দোষী মানুষ
দোষ না করেও যখন দোষী মানুষ

যাকে তাকে না জেনে ভালোভাবে দোষী মানুষ হিসেবে অভিহিত করা একটা মারাত্মক সমস্যা। ‘দোষ’ শব্দটা যে কত ভয়ংকর তা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। শুধু দোষ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই আর্টিকেল আপনি বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন দোষ না করে যখন আপনি দোষী, তখন আপনার কি করা উচিত?

মানুষের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা। আর আমরা গোপন রাখবো তো দুরের কথা, কেউ কোন ভুল না করলেও অন্যায় ভাবে তার উপর চাপিয়ে দেয়। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সবার সামনে তার মান সম্মান কমিয়ে দেয়। অপরাধ মার্জনার তালিম ও মানুষের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখার শিক্ষা দিয়েছেন। এ শিক্ষাই বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা। মানবজাতি এ শিক্ষা গ্রহণ করলে সমাজে বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি হবে না। মানুষের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হবে না। তৈরি হবে ভ্রাতৃত্ববোধ ও পরস্পর মায়া-মহব্বত।

আপনার জীবনে আসা কোন দিনকে কখনো দোষ দিবেন না। একটি ভালো দিন হয়তো আপনাকে আনন্দ দিবে, কিন্তু একটি খারাপ দিন আপনাকে দিবে অভিজ্ঞতা। জীবনে এই দুইটিরই বড় রকমের প্রয়োজন আছে। মনে রাখবেন, সুখ- দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সব কিছুই পর্যাপ্ত শিক্ষা অর্জনের জন্য প্রয়োজন।

দোষ না করেও যখন আপনি দোষী সবার চোখে- কী করবেন তখন? কি আর করার থাকে, তখনই তো আপনার সবচেয়ে খারাপ ও কঠিন সময় চলে আসে। আসলে প্রতিটি মানুষের জীবনেই কখনো না কখনো খারাপ সময় আসে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দাঁড়ায় তখনই, যখন মানুষ ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়, দোষ না করেও হতে হয় দোষী। তখন না যায় কাউকে বোঝানো, না যায় নিজের অবস্থান ঠিকমতো পরিষ্কার করা। মোটকথা জীবন লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে তার পথ থেকে। এমন পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন অনেকেই। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। যখন ভুল না করেও ভুলের শাস্তি পেতে হয়, দোষ না করেও দোষী হতে হয়, তখন ভেঙে পড়াটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। তখন আপনার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

০১। গভীরভাবে চিন্তা করুন, কি কারণে দোষী হচ্ছেন?

আপনাকেই সবাই দোষ দিচ্ছে কেন, তা খুঁজে করুন। আসলেই কি আপনি কোনো দোষ করেছেন, নাকি সকলে আপনাকে ভুল বুঝছে তা গভীরভাবে বুঝার চেষ্টা ও চিন্তা করুন। যে কাজের জন্য আপনাকে বারবার দোষী বলা হচ্ছে, সেটা নিয়ে প্রথম থেকে আবার ভাবুন। সমস্যাটি ঠিক আসলে কোথায়, সেটা বোঝার চেষ্টা করুন। কারণ এমনও হতে পারে যে ভুলটা হয়তো আপনারই, কিন্তু তা আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে। এমনটা হলে ক্ষমা চেয়ে নিন। আর যদি আপনার কোনো দোষই না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার নেওয়া উচিত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

০২। নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করুনঃ

প্রথমেই নিজেকে নিজে বুঝানোর চেষ্টা করুন। অযথা ভেঙে পড়বেন না। হঠাৎ করে মাথায় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না বা কাজ করবেন না যাতে আপনাকে পরে পস্তাতে হয়। অনেকে দোষী না হয়েও পরিস্থিতির চাপে পড়ে নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করেন। নিজেকে অহেতুক দোষারোপ করবেন না। যা হবার তা হয়ে গেছে, আপনার ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিন। বেশি আক্ষেপ করলে তা আপনাকে মানসিকভাবে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করবে। মাথা ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন। নিজের মধ্যে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তা শান্ত হবার জন্য নিজেকে সময় দিন।

০৩। তাদেরকে প্রমাণ করতে বলুনঃ

যে বা যাঁরা আপনাকে ভুল বুঝে দোষী সাব্যস্ত করছেন, সম্ভব হলে তাঁর বা তাঁদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করুন। কথা বলে কোনো সমাধান না হলে বলুন আপনার দোষ প্রমাণ করতে। আপনি যদি আদতেই দোষী না হয়ে থাকেন তাহলে আর আপনার ভয় কী? তবে হ্যা, মিথ্যা প্রমাণাদি দিয়ে যদি আপনাকে ফাঁসানো হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে প্রমাণ করার কথা বলার চেয়ে না বলাই ভালো।

০৪। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনুনঃ

আপনি দোষী হন আর না হন, মিথ্যা অপবাদে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে যে কেউ। নিজের প্রতি নিজের হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনুন। এটা আপনার জন্য খুবই জরুরি। কারণ নিজের উপর ভরসা না থাকলে একজন মানুষের বেঁচে থাকাটা দায় হয়ে পড়ে। আপনি যে দোষী নন, নিজেই নিজেকে বারবার সেটা বোঝাতে থাকুন। নিজের ভালো দিকগুলোর কথা ভাবুন। লোকজনের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখবেন না। বরং মানুষজনের সাথে মিশুন এবং মন খুলে কথা বলুন। নির্ভয় হয়ে কোনো নতুন কাজ শুরু করুন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস দ্রুত ফিরে আসবে।

০৫। আত্মোন্নয়ন করুনঃ

নিজেক একজন সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আত্মোন্নয়ন করা সবচেয়ে জরুরি। আপনার সাথে যেটাই ঘটে থাকুক না কেন, নিজের আত্মিক উন্নয়ন করুন। যারা আপনাকে বিনা করাণেই দোষী হিসেবে চিহ্নিত করছে, তারা স্বভাবতই আপনাকে বোঝে না। যারা আপনাকে বোঝে না, বিপদে আপনার পাশে দাঁড়ায় না, তাদের কথায় কান দেয়া কি উচিত হবে? মোটেও না। তাই নিজের দোষ-গুণ নিয়ে ভাবুন, নিজের আত্মসমালোচনা করুন। নিজের গুণাবলিকে বিকশিত করতে সচেষ্ট হোন। নিজের ভুলগুলো শুধরে নিন। নিজেকে নিয়ে কখনোই নেতিবাচক কিছু ভাববেন না। বরং নিজের প্রতি এবং নিজের কাজের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখুন।

না জেনে কাউকে দোষ দেওয়ার ফলে যে কতটা ক্ষতি হতে পারে একটা মানুষের তা বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকলে বুঝা অনেক কঠিন। তাই যাকে তাকে না জেনে দোষ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here