সমাজ ও দেশ গঠনে সুশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অনেক। একটি দেশ তত উন্নত হবে, যত উন্নত হবে সুশিক্ষার হার। ভালো একটা সমাজ ও দেশ তৈরি করতে, দুর্নীতিমুক্ত ও শান্তিপ্রিয় দেশের জন্য অবশ্যই সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।
সুশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড এই বাক্যটি আমরা শুনে এসেছি বাল্যকাল থেকে। তবে আজকের বাস্তবতায় এ বাক্য খানিকটা বদলে গেছে। এখন বলা হয় ‘সুশিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড‘। হ্যাঁ এটাই সত্য, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড নয়, বরং হবে সুশিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ যখন শিক্ষার পথে পা বাড়ায়, তখন থেকে পরবর্তী বহুকাল পর্যন্ত শিক্ষিত লোকজনের মাঝে সুশিক্ষাই বিরাজমান ছিলো। তারা উন্নত নৈতিকতাসহ আদর্শবাদী ব্যক্তিবর্গ হিসেবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের নিকট সমাদৃত ছিলেন। তারা সর্বদা সত্যকথা বলতেন; সহজ-সরল পথে চলতেন; মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করতেন।
আর কেউ যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও সামাজিকভাবে অন্যায় কোনো কাজ করে বসতেন, তাহলে তিনি নিজেই তা স্বীকার করতেন। সাক্ষীর প্রয়োজন হতো না। সে পর্যন্ত শিক্ষিত মানুষকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হতো এবং এটা ছিল সর্বজনস্বীকৃত।
একটি দেশ, একটি জাতির অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি হলো শিক্ষা। এই বিবেচনায় বলা হয়, “শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড”। অর্থাৎ একজন মানুষ যেমনি মেরুদণ্ড সোজা করে স্থির দাঁড়াতে পারেন, ঠিক তেমনি একটি জাতির ভিত্তিমূল,উন্নয়ন,অগ্রগতি এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া নির্ভর করে তার শিক্ষার উপর। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত,সভ্য এবং অগ্রসর। শিক্ষা অর্জন মানুষের জন্মগত মৌলিক অধিকারও বটে।
আমাদের দেশে যে ৫টি মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে কিন্তু শিক্ষা একটি। শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সার্বজনীন,অপরিহার্য,ব্যাপক। একজন মানুষকে প্রকৃত মানবিক ও সামাজিক গুণাবলী সম্পন্ন ব্যাক্তি হতে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, ‘শিক্ষার শিকড়ের স্বাদ যতই তেতো হোক, এর ফল কিন্তু ভারি মিষ্টি। মানুষ যত বেশি শিক্ষা অর্জন করবে, ততই জ্ঞানী হবে। আর এই জ্ঞানই মানুষকে আত্মনির্ভর ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হতে শেখায় এবং মসৃণ করে তোলে তাদের জীবন চলার পথকে। সন্তানদের আক্ষরিক অর্থেই সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এবং দায়িত্বটি যতটা বর্তায় প্রতিষ্ঠানের ওপর, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বর্তায় মা-বাবার ওপর। একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষার বিষয় নির্ধারণে সন্তানদের নিজস্ব চিন্তাভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মানুষের মন-মানসিকতার উৎকর্ষ সাধন সম্ভব হয়। একটি কুপিবাতি যেমন তাহার পার্শ্ববর্তী এলাকাকে আলোকিত করে তোলে, ঠিক একজন মানুষ যখন সমাজে বিকশিত হয়ে উঠেন তখন তার সাথে তার পরিবার,সমাজ এবং রাষ্ট্রও আলোকিত হয়ে উঠে। এতে করে আরো সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা আলোকিত হবার সুযোগ লাভ করে।
সুতরাং আমাদের জীবনে শিক্ষার গুরুত্ব কিন্তু ব্যাপক
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজব্যবস্থায় শিক্ষিতজনদের ভেতরেও সুশিক্ষার বড় অভাব পরিলক্ষিত হয়। চিন্তা করতে হবে কীভাবে তাদেরকে সমাজের জন্য আশীর্বাদ করে গড়ে তোলা যায়। এ ক্ষেত্রে বেশ কটি পথ খোলা রয়েছে বলে আমি মনে করি।
যেমন
১. বিদ্যার্জনের প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের ওপর নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে আরোপ করা।
২. মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে এমন শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
৩. শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রমে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা।
৪. স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলা নিশ্চিত করা হয়।
৫. সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সুনিশ্চিতপূর্বক তা বাস্তবায়ন করা ইত্যাদি।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, সুশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা, আপনি আপনার ছেলে মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলন। তাহলে সমাজ ও দেশ ভালো থাকবে এবং উন্নত হবে।