ডোমেন এবং হোস্টিং কি
ডোমেন এবং হোস্টিং কি

ডোমেইন এবং হোস্টিং কি, কত প্রকার এবং এইগুলো কখন কাজে লাগে, কিভাবে ব্যবহার করতে হয় বিস্তারিত অবশ্যই আপনার জানা প্রয়োজন, যদি আপনি অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়তে চান? তাহলে অবশ্যই আপনাকে পুরো আর্টিকেলটি পড়তে হবে।

ইন্টারনেট-এক বিশাল মহা সমুদ্রের মত। এখানে কোটি কোটি ওয়েবসাইট সমুদ্রের জল রাশির মত ছুটছে আর খেলছে যেন প্রতিনিয়ত!

আচ্ছা একটা কথা বলুন তো, এই যে বিশাল সমুদ্রের মত বিশাল ওয়েবসাইট এর এক মেলা, এখান থেকে আপনি আপনার দরকারী ওয়েবসাইট টি কিভাবে বের করবেন ? এটা তো খুব সহজ,ভাবছেন তাই!

হ্যাঁ আসলেই সহজ, কিন্তু এই সহজ কাজটাই আমরা কীভাবে করি?

আমরা শুধু আমাদের কম্পিউটারের ব্রাউজারে সুন্দর করে www. দিয়ে ওয়েবসাইটের নামটা লিখে দিই,ব্যাস আমাদের ওয়েবসাইট আমাদের সামনে কয়েক সেকেন্ড সময়ে এসে হাজির!
বস্তুতঃ সকল ওয়েবসাইট এর মেলা থেকে আলাদা করে যে কোন একটি ওয়েবসাইট বের করার জন্য প্রতিটি ওয়েবসাইট এর ই একটা নির্দিষ্ট আইপি এড্রেস অথবা একটি নাম থাকে, এই নামটিই হলো ডোমেইন।

ডোমেইন কি?

ডোমেন এবং হোস্টিং কি আলোচনা করতে গেলে, প্রথমে ডোমেইন নিয়ে কথা বলতে হবে। মনে করুন আপনি ইন্টারনেটে কোন কিছু খুঁজে বের করার জন্য গুগল এ গেলেন। আচ্ছা,এই যে গুগলে আপনি গেলেন,আপনি কি শুধু গুগল টাইপ করেছেন নাকি টাইপ করেছেন www.google.com?
নিঃসন্দেহে আপনি আপনার টাইপ করেছেন www.google.com, এই www.google.com টাই হলো গুগল নামক প্রতিষ্ঠান এর ওয়েব ঠিকানা বা ডোমেইন। সোজা বাংলায় ডোমেইন বলতে কোন স্থান, ঠিকানা ইত্যাদিকে বোঝানো হয়।

প্রথমদিকে ওয়েবসাইট খুঁজে বের করার জন্য আইপি এড্রেস(ওয়েবসাইটের ঠিকানা) ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এই আইপি এড্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট বের করা অত্যন্ত ঝামেলার।
যেহেতু ওয়েবসাইটগুলোর আইপি এড্রেস (যেমন-66.220.159.255.) মনে রাখা কষ্টকর তাই মনে রাখার সুবিধার্থেই এই আইপি এড্রেসগুলোকে একটা নাম দিয়ে ডাকা হয়, এই নামগুলোকেই বলা হয় ডোমেইন

হোস্টিং কাকে বলে?

ডোমেন এবং হোস্টিং কি আলোচনা করতে গেলে দ্বিতীয় ও গুরুত্বপূর্ণভাবে হোস্টিং নিয়ে কথা বলতে হবে। যদি আপনার কোন ওয়েবসাইট থাকে,তাহলে সেটাকে প্রতিদিন চব্বিশ ঘন্টা চালু রাখা এবং পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত হতে যে কেউ যেন সেখানে ভিজিট করতে পারে সেটা নিশ্চিত করার জন্য হোস্টিং এর প্রয়োজন।
মূলত আপনার ওয়েবসাইট টিকে ৩৬৫ দিনই ২৪ ঘন্টা সচল তথা ইউজার দের জন্য আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কন্টেন্ট এভেইলেভেল রাখার জন্য আপনার কম্পিউটার টি ও ৩৬৫ দিন ২৪ ঘন্টা চালু রাখতে হয়।
এখন আপনি নিজেই চিন্তা করুন আপনার পক্ষে কি সম্ভব এভাবে সবসময় আপনার কম্পিউটার চালু রাখা? না,সম্ভব না।

আর এজন্যই আপনার সুবিধার জন্য অন্য কোন সার্ভিস প্রদানকারীর কম্পিউটারের (যেগুলো সবসময় চালু থাকে) নির্দিষ্ট জায়গায় আপনার ওয়েবসাইট এর সমস্ত কন্টেন্ট গুলো যে আপনি রাখলেন, এটাকেই হোস্টিং বলে।

আমাদের দেশে অথবা দেশের বাহিরে এমন অনেক হোস্টিং কোম্পানি আছে যারা টাকার বিনিময়ে তাদের কম্পিউটারে আপনার ওয়েবসাইট কে হোস্টিং করতে দিবে।

অনেকেই হয়তো ভাবছেন নিজের কম্পিউটার থাকতে আরেকজনের কম্পিউটার হোস্ট করতে যাবো কেন, আপনি একবার ভেবে দেখেন আপনার কম্পিউটার কি সারা ক্ষণ চালু থাকে? না থাকে না,কারন ইলেক্ট্রিসিটি না থাকতে পারে, নেটওয়ার্ক আপডাউন করতে পারে।

সেক্ষেত্রে যখন আপনার কম্পিউটার অফ থাকবে,আপনার ওয়েবসাইট তখন আর কেউ খুঁজেও পাবে না।
এজন্য হোস্টিং কোম্পানি থেকেই টাকার বিনিময়ে আমাদের হোস্টিং কিনে নিতে হয়।

হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি?

হোস্টিং মুলত দুপ্রকার-

১.ফ্রি হোস্টিংঃ

আপনি যদি একটা পরীক্ষামূলক ওয়েবসাইট ডেভেলপ করতে চান,তাহলে ফ্রি হোস্টিং ব্যবহার করতে পারেন। ফ্রি হোস্টিং এ হোস্টিং কোম্পানি গুলো আপনাকে একেবারে ফ্রি সার্ভিস দিবে। তবে আপনার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট অথবা ব্যাবসায়ীক ওয়েবসাইটের জন্য আপনি ফ্রি সার্ভিস ব্যবহার না করেন সেটাই ভালো।
প্রথমত ফ্রি হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর বেশী হলে হোস্টিং কোম্পানি আপনাকে সাসপেন্ড করবে এবং দ্বিতীয়ত এসব ফ্রি হোস্টিং এ আপনার ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি, আনলিমিটেড ব্যানডওইথ, ইমেইল একাউন্ট,লোডিং স্পীড ইত্যাদি তেমন ভালো পাবেন না।

২.প্রিমিয়ার হোস্টিংঃ

প্রিমিয়ার হোস্টিং আপনাকে টাকা দিয়ে কিনতে হবে। প্রিমিয়ার হোস্টিং আবার চার প্রকার-
১.শেয়ারড হোস্টিং।
২.ভিপিএস হোস্টিং।
৩.ডেডিকেটেড হোস্টিং।
৪.রিসেলার হোস্টিং।

ডোমেইন ট্র্যান্সফার কি?

কোন কোম্পানির ওয়েবসাইট খোলার আগে প্রথমেই তার নাম বা ডোমেইন ঠিক করে নিতে হয়। এরপর যা করতে হয় তা হলো, কোন রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ওই ডোমেনের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করাতে হয়। সাধারণত রেজিস্ট্রি অফিস গুলো প্রতিটি রেজিষ্ট্রিকৃত ওয়েবসাইটকে নিজেদের সদস্য করে নেয় এবং বিনিময়ে কিছু সু্যোগ-সুবিধাও দেয়।

কিন্তু মাঝেমধ্যেই দেখা যায় যে সার্ভিস প্রোভাইডারের সার্ভিস হয়তো কোন কারনে ক্লায়েন্ট এর আর পছন্দ হয় না। সেক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট তার ডোমেইন এর রেজিষ্ট্রেশনকৃত ডোমেইনটি পরিবর্তন করে অন্য কোন কোম্পানি বা সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে দিয়ে দেয়। এই যে এভাবে ডোমেইন এর রেজিস্ট্রার চেঞ্জ করার সম্পূর্ণ প্রসিডিউর, একেই বলে ডোমেইন ট্রান্সফার।

ভিপিএস হোস্টিং কি?

ভিপিএস বলতে আমরা বুঝি ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার। এই হোস্টিং সিস্টেম এ একটা কম্পিউটার কে কোন বিশেষ এপস অথবা সফটওয়্যার দিয়ে ভাগ করে বেশ কয়েকটা সার্ভার তৈরী করা হয়। এই সার্ভারগুলোর প্রত্যেকটি কেই ভিপিএস বলা হয়।

ভিপিএস সিস্টেমে হোস্টিং কোম্পানিগুলো আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মতন একটা আলাদা হার্ডডিস্ক দিবে,র‍্যাম দিবে এবং সিপিউ দিবে।

যেহেতু এই সিস্টেমে আপনাকে প্রায় আলাদা একটা কম্পিউটারের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় কাজেই আপনার সাইটটি অনেক সিকিউরড থাকবে এবং সাইটে যদি ভিজিটর সংখ্যা মিলিয়ন ও হয়, সাইটের স্পীড ভালো থাকবে।

শেয়ার্ড হোস্টিং কি?

এ ক্ষেত্রে হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডাররা তাদের একটা কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক থেকে স্পেস ভাড়া দেয় ব্যবহারকারীদের কাছে।

যেমন ধরুন,আপনার তিন জিবি হোস্টিং স্পেস লাগবে, তো আপনাকে যেটা করতে হবে,এই তিন জিবি স্পেস কোন শেয়ার্ড হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট মেয়াদে কিনে নিতে হবে। এখন এই এক বছরের জন্য কিনে নেওয়া অথবা ভাড়া নেওয়া এই তিন জিবি হোস্টিং স্পেস এ আপনি আপনার ওয়েব সাইটের বিভিন্ন ডাটা বা কন্টেন্ট যেমন, ইমেজ,ভিডিও,বিভিন্ন আর্টিকেল ইত্যাদি রাখতে পারবেন।

এই যে আপনি তিন জিবি হোস্টিং স্পেস কিনে নিয়ে আপনার সাইটের হোস্টিং করছেন, তেমনি আপনার হোস্টিং এ ব্যবহৃত হার্ডডিস্ক এর বাকী অংশটুকু ও হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানি অন্য কোথাও বিক্রি করবে অথবা ভাড়া দিবে। এভাবে একই হার্ডডিস্ক থেকে শেয়ারে কয়েকজন মিলে হোস্টিং ব্যবহার করার সিস্টেম টাই হলো শেয়ার্ড হোস্টিং সিস্টেম।

শেয়ার্ড হোস্টিং এর সুবিধা অসুবিধা সমূহঃ

প্রতিটি হোস্টিং সিস্টেমের কিছু সুবিধা অসুবিধা থাকে,যাই হোক আমরা আজকে শেয়ার্ড হোস্টিং এর কিছু সুবিধা অসুবিধা দেখি চলুন-

সুবিধাঃ

১. শেয়ার্ড হোস্টিং হলো ইদানীংকালের খুব পপুলার একটা হোস্টিং সিস্টেম কারন এর দাম তুলনামূলক অনেক কম।
২. কেবলমাত্র এই সিস্টেমেই আপনি আনলিমিটেড সাব-ডোমজেম এবং আনলিমিটেড ডাটাবেস পাবেন।
৩. এই সিস্টেমের আপটাইম হলো প্রায় ৯৯.৯%.
৪.এই সিস্টেমে আপনি ফ্রি পাবেন, – সি-চ্যানেল, ডোমেইন কন্ট্রোলার। তাছাড়া লাইফটাইম এসএসএল ও এখানে আপনাকে ফ্রি দেওয়া হবে।

অসুবিধাঃ

১.এখানে ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি কম থাকে।আপনি নিজেই চিন্তা করুন, একটা হার্ড ডিস্কের ব্যবহারকারী যদি এক-শোর ও অধিক হয় তাহলে সেই হার্ডডিস্কের সমস্ত ডাটা অথবা কন্টেন্ট কতটা নিরাপদে থাকতে পারে!
২.লোডিং স্পীড তুলনামূলক অনেক কম থাকে।
৩. এই সিস্টেমে শেয়ার্ড ইউজার বেশি হলে,সাইটের ভিজিটরের সংখ্যার উপরে সাইটের লোডিং নির্ভর করে। ভিজিটর বেশী হলে অনেকসময় সাইট ডাউন ও হয়ে যেতে পারে।

ডোমেইন হোস্টিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাঃ

অনেকেই মনে করেন ডোমেইন এবং হোস্টিং একই জিনিস। আসলে এটা ভুল, ডোমেইন এবং হোস্টিং সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। তবে একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মুলত ডোমেইন এবং হোস্টিং দুটোই আপনার ওয়েবসাইটের জন্য কাজ করে।

যদি আরো সহজ করে বলতে চাই, ডোমেইন হলো আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম,ঠিকানা আর হোস্টিং হলো সেই ডোমেইন এ থাকা সমস্ত আসবাবপত্র দেখার রাস্তা।

আপনার ওয়েবসাইটের ডোমেইন ঠিক করা মানে এর একটা নাম বা ঠিকানা আপনি ঠিক করলেন। এখন,ভিজিটর রা এই ডোমেইন দিয়েই আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবে। কিন্তু শুধু ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে তো হবেনা ,ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কন্টেন্ট ডাটা, ভিডিও,ছবি ইত্যাদি কিভাবে দেখবে? তো এই ক্ষেত্রে আমাদের ওয়েব হোস্টিং এর দরকার পরবে ।

এই ওয়েব হোস্টিং ই আপনার ওয়েবসাইটের সমস্ত ওয়েব ফাইলগুলোকে একেবারে যত্ন করে নিজের কাছে রেখে দেয়।

এক কথায়, ডোমেইন দিয়ে ওয়েবসাইটে ঢুকবেন, তারপর ওয়েব হোস্টিং থেকে আপনার জমা করা ফাইল পড়বেন,দেখবেন । একদম সহজ ব্যাপার। ডোমেইন ছাড়া ওয়েবসাইট নেই, আর ওয়েব হোস্টিং ছাড়া ওয়েবসাইটের কোন কন্টেন্টই নেই।

আশা করি, ডোমেন এবং হোস্টিং কি, কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত ও কার্যকরী তথ্য জানতে পেরেছেন।

আরও জানুন –

অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার সুবিধা অসুবিধা ও ক্ষেত্র গুলো জেনে নিন

উইন্ডোজ ১০ কিভাবে সেটআপ এর সুবিধা অসুবিধা ও সমস্যার সমাধান

ইন্টারনেট কি? কিভাবে কাজ করে ও এর সুফল ও কুফল

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here