রাগ করেছেন মানেই আপনার ক্ষতি হচ্ছে, আমরা জানি তারপরেও রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। জেনে নিন রাগ কমানোর বা নিয়ন্ত্রণ করার কার্যকরী উপায়।
কোনো কিছু না পেলে বা কোনো সমস্যায় পড়লে বা কোনো কিছুর ক্ষতি হলে মানুষ যদি অন্য কাউকে দোষারোপ করার সুযোগ পায় তখন তাঁর উত্তেজিত মানসিক অবস্থাকেই রাগ/ক্রোধ বলে। অতিরিক্ত রাগ মানুষকে ধ্বংস করে দিতে পারে। কারণ রাগের মাথায় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। মানুষের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, হার্ট ফেল করতে পারে, স্ট্রোক করতে পারে বা এমনকি মানুষ মানুষকে খুন পর্যন্তও করতে পারে।
রাগ এমন একটি আবেগ যা মানুষ খুব কমই নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। রাগের মাথায় অনেক অকাজ করে ফেলতে দেখা যায় অনেককেই। হুট করে রেগে যাওয়া ব্যক্তির চাইতে অবশ্য ঠাণ্ডা মানুষের রাগের মাত্রা বেশি হয়। কিন্তু রাগ মূলত ক্ষতিকর একটি আবেগ যা নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
০১। বেশি রাগ চলে আসলে চুপ থাকুন
মানুষের রাগ আসাটা অস্বাভাবিক না। কোন কারণবশত মাঝে মাঝে রাগ চলে আসে। তবে এই রাগ যখন অতিরিক্ত হয়ে যায়, তা আপনার জন্য ধ্বংস ডেকে আনে। যখন বেশি রাগ চলে আসবে তখন চুপ হয়ে যাবেন, কথায় তর্ক বিতর্ক করবেন না। যার সাথে রাগ দেখাচ্ছেন বা তর্ক করছেন তার সাথে যখন বেশি বেশি উল্টা পাল্টা কথা শুরু হয়ে যাবে, তখন যেইভাবে হোক চুপ করে থাকেন। চুপ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
০২। রাগ মানুষকে ধ্বংস করে মনে রাখুন
রাগ মানুষকে অনেক নিচু নামিয়ে দেয়, ধ্বংস করে দেয় আরও অনেক কিছুর ক্ষতি করে। যখন রাগ দেখাবেন অন্যের উপর, ঠিক পরেই বুঝতে পারবেন ক্ষতি হয়ে সবচেয়ে বেশি আপনার। তাই মনে রাখুন সবসময় রাগ মানুষকে ধংস করে দেয়।
০৩। কিছু বলার আগে ভেবে চিন্তে বলুন
রাগ উল্টে আমরা অনেক কিছুই করে ফেলি, অনেক আজে বাজে কথা ও বলে ফেলি, যা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। এইজন্য রাগ জেনো না উঠে কিছু বলার আগে থেকে ভেবে চিন্তে বলুন। কিছু বলার আগে যদি চিন্তা করেন না আমাকে সাধারণ ও সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে, তাহলে রাগটা আর বেশি আসবে না।
০৪। কাজে থাকলে বিরতি নিন
অনেকে কাজের মাঝখানে রাগ চলে আসে, অফিসে বা বিভিন্ন কর্মসংস্থান জাইগা গুলোতে কাজের মাঝখানে অনেক সমস্যা দেখা দেয়, অনেক রাগারাগি হয়ে যায়, যা অনেক ক্ষতি করে। অনেকে ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে। তাই কাজ করার মুহূর্তে যদি রাগ চলে আসে তাহলে ওই কাজ থেকে বিরতি নিন।
০৫। নীরব পরিবেশে কিছু সময় কাটান
রাগ বেশি উঠলে নিরিবিলি পরিবেশে চলে যান, কিছুটা সময় একা একা কাটান, প্রিয় জন বা কাছের কোন বন্ধুদের বলেন সময় দেওয়ার জন্য। যখন কিছুটা সময় নিরিবিলি পরিবেশে পার করবেন, একটু হাসাহাসি ও আনন্দে কাটাবেন তখন দেখবেন আপনার মন সতেজ হয়ে গেছে, তারমানে রাগ ও কমে গেছে।
০৬। বিশ্রাম বা ঘুমিয়ে মাথা ঠাণ্ডা করুন
রাগ কমানোর সবচেয়ে কার্যকরী একটা উপায় হচ্ছে মাথা ঠাণ্ডা করুন, তার জন্য একটু বিশ্রাম নিন বা ঘুমিয়ে যান। যখন ঘুমিয়ে যাবেন আর ভালো একটা ঘুম হবে, উঠার পর আগে কি হয়েছে তা সব মনে থাকবে না, ব্রেইন ও মনটা অনেক পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই যখন রেগে যাবেন বা রাগ আসবে তখন একা ঘুমানো চেষ্টা ক্রুন।
০৭। মনে মনে রাগ কমার দোয়া পড়ুন
ক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হাদিস শরীফে অনেক ধরনের দোয়া রয়েছে। রাগ উঠার সাথে সাথে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার দোয়াগুলো পড়তে থাকুন। আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম পড়তে থাকবেন, এর অর্থ হচ্ছে, বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
পবীত্র মহাগ্রন্থ আল কোরআনে সুরা আল-ইমরান, আয়াত-১৩৪ আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমার রাগকে গিলে ফেলো রাগ নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে পারলে আপনি বড় ধরনের বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবেন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় হিসেবে বেশি বেশি আল্লাহর কথা স্মরণ করুন। চিন্তাভাবনাকে একটু পরিবর্তন করে রাগের ব্যায়াম করুন । শ্বাস দীর্ঘ ক্ষণ ধরে রেখে আস্তে আস্তে ছাড়ুন। এতে রাগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এছাড়াও বিভিন্ন ভালো বই পড়ে, সফল মানুষদের অনুসরণ করে যথেষ্ট সচেতন হতে নিজের রাগ কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।