মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায়
মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায়

মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় গুলো জানতে চান, তাহলে সঠিক জাইগায় এসেছেন। এখানে আপনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকার ১০টি উপায় গুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন।

শুধু শারীরিকভাবে ভালো ও সুস্থ থাকলেই যে আপনি পুরোপুরি সুস্থ থাকবেন, সেইটা একদমই ভুল। শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার পাশাপাশি অবশ্যই মানসিক ভাবে ও ভালো থাকতে হবে। প্রথমে গুরুত্ব দিতে হবে মানসিক ব্যাপারটাকে। কারণ আপনি যাই করেন না কেন সবার আগে মানসিকভাবে চিন্তা করতে হয়, মানসিক ভাবে প্রস্তুত নিতে হয়। তাই অবশ্যই আপনাকে সবসময় মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে হবে। কোন কাজে উন্নত করতে চাইলে, গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে চাইলে মানসিকভাবে আপনাকে প্রস্তুত হবে। কিন্ত বর্তমানে আমাদের মধ্যে মানসিক সমস্যাটাই একটু বেশি দেখা দেয়।

মানসিকভাবে সুস্থ থাকার ১০টি উপায়

০১। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান।
০২। ব্যায়াম করুন বা জিমে যান।
০৩। নিয়মিত সকালে প্রার্থনায় বসুন।
০৪। কিছু দিন পর পর ভ্রমণে যান।
০৫। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখুন।
০৬। কাজের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
০৭। ক্ষতিকর খাবার বর্জন করুন।
০৮। সর্বদা সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমাতে ঘুমান।
০৯। নিজের প্রতি সচেতন হওয়ার চেষ্টা করুন।
১০। সমস্যা হলে মেডিকেল চেক আপ করুন।

০১। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান।

শরীর ও মন সুস্থ সতেজ রাখার জন্য অবশ্যই আপনাকে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর বা পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বেঁচে থাকতে চাইলে শুধু খাবার নয়, নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দরকার। যদি শরীর এবং মনকে সুস্থ, সুন্দর ও প্রফুল্ল রাখতে চান তাহলে আপনাকে নিয়মিত দুধ, ডিম, কলা, গাজর, আপেল, পেয়ারা, খেজুর, বাদাম, টমেটো, মাছ খেতে হবে। এছাড়াও আরও অনেক ধরনের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার রয়েছে, সেগুলো ও খেতে হবে। যদি খাবার ঠিক থাকে তাহলে আপনার শরীর ও মন মেজাজ ভালো থাকবে। আর পুষ্টিকর খাবার নিয়মিত খেতে পারলে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা খুব সহজেই সম্ভব। ফলে আপনি শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন।

০২। ব্যায়াম করুন বা জিমে যান।

মানসিকভাবে ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে চাইলে নিয়মিত ব্যায়াম করুন বা জিমে যান। ব্যায়ামের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। অনেকে বলে থাকবেন, নিয়মিত ব্যায়াম করলে ফিটনেস ভালো থাকে, শরীর সুস্থ থাকে অর্থাৎ দেহের গঠন সুস্থ, সুন্দর ও উপযুক্ত দেখায়। এইটা আবার মানসিকভাবে সুস্থ রাখে কিভাবে? হ্যাঁ ব্যায়াম করলে মানসিকভাবে ও সুস্থ থাকা যায়, মানসিক স্ট্রেস অনেকটা কম হয়। কারণ শরীরের সাথে মানসিক ব্যাপারটা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। মানসিকভাবে ভালো থাকতে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটাও জরুরি। শরীরকে সক্রিয় রাখতে সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়াম করুন। মানসিকভাবে হালকা বোধ করতে বা মন ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের চর্চা করে যান, যা আপনাকে যথেষ্ট সহায়তা করবে।

০৩। নিয়মিত সকালে প্রার্থনায় বসুন।

আপনি ইতোমধ্যে হয়তোবা জানেন সকালে উঠার উপকারিতা কি পরিমাণ রয়েছে। খুব সকালে উঠলে ব্রেইন সুস্থ ও ফ্রেশ থাকে। খুব সকালে উঠে নিয়মিত প্রার্থনায় বসুন, অনেকে আবার ধ্যানের কথা বলে থাকবেন। সকালে উঠে নিরবে পার্থনা করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। সত্যিই এই উপায়টা যথেষ্ট কাজে দেয়। আপনি যে ধর্মের অনুসারীই হয়ে থাকুন না কেন, প্রতিদিন নিজ ধর্ম অনুযায়ী খানিকটা সময় প্রার্থনা করুন। কেবল করতে হবে বলে নয়, মনের গভীর থেকে করুন। দিনের শুরুটা যদি ভালো ভাবে শুরু করতে পারেন, তাহলে পুরোটা দিন আপনার ভালো যাবে, প্রতিটা কাজ ফ্রেশ মনে করতে পারবেন। তাই প্রত্যেকটা মানুষেরই উচিত খুব সকালে ঘুম থেকে উঠা এবং ২০/২৫ মিনিট প্রার্থনায় বসা তারপর ধাপে ধাপে দিনের কাজ শুরু করে দেওয়া।

০৪। কিছু দিন পর পর ভ্রমণে যান।

হ্যাঁ মানসিকভাবে সুস্থ ও সতেজ থাকতে নিজের মনকে আরও উৎফুল্ল রাখতে এবং কাজের প্রতি আরও মনযোগী হতে অবশ্যই কিছু দিন পর পর ভ্রম করা উচিত। বর্তমানে বিনোদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভ্রমণ করা। ভ্রমণ করতে সবারই ভালো লাগে। ভ্রমণ করার ফলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। তাঁর মধ্যে কিছু হল ভ্রমণ আপনার ধৈর্য শক্তি বৃদ্ধি করে । ফলে এটি আপনাকে ধৈর্যশীল তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে, যা পরবর্তীতে আপনি নিজের প্রফেশনাল কাজের জন্য ভালো হবে। ভ্রমণ করলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি হয় সুতরাং আপনার লক্ষ্য অর্জন করতে ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম ।ইতিবাচক মানসিকতা অর্জন হয় সুতরাং আপনি ভ্রমণ করুন বেশি বেশি এবং এতে মানসিক চাপ হ্রাস পায় এবং সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন ভ্রমনের গুরুত্ব কতটুকু। আপনি কিছু দিন পর পর ভ্রমণে যান, তাঁরপর বুঝতে পারবেন এটি আপনাকে কি পরিমাণ সাহায্য করে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য।

০৫। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখুন।

যেকোনো ইতিবাচক কাজে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখুন। এবং কাজটি মনোযোগ করার মন মানসিকতা ও সাহস রাখুন। মানসিক সুস্থতার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল নিজের মন এবং ব্যক্তিতের সম্পর্কে নিরপেক্ষ ধারনা ও পর্যাপ্ত আত্মবিশ্বাস বজায় রেখে নিজেকে এবং নিজের চিন্তাধারার স্রোতকে সঠিক পথে সঞ্চালনা করা। আলস্যের কারণে মূলত আমরা না করা কাজের তালিকাটাকে লম্বা করতে থাকি। এবং কাজের প্রতি নিজের আস্তা বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। আর এইগুলোই মন মানসিকতা নষ্ট করে। সবসময় নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখুন আর সর্বদা সঠিক পথে ও নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করুন।

০৬। কাজের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাজের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ার বা চাপ সৃষ্টি হওয়ার অনেক কারণ থাকে, তাঁরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ। বেঁচে থাকলে অবশ্যই আপনাকে কিছু না কিছু কাজ করতে হবে, এক একজনের ক্যারিয়ার অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ হয়ে থাকে। যেমনঃ ডাক্তারের কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত সময়মতো রোগী দেখা, সঠিক সময়ে হাসপাতালে যাওয়া, যারা ইঞ্জিনিয়ার তাদের কাজ হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে কোন প্রজেক্টের কাজ শেষ করে, অফিস কর্মীর কাজ হচ্ছে দিনের মধ্যে কাজ শেষ করা। অর্থাৎ প্রত্যেকটা মানুষেরই কাজ থাকে, আর এই কাজ যখন সঠিক সময়ে শেষ না করা যায়, তাহলেই কিন্ত কাজের চাপ পরে। যদি খুব ভালভাবে কাজ নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তখনই ক্লায়েন্ট চাপ দিতে থাকবে। এইরকম মাত্রাতিরিক্ত হলে একটা সময় মানসিক ভাবে বিপর্যয় হবে যা অনেকটা ক্ষতিকর। তাই চেষ্টা করতে হবে, দিনের কাজটা দিনেই শেষ করার জন্য, কাজের কোন চাপ নেওয়া যাবে না।

০৭। ক্ষতিকর খাবার বর্জন করুন।

কিছু খাবার আছে যা শরীরের সাস্থের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর। সেগুলোকে ক্ষতিকর খাবার বলে। শরীর ও মন মানসিকতা ভালো রাখতে অবশ্যই আপনাকে ভালো ও পুষ্টিকর বা স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং ক্ষতিকর খাবার বর্জন করতে হবে। ক্ষতিকর খাবার গুলো হচ্ছে, মদ, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, সিগারেট ইত্যাদি আরও অনেক নেশা জাতীয় খাবার রয়েছে, এইগুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে। নেশা জাতীয় খাবার শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর, বিভিন্ন রোগ তৈরি করে এবং ব্রেইনে নেতিবাচক প্রভাব পরে। যা আপনাকে মানসিকভাবে অসুস্ত করতে সহায়তা করবে। তাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই ক্ষতিকর খাবার বর্জন করতে হবে।

০৮। সর্বদা সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুমাতে ঘুমান।

আপনাকে কাজে মনোযোগ দিতে চাইলে অবশ্যই প্রথমে ব্রেইনকে ফ্রেশ রাখতে হবে। মস্তিষ্ক যত সতেজ থাকবে ঠিক তত বেশি কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন। আর তাঁর জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে এবং সেইটা নির্দিষ্ট সময়ে। কিছু মানুষ আছে দিনে ৪/৫ ঘণ্টাও ঠিকভাবে ঘুমায় না, আবার অনেকে ১০/১২ ঘণ্টাও ঘুমায়। এইযে কোন সঠিক নিয়ম অনুসরন না করে ঘুমাচ্ছি, তাঁর নেতিবাচক প্রভাবই কিন্ত আমাদের ব্রেইনে পড়ে। প্রতিদিন রাতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে এবং দিনে দুপুরে খাবারের পর ১-২ ঘণ্টা হালকা ঘুমাতে হবে। তাহলেই আপনার ঘুমতা উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত হবে। আর এইরকম চললে অনেকটা মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুম মনকে সুস্থ সতেজ ও ভালো রাখে।

০৯। নিজের প্রতি সচেতন হওয়ার চেষ্টা করুন।

মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে এখানের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে নিজের প্রতি সচেতন হওয়া। উপরে ৮ টা কার্যকরী উপায় বলা হয়েছে, যেগুলো ঠিক ঠাক ভাবে করতে না পারলে কোন কাজেই আসবে না। আর ৮টা কার্যকরী উপায় যদি অনুসরণ করতে চান, ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে নিজের প্রতি সচেতন হতে হবে। তাছাড়া কোন দিনও সম্ভব না ভালো কিছু করা। আপনি সঠিক ভাবে রাতে ঘুমাচ্ছেন না, সকালে অফিসে বা স্কুলে যাওয়ার পর বার বার ঘুম চলে আসছে, তখন যদি বস বা স্যার দেখে ঘুমিয়ে যাচ্ছেন, কাজে বা পড়াশোনায় কোন মনোযোগ নেই, তখন কিছু একটা বলবে স্বাভাবিক, হয়তোবা ক্লাস থেকে বা কাজ থেকে বের করে দিতে পারে। আর তারপরেই কিন্ত আপনি মানসিকভাবে চিন্তায় পরে যাবেন শেষে অসুস্থ হয়ে যাবেন। আচ্ছা এখানে আপনি যদি সচেতন হতেন, তাহলে এইসব কিছুই হতো না। তাই সবসময় নিজের প্রতি ও প্রত্যেকটা কাজে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করুন।

১০। সমস্যা হলে মেডিকেল চেক আপ করুন।

মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় গুলোর মধ্যে চূড়ান্ত, গুরুত্বপূর্ণ এবং শেষ ধাপ হচ্ছে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো। আপনি কি মানসিকভাবে অতিরিক্ত অসুস্থ? উপরের যতগুলো উপায় দেওয়া আছে সবগুলো হচ্ছে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার গুরুত্বপূর্ণ উপায়। অর্থাৎ আপনি আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেন যেন মানসিক সমস্যা না হয় বা মানসিকভাবে অসুস্থ না হয়ে পড়েন। তারপরে ও যদি কোন সমস্যা দেখা দেয় অথবা আপনি আসলে দিন দিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যান, খুব শীগ্রয় ভালো ডাক্তার দেখান, মেডিকেল চেক আপ করার। আপনি মোটামুটি সুস্থ তারপরেও ৬ মাস অন্তর অন্তর ডাক্তার দেখান। কারণ ছোট হোক বা বড়, সুস্থ হোক বা অসুস্থ—প্রত্যেক মানুষের জন্য মেডিক্যাল চেক আপ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কেউ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন কি না এটা জানার জন্য বছরে অন্তত একবার ‘মেডিক্যাল চেক আপ’ করিয়ে নেওয়া জরুরি।

আশা করি মানসিকভাবে সুস্থ থাকার উপায় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত একটা ধারণা পেয়েছেন।

আরও জানুন –

যে ১০টি কাজ আপনাকে সফলতার দিকে নিয়ে যাবে

ফ্যাশনে ছেলে মেয়েদের ঘড়ির প্রয়োজনীয়তা

২০টি শাক সবজির গুণাগুণ ও উপকারিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here