শেয়ার বাজার কি
শেয়ার বাজার কি? এর উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি

যে নির্দিষ্ট স্থানে বিভিন্ন সকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার, স্টক, ঋণপত্র, সিকিউরিটি, ইত্যাদি ক্রয় – বিক্রয়ের কার্য সম্পাদন করা হয় তাকে শেয়ার বাজার বলা হয়।

এক কথায় বলা যায় সুনির্দিষ্ট স্থানে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সাধারণ যৌথ মুলধনী কোম্পানি শেয়ার, স্টক ও ডিবেঞ্চার এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ঋণপত্র ক্রয় – বিক্রয়ের লেনদেন সংঘটিত হয় তাকে শেয়ার বাজার বলে।

শেয়ার বাজারের উদ্দেশ্য গুলো হচ্ছেঃ

শেয়ার বাজারকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সূচক হিসেবে গণ্য করা হয়। দেশের শিল্প ও বানিজ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে পুঁজি বাজার গঠন এবং পুঁজি প্রবাহে গতিশীল এনে দেয় শেয়ার বাজার। শেয়ার বাজারের প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার পেছনে যে উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে সেগুলো হচ্ছেঃ-

০১। শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ার, ডিবেঞ্চার ও অন্যান্য ঋণপত্র ক্রয় – বিক্রয়ে নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলাই এর উদ্দেশ্য।

০২। শেয়ার বাজার ঋণদাতা ও ঋণ গ্রহিতার মধ্যে মিলন ঘটে।

০৩। দেশের (বিভিন্ন পর্যায়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী) পুঁজির গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করা।

০৪। শেয়ার বাজারে শেয়ারের মূল্যসূচক তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তথ্য সরবরাহ করা।

০৫। দেশের পুঁজি বাজারের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সরকারকে সুপারিশ প্রদান করা।

০৬। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সম্প্রসারনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান করা।

০৭। শেয়ার, ঋণপত্র বা সিকিউরিটি এর ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নিয়মকানুন প্রবর্তন।

০৮। সঞ্চয়কারীদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের নিরাপত্তা করা।

০৯। জনগণের অধিক সঞ্চয়ে উৎসাহী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা।

১০। বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও সরকারি সংস্থার জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে দীর্ঘমেয়াদী ঋণসংগ্রহ করার কাজে সহায়তা করা।

শেয়ার বাজারের কার্যাবলি গুলো হচ্ছেঃ-

শেয়ার বাজারকে জাতীয় অর্থনীতির দর্পণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। উন্নত অনুন্নত সকল দেশের অর্থনীতিতে শেয়ার বাজারের ভুমিকা অপরিসীম। এ ভুমিকা পালনে শেয়ার বাজারকে কতকগুলো কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। নিচে এ সকল কার্যাবলি আলোচনা করা হলোঃ

০১। দীর্ঘমেয়াদী পুঁজির যোগানঃ

শেয়ার বাজার দেশের জনসাধারণের সঞ্চয়ের একটি মোটা অংশ সঠিকভাবে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে। আর এ বিভিন্ন শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী পুঁজির যোগান সহায়তা করে।

০২। পুঁজির গতিশীল বৃদ্ধিঃ

পুঁজির গতিশীলতা বৃদ্ধি করা শেয়ার বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ ধরনের বাজার না থাকলে মানুষ তাদের সঞ্চিত অর্থ লাভজনকভাবে বিনিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতো। পুঁজির প্রবাহ ঠিক না থাকলে অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসে, ব্যবসায় বাণিজ্যে মন্দা দেখা দেয়।

০৩। সঞ্ছয়ে উৎসাহ প্রদানঃ

সঞ্চয়ে উৎসাহ প্রদান করাও শেয়ার বাজারের একটি কাজ। জনগণ যেকোনো সময় শেয়ার ক্রয় করতে পারে। আবার প্রয়োজনে বিক্রয় করে অর্থসংস্থান করতে পারে। এতে করে একদিকে যেমন তারা মুনাফাও পেয়ে থাকে তেমনি বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়ে উঠে।

০৪। অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্য প্রকাশঃ

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর আর্থিক অবস্থা, শেয়ারমূল্য ঋণপ্ত্রের লেনদেন ইত্যাদি তথ্যাদি শেয়ার বাজার নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে। ফলে বিনিয়োগকারীগণ এসব বিবেচনা করে অর্থ বিনিয়োগের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। আর বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থই হলো দেশের ভালো অর্থনৈতিক অবস্থার বহিঃপ্রকাশ

০৫। দ্রুত শিল্পায়নঃ

শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে নব প্রতিষ্ঠানের শিল্প প্রতিষ্ঠানের সমূহের মূলধনের সমস্যা সমাধানে শেয়ার বাজারের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে তাদের কর্ম পরিধি সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে দেশের শিল্পায়নের গতিও তরান্বিত হয়।

০৬। সহজ ঋণ প্রাপ্তিঃ

শেয়ার বাজারে শেয়ার ও ঋণপ্ত্র যে কোনো সময় বিক্রি করে নগদ টাকায় রূপান্তর করা যায়। এর ফলে সহজেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ঋণপত্র বন্ধক রেখে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ সংগ্রহ করতে পারে।

০৭। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষাঃ

শেয়ার বাজারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা করা। যেমনঃ বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষা করা যায়।

০৮। বৈদিশিক বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণঃ

তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার সুষ্ঠুভাবে ক্রয় – বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে এবং বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। এছাড়া দেশে বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র চিহ্নিত করে দেশি ও বিদেশি নতুন বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করে থাকে।

০৯। কর্মসংস্থানের সুযোগঃ

শেয়ার বাজারে দেশের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। শেয়ার বাজারের প্রভাবে ব্যবসায় বাণিজ্যের পরিধি বিস্তৃত হয় এবং জাতীয় অর্থনীতিতে কর্মের ক্ষেত্র তৈরি হয়।

১০। ব্যাংকের তারল্যঃ

শেয়ার বাজার ব্যাংকের তারল্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। কারণ ব্যাংক গুলোর শেয়ার বাজারে নিয়োজিত অর্থ যেকোন সময় ফেরত পেতে পারে ফলে ব্যাংকের তারল্য বজায় থাকে।

১১। কোম্পানির দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তাঃ

তালিকাভুক্ত কোম্পানি গুলো সব সময় চেষ্টা করে যেন তাদের শেয়ারের দাম কমে না যায়। এজন্য কোম্পানিগুলো দক্ষতার সাথে কার্যাবলি পরিচালনা করে মুনাফা বৃদ্ধির প্রয়াস চালায়। মুনাফা বৃদ্ধি পেলে শেয়ার মূলে্য তার প্রভাব পড়ে। এতে শেয়ারহোল্ডারগণ বেশি হারে লভ্যাংশ পায়। ফলে শেয়ারের মূল্য কমে না গিয়ে বরং বারতে থাকে। এভাবে শেয়ার বাজার কোম্পানিগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধিতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করে।

১২। প্রতিবেদন পেশঃ

প্রতিদিন শেয়ার বাজারের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশ করা শেয়ার বাজারের একটি অন্যতম কাজ।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে শেয়ার বাজার বর্ণিত কার্যাবলি সম্পাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ভুমিকা রেখে চলেছে।

তথ্যসুত্রঃ বিবিএ (অনার্স) প্রথম বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ব্যবসায়ের প্রবর্ধনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের অধ্যায় থেকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here