আদর্শ সমাজ গঠনে ইসলামের ভূমিকা
আদর্শ সমাজ গঠনে ইসলামের ভূমিকা

আদর্শ সমাজ ও দেশ গঠনে ইসলামের ভূমিকা রয়েছে যথেষ্ট। এই আর্টিকেলে আপনি বিস্তারিতভাবে আদর্শ সমাজ ও দেশ গঠনে ইসলামের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারবেন

সুন্দর ও ইসলামের নিয়ম কানুনের দ্বারা সমাজ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশকে একধাপ এগিয়ে নেওয়া যাবে। আদর্শ জীবন গঠনে নৈতিকতার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর মানবতার ধর্ম ইসলামে নৈতিকতার কথা বেশ শক্তভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

মানুষের সমাজব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ প্রভৃতি কতিপয় খোদায়ী আইন-কানুন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই সমাজব্যবস্থা সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য আসমানি গ্রন্থ আল-কুরআন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা উপহার দিয়েছে। খুব সহজ ও সুন্দরভাবে বলা হয়েছে।

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম, যা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্ব মানবতার জন্য পথ নির্দেশিকা হিসাবে প্রদান করা হয়েছে। এটি নীরেট কোন জীবন ব্যবস্থার নাম নয়, বরং জীবনের সকল দিক ও বিভাগে গাম্ভীর্যপূর্ণ ও আনন্দঘন পরিবেশ উপহার দিতেও ইসলামের জুড়ি নেই।

মানবজীবনের সব ক্ষেত্রের দিকনির্দেশনা ইসলাম প্রদান করেছে। মানবসমাজ গঠনের মৌলিক উপাদান হলো পরিবার। তাই পরিবার গঠনের প্রতি ইসলাম খুবই গুরুত্ব আরোপ করেছে। পরিবার একটি জাতির মেরুদণ্ড। আগামী দিনের আদর্শ মানুষ গড়ার পাঠশালা। পরিবারের মাধ্যমে সমাজের প্রত্যেক সদস্যের মধ্যে তৈরি হয় ভালোবাসা ও হৃদ্যতা। নিষ্কলুষ জীবনযাপন ও মানবিক চাহিদা পূরণের বৈধ পন্থা হলো পরিবার। পরিবারের মাধ্যমে অব্যাহত থাকে আপন বংশপরিক্রমা। অন্তরজুড়ে বিরাজ করে মানসিক প্রশান্তি।

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের বন্ধন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই প্রয়োজন সামাজিক রীতি-নীতি সম্পর্কে জানা। একে অপরকে কিভাবে অভিভাদন জানাতে হবে, সেটাও অবগত হওয়া। মানব জাতিকে ইসলাম এটা শিখিয়ে দিয়েছে, যার ভাষা আকর্ষণীয় এবং পদ্ধতিও চমৎকার। ইসলামের এই চমৎকার অভিবাদন পদ্ধতি অপরিচিত মানুষের সাথে সম্পর্ক জুড়ে দেয়। পরস্পরের মাঝে মনোমালিন্য দূর করে সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরী করতঃ শত্রুতার পরিবর্তে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে। এর মাধ্যমে মানুষ একে অপরের নিকট ভালবাসার সৌরভ খুঁজে পায়। অনুভব করে সুসম্পর্কের কোমল পরশ। যে বাতাসে শত্রুতার গন্ধ নেই, আছে বন্ধুত্বের আবেহায়াত। যাতে হিংসার লেশ মাত্র নেই, আছে পরোপকারের ভিত। ক্ষতির আশংকা নেই, আছে সমূহ কল্যাণ। অহংকারের ভাব নেই, আছে বিনয়ের সমারোহ। মনে কষ্ট দেওয়ার কথা নেই, আছে মন জুড়ানোর বাণী। নিঃসন্দেহে সেই অভিবাদনটা হচ্ছে (আস-সালা-মু আলাইকুম)।

এই নির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে সমাজকল্যাণে আল-কুরআন বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে। সামাজিক ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কোনো আকস্মিক ব্যাপার নয়। প্রতিটি কাজের পিছনেই কারণ থাকে। মানুষের জয়-পরাজয়, সুখ-দুঃখ তারই কর্মফল। মানুষের জীবনযাপনে কল্যাণমুখী পথনির্দেশিকা আল-কুরআন যেমন দিতে পেরেছে, অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ তা পারেনি।

আল-কুরআনের অনুপম আদর্শের প্রশংসা করে মিশরের বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ রাশিদ রিজা তাঁর গ্রন্থ ‘তাফসির আল-মানার’ এ বলেন, ‘আল-কুরআন এমন এক খোদায়ী বিধান যার মতো অনুপম পথনির্দেশিকা অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায় না।’

পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন সামাজিক, ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক আইনের মাপকাঠি নির্ধারিত করেছে। এভাবে জ্ঞান অর্জনের জন্য আল-কুরআন মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। পৃথিবী ও প্রকৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য উপদেশ দিয়েছে। যেমন পবিত্র গ্রন্থে বলা হয়েছে: ‘বল, পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ, যারা সত্যকে অস্বীকার করেছে তাদের পরিণাম কী হয়েছিল!’ (সূরা আনআম: ১১)

একটি সুন্দর, সুস্থ ও অপরাধমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখেছে অনেকেই। আর সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার ভাবনাও নানা রকম ছিলো। সভ্যতার শুরু থেকে এ পর্যন্ত সে চেষ্টাও কম করা হয়নি। কিন্তু প্রায় সকল চেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। অবশ্য ইসলাম এ বিষয়ে যে দিক নির্দেশনা দিয়েছে এবং যে আলোকবর্তিকা মানবজাতির সামনে তুলে ধরেছে তা অতি স্পষ্ট ও স্বচ্ছ।

এরই আলোকে ইসলাম অন্যায় ও অপরাধের বিভীষিকাময় এ পৃথিবীকে এমন একটি আদর্শ সমাজ উপহার দিয়েছে, যার চেয়ে উন্নত ও উৎকৃষ্ট কোনো সমাজ হতে পারে না। যেখানে অন্যায় অপরাধের সুবিচার নিশ্চিত করা হয়েছিল। গঠিত হয়েছিল একটি সুন্দর, সুস্থ ও অপরাধমুক্ত সমাজ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে একটি দল থাকা আবশ্যক, যারা(মানুষকে) কল্যাণের পথে আহ্বান করবে, আর সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই (পরকালে) পূর্ণ সফলকাম।’ (সুরা আলে ইমরান : ১০৪)

অপর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা সর্বকৃষ্ট উম্মত, তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য, তোমরা (মানুষকে) সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে (জবাবদিহিতার জন্য) দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় পাবে এবং নিজেকে প্রবৃত্তির খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলা থেকে বিরত রাখে তার পরকালের শান্তির ঠিকানা জান্নাত।’ (সুরা আন-নাজিআত, আয়াত: ৪০-৪১)

সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও সদয় ব্যবহারে তাঁর কাছে কখনো স্বধর্মী বা বিধর্মী বিচার ছিল না। তাঁর অনুপম জীবন ও সমাজসংস্কারমূলক কর্মধারা সব মানুষের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এক চিরন্তন আদর্শ। মানবজাতির মধ্যে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও সংহতি প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার ও অসত্য দূরীভূত করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর আজীবন প্রয়াস বিশ্বমানবতার জন্য মহান অনুপ্রেরণার উৎস।

পরমতসহিষ্ণুতা, সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার অতুলনীয় যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থ্থাপন করেছেন, তা বিশ্ববাসীর কাছে অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। তাওহীদের আদর্শ, সাম্য, মৈত্রী, শান্তি, ক্ষমা, ঔদার্য, ন্যায়নীতি ও মানবপ্রেমের অগ্রদূত মহানবী (সা.)-এর পবিত্র সিরাত বা জীবনচরিত মানবতার ইতিহাসে তুলনাবিহীন। সমাজসংস্কারক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়ক, শাসক, ব্যবসায়ী, বিচারক, স্বামী, পিতা, নেতা, বিশ্বমানবতার মুক্তিদাতা ও শান্তির অগ্রদূত হিসেবে অর্থাৎ মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ে তিনি ছিলেন অনুপম, অতুলনীয় এক মহান আদর্শের ধারক ও বাহক। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় যে বিশ্বশান্তি ও কল্যাণের পথই হলো মহানবী (সা.)-এর অনুপম শিক্ষা ও সামাজিক সংস্কারের মূল চেতনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here