চিনি কি ক্ষতিকর
চিনি কি ক্ষতিকর, কেনো বর্জন করা উচিত

চিনি কি ক্ষতিকর নাকি শরীরের উপকারের জন্য প্রয়োজন? চিনির উপকারিতা ও অপকারিতা বা ক্ষতিকর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

চিনির তেমন কোন উপকারিতা নেই, যা আছে খুবই সামান্য। এই সামান্য উপকারের জন্য যদি অতিরিক্ত চিনি খেয়ে ফেলেন অথবা নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস হয়ে যায়, তাহলে অনেক বড় ধরনের মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অনেক অপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক রয়েছে। এবং বিভিন্ন ডাক্তাররাও পরামর্শ দিয়ে থাকে অতিরিক্ত চিনি খাওয়া বন্ধ করে দিতে।

চিনি কেন বর্জন করা উচিত?

চিনি আমাদের অনেকেরই পছন্দের খাবার। নিজেরা তো খাচ্ছি অতিরিক্ত, পাশাপাশি বাড়ির ছোট্ট শিশু টিকে ও খাওয়াচ্ছি। কিন্ত চিনি খেয়ে কি সর্বনাশ ঘটাচ্ছেন আপনি তা যদি জানতেন তাহলে বিষ বলে ছুরে ফেলে দিতেন ডাস্টবিনে। চিনি খেলে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

বুড়িয়ে যাওয়াঃ

চিনি খেলে আপনার চেয়ারা বাচ পড়ে ও চেয়েরা বুড়িয়ে যায়। নেদারল্যান্ডের লাইডেন ইউনিভার্সিটি এর এক দল গবেষক, ৫০ থেকে ৬০ বছর ৬০০ মানুষের ব্লাড সুগার মাপার পর এদের ছবি দেখতে দেন ৬০০ মানুষকে, স্বেচ্ছাসেবীরা এমন প্রতিটি মানুষকে বেশি বুড়োটে মন্তব্য করে যাদের রক্তে চিনি বেশি পেয়েছেন।

বলা হয়, রক্তে প্রতি ১ মিলি বেশি চিনি থাকা মানে, আপনি আপনার বয়সের চেয়ে ৫ মাস বুড়ো হয়েছেন। মুখের ব্রণের সাথে চিনির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। চিনিযুক্ত খাবার যত খাবেন ঠিক তত চেহারা ও ব্রন বাড়বে। বিশ্বাস না হলে পরিক্ষা করে দেখতে পারেন

ক্যান্সারঃ

চিনিযুক্ত খাবার বেশি খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে বেস্ট ও কোলন ক্যান্সার। আর এইটা এইজন্যই হয়, চিনি শরীরের ইনসুলিনের উৎপাদন বাড়ায়। এদিকে কোষ বিভাজনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হল ইনসুলিন। এবং আমরা জানি কোষ বিভাজনের এক অস্বাভাবিক সহজাতিক হল ক্যান্সার।

ডায়বেটিসঃ

চিনির ক্ষতি হিসেবে সম্ভত এই রোগটি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ৯,০১,২৪৯ জন মহিলার উপর গবেষণায় দেখা গেছে, যে মহিলারা প্রতিদিন এক গ্লাস করে মিষ্টিজাতীয় পানীয় খান তাদের ডায়বেটিস এর ঝুঁকি যারা মাসে মাত্র একবার খান তাদের চেয়ে ৮৩% বেশি।

ফ্যাটি লিভারঃ

লিভারের একটি কাজ হল চিনিকে ফ্যাটে পরিণত করে জমিয়ে রাখা। বেশি চিনি খাওয়া মানে বেশি চর্বি জমা এই অবস্থাকে বলে ফ্যাটি লিভার। আর বুঝতেই পারছেন লিভার আপনার শরীরের যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে করে সেগুলো ব্যহত হয়।

দাঁত ক্ষয়ঃ

অতিরিক্ত চিনি খেলে দাঁত নষ্ট হয়, অ্যামেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি চিনি খেলে মুখের উপকারি ব্যাকটেরিয়া গুলো মরে যায়। ফলে দাঁতের ক্ষয় হয় এবং কমে যায় দাঁতের উজ্জ্বলতা।

নেই কোন পুষ্টিঃ

চিনি এমন একটি খাবার, যেখানে কোন পুষ্টিগুন নেই। না মিনারেল না প্রোটিন, না ফাইবার কিছুই নেই চিনিতে। ফলে চিনি জাতীয় খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবেন আপনার ক্ষিদে পেয়েছেন। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এটি নিয়ে এক গবেষণা করেছিল – তারা দেখেছে চিনি জাতীয় খাবার যারা বেশি খাই, তাদের ক্ষিদে বেশি হয় এবং খাওয়ার পরিমাণ ও বেশি হয়।

কমে কর্মোদ্যমেঃ

চিনি শরীরের লেপটিন নামের এক হরমোন কে বাধাগ্রস্ত করে। লেপটিন হচ্ছে সেই হরমোন যা খাওয়ার সময় আমাদের জানান দেয়, পেট ভরে গেছে আর খাওয়ার দরকার নেই। সেই সাথে বলে যে, এইবার এই শক্তিকে খরচ করো, কাজে নেমে পড়ো। কিন্ত বেশি বেশি চিনি খেলে এই হরমোনটি চলে যায়। ফলে আপনার কর্মোদ্যম কমে এবং শরীরে জমে চর্বি।

পেটের চর্বিঃ

পেটের চর্বি বাড়ে অতিরিক্ত চিনি খেলে। আর ডাক্তারের মতে এই চর্বিটিই হচ্ছে দেহের সবচেয়ে ক্ষতিকর চর্বি। এবং এ থেকেই বিশ্বের এক নম্বর খাদক ব্যাধি হৃদরোগ থেকে শুরু করে বড় বড় রোগ গুলো হয়ে থাকে।

অবসাদ বিষণ্ণতাঃ

আপনার মনের উপরও কিন্ত চিনির প্রভাব কম নয়। রক্তের কোষে ব্লাড সুগার জমতে থাকলে, ব্রেইনের ডোপামিন ও ওপিএম এর পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে অবসাদ বিসন্নতায় ভুগে।

আসক্তিঃ

এত কিছু জানার পরও চিনি খাওয়া আপনি কমাতে পারেন না কেন জানেন? চিনি আসক্তি সৃষ্টি করে এবং তা মাদকের মতোই। বিজ্ঞানীরা চিনির ফলে একই ধরনের ডোপামিন নিঃসরণ হতে দেখেছেন ব্রেইনে যা ঘটে কোকেন গ্রহণের সময়। নিওরোপ্লাস্টিসিটি গবেষণার এটা সাম্প্রতিক আবিষ্কার, যে মাদক্তাসক্তদের আচারণের সাথে চিনি আসক্তদের আচারণের অনেকটা মিল রয়েছে। আপনি দেখবেন যারা বেশি চিনি খায়, সময় যাওয়ার সাথে তাদের খাওয়ার পরিমাণও বাড়তে থাকে।

প্রতিকার, তাহলে মুক্তি কিভাবে?

চিনি কি ক্ষতিকর, কেনই বা বর্জন করা উচিত? উত্তরটা বিস্তারিত পেয়েছেন তো, এবার জানুন এর প্রতিকার।  প্রথমেই ভেবে দেখুন সুগার বা কাঁচা চিনি আপনি কতটা খান, কখন খান, কোন কোন খাবারের সাথে খান? সেইটা কি চায়ে পায়েসে অথবা অন্যকিছুতে। যদি চা হয়, তাহলে এখন থেকে ঠিক করুন এখন থেকে চায়ে কোন চিনি খাবেন না। দেশের বাজারে যে চিনি পাওয়া যায়, তাতে ক্ষতিকর মাত্রায় আমদানি নিষিদ্ধ সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ঘন চিনির অস্তিত্ব পেয়েছেন গবেষকরা। এইজন্য গ্রিন টি খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেন। চায়ের মধ্যে সবচেয়ে উপকারি চা হওয়া ছাড়াও গ্রীন টি খাওয়া যায় চিনি ছাড়া।

এরপর দেখুন বাহিরে গেলে কি কি খাবার আপনি খান, যেখানে চিনি থাকে। রেস্তরাঁ বা কফি হাউজে আমরা অনেকেই কফি বা আইসটি খেতে চাই। আপনি কি জানেন? একমগ ফ্লেবার কফি ড্রিংকে ৮ চাপচ পর্যন্ত চিনি থাকতে পারে আইস টি তে থাকতে পারে ৫ চামচ চিনি। আবার লো – ফ্যাট বা সুগার ফ্রি নামে বাজারে যেসব তথাকথিত স্বাস্থ্যকর খাবার পাওয়া যায় তা আসলেই কতটা সাস্থ্যকর আপনাকে সেইটা বুঝে নিতে হবে।

আপনি কি জানেন? লো – ফ্যাট নামে বাজারে যে দই পাওয়া যায় তার ২৫০ মিলি একটা কাপেই থাকতে পারে ১০ চামচ চিনি। অতএব বর্জন করুন এইসব খাবার। তাজা ফল খেতে পারেন ফলে যে চিনি থাকে তা দেহের জন্য ক্ষতিকর তো নয়ই বরংচ অনেক উপকারি। তবে ফলের নামে বোতল জাতক ফ্রুট জুস খেতে যাবেন না, এটি একইরকম ক্ষতি কর। মিষ্টি রসগোল্লা ইত্যাদি পুরোপুরি বর্জন করুন। বিয়ে উৎসব বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে মিষ্টির পরিবর্তে খেজুর খাওয়ার প্রচলন করুন।

চিনি বর্জনের এই উদ্যোক্ত প্রথমে আপনি নিজে নিন, কাঁচা চিনি থেকে শুরু করে চিনি মিশানো সব পানি জাতীয় খাবার গুলো থেকে ধীরে ধীরে সরে আসুন। এরপর পর্যায়ক্রমে বলুন পরিজন, পরিচিত ও বন্ধুদের দেখবেন একটা সময় সমাজের বেশির ভাগ মানুষ খাওয়ার চেয়ে না খাওয়ার অভ্যাস হয়ে যাবে।

আরও জানুন –

ডাবের পানি পানের ১০টি বিস্ময়কর উপকারিতা

ভিটামিন এ রয়েছে যেসব খাবারে

২০টি শাক সবজির গুণাগুণ ও উপকারিতা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here