স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায় গুলো কি কি জানেন, এই সম্পর্কে ধারণা আছে কী আপনার? এখানে আপনি জানতে পারবেন স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ১০টি কার্যকরী উপায়। আমাদের দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ব্রেইন। আমরা দৈনন্দিন কি কাজ করে থাকি এবং যত পড়াশোনা করে থাকি সবগুলো মস্তিষ্কে গিয়ে জমা। অর্থাৎ আমরা যে পূর্বে একটা কাজ পরবর্তীতে মনে রাখি বা বলতে পারি, শুধু মাত্র স্মৃতিশক্তি প্রখর থাকার কারণে সম্ভব।
আপনার স্মৃতিশক্তি প্রখর যদি না হয়, মানে যদি দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে আপনি গুরুত্বপূর্ণ কিছুই মনে রাখতে পারবেন না, এককথায় জীবনে ভালো একটা পজিশনে যেতে পারবেন না। আসলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে সবাই চায়। কিন্ত কিভাবে বাড়ানো যায়, এই সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ও পর্যাপ্ত ধারণা নাই। দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই, কারণ এখানে আপনি জানতে পারবেন বিস্তারিত তথ্যের সাথে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ১০টি কার্যকরী উপায়।
০১। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
০২। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমানো।
০৩। মানুসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা।
০৪। স্মৃতি তৈরি করতে ধ্যান করা।
০৫। কাজের ফাঁকে কফি খাওয়া।
০৬। নিয়মিত সঠিক সময়ে ব্যায়াম করা।
০৭। সবসময় খাশি-খুসি ও আনন্দে থাকা।
০৮। পাপ থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করা।
০৯। নেতিবাচক চিন্তা বাদ দেওয়া।
১০। মাঝে মাঝে অবসর নেওয়া উচিত।
০১। পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায় গুলোর মধ্যে প্রথম ধাপ হচ্ছে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। স্মৃতিশক্তি সক্রিয় রাখার বা বৃদ্ধি করার জন্য পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। খাবার আমাদের শরীরে উপর অনেক প্রভাব ফেলে, যেমন খারাপ বা অপুষ্টিকর খাবার খেলে অসুস্থ হয়ে যাবেন খুব সহজে, এবং ভালো ও সাস্থ্যকর খাবার খেলে শরীর সুস্থ ও ফিটনেস উপযুক্ত থাকে। ঠিক তাই, যদি আপনার ব্রেইনকে সুস্থ, সচল, সক্রিয় ও ভালো রাখতে চান, তাহলে অবশ্যই কিছু পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কারণ এতে রয়েছে এমন কিছু দরকাই উপাদান, যা স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে বিরাট সহায়তা করবে।
০২। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমানো।
মস্তিষ্কে সুস্থ ও সচল রাখতে অবশ্যই বিশ্রাম দেওয়া উচিত। যদি যথেষ্ট রেস্ট না দিয়ে থাকেন, তাহলে বিভিন্ন কাজের চাপে ও চিন্তা ভাবনার ফলে স্মৃতিশক্তি ধারন করতে একটি বাধা সৃষ্টি হয়ে যাবে। তাই অবশ্যই আপনাকে সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। আচ্ছা আপনি কি সারাদিন ও সারারাত একটানা কাজ করতে সক্ষম, আপনারা দ্বারা কি এইটা সম্ভব? অবশ্যই না, কেননা একটানা দীর্ঘসময় কাজ করতে শরীর অসুস্থ হয়ে যায়, হাত পা ব্যথা শুরু করবে। ঠিক আপনার ব্রেইন ও তাই, যদি ব্রেইনের উপর মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ পরে, আর যদি মস্তিষ্কে বিশ্রাম না দেন, তাহলে স্মৃতিশক্তি লোপ পাবে। তাই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য অবশ্যই নিয়মিত সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
০৩। মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায় এর বিপরীতে কাজ করে মানসিক চাপ। স্মৃতিশক্তি সক্রিয় রাখতে বা বৃদ্ধি করতে হলে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন। কারণ মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ লাভের চেয়ে আমাদের অনেকটা ক্ষতি করে। তবে স্বল্প মাত্রার মানসিক চাপ আসলে স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, নতুন কিছু তৈরি করার জন্য বা কোন কাজে সফলতা আনার জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এবং এর ফলে বিপদের সময় বা জরুরি প্রয়োজনে পরিস্থিতিকে দ্রুত মোকাবেলার শক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মস্তিস্কের জন্য খুবই খারাপ। এবং এটি স্মৃতিশক্তি দুর্বল করতে বিরাট সহায়তা করে। তাই আমাদের উচিত মাঝে মাঝে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে স্বল্প পরিমাণে পজিটিবভাবে চিন্তা ভাবনা করা। তবে অবশ্যই সিরিয়াস হওয়া যাবে না, অর্থাৎ মস্তিষ্কের ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না।
০৪। স্মৃতি তৈরি করতে ধ্যান করা।
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ও সক্রিয় রাখতে ধ্যান যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। ধ্যান কি? ধ্যান হল পেশি ও স্নায়ুর শিথিলায়নের মাধ্যমে আত্মনিমগ্ন হওয়া এবং অস্থির মনকে স্থির করা ও মনোযোগ একাগ্র করার প্রক্রিয়া। ধানের অনেক উপকার রয়েছে, অনেক বিশেষজ্ঞরা শরীর ও মন সুস্থ সবল রাখার জন্য নিয়মিত সকালে ধ্যানে বসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ধ্যান হলো মনের ব্যায়াম; নীরবে বসে সুনির্দিষ্ট অনুশীলন—বাড়ায় মনোযোগ, সচেতনতা ও সৃজনশীলতা। মনের স্বেচ্ছানিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে। প্রশান্তি ও সুখানুভূতি বাড়ানোর পাশাপাশি ঘটায় অন্তর জাগরণ। আর এর ফলেই স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি বিকাশ ঘটে।
০৫। কাজের ফাঁকে কফি খাওয়া।
হ্যাঁ, কাজের বিরতিতে এক কাপ কফি খেলে, ব্রেইন অনেকটা সচল থাকে যা স্মৃতিশক্তির ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। একটানা কাজ করলে একটা বিরক্ত চলে আসে, এবং বেশি চাপ নিলে এটি মস্তিষ্কে গিয়ে ও চরম চাপ সৃষ্টি করে, ফলে ব্রেইনের কার্য ক্ষমতা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে। তাই কাজের মাঝখানে যদি গল্প করতে করতে এক কাপ কফি খান, তাহলে ব্রেইনকে অনেকটা বিশ্রাম দিতে পারবেন, ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকবে। কফিতে ক্যাফেইন নামক উপাদান আছে যা রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ঠিক রেখে কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করে। তাই দিনে ১/২ বার কাজের মাঝখানে কফি খাওয়ার চেষ্টা করুন।
জেনে নিন, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার ৭টি কারণ, এখানে ক্লিক করুন!
০৬। নিয়মিত সঠিক সময়ে ব্যায়াম করা।
ব্যায়াম এমন একটি বিস্ময়কর উপায়, যার দ্বারা আপনার শরীরের সবকিছু ঠিক রাখতে পারবেন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্মৃতিশক্তির ধারণ ক্ষমতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে ব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। আপনি যতক্ষণ ব্যায়াম করবেন, ততক্ষণ আপনার মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বেড়ে যায়, যা ব্রেনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শরীরচর্চা করলে দেহের পেশির সাথে সাথে মস্তিষ্কের আকারও বৃদ্ধি পায়।
ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কের সিন্যাপসের সংখ্যা বাড়ে। এর ফলে মগজে নতুন নতুন কোষ তৈরি হয়। আর কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামের ফলে মগজে বেশি হারে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয়। আর আপনি যদি খোলা জায়গায় ব্যায়াম করেন, তাহলে বাড়তি পাওনা হলো ভিটামিন ডি। তাহলে বুঝতেই পারছেন, নিয়মিত সঠিক সময়ে ব্যায়ামের উপকারিতা কি পরিমাণ রয়েছে।
০৭। সবসময় হাসি-খুশি ও আনন্দে থাকা।
সবসময় হাসি খুশি ও আনন্দে থাকলে, মন মেজাজ অনেক ভালো রাখে। মন প্রফুল্ল রাখতে ও শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সবার সাথে মন খুলে কথা বলুন। এটির সুবিধা অনেক, হইতো বা ব্যাপারটা প্রত্যক্ষ ভাবে দেখা যায় না বলে আমরা অনেকেই জানি না, এবং এই উপায়টার তেমন গুরুত্ব দেয় না। হ্যাঁ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে হাসি খুশি থেকে মন মেজাজ ভালো রাখার ভূমিকা রয়েছে। মন ভালো রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে মন খুলে হাসা ও সবার সাথে কথা বলা। আপনার মন যে কারণেই খারাপ থাকুক না কেন, সবার সাথে মন খুলে হাসিমুখে কথা বলুন, দেখবেন মন ভালো হয়ে যাবে। প্রান খুলে হাঁসতে পারার অনেক সুফল রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি বেশি মন খুলে হাসলে, ব্রেইন সুস্থ থাকে ও হার্টের সমস্যা তুলনামূলক ভাবে খুব কম হয়ে থাকে।
০৮। পাপ থেকে দুরে থাকার চেষ্টা করা।
যে কাজই করেন না কেন সবসময় একটা কথা মনে রাখবেন, সেটা হচ্ছে পাপ থেকে দূরে থাকতে হবে। পাপ মানুষকে পরোক্ষভাবে কতটা ক্ষতি করে, সেইটা আমরা কখনই উপ্লব্দি করতে পারি না। এটি ধীরে ধীরে আমাদের চরম খারাপ পথে ধাবিত করে। বিভিন্ন খারাপ চিন্তা কুচিন্তা মাথায় এসে জমা হতে থাকে, ফলে ব্রেইন ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পরে। তাই আপনি যদি আপনার ব্রেইনকে সুস্থ, সতেজ ও অবিরাম ভালো রাখতে চান, তাহলে অবশ্যই পাপ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে। এবং সবসময় মস্তিষ্কটাকে ভালো কাজে ও সৎ, সঠিক চিন্তায় কাজে লাগাতে হবে। তাহলে স্মৃতিশক্তি সক্রিয় ও বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
০৯। নেতিবাচক চিন্তা বাদ দেওয়া।
নেতিবাচক চিন্তার কুফল বলে শেষ করা যাবে না। অর্থাৎ আপনি যদি সবসময় নেতিবাচক চিন্তা করতে থাকেন, তাহলে দিন দিন আপনার মস্তিষ্কের ধারণ ক্ষমতা লোপ পেতে থাকবে। মন থেকে নেতিবাচকতা ত্যাগ করা হতে পারে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ধরে রাখার অন্যতম উপায়। যখন কোনো একটি বিষয়ে মস্তিষ্ক উদ্বিগ্ন থাকে তখন মস্তিষ্ক তা গ্রহণ করে এবং সেভাবে প্রস্তুত হয়। এ কারণে নেতিবাচক চিন্তাগুলো মস্তিষ্কে স্থায়ী হয়ে যায়। অন্যদিকে ইতিবাচক ও গঠনমূলক বিষয় নিয়ে চিন্তা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই মন থেকে নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা উঠিয়ে দিন।
১০। নতুন কোন কাজ শিখুন।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নতুন কোন কাজ শিখা। স্মৃতিশক্তি ভালো ও বৃদ্ধি করার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় কার্যকরী উপায় হচ্ছে সর্বদা নতুন কিছু শিখা বা কিছু তৈরি করা। নতুন কোনো কিছু শেখার চেষ্টা করলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। বহু গবেষণাতেই দেখা গেছে, শিক্ষা মানসিক কার্যক্ষমতা ধরে রাখে। এ তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ যত বেশি শিক্ষিত তার মানসিকতাও তত সমৃদ্ধ। তাই এসব মানুষের মস্তিষ্কে যত অবসাদ আসতে নেয় তাদের মস্তিষ্ক তত বেশি বাধা দেয়। দেখা গেছে, মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বিনাশী রোগ অ্যালঝেইমার্স উচ্চশিক্ষিত মানুষের মাঝে দেরিতে আক্রমণ করে । অর্থাৎ শিক্ষা যত বেশি হবে তত বেশি আপনার মস্তিষ্ক কার্যক্ষম থাকবে। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন, সবসময় নতুন কোন কাজ শিখা ও তৈরি করা।