাখি দেখতে পাবেন। এই বিশাল অরণ্যে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২৯০ প্রজাতির পাখি, .১২০প্রজাতির মাছ, ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ প্রজাতির উভচরদের বাসস্থান রয়েছে

৩। সেন্টমার্টিন দ্বীপ

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, যা নারিকেল জিনজিরা (নারকেলের একটি দ্বীপ) এবং দারুচিনির দীপ (দারুচিনি দ্বীপ) নামে পরিচিত, এটি বাংলাদেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি প্রায় 8 কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং খুব কমই ১ কিলোমিটার প্রশস্ত। শহর জীবনের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশের থেকে দূরে, এই দ্বীপের প্রশান্তি আপনাকে আপনার আত্মাকে প্রশান্ত করতে সহায়তা করবে। আপনি যদি এখানে রাতে অবস্থান করেন তবে আপনি এই দ্বীপে চিরকাল থাকতে চাইবেন। এখানে বিভিন্ন ধরণের সামুদ্রিক খাবার আপনার ক্ষুধা মেটাবে।

৪। কুয়াকাটা

সাগর কন্যা বা সমুদ্রের কন্যা হিসাবে পরিচিত, কুয়াকাটা বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকত সৈকত পর্যটক আকর্ষণের জন্য বিখ্যাত। এটি ঢাকা থেকে প্রায় ৩২০ কিলোমিটার এবং পটুয়াখালী সদর থেকে ৭০ কিমি দূরে অবস্থিত। এটি এমন একটি অনন্য স্থান যেখানে আপনি সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই এক জায়গাতে দেখতে পাবেন। এই সৈকত মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নীল আকাশ, বেলে সমুদ্র সৈকত, প্রশস্ত উপসাগর এবং চিরসবুজ ঝাউনের মনোরম সংমিশ্রণ।

৫। জাফলং

বাংলাদেশ ও ভারতের রাজ্য মেঘালয়ের সীমান্তে অবস্থিত জাফলং সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। বাগান এবং পাহাড়ের মধ্যে এর প্রাকৃতিক দৃশ্য সৌন্দর্য পর্যটকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে। হিমালয় পর্বতশ্রেণী থেকে আসা মেরি নদী তার প্রবাহের সাথে প্রচুর পাথরের পাথর নিয়ে আসে। এই জায়গাটি পাথর সংগ্রহের জন্য বিখ্যাত। এখানে আপনি খাসি উপজাতির বাড়িঘর দেখতে পাবেন।

৬। সাজেক ভ্যালি

সাজেক ভ্যালি বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ পর্যটন কেন্দ্র এটি পাহাড়ের রানী এবং রাঙ্গামাটির ছাদ হিসাবে পরিচিত। সাজেক উপত্যকাটি খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে এবং রাঙ্গামাটি শহর থেকে ৯০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে। এটি পাহাড়ের অপূর্ব সবুজ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, প্রান্তর, মেঘের সাথে খেলার দৃশ্য দেখার সুযোগ করে দেয় পর্যটকদের।

৭। ষাট গম্বুজ মসজিদ

ষাট গম্বুজ মসজিদ ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ পর্যটন আকর্ষণ। এটি সুলতানি আমলের অন্যতম নিদর্শন। খান জাহান আলী বর্তমান বাগেরহাট শহর থেকে তিন মাইল পশ্চিমে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মসজিদটি একটি বিশাল মিষ্টি-জলাশয়ের পূর্বের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটি নিখুঁত আকার এবং স্থাপত্য সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।

৮। পাহাড়পুর

সোমপুর মহাবিহার বা পাহাড়পুর বিহার ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম সুপরিচিত বৌদ্ধ বিহার এবং দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল। বিহারটি নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলা পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। এই বৌদ্ধ বিহারটি অতুলনীয় স্থাপত্য নকশার জন্য বিখ্যাত। দুর্দান্ত পোড়ামাটির ফলক এর মূল আকর্ষণ।

৯। জাতীয় স্মৃতিসৌধ

জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের স্মরণে একটি প্রতীকী কাঠামো হিসাবে এটি নির্মিত হয়েছে। পুরো কমপ্লেক্সটি প্রায় ৮৪ একর জমিতে তৈরি হয়েছে। কিছু গণকবর এবং একটি জলাশয় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে অবস্থিত। একটি সেতু দিয়ে ছোট খাল পার হতে হবে যা জাতির স্বাধীনতার পক্ষে কঠিন পথ এবং প্রতিকূল যাত্রার প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

১০। সোনারগাও

প্রথমে এটি স্বাধীন বাংলার শাসকরা শাসন করেছিলেন এবং এরপরে এটি বঙ্গ সুলতানি এবং তারপরে দিল্লি সুলতানিয়ার রাজধানীতে পরিণত হয়। তারপরে এটি মুঘলরা দখন করেছিল। মূল রাজধানীর খুব সামান্য চিহ্ন এখন সোনারগাঁওয়ে রয়ে গেছে। এখন, বেশিরভাগ পর্যটক সোনারগাঁতে পানাম নগরী দেখতে, ধনী হিন্দু বণিকদের কিছু ক্ষয়প্রাপ্ত বাড়ি , রাজপ্রাসাদ এবং লোকশিল্প যাদুঘর দেখতে দেখতে যান।

সবশেষে বলতে হয়, এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দারুণ উপভোগ্য। বাংলাদেশ এক স্বর্গরাজ্য এবং বাংলাদেশের ১০টি দর্শনীয় স্থান আপনাকে স্বাগতম জানাতে সদা প্রস্তুত।

1 COMMENT

  1. বাংলাদেশের ভ্রমন সংস্কৃতি এবং তার জীবনধারা নিয়ে আলোচনা করলে উপকৃত হতাম।?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here