রাগ ভাঙ্গানোর উপায়
রাগ ভাঙ্গানোর উপায়

মাঝেমাঝে ভুল বশত হোক আর সঠিক কিছু নিয়েই হোক, রাগ চলে আসতে পারে। প্রিয় মানুষটির রাগ ভাঙ্গানোর উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। অনেক দিনের সম্পর্ক একটু একটু করে ভেঙে যেতে পারে অবহেলায়। যার প্রধান কারণ ‘ইগো’ নামক ঘুণ পোকা। এমন পোকার আবির্ভাব ঘটার আগেই সুরক্ষিত থাকুক ভালোবাসার সম্পর্ক। প্রিয়জনের টুকরো টুকরো রাগ থেকে সৃষ্টি হতে পারে ‘ইগো’ নামক ঘুণ পোকাটি। সেটি যাতে বংশ বিস্তর না করতে পারে সেজন্য আগে ‘সরি’ বলা শেখা উচিত।

রাগ ভাঙ্গানোর ১০টি উপায়

০১। নিজের মতো তাকে ভালোবাসুন।

আমরা কখনই কি নিজের মতো অন্যদেরকে ও ভালোবাসি, কয়জনই বা ভালোবাসি? যদি নিজের মতো সবাইকে সমানভাবে ভালোবাসতেন তাহলে আর এত সমস্যা আমাদের মাঝে থাকতো না। নিজের প্রতি অহংকার, অন্যের প্রতি হিংসা বিদ্বেষ থাকতো না। যাদের মনে যত সমস্যা থাকবে, তারা তত অসুখী হবে এটাই স্বাভাবিক। নিজের মতো অন্যদেরকে ভালোবাসার চোখে দেখলে এর মধ্যে অন্যরকম শান্তি পাওয়া যায়।

০২। প্রিয় মানুষটির রাগ চলে আসলে চুপ থাকুন

মানুষের রাগ আসাটা অস্বাভাবিক না। কোন কারণবশত মাঝে মাঝে রাগ চলে আসে। তবে এই রাগ যখন অতিরিক্ত হয়ে যায়, তা আপনার জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। যখন বেশি রাগ চলে আসবে তখন চুপ হয়ে যাবেন, কথায় তর্ক বিতর্ক করবেন না। যার সাথে রাগ দেখাচ্ছেন বা তর্ক করছেন তার সাথে যখন বেশি বেশি উল্টা পাল্টা কথা শুরু হয়ে যাবে, তখন যেইভাবে হোক চুপ করে থাকেন। চুপ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

০৩। নীরব পরিবেশে সময় কাটান জন্য নিয়ে যান

রাগ বেশি উঠলে নিরিবিলি পরিবেশে চলে যান, কিছুটা সময় একা একা কাটান, প্রিয় জন বা কাছের কোন বন্ধুদের বলেন সময় দেওয়ার জন্য। যখন কিছুটা সময় নিরিবিলি পরিবেশে পার করবেন, একটু হাসাহাসি ও আনন্দে কাটাবেন তখন দেখবেন আপনার মন সতেজ হয়ে গেছে, তারমানে রাগ ও কমে গেছে।

০৪। প্রিয় মানুষটির সাথে ভালো ব্যবহার করুন

আপনার একটা ভালো ব্যবহারই অনেক সুখী রাখতে পারে। সবধরনের মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকার ও ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। জীবনে কে কোথায় কাজে লাগবে আপনি কিন্ত জানেন না তাই সবার সাথে ভালো ব্যবহার করুন। কাউকে ছোট ভাবা যাবে না ছোটও একদিন অনেক বড় হয়ে যাবে। আর আপনি এইটাও জানেন কখন আপনার কার সাহায্য দরকার হলে পারে। তাই সবার সাথে ভালোভাবে থাকার চেষ্টা করুন, বিপদে মানুষদেরকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন, দেখবেন আপনারও সাহায্য দরকার হলে তারা এগিয়ে আসবে।

০৫। যে রাগ করে আছে তাকে যথেষ্ট সময় দিন।

নিজের পরিবারকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন, পরিবারের সদস্যদের সাথে সুন্দর অসাধারণ মুহূর্ত কাটান, ঘুরতে নিয়ে যান। পরিবারের সঙ্গে ঘুরার মাঝে রয়েছে অন্যরকম শান্তি যা আর কোথায় পাবেন না। তাই প্রকৃত সুখের জন্য নিজের পরিবারকে সময় দিতে ভুলবেন না।

০৬। প্রত্যেকটা ভালো কাজে প্রশংসা করুন

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ছোট একটি কাজ করেই যেকোনো মানুষকে অনেক বেশি খুশি বা ইমপ্রেস করা যায়, আর সেটি হচ্ছে তাঁর ভালো কাজ গুলোতে প্রশংসা করা। সবসময় খুশি রাখতে চাইলে, ভালোবাসার মানুষটির প্রত্যেকটা ভালো কাজের প্রশংসা করুন। যখন আপনি কোন ভালো কাজ করবেন বা লেগে থাকবেন, তখন আপনার কোন ভাই – বন্ধু যদি প্রশংসা করে, তাহলে আপনিও অনেক খুশি হবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। তাই আপনি ও কাছের মানুষের কাজে প্রশংসা করুন। আর এটি করলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।
কথায় আছে,

“অন্যের প্রশংসা করুন, আপনিও প্রশংসিত হবেন
অন্যকে সম্মান করুন, আপনিও সম্মানিত হবেন।“

তাই নিজের ভালোর জন্য বা সুবিধার্থে অথবা ভালোবাসার প্রিয় মানুষটি মুখে ও অন্তরে আনন্দ ফোঁটাতে চাইলে, আজ থেকেই তাঁর প্রত্যেকটা ভালো কাজে প্রশংসা করুন।

০৭। একে অপরের কাজে সহযোগিতা করুন

খুব আনন্দ, হাসি-খুশি থাকতে বা মজা করতে চাইলে একে অপরের কাজে সহযোগিতা করুন। আপনি যখন বাসার কোন কাজে আপনার ভালোবাসার মানুষকে বা সঙ্গিকে সাহায্য করবেন, তখন সে যতেষ্ট খুশি হবে। মনে এই চিন্তাটা বেশি কাজ করবে, নিশ্চয় আপনি তাকে অনেক অনেক ভালোবাসেন তাই বাসার কাজে ও সহযোগিতা করছেন। আর হ্যাঁ প্রত্যেকটা কাছের মানুষ কিন্ত চাই শুধু ভালোবাসা। যদি আপনার কাজে সহযোগিতা করে বা আপনি তাঁর কোন কাজে সহযোগিতা করেন, তাহলে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রচণ্ড বেড়ে যাবে এবং পরিশেষে যথেষ্ট খুশি হবে। ছোট্ট, সাধারণ ও কার্যকরী একটি ফর্মুলা, কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন আপনার ভালোবাসার মানুষ খুশি হয় কিনা।

০৮। মাঝেমাঝে ছোট্ট কিছু উপহার দিন।

যখন মাঝে মাঝে ভালোবাসার মানুষটিকে তাঁর পছন্দের কোন কিছু উপহার দিয়ে অবাক করে দিবেন, সে মন থেকে অনেক আনন্দিত হবে আর আপনাকে প্রচণ্ড ভালবাসবে। আপনি ইচ্ছা করলে বিভিন্ন ইভেন্টে ফুল, চকলেট, বই, কার্ড, পোশাক, মোবাইল ছাড়াও আরও অনেক কিছু উপহার দিতে পারেন। অথবা কোন ইভেন্ট ছাড়াও এইরকম কিছু পছন্দের গিফট করতে পারেন। এতে করে সে অনেক অবাক হবে, খুশি হবে। সত্যি বলতে ভালোবেসে দেওয়া ছোট উপহার গুলোই খুশির খোরাক হয়ে উঠতে পারে।

তাই ভালোবাসার মানুষটিকে খুশি রাখতে চাইলে অবশ্যই চেষ্টা করুন, মাঝে মাঝে পছন্দের ছোট্ট কিছু উপহার দেওয়ার জন্য। এইটা আসলেই খুব কার্যকরী একটা ধাপ। আপনি নিজেই একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন, খুশি রাখতে ও ভালোবাসা পেতে কতটা সহায়তা করে এই পদ্ধতিটি।

০৯। সঙ্গীর পছন্দ অপছন্দের খুঁজ রাখুন।

সবসময় ভালোবাসার প্রিয় মানুষটির বা সঙ্গীর প্রতিটা ব্যাপারে পছন্দ – অপছন্দের খবর রাখুন। ফলে সে কখন কোনটা পছন্দ করে ও কখন কোনটা অপছন্দ করে সহজেই বুঝতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন। এতে করে সে খুব খুশি হবে আপনার প্রতি। সে কি সিনেমা দেখতে পছন্দ করে, ঘুরতে যাওয়া পছন্দ করে, কি কি খেতে পছন্দ করে নাকি রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেতে বেশি পছন্দ করে, এইরকম আরও অনেক ব্যাপারে ভালো করে জেনে নিন, কি কি পছন্দ করে এবং কি কি পছন্দ করে না।
আর আপনি সবসময় চেষ্টা করবেন, তাঁর পছন্দের কাজটি করার জন্য এবং অপছন্দের কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন। তাহলে খুব সহজেই ভালোবাসার মানুষটিকে খুশি রাখতে পারবেন।

১০। মাঝেমাঝে সঙ্গীকে নিয়ে ভ্রমনে যান।

কোন ঐতিহ্যবাহী বা প্রাকৃতিক পরিবেশে ভ্রমণ বা ঘোরাঘুরি করার আনন্দই অন্যরকম। মাঝে মাঝে বন্ধুদের, ফ্যামিলির বা প্রিয় কোন মানুষের সাথে ভ্রমনে গেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। অর্থাৎ ভ্রমণে গেলে মন ভালো ও যথেষ্ট পরিমাণে সতেজ হয়ে যায়, একঘেয়েমি দূর হয়, ব্রেইন সতেজ হয়, টেনশন কমে যায় ও ভ্রমণ থেকে আসার পর কাজে মন বসে, ভালোভাবে কাজ করা যায় ইত্যাদি, আরও সুবিধা রয়েছে। তাই আপনি যদি আপনার ভালোবাসার মানুষকে খুশি রাখতে চান, মাঝেমাঝে ভ্রমনে নিয়ে যান। দেখবেন সে অনেক খুশি হবে এবং আপনাকে ও প্রচুর ভালবাসবে। একটু আনন্দ, মন খুলে হাসাহাসি ও কথা বলা, সবকিছুই অতীতের দুঃখ মোচন করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here