অপারেটিং সিস্টেম কি ও কিভাবে কাজ করে

আমরা সকলেই কমবেশি কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদির সাথে পরিচিত। যদিও আমাদের অধিকাংশ সময় কাটে কম্পিউটার অথবা মোবাইলকে কেন্দ্র করে, তবুও আমরা অনেকেই জানিনা অপারেটিং সিস্টেম কি, এটা কেন দরকার।

যারা নিয়মিত কম্পিউটার, মোবাইল ব্যবহার করেন অথচ জানেন না অপারেটিং সিস্টেম কি, মূলত তাদের জন্যই আমাদের আজকের এই আর্টিকেল। আশা করছি অপারেটিং সিস্টেম এর বিস্তারিত আমরা সহজভাবে এই আর্টিকেলে তুলে ধরতে পারবো।

অপারেটিং সিস্টেম কিঃ

অপারেটিং সিস্টেম কি? এই সম্পর্কে প্রথম ধারণা নিবো। ইংরেজি এ শব্দ দুটোকে ব্যবচ্ছেদ করলে এর মানে দাঁড়ায় কোন পদ্ধতি পরিচালনা করা। সোজা ভাবে বলতে গেলে, এটি কম্পিউটার এর এমন একটি প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার যার কাজ হলো ব্যবহারকারীর নির্দেশ অনুযায়ী কম্পিউটার এর হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা এবং কম্পিউটার এর বিভিন্ন প্রোগ্রামের ইনপুট, আউটপুট, স্টোরেজ এবং প্রসেসিং এর জন্য কাজ করা

অপারেটিং সিস্টেমের কার্যাবলীঃ

বলা হয়ে থাকে অপারেটিং সিস্টেম হলো যে কোন কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোগ্রাম।একটা আধুনিক কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম বিভিন্ন মুখী এবং বেশ জটিল।
যাই হোক, আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমের কার্যাবলী কে আমরা সাধারণত চার ভাগে ভাগ করতে পারি।

১. প্রসেস ব্যবস্থাপনাঃ

কম্পিউটারের প্রসেসর একটা সিরিয়াল ডিভাইস হওয়ায় এটি একই সময়ে যে কোন একটি প্রসেস ( চলমান প্রোগ্রাম) এর কাজ করতে পারে। আমরা অনেকেই হয়তো জানি যে, একটি কম্পিউটারে একই সাথে অনেক প্রসেস প্রক্রিয়াধীন থাকে।এখানে অপারেটিং সিস্টেম কাজ হলো এটা নির্ধারণ করা যে, কখন কোন প্রসেসটি কম্পিউটারের প্রসেসর দিয়ে ফাংশনাল কাজে ব্যবহৃত হবে।

২. মেমোরি ব্যবস্থাপনাঃ

কম্পিউটারে কোন প্রসেস চলার সময়, প্রয়োজনীয় ফাইল স্টোরেজ (HDD অথবা SDD) থেকে র‍্যাম এ লোড করে নেয়। এখানে অপারেটিং সিস্টেম এটাই ফিক্স করে, কোন প্রসেস মেমোরির কত টুকু জায়গা কতক্ষণ এবং কীভাবে ব্যবহার করবে।

৩. স্টোরেজ ব্যবস্থাপনাঃ

অপারেটিং সিস্টেম এর কাজ হলো সিস্টেম স্টোরেজ কে সিস্টেম ফাইল হিসেবে রুপান্তরিত করা। ফলে আপনার কাঙ্ক্ষিত ফাইলটি স্টোরেজ এ কোন অবস্থায় কতটুকু স্পেস নিয়ে আছে এটাও অপারেটিং সিস্টেম নিজেই নির্ণয় করে।

৪. সুরক্ষা ও নিরাপত্তাঃ

কম্পিউটারের কোন এক প্রসেস যেন অন্য কোন প্রসেস এর কাজে বিঘ্ন না ঘটায় অপারেটিং সিস্টেম সেটা নিয়মিত দেখাশোনা করে এবং প্রতিটি কম্পিউটারের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

অপারেটিং সিস্টেম কত প্রকারঃ

অপারেটিং সিস্টেম কে চার ভাগে ভাগ করা যায়, কোন ধরনের কম্পিউটার তারা কন্ট্রোল করে এবং কোন ধরনের এপ্লিকেশন তারা সমর্থন করে এর উপর ভিত্তি করে।

১. রিয়েল টাইম অপারেটিং সিস্টেম (RTOS)

রিয়েল-টাইম অপারেটিং সিস্টেমগুলি যন্ত্রপাতি, বৈজ্ঞানিক যন্ত্র এবং শিল্প ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়।
এই অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো কম্পিউটারের রিসোর্স পরিচালনা করা যেন প্রতিবার যখন কোন নির্দিষ্ট অপারেশন কার্যকর হয়, সেটা যেন একই সময়ে এবং একই পরিমানে সম্পাদিত হয়।

২. সিঙ্গেল ইউজার, সিঙ্গেল টাস্ক

নামটি থেকে বোঝা যায়, এই অপারেটিং সিস্টেমটি কম্পিউটার পরিচালনা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যাতে কোনও ব্যবহারকারীর একবারে কার্যকরভাবে একটি কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
পালম হ্যান্ডহেল্ড কম্পিউটারের জন্য পালম ওএস হলো সিঙ্গেল ইউজার সিঙ্গেল টাস্ক অপারেটিং সিস্টেমের একটি ভাল উদাহরণ।

৩. সিঙ্গেল ইউজার, মাল্টি টাস্কিং।

-বর্তমানে এই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম বেশিরভাগ ইউজার রা তাদের ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপ কম্পিউটারগুলিতে ব্যবহার করে। মাইক্রোসফ্টের উইন্ডোজ এবং অ্যাপলের ম্যাক অপারেটিং সিস্টেম উভয়ই এই অপারেটিং সিস্টেমের উদাহরণ যা একটি সিঙ্গেল ইউজার কে একই সময়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করতে দেয়

৪. মাল্টি ইউজার।

এ অপারেটিং সিস্টেমটি একটি বহু-ব্যবহারকারী অপারেটিং সিস্টেম। এই সিস্টেমে এক সাথে অনেকগুলি পৃথক ব্যবহারকারীকে কম্পিউটারের রিসোর্স গুলোর সুবিধা একই সাথে নিতে দেয়।

ইউনিক্স, ভিএমএস এবং মেইনফ্রেম অপারেটিং সিস্টেমগুলি, যেমন এমভিএস, বহু-ব্যবহারকারী অপারেটিং সিস্টেমের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

অপারেটিং সিস্টেম কিভাবে কাজ করে?

অপারেটিং সিস্টেম কি এই সম্পর্কে আমরা প্রথমে জেনেছি, এখন জানবো এটি কিভাবে কাজ করে।

সারাদিন আপনার কম্পিউটারের ডিসপ্লেতে কত ট্যাব ওপেন করে আপনি কাজ করেন, আপনার নিজের ও সবসময় মনে থাকে না। এই যে আপনার পছন্দমতো একের অধিক ট্যাব একসাথে ওপেন করে রাখছেন এটা কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম এর ই কাজ।
চলুন জানি বিস্তারিত-

মনে করুন আপনি আপনার কম্পিউটার অন করবেন।এজন্য আপনি কি করলেন? সুইচবোর্ডে আপনারা কম্পিউটারের প্লাগ গুলো লাগিয়ে সিপিউর অন বাটনে ক্লিক করলেন। এই ক্লিক করার সাথে সাথেই কম্পিউটার তার র‍্যাম, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি ওপেন করে দেয়। র‍্যাম আর হার্ডডিস্ক তখন কার্ণেল কে নির্দেশ দেয় আর কার্ণেল যেয়ে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম কে নির্দেশনা দেয় ডিসপ্লে ওপেন করতে। অপারেটিং সিস্টেম তখন ডিসপ্লে কে নির্দেশ দেয় ওপেন হতে। ফাইনালি, আপনি দেখলেন আপনার কম্পিউটার এর ডিসপ্লে ওপেন হয়েছে।

এবার মনে করুন আপনি কোন ব্রাউজার ওপেন করার জন্য এক ক্লিকে আপনার কম্পিউটারকে নির্দেশনা দিলেন, আপনার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম তখন কম্পিউটারের কার্ণেল কে সেই ব্রাউজার ওপেন করার নির্দেশ পৌছে দেয়। কার্ণেল আবার সেটা পৌছে দেয় র‍্যাম আর হার্ডডিস্ক এর কাছে। হার্ডডিস্ক তখন এই ব্রাউজারের অবস্থান খুঁজে বের করে সেটা ওপেন করার জন্য কার্ণেল কে বলে দেয়।কার্ণেল সেই খবর আবার পৌছে দেয় অপারেটিং সিস্টেম এর কাছে ব্যাস, আপনিও সাথে সাথে দেখতে পাচ্ছেন আপনার নির্দেশনা দেওয়া ওয়েবসাইটটি আপনার কম্পিউটারের ডিসপ্লেতে ওপেন হয়েছে।

সমস্ত প্রসেস গুলো খুবই জটিল এবং লম্বা সময়ের মনে হলেও আসলে এগুলো সব সম্পন্ন হতে সময় লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড।
আসলে অপারেটিং সিস্টেম হলো আপনার কম্পিউটারের ম্যানেজারের মতন।কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ দেখাশোনা করা, সঠিক ভাবে, সঠিক নিয়মে হচ্ছে কিনা এসব নিশ্চিত করাই অপারেটিং সিস্টেম এর প্রধান কার্যাবলী।

কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের গুরুত্বঃ

পরিমাপের যে কোনও উপায় দিয়েই আপনি চিন্তা করেন না কেন, একটি অপারেটিং সিস্টেম হলো একটি কম্পিউটারে ইনস্টল করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফ্টওয়্যার।

অপারেটিং সিস্টেমটি কেবলমাত্র অনেক কম্পিউটার প্রসেসের কনট্রোলার হিসাবেই কাজ করে না, এটি ব্যবহারকারীকে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন শব্দ, গ্রাফিক্স এবং মেমরি শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে সহায়তা করে।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই যে বর্তমানে এত কম্পিউটার ব্যবহারকারী, এদের সবার কম্পিউটারই অকেজো হয়ে যাবে যদি এতে কোন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল না করা হয়।

অপারেটিং সিস্টেম এর তালিকাঃ

ইদানীং কম্পিউটার যেমন উন্নতি করেছে এবং বিকাশ করেছে, তেমনি কম্পিউটারের বিভিন্ন কমার্শিয়াল, ফ্রি,ওপেন সোর্স, ক্লোজড সোর্স অপারেটিং সিস্টেম গুলো ও ব্যপক উন্নতি হয়েছে।
নীচে অপারেটিং সিস্টেমের বিভাগগুলির একটি প্রাথমিক তালিকা এবং প্রত্যেক বিভাগের কয়েকটি অপারেটিং সিস্টেমের উদাহরণ দেওয়া হলো-

১. গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস।

যেমনঃউইন্ডোজ সিই,উইন্ডোজ ৯৮ ইত্যাদি।

২. মাল্টি ইউজার অপারেটিং সিস্টেম।

যেমনঃলিনাক্স, ইউনিক্স, উইন্ডোজ ২০০০ ইত্যাদি।

৩. মাল্টিপ্রসেসিং অপারেটিং সিস্টেম।

যেমনঃ লিনাক্স, ইউনিক্স, উইন্ডোজ এক্সপি ইত্যাদি।

৪. মাল্টিটাসকিং অপারেটিং সিস্টেম।

যেমনঃ লিনাক্স, ইউনিক্স, উইন্ডোজ ৮ ইত্যাদি।

৫. মাল্টিথ্রেডিং অপারেটিং সিস্টেম।

যেমনঃলিনাক্স, ইউনিক্স, উইন্ডোজ এক্সপি।

৬. ট্রাবলশ্যুটিং অপারেটিং সিস্টেম।

যেমনঃউইন্ডোজ ৭, উইন্ডোজ ৮, উইন্ডোজ ১০, ম্যাক,ইত্যাদি।

মোবাইলের অপারেটিং সিস্টেম কিঃ

মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম বা মোবাইল ওএস হলো, এমন একটি অপারেটিং সিস্টেম যেটি মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, পিডিএ, ট্যাবলেট কম্পিউটার এবং অন্যান্য হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসগুলির মতো মোবাইল ডিভাইসগুলিতে চালানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম হলো ডাটা এবং প্রোগ্রামগুলির একটি সমন্বিত সেট যা একটি মোবাইল ডিভাইসে চলে। এটি হার্ডওয়্যার পরিচালনা করে এবং মোবাইল ডিভাইসের পক্ষে যে কোন অ্যাপ্লিকেশন চালানো সম্ভব করে তোলে।

জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমগুলি হলো, অ্যান্ড্রয়েড, সিম্বিয়ান, আইওএস, ব্ল্যাকবেরি ওএস এবং উইন্ডোজ মোবাইল।

পরিশেষে, অপারেটিং সিস্টেম হলো কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সিস্টেম সফটওয়্যার। এই সিস্টেম সফটওয়্যারটি ছাড়া আপনি আপনার কম্পিউটার কে দিয়ে কোন কাজ করাতে পারবেন না।

আর তাই এটা বলা হয়ে থাকে যে অপারেটিং সিস্টেম হলো একটা কম্পিউটার আর তার ব্যবহারকারীর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা লিংক,যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী কোন ইনস্ট্রাকশন কম্পিউটারে দেয় আর অপারেটিং সিস্টেম সেই ইনস্ট্রাকশন কে বাস্তবায়ন করে।

আরও জানুন –

ইন্টারনেট কি? কিভাবে কাজ করে ও এর সুফল ও কুফল?

অ্যান্ড্রয়েডের জন্য সেরা ১০টি ভিডিও এডিটিং অ্যাপস

হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার কি ও কত প্রকার বিস্তারিত

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here