অলসতা দূর করার উপায়
অলসতা দূর করার উপায়

অলসতা দূর করার উপায় সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

অলসতা আমাদের সাথে প্রতিনিয়ত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিটা কাজের সাথে অলসতার রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। যেন কোন ভাবেই ছাড়তেই চাই না আমাদেরকে। আর আমরাও তাঁর কাছ থেকে ছুটতে চাই না। প্রয়োজনীয় ও দরকারি কাজ ছেড়ে দিয়ে মনের মতো অলস সময় কাতাচ্ছি। ফলে একটা সময় কঠিন ও চরম বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়।

যদি প্রশ্ন করা হয় সাফল্যের উচ্চ শিখতে পৌঁছাতে পারি না কেন? উত্তর আসবে সঠিকভাবে, পর্যাপ্ত ও কঠোর পরিশ্রম করা সম্ভব হয় নাই। পরিশ্রম করতে পারেন নাই কেন? তাহলে উত্তর আসবে গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলোতে অলসভাবে সময় কাটাইছিলাম। তাহলে বুঝতেই পারছেন আমাদের সাফল্যের সাথে এটি সম্পর্ক কতটুকু।

প্রথমে জেনে নেই অলসতার কারণ কি, কেন আমরা অলস হয়ে যায়?

হ্যাঁ আমরা এমনি অলস হয় নাই, রয়েছে অনেক কারণ যা আমাদেরকে অলস বানাতে সহায়তা করেছিল। অলস হওয়ার অন্যতম কারণ গুলো হচ্ছে –

• অনেক কাজ করেছি, খুব ক্লান্ত তাই আজকে আর কিছু করবো না। বাকি কাজ গুলো এখন করলে শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে, ভালো লাগছে না, সমস্যা নেই আগামীকাল করবো। এইসব বাজে চিন্তায় হচ্ছে অলসতার প্রধান কারণ।

• অনেকে তাঁদের ছেলে মেয়েদের এতটাই আদর করে থাকে, মাটিতে হাঁটলে পিঁপড়া কামড়াবে, দৌড়ালে ব্যাথা পাবো-কত আদর সেই ছোটবেলায়! এসব কারণেও আমরা অলস হয়ে যায়।

• কিছু মানুষ আছে কঠোর পরিশ্রমের অবিশ্বাসী হয়ে উঠে আবার কিছু আছে কাজের জন্য শুধু অন্যের উপর নির্ভর করে। যা আমাদেরকে ধীরে ধীরে অলসতার দিকে ধাবিত করে।

• ছোটবেলা থেকেই এমন আদরের পরিবেশে আমাদের বেশিরভাগ মানুষকে বড় করা হয় যার ফলে আমরা খুব বেশি কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।

• শরীরে দুর্বলতা দেখা দিলে, বিসন্নতায় ও বিপর্যস্ত অবস্থায় সময় কাটালে এবং কোন বিশেষ কাজে মনোযোগ নষ্ট হলে অথবা অন্য কোন দুশ্চিন্তায় বা মানসিক সমস্যায় পরে থাকলে ও আমরা অলস হয়ে যায়।

সবসময় ইতিবাচক কাজে পরিশ্রমে করা উচিত। অলসতা আছে মানে, পরিশ্রম নাই এবং ইতিবাচক পরিশ্রম না করা মানে, ধীরে ধীরে জীবনকে বিপর্যস্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। তাই জীবনে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছাতে হলে অবশ্যই আপনাকে পরিশ্রমী হতে হবে। নিজের মধ্যে থাকা অলসতা দূর করতে হবে। এখানে আপনি জানতে পারবেন অলসতা দূর করার ১০টি উপায় যার ফলে খুব সহজেই যথেষ্ট পরিশ্রমী হয়ে উঠতে পারবেন।

অলসতা দূর করার উপায়

০১। উপযুক্ত লক্ষ্য বাছাই করে রাখুন।
০২। নিজেই নিজের মোটিভেটোর হন।
০৩। কাজের জন্য রুটিন তৈরি করুন।
০৪। সবসময় স্টেস বা চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
০৫। শারীরিক ব্যায়াম করুন বা জিমে যান।
০৬। শরীর ও মনকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখুন।
০৭। কাজের প্রতি যথেষ্ট ভালবাসা থাকতে হবে।
০৯। নিজের ধৈর্য বা ইচ্ছাশক্তিকে সজাগ রাখুন।
১০। ফেলে রাখা কাজের পজিটিভ চিন্তা করুন।

০১। উপযুক্ত লক্ষ্য বাছাই করে রাখুন।

অলসতা দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে প্রথম ও প্রধান হচ্ছে উপযুক্ত লক্ষ্য বাছাই করা। প্রতিটা মানুষেরই উচিত ভবিষ্যতের জন্য অগ্রিম উপযুক্ত লক্ষ্য নির্বাচন করা। প্রত্যেকের এইটাই প্রধান কাজ হওয়া উচিত। কারণ লক্ষ্যই আপনাকে কাজের প্রতি নিবিড় প্রয়াসে ধাবিত করবে। ফলে আপনি খুব সহজেই উপযুক্ত ও ভালো একটি লক্ষ্যের কথা চিন্তা করে অলসতা দূর করতে পারবেন। জীবনের সাফল্য নির্বর করে এটির উপর, আপনি কোন পজিশনে যাবেন, ভবিষ্যতে কি কি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করবেন এইসব কিছুই লক্ষ্যের উপর নির্বর করে। এটি না থাকলে আপনি কিছুই করতে পারবেন না কথায় আছে, লক্ষ্য ছাড়া একজন মানুষ, বৈঠা বিহীন নৌকা মতো। তাই অলসতা দূর করতে অবশ্যই আপনাকে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে ফলে সে কাজে আপনাকে লেগে থাকতে সহায়তা করবে।

০২। নিজেই নিজের মোটিভেটোর হন।

অলসতা দূর করার অন্যতম একটি উপায় হচ্ছে নিজেই নিজের মোটিভেটোর হওয়া। যেকোনো কাজে একদিনেই কিন্ত সফলতা পাওয়া যায় না। ভালো একটা কাজ সঠিকভাবে ও পুরোপুরি শিখতে কিন্ত আপনাকে অনেক সময় দিতে হবে। যত ভালো কিছু করতে যাবেন ঠিক তত সময় দিতে হবে আর সাথে ব্যর্থতা তো আছেই। এইযে দীর্ঘ সময় নিয়ে আপনি সফলতা অর্জন করতে যাবেন, তখনই মাঝ পথে নানা সমস্যার সম্মুখীন হবেন, প্রায় সময় নিজেই হতাশ হয়ে যাবেন, কাজে মন বসবে না, বেশীক্ষণ কাজ করতে ভালো লাগবে না আর দুশ্চিন্তাতো আছেই। এইজন্যই নিজেই নিজের মোটিভেটোর হন। এর ফলে কাজের প্রতি অনেকটা মনোযোগ চলে আসবে আর অলসতা দূর হয়ে যাবে। তাছাড়া এতে কিছু সুবিধাও রয়েছে যেমনঃ অন্যের চিন্তা ও মতবাদ ধারা আপনাকে প্রবাহিত করতে পারবেন না, অযথা সময় নষ্ট হবে না, রির্সাচ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ও বৃদ্ধি পাবে। তাই সর্বদা নিজেই নিজের মোটিভেটর হওয়ার চেষ্টা করুন।

০৩। কাজের জন্য রুটিন তৈরি করুন।

দৈনন্দিন প্রতিটা কাজকে ছোট ছোট ভাগ করে একটা সুন্দর রুটিন তৈরি করুন। প্রতিদিনের কাজ সম্পন্ন করাতে এটি সত্যিই অনেক কার্যকরী অবদান রাখে। আর যদি আপনি প্রতিদিনের কাজ পুরোপুরি ভাবে শেষ করার চেষ্টা করেন তাহলে অলস সময় কাটানোর কোন চিন্তায় আসবে না। জীবনে উচ্চ আসরে যাওয়ার জন্য এবং যেকোনো কাজ খুব শীগ্রয় ও যতাযত ভাবে শিখার জন্য একটা সঠিক ও উপযুক্ত রুটিন আপনাকে অনেকখানি সাহায্য করবে। যার ফলে অলসতা আপনার কাছেও আসতে পারবে না।

০৪। সবসময় স্ট্রেস বা চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

কাজের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন আর অলসতা দূর করুন। অতিরিক্ত কাজের চাপ পরে গেলে আপনি হ য ব র ল হয়ে যাবেন একটা সময় কাজের থেকে দূরদর্শিতা চলে যাবে। ফলে ডিপ্রেশন ও হতাশায় ভুগতে শুরু করবেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুই করতে ভালো লাগবে না আর দিন দিন অলসতা বেড়েই যাবে। তাই দিনের কাজ দিনে করার চেষ্টা করুন। সবসময় কাজের স্ট্রেস বা চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। আপনি যদি সবসময় কাজের স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তাহলে দীর্ঘসময় কাজে লেগে থাকতে পারবেন। যার ফলে অলস সময় কাটানোর কোন প্রশ্নই আসবে না।

০৫। শারীরিক ব্যায়াম করুন বা জিমে যান।

দীর্ঘ সময়ের অলসতা দূর করার জন্য শারীরিক ব্যায়াম বা জিমে যেতে পারেন। অলসতা দূর করার অন্যতম উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি। শারীরিক ব্যায়ামের রয়েছে অসাধারণ উপকারিতা। তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে এটি শরীর ও মনে অনেক সতেজ রাখে আর এর ফলে অলস জীবন যাপন করা থেকে বিরত রাখবে। অনেক সময় দেখা যায় শারীরিক দুর্বলতা ও মানসিক অস্থিরতা বা ক্লান্তি কাজের প্রতি অনীহা তৈরি করে । ক্লান্তি বা অসুস্থতা ইত্যাদির জন্যই কাজের প্রতি মনোযোগ রাখতে না পারলে , তাহলে তোমার উচিত প্রথমেই বিশ্রাম নেওয়া । পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নাও ৷ শরীরচর্চা বা হালকা ব্যায়াম করো ৷ পারলে প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশে বেরিয়ে এসো । তুমি অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠবে ৷ কাজের জন্য আনন্দ ফিরে পাবে। আর এর ফলে আপনার অলসতা অনেক গুণ কমে যাবে এবং ভালো কিছু করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

০৬। শরীর ও মনকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখুন।

মন খারাপ, বিষন্নতা ও নানা ধরনের মানসিক অস্থিরতার কারণেও অলসতা দেখা দেয়। তাই শরীর ও মনকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে হবে। যেন মন খারাপ বা বিষণ্ণতায় না থাকতে হয় ও বিভিন্ন মানসিক অস্তিরতার মধ্যে যেন না পড়তে হয়। আবার যদি অলস সময় কাটান, তাহলে এটি শুধু আপনার কাজের ক্ষতি করবে না অলসতা থেকে মন খারাপ, বিষন্নতা ও নানা ধরনের মানসিক অস্থিরতার শুরু হতে পারে। তাই অলসতাকে না বলুন এবং পরিশ্রমী ও কর্মোদ্যমী হয়ে ওঠোন।

০৭। কাজের প্রতি যথেষ্ট ভালবাসা থাকতে হবে।

অলসতা দূর করার আরেকটি অন্যতম উপায় হচ্ছে নিজের প্রতিটা কাজের প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা থাকা। আপনার প্রতিটা কাজের উপর যথেষ্ট ভালোবাসা থাকতে হবে। ভালোবাসা ছাড়া কোন কিছুই এত সহজে অর্জন করা সম্ভব নয়। ভালোবাসা এমন এক শক্তি যা আপনাকে কাজে লেগে থাকতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আর কাজে লেগে থাকা মানে হচ্ছে অলসতা দূর করা। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ তথ্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তা স্টিভ জবস সব সময় বলে থাকতেন, তুমি তোমার ভালোবাসার কাজটি খোঁজ, কারণ ভালোবাসা এমন আশ্চার্যশক্তি যা তুমাকে খুব সহজেই সাফল্য এনে দিবে। তাই অবশ্যই আপনাকে কাজের প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা থাকতে হবে। আর হ্যাঁ যখন দীর্ঘ সময় কাজ করতে গিয়ে বিরক্ত চলে আসবে, কাজে মন বসবে না, তখনই ওই কাজের উপর নিজের ইচ্ছা আগ্রহ ও ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে তুলতে হবে। এর ফলে অলসতা আপনাকে কোন ভাবেই ক্ষতি করতে পারবে না।

০৯। নিজের ধৈর্য বা ইচ্ছাশক্তিকে সজাগ রাখুন।

অলসতা দূর করার ও জীবনে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে উপযোগী, প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী ধাপ হচ্ছে নিজের ধৈর্য বা ইচ্ছা শক্তিকে কঠিনভাবে সজাগ রাখা। অলসতা কাটাতে নিজের ইচ্ছা শক্তির উপর জোর দিন। যখন দেখবেন কোনো কিছুতেই অলসতা দূর হচ্ছে না, তখন নিজেই নিজেকে ইচ্ছা শক্তিকে বৃদ্ধি ও জোর করুন। দীর্ঘ সময়ের অলসতা দূর করার জন্য ইচ্ছা শক্তির উপর তেমন কোন উপায় নেই। আপনি এখন এই কাজটি করবেনই সেইটা নির্ভর করে আপনার ইচ্ছা শক্তি ও ধৈর্যের উপর। আবার আপনি আবার বলতে পারেন না আজকে আর কিছু ভালো লাগছে না, পরের দিন বাকী কাজটা করবো, এইটাও নিজের ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভর করে। তাই আপনাকে অবশ্যই নিজের ইচ্ছা শক্তি বা ধৈর্যশক্তিকে যথেষ্ট সম্মান দিলাম।

১০। ফেলে রাখা কাজের পজিটিভ চিন্তা করুন।

যখন ফেলে রাখা কাজের পজিটিভ চিন্তা করবেন, তখনই একঘেয়েমি বা অলসতা চলে যাবে আবার কাজ করতে মন বসবে। আজকের কাজ যখন আগামীকালে করার চিন্তা আসবে, তখনই মনে করে হবে অলসতা আপনাকে দুর্বল করছে। আমরা অনেকেই প্রতিদিনের কাজ শেষ না করে রেখে দেই। এতে করে ২টা ক্ষতি হয়, ১। আপনার কাজের টার্গেট বা লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন না খুব সহজেই এবং ২। অলসতা আপনাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। এইজন্যই প্রতিদিনের জন্য একটা উপযুক্ত রুটিন করুন এবং ধাপে ধাপে সব সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন।

যখনই কাজ শেষ না করে ঘুমিয়ে পরতে যাবেন বা অযথা সময় নষ্ট করবেন, তখনই উচিত ফেলে রাখা কাজের পজিটিভ চিন্তা করা। যেমন, একটু কাজ বাকী আছে, শেষ করে ফেলি তাহলে আগামীকালের জন্য চাপ থাকবে না, যত বেশি কাজ করবো তত বেশি শিখতে ও জানতে পারবো, দিনের কাজ দিনে শেষ করতে পারলে অনেক আনন্দ পাওয়া যাবে বা অফিসের কাজ বেশি করে দিলে বস অনেক খুশি হবেন ইত্যাদি এই ধরনের ইতিবাচক চিন্তা করবেন, তাহলেই অলসতা আপনার ধারে কাছেও আসতে পারবে না।

আশা করি, অলসতা দূর করার উপায় করার উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ও কার্যকরী ধারণা পেয়ছেন।

আরও জানুন –

পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর সহজ ৫টি উপায়

ভালোবাসার মানুষকে খুসি করার ১০টি উপায়

প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত ও উপকারিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here