অনলাইনে চাকরির আবেদন
অনলাইনে চাকরির আবেদন করার নিয়ম

বর্তমান যুগটি হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর যুগ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছুই এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। আর এই তথ্য-প্রযুক্তিরই একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে ইন্টারনেট কিংবা অনলাইন। আমাদের শিক্ষা এবং পেশাগত জীবনের সিংহভাগ অংশই এখন অনলাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

শিক্ষা জীবনে ভর্তির আবেদন আর পেশাগত জীবনে চাকরির আবেদন, বর্তমান সময়ে এর সবকিছু সম্পন্ন করার একমাত্র মাধ্যমেই হচ্ছে অনলাইন। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তির সংস্পর্শে থেকেও অনলাইনে এসকল আবেদনের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বেগ পোহাতে হচ্ছে। যেতে হচ্ছে স্থানীয় কম্পিউটারের দোকানে এবং তার জন্য গুনতে হচ্ছে বেশকিছু অতিরিক্ত অর্থও। আবার অনেক মনে করে থাকেন ‘অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে কম্পিউটার থাকা আবশ্যক।’ তবে এই ধারনাটি সম্পূর্ণ ভুল।

কম্পিউটার ব্যতীত স্মার্টফোনের মাধ্যমেও এখন অনলাইনে যেকোনো চাকরি কিংবা ভর্তির আবেদন ফরম পূরন করা যায়। তাই এই আর্টিকেলে আমি আলোচনা করব ‘কিভাবে আপনি নিজে নিজেই কম্পিউটার অথবা স্মার্টফোন ব্যবহার করে অনলাইনে আপনার ভর্তি কিংবা চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তো চলুন শুরু করা যাক :

অনলাইনে চাকরির কিংবা ভর্তির আবেদন করার নিয়ম

০১। সার্কুলার বা বিজ্ঞপ্তির প্রাপ্তিস্থানঃ

কলেজ, ভার্সিটি কিংবা সমপর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি সাধারণত সংশ্লিষ্ট বোর্ড অথবা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। আর চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক খবরের কাগজ এবং চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সংক্রান্ত কিছু অনলাইন ওয়েবসাইটে। তাই আপনার কাঙ্ক্ষিত বিজ্ঞপ্তিটি পেতে হলে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট এবং খবরের কাগজগু‌লোতে চোখ রাখুন।

০২। আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলিঃ

আবেদন করতে হলে যে সকল তথ্যের প্রয়োজন সেগুলো প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতেই সুন্দরভাবে উল্লেখ করা থাকে। তারপরেও যদি আপনার বুঝতে সমস্যা হয় তবে প্রথমে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে চলে যান। তারপর সেখান থেকে ‘Online Application Form’ টি ওপেন করুন। ওপেন করার পর সেই ফরম এ কি কি তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, সেগুলো ভাল করে দেখে নিন। আর ওয়েবসাইটে ‘Application Form’ খুঁজে বের করতে সমস্যা হলে আপনি যে বিষয়ে আবেদন করতে ইচ্ছুক সেটার নামের সঙ্গে ‘Online Application Form’ যুক্ত করে গুগলে সার্চ করুন। গুগলই আপনাকে আপনার কাঙ্খিত বিষয়ের লিংক খুঁজে বের করে দেবে।

০৩। ছবি সংযুক্তকরণঃ

এই ছবি সংযুক্ত করার ব্যাপারে অনেকেই অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন চাকরি কিংবা ভর্তির ক্ষেত্রে সাধারণত প্রার্থীর পাসপোর্ট সাইজের ছবিই চাওয়া হয়ে থাকে। আর আপনি চাইলে নিজেই নিজেই আপনার সেই পাসপোর্ট সাইজের ছবি তৈরি করতে পারেন। সেজন্য যদি আপনার একটি ব্যাক্তিগত কম্পিউটার এবং একটি ডিজিটাল ক্যামেরা থেকে থাকে, তাহলে খুবই ভাল। সেক্ষেত্রে ক্যামেরার মাধ্যমে আপনার একটি ছবি তুলে কম্পিউটারের ফটোশপ সফটওয়্যার এর মাধ্যমে পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবি প্রস্তুত করে নিতে পারেন। আর এগুলো না থাকলেও চিন্তার কোন কারণ নেই।

আপনার হাতে তো একটা স্মার্টফোন অবশ্যই আছে। আর বর্তমানে গুগল প্লেস্টোরে এরকম অনেক মোবাইল অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি সহজেই পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবি তৈরি করে নিতে পারবেন। আর পাসপোর্ট সাইজের ছবি তোলার অঙ্গভঙ্গি এবং শরীরের কতটুকু অংশ নেয়া হয়, সে ব্যপারে অবশ্যই আপনার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ছবির জন্য আরও কোন শর্ত দেয়া থাকলে সেগুলোও অনুসরণ করবেন।

০৪। সাক্ষর সংযুক্তকরণঃ

অনেক প্রতিষ্ঠান অফলাইনে প্রার্থীর সাক্ষর নিয়ে থাকলেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান প্রার্থীর সাক্ষর নিয়ে থাকে অনলাইনের মাধ্যমেই। সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমে একটি সাদা কাগজে সাক্ষর করে স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে সেটির ছবি তুলে নিন। তারপর একটি নির্দিষ্ট ফোল্ডারে রেখে ফরম পূরনের সময় সেটি আপলোড করে দিন। সাক্ষর সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত সাক্ষরের (ছবি) সাইজ সম্পর্কিত নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করবেন।

০৫। আবেদন ফি পরিশোধঃ

আবেদন ফি গ্রহনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকে। কোন কোন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং যেমন : Bkash, Rocket, Surecash, Nagad ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের নির্ধারিত আবেদন ফি গ্রহন করে থাকে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর Teletalk এর মাধ্যমেও সেটা নিয়ে থাকে।

এছাড়া বিভিন্ন বানিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমেও কোন কোন প্রতিষ্ঠান তাদের আবেদন ফি গ্রহণ করে। তবে যে প্রতিষ্ঠান যেভাবেই তাদের আবেদন ফি গ্রহণ করুক না কেন, তারা তাদের প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন ফি প্রদানের নিয়মাবলী সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ করে থাকে। তাই আবেদন করার পূর্বে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত নিয়মাবলী মনোযোগ মনোযোগ সহকারে পড়ে নিন এবং সেই নির্দেশনা অনুসরণ করে আবেদনের জন্য নির্ধারিত ফি পরিশোধ করুন।

০৬। ফরম পূরণ এবং সাবমিটঃ

যথাযথভাবে সকল তথ্য পূরণ এবং ছবি সংযুক্ত করার পর পুনরায় চেক করে ফরমটি সাবমিট করে দিন। ফরম পূরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সবগুলো তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। আর কন্টাক্ট ইনফরমেশন এর ক্ষেত্রে আপনার সক্রিয় মোবাইল নাম্বার এবং ইমেইল ব্যবহার করুন।

০৭। অ্যাডমিট কার্ড বা প্রবেশপত্র সংগ্রহকরণঃ

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলভাবে আবেদন ফি পরিশোধ এবং ফরম সাবমিট করার পরপরই অ্যাডমিট কার্ড সংগ্রহ করার সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে আবেদন সম্পন্ন হওয়ার কয়েকদিন পর অ্যাডমিট কার্ড দেয়া হয়। তবে যখনই অ্যাডমিট কার্ড দেয়া হোক না কেন, প্রথমে আপনার ফোনে সেটির PDF ফাইল ডাউনলোড করে নিন, তারপর প্রিন্ট কার যায় এরকম কোন দোকান থেকে সেটি প্রিন্ট করে নিন। অনেক সময় অ্যাডমিট কার্ড PDF আকারে ডাউনলোড করার সুবিধা দেয়া হয় না।

সেক্ষেত্রে কোন কম্পিউটার এর দোকানে গিয়ে আপনার আইডি/ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড বলে অ্যাডমিট কার্ডটি প্রিন্ট করে নিতে পারেন। তারপরেও আবেদনের ক্ষেত্রে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে তৎক্ষণাৎ সমস্যাটি লিখে গুগলে সার্চ করুন।

মনে রাখবেন ‘তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে গুগলই আপনার সবচেয়ে নিকটতম বন্ধু ‘। এছাড়া আর্টিকেল সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন জিজ্ঞাসা থাকলে, ‘Trendy Bangla’র ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করতে পারেন। পেজ লিংকঃ https://www.facebook.com/trendybanglaofficial/

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here