একজন আদর্শ ছাত্রের ভূমিকা পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য অনেক রয়েছে। সমাজ ও দেশকে উন্নত করার জন্য আদর্শ ছাত্রদের প্রয়োজন রয়েছে। ছাত্র জীবনেও বিশেষ কিছু দায়িত্ব রয়েছে।
যথা- নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। কোনো ছাত্র যদি প্রতি বছর দুইজন করে নিরক্ষর মানুষকে লেখাপড়া শেখায় তবে বাংলাদেশের নিরক্ষরতার হার একেবারেই কমে যাবে এবং এক পর্যায়ে শূন্যের কোঠায় এসে নামবে। এছাড়া পড়াশোনার ফাঁকে ছাত্ররা সমাজ উন্নয়নের কাজ করতে পারে, যেমন:- বৃক্ষরোপণ, ছোট রাস্তা, পুল, সাঁকো মেরামত, কচুরিপানা ও আবর্জনা পরিষ্কার।
ছাত্ররা একত্র হয়ে এ কাজগুলো করে সমাজের সেবামূলক অনেক কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। এছাড়া জনগণকে কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা হতে মুক্ত করে তাদের মধ্যে সামাজিক চেতনা জাগ্রত করতে পারে। দেশ ও দশকে ভালোবাসা ছাত্রজীবনের প্রধান কর্তব্য। ছাত্ররাই দেশের সচেতন নাগরিক। দেশের প্রয়োজনে তারাই এগিয়ে আসে।
ছাত্র জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হলো:
১। প্রত্যেক কাজের নিয়মনীতি সময় অনুযায়ী পালন করতে হবে।
২। চরিত্র গঠনের জন্য সত্যবাদী, সদাভাষী, বিনয়ী ও ন¤্র হতে হবে।
৩। বয়স্ক ব্যক্তি, গুরুজন, শিক্ষক ও পিতামাতাকে সম্মান করতে হবে।
৪। অসৎ সঙ্গ এবং সর্বপ্রকার নিষিদ্ধ কর্ম ত্যাগ করতে হবে।
৫। বদঅভ্যাস, মাদক ও ধূমপানে আসক্ত না হওয়া।
৬। ছোট ভাই-বোন ও আশে-পাশের ছেলে মেয়েদেরকে লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ দিতে হবে।
৭। নিজের শরীর ও স্বাস্থ্য-সুস্থ সবল রাখার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম, পরিমিত আহার ও খেলাধুলা করতে হবে।
৮। জ্ঞান আহরণের জন্য পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও অন্যান্য বই পড়তে হবে।
৯। নিজের সাধ্যানুযায়ী নিরক্ষর লোকদের অক্ষরজ্ঞান দিয়ে নিরক্ষরতা দূর করতে হবে।
১০। ছাত্রজীবনে সময় নিষ্ঠা, নিয়মানুবর্তিতা ও কর্তব্যপরায়ন হতে হবে।
১১। সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির ঊর্ধ্বে ওঠে ধর্মীয় জ্ঞান আহরণ করতে হবে।
১২। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে এসে রাজনৈতিক জ্ঞান সঞ্চয় করতে হবে।
১৩। বিকৃত ও অশ্লীল সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে মানবতাবোধে বিশ্বাসী বাঙালি সংস্কৃতি সম্পন্ন হতে হবে।
১৪। মিতব্যয়ী ও সদালাপী হতে হবে।
১৫। চাল-চলন, আচার-আচরণে, আহারে-ব্যবহারে পোশাকে-আশাকে মাত্রা জ্ঞান থাকতে হবে।
১৬। নিয়মিত পাঠাভ্যাস করতে হবে।
আদর্শ ছাত্রের ভূমিকা
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব:
অধ্যয়নই ছাত্রদের প্রধান কর্তব্য । সংস্কৃতে একটি কথা আছে- “ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ” অর্থাৎ অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা। তবে শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়নে সীমাবদ্ধ থাকলেই চলবে না। পাঠ্যবিষয়ের সাথে সাথে তাদের বহির্জগতের জ্ঞানভান্ডার হতে জ্ঞান আহরণেরও চেষ্টা করতে হবে। নিজেকে কর্মী ও জ্ঞানী করে তোলাই ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য হতে হবে।
জীবনের সব ক্লান্তি হতাশা, অবিশ্বাস দূর করে দৃঢ় প্রত্যয় ও সৎ সাহস নিয়ে ছাত্রদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ছাত্রদের উচিত ত্যাগ ও সত্যের অভিমুখী হওয়া। তাদেরকে সুস্থ ও সবল মনের অধিকারী হতে হবে। ছাত্রদের উচিত অনাড়ম্বর জীবনযাপন করা।
উচ্চ চিন্তা ও সহজ জীবনাচরণ তাদেরকে প্রকৃত মানুষ করতে সহায়তা করবে। মিথ্যা পরিহার করা, নকল প্রবণতাকে ঘৃণার চোখে দেখা ছাত্রদের দায়িত্ব। সৎকথা,সদাচরণ, সদালাপ ছাত্রদের ভূষণ। সবরকম লোভ-মোহ ত্যাগ করে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা ছাত্রদের প্রধান দায়িত্বও কর্তব্য। কারণ ছাত্ররা পথভ্রষ্ট হয়ে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমাজ্জিত হতে বাধ্য।
চরিত্র গঠন:
চরিত্র মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ অলংকার। চরিত্রহীন ব্যক্তি পশুর সমান। ছাত্রদের চরিত্রের উপরই জাতির চরিত্র নির্ভরশীল। তাই চরিত্র গঠনের দিকে ছাত্রদের বিশেষ তৎপর হতে হবে। লেখাপড়ার সাথে সাথে তাদেরকে বিনয়, শিষ্টাচার, সত্যবাদিত্য, কর্তব্যপরায়ণতা ইত্যাদি সদ্গুণের অধিকারী হতে হবে।
শিক্ষক ও পিতামাতার প্রতি কর্তব্য:
পিতামাতা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি প্রদর্শন করা ছাত্রদের আর একটি প্রধান কর্তব্য। পিতামাতার আছেন বলেই পৃথিবীতে তাদের আবির্ভাব ঘটেছে। পিতামাতা ও শিক্ষকদের মাধ্যমেই ছাত্ররা খুঁজে পায় ভবিষ্যৎ জীবনের পথ । তাই তাঁরা যা আদেশ বা নিষেধ করেন তা প্রত্যেক ছাত্রের মেনে চলা উচিত। মনে রাখতে হবে পিতামাতা ও শিক্ষক সর্বদাই আমাদের মঙ্গল চান।
পরিবারিক দায়িত্ব:
পরিবারের সকলের আদর, যত্ন, মায়, মমতার , মদ্যে বেড়ে উঠে ছাত্র-ছাত্রীরা । তাই সবার আগে তাদের পরিবারের প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। বাবা-মা, ভাই-বোনদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং খোঁজ-খবর নেয়া তাদের দায়িত্ব। ভবিষ্যৎ জীবনের যে বিশাল গুরুদায়িত্ব তাদের উপর অর্পিত হবে, তার অনুশীলন শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই ॥ এজন্য তাদেরকে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সহানুভুতি ও আস্তা অর্জন করতে হবে।