দুধের উপকারিতা
দুধের উপকারিতা

দুধের উপকারিতা অন্যান্য খাবারের চেয়ে অনেক বেশি। গুরুর দুধ একটি স্বাস্থ্যকর খাবার এবং সবগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম সুস্বাদু খাবার। গরুর দুধে রয়েছে অনেক উপকারিতা। কিন্ত অনেকেই দুধ খেতে পছন্দ করে না এবং কিছু লোক আছে দুধ খাই, তবে প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করে না।

গরুর দুধের আশ্চর্যজনক উপকারিতার জানলে আপনি নিশ্চিত নিয়মিত খেতে আগ্রহী হবেন। জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছেন, গরুর দুধের অনেক পুষ্টি রয়েছে। হ্যাঁ সত্যিই শুনেছেন, আমরা যত গুলো পুষ্টিকর বা স্বাস্থ্যকর খাবার দেখি সব গুলোর মধ্যে এটির উপকারিতা সবচেয়ে বেশি। তাহলে কেনই বা দুধ খাচ্ছেন না প্রতিদিন। নিয়মিত দুধ খেলে শরীর স্বাস্থ্য যথেষ্ট পরিমাণে ভালো থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আরও অনেক সুবিধা আছে।

গরুর দুধের পুষ্টিগুণ

এতে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ, যেমন পানি, আমিষ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-১২, নিয়াসিন, কোলেস্টেরল ও রিবোফ্লভিন। এই অনুচ্ছেদে আপনি জানতে পারবেন, গরুর দুধের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা, যা আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

গুরুর দুধ কখন খাওয়া ভালো

তাঁর আগে বলে নেই, কেন প্রতিদিন দুধ খাওয়া উচিত, বিশেষ করে বেড়ে উঠা ছেলে মেয়েদের?
আসলে আমরা দৈনন্দিনই কিছু না কিছু কাজে লিপ্ত থাকি, ফলে আমাদের শরীর থেকে অনেক ক্যালরি ক্ষয় হয়। তাই এইসব শক্তি, ক্যালরি পুনরায় অর্জন করার জন্য দরকার পুষ্টিকর খাবার।

এবং আগেই একবার বলেছি সব পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে গরুর দুধের স্থান প্রথম। এক গ্লাস দুধে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামসহ অনেক উপকারি উপকরণ। তাই আপনি যদি নিয়মিত গরুর দুধ খেতে পারেন, তাহলে প্রতিনিয়ত শরীরের শক্তি বাড়বে। যার ফলে কোন কাজের মধ্যে দুর্বলতা বাধা বয়ে আনবে না এবং দেহ নিস্তেজ হবে না।

গুরুর দুধের ১০ টি উপকারিতা

০১। ফিটনেস ভালো ও সুস্থ রাখে।
০২। শরীরের শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি দুর করে।
০৩। মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে।
০৪। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
০৫। দাঁত ও হাড় মজবুত রাখে।
০৬। মাংস পেশী গঠনে ভূমিকা রাখে।
০৭। চুলের পুষ্টি যোগায়।
০৮। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
০৯। পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।
১০। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

০১। ফিটনেস ভালো ও সুস্থ রাখে।

আমরা শরীরের ফিটনেস ঠিক বা ধরে রাখার জন্য কত কিছুই না করে থাকি। শারীরিক ব্যায়াম করি, জগিং করি এবং জিম করে থাকি। কিন্ত ফিটনেস ভালো রাখার জন্য এইগুলোর চেয়েও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। আর স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে দুধ হচ্ছে অন্যতম। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ খেতে পারলে ফিটনেস খুব ভালো থাকে। শরীর ও মন সতেজ রাখে। তাই প্রত্যেকের উচিত প্রতিদিন এক গ্লাস করে গরুর দুধ খাওয়া, বিশেষ করে ছেলেদের।

০২। শরীরের শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি দুর করে।

গরুর দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও ফসফরাসসহ আরও নানান পুষ্টিকর উপাদান। যার ফলে শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে এবং ক্লান্তি দুর করে। আমরা অনেকেই পানি খেয়ে অনেক সময় পর্যন্ত থাকতে পারি, আর দুধে রয়েছে পানির চেয়ে ও অনেক গুণ পুষ্টি।

আমরা যারা প্রতিদিন বাসায় অথবা বাহিরে একটু বেশি কাজ করে থাকি, আমাদের প্রচুর শক্তি ক্ষয় হয় এবং তখন আমাদের খুব ক্লান্তি চলে আসে, অনেকে অফিস থেকে এসে খুব দুর্বল হয়ে যাই। এইসব দুর্বলতা, ক্লান্তি দুর করার জন্য ১ গ্লাস গরুর গরম দুধ খান, দেখবেন সব ক্লান্তি যেন এক নিমিষেয় শেষ। তাই প্রতিদিন শরীরে শক্তি যোগাতে এবং ক্লান্তি দুর করতে, নিয়মিত ১ গ্লাস করে দুধ খাওয়া উচিত।

০৩। মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে।

দুধে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো মানসিক চাপ দূর করতে যথেষ্ট পরিমাণে সহায়তা করে। আমরা সবাইকেই কম বেশি মানসিক চাপে পড়তে হয়। এবং মানসিক চাপ কিন্ত একটা মারাত্মক দিক এবং শরীরের জন্য খুব ভয়ংকর ও ক্ষতিকর।

এটি স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়, শরীর দুর্বল করে ফেলে। অর্থাৎ মানসিক চাপের কারণে অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে, অনেকে পাগল হয়ে যাই আরও অনেক কিছু। অর্থাৎ আমাদেরকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত এক গ্লাস গরুর দুধ খাওয়া খুব দরকার। শরীর ও মন তাজা রাখে, প্রফুল্ল রাখে, ফলে যেকোনো কাজ সহজেই করা যাই।

০৪। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

আপনি জানেন কী গরুর দুধ ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ? হ্যাঁ গরুর দুধ ত্বকের উজ্জ্বলতা অনেক গুন বাড়িয়ে তুলে। এটিতে রয়েছে এমন কিছু গুণ যার ফলে ত্বককে নরম, কমল ও মসৃন করতে অনেক খানি সাহায্য করবে।

নিয়মিত খাবারের পর ১ গ্লাস খাঁটি গরম দুধ খাবেন, দেখবেন ত্বকের স্বাস্থ্য কতখানি ভালো রাখে। তাই ছোটো বড় সবাইকেই এটি খাওয়া উচিত, ফলে শরীর ও মন ভালো রাখার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতাও বাড়াবে। এবং যারা বিশেষ করে ত্বক সুন্দর, নরম, কমল ও মসৃণ রাখতে চান, অবশ্যই প্রতিদিন খাঁটি দুধ গরম করে খাবেন।

০৫। দাঁত ও হাড় মজবুত রাখে।

ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য অনেক দরকারি, কারণ এটি দাঁত শক্ত ও ভালো রাখতে সাহায্য করে। দুধের রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। যার ফলে দাঁত মজবুত রাখে পাশাপাশি হাড়কে ও শক্ত রাখতে সহায়তা করে

প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করলে, দাঁত ভালো ও সুস্থ থাকে, দাঁতের পোকা ধরা, হলুদ হয়ে যাওয়া এবং দাঁত নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে বিরত রাখে। এছাড়াও এটি হাড়ের জন্য অনেক কার্যকরী। প্রায় সব বয়সের মানুষই দাঁত ও হাড়ের সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই প্রতিদিন দুধ খাওয়ার অভ্যাস করে তুলতে পারলে, এইগুলো খুব সহজেই প্রতিরোধ করা যাবে।

০৬। মাংস পেশী গঠনে ভূমিকা রাখে।

প্রত্যেকটা মানুষের শরীরে মাংস পেশীর দরকার হয়। গরুর দুধ মাংস পেশী গঠনে বিরাট ভূমিকা রাখে। আপনার মাংস পেশী যদি ভালো না থাকে, তাহলে অসুস্থ্য হয়ে যাবেন খুব তারাতারি।

শরীরকে সুস্থ্য, সবল ও শক্তিশালী করার জন্য এবং ফিটনেস উপযুক্ত ও ভালো রাখার জন্য দেহের মাংস পেশীর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। মাংস পেশী গঠন করার জন্য অনেক খাবার রয়েছে, সব গুলো ধীরে ধীরে খাওয়া চেষ্টা করবেন। তবে সব খাবারের চেয়ে গরুর দুধের রুচি, চাহিদা, উপকার অনেক ভালো, তাই এটিও নিয়মিত খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

০৭। চুলের পুষ্টি যোগায়।

চুলের পুষ্টি যোগাতে এবং চুল সুন্দর ও মোটা রাখতে এক গ্লাস দুধ বিশেষ ভূমিকা রাখে। কারণ দুধে রয়েছে, ভিটামিনসহ, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম। এবং বিশেষ করে চুলের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারি উপাদান গুলো, যেমনঃ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড।

ফলে চুলের পুষ্টি যোগাতে, সুন্দর ও ঘন রাখতে গরুর দুধ অনেক উপকার করে। যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে এবং চুলে বেশি পরিমাণে খুসকি বেড়ে যাচ্ছে, তাদের উচিত প্রতিদিন ১ গ্লাস করে দুধ পান করা। তাহলে এই সমস্যা গুলো খুব সহজেই প্রাকৃতিক উপায়ে সমাধান হয়ে যাবে। চুল ভালো রাখতে সব স্বাস্থ্যকর খাবারই খাওয়া প্রয়োজন, তবে বিশেষ করে নিয়মিত দুধ খাবেন।

চুলের সুস্থ, সুন্দর ও ভালো রাখতে উপকার যে খাবার গুলো, এখানে ক্লিক করুন!

০৮। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

যেকোনো মানুষের রক্তাচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে দুধ। রক্তচাপ মাঝে মাঝে খুব বিপদজনক হয়ে উঠে। চিকিৎসকরা সবসময় বলে থাকেন, রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের অনেক উপায় রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দুধ।

যদি আপনি প্রতিদিন দুপুরের খাবারের পর অথবা বিকালে ১ গ্লাস করে গরুর দুধ খেতে পারেন, তাহলে আপনি অনেক উপকারের পাশাপাশি রক্তচাপ ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। দুধে আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনসহ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, প্রোটিন এবং আরও অনেক পুষ্টিকর উপাদান। পটাশিয়াম মানুষের রক্তনালী সুস্থ্য ও ভালো রাখে, ফলে রক্তচাপ কম হয়ে থাকে। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত গরুর দুধ খাওয়ার চেষ্টা করা।

০৯। পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে এবং হজম শক্তি বাড়ায়।

পাকস্থলী পরিষ্কার রাখতে গরুর দুধের ভুমকা অনন্য এবং পাশাপাশি হজম শক্তি বাড়ায়। দুধ যেহেতু পানীয় খাবার, সেহেতু এটি খুব সহজেই পাকস্থালী পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য আমরা কত কিছুই না করে থাকি, ডাক্তারের কাছে যাই অনেকে পরামর্শের জন্য। কিন্ত আপনি জানেন হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য রয়েছে আশ্চর্যজনক খাবার, যে খাবার গুলো খুব সহজেই অতিরিক্ত কোন খরচ ছাড়াই আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

১০। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

দুধ অন্যান্য পুষ্টিকর বা স্বাস্থ্যকর খাবারের মতোই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। খাঁটি গরুর দুধ নির্ভেজাল হওয়ার কারণে অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়া এটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান, যা আমদের দৈনন্দিন প্রয়োজন। এবং নিয়মিত ১ গ্লাস পরিষ্কার, নির্ভেজাল গরম দুধ পান করতে পারলে, রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে বিরাট সহায়তা করে।

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি গরুর দুধে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলসহ রয়েছে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান। যা আমাদের শরীরের জন্য প্রতিনিয়ত প্রয়োজন। কারণ এইসব কার্যকরী উপাদান শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এককথায় দুধের উপকারিতা অনন্য।

শেষ কথাঃ

নিঃসন্দেহে দুধ অনেক উপকারি একটি খাবার, এই ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকার ছাড়াও আর অনেক রয়েছে। কেনইবা দুধ খাবেন না, এটি ১২ মাসই পাওয়া যাই। প্রতিদিন না খেতে পারলেও অন্ততপক্ষে ১ বা ২ দিন পর পর খাওয়া অবশ্যই উচিত। বাড়তি বয়েসের ছেলে মেয়েদের কে নিয়মিত খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। ফলে তাদের শরীর, স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, মন প্রফুল্ল ও সতেজ থাকবে, ব্রেইন ভালো থাকবে এবং পড়াশোনা ঠিকভাবে করতে পারবে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাকে যথেষ্ট পরিমানে সহায়তা করতে পেরেছে।

আরও পড়ুন –

রাত জেগে কাজ করলে কি খাওয়া উচিত

এ সময়ের সেরা ১০টি পেশা যা অবশ্যই আপনার জানা দরকার

অলসতা দূর করার ১০টি প্রয়োজনীয় উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here