কোন মাছে কি গুণাগুণ আছে
কোন মাছে কি গুণাগুণ আছে

কোন মাছে কি গুণাগুণ বা পুষ্টিগুণ আছে আমরা অনেকেই জানি না, অথচ বিভিন্ন ধরনের মাছ ঠিকই খাই। বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য গুলোর মধ্যে মাছ হচ্ছে প্রথম ও অন্যতম। প্রায় সবাই মাছ খেতে পছন্দ করে। মাছে ভাতে বাঙ্গালী তাই নদী মাতৃক বাংলাদেশের চিরাচরিত প্রবাদ। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র মাছ মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মাছ মানবদেহে অন্যতম আমিষ যোগানদাতা।

মাছে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন। এখানে আমরা জানবো কোন মাছে কি গুণাগুণ ও ভিটামিন আছে।
বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে চার শত প্রজাতির অধিক মাছ পাওয়া যায়। মাছের দিক দিয়ে বাংলাদেশ খুব সমৃদ্ধ। মাছ উৎপাদনেও বাংলাদেশ সামনের কাতারে অবস্থান করছে।

বাংলাদেশে ২৬০ প্রজাতির স্বাদুপানির (মোহনাজলসহ) এবং ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও ১২-এর অধিক প্রজাতির চাষকৃত বিদেশী মাছ চাষের জলাশয়ে এবং ৭০-এর অধিক জাতের বিদেশী বাহারী মাছ এ্যাকুয়ারিয়ামে পাওয়া যায়। (সূত্রঃ উকিপিডিয়া)

তবে এখানে আমরা ১৪টি জনপ্রিয় মাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানবো, যেগুলো সাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী ও প্রয়োজনীয়।

কোন মাছে কি গুণাগুণ আছে

০১। ইলিশ মাছ

ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। এটি একটি সামুদ্রিক মাছ যা ডিম পাড়ার জন্য বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতের নদীতে আগমন করে। বাঙালিদের কাছে ইলিশ মাছ খুবই জনপ্রিয় খাবার। এই মাছের রয়েছে অনেক গুণাগুণ বা পুষ্টিগুণ। হজম শক্তি বাড়ায়, বায়ু কমায়, পিত্ত ও কফ কমায়। ইলিশ একটি চর্বিযুক্ত মাছ আর এটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড (ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড) রয়েছে।

০২। রুই মাছ

রুই বৈজ্ঞানিক নাম বাংলাদেশ ও ভারতে বহুল পরিচিত মাছগুলোর মধ্যে একটি। আন্তর্জাতিক ভাবে রুই মাছের নাম বলা হয়ে থাকে রোহু। প্রতি ১০০ গ্রাম রুই মাছে ১৬.৪ গ্রাম আমিষ, ১.৪ গ্রাম চর্বি, ৬৮০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২২৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস থাকে। রুই মাছ বল বীর্য ও শুক্র বাড়ায় কিন্তু বাত রোগ থাকলে তা কমাতে সাহায্য করে।

০৩। কাতলা মাছ

কাতল বা কাতলা হচ্ছে পরিবারের Cyprinidae পরিবারের Catla catla একটি স্বাদুপানির মাছ। এ মাছ বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়। এটি বাংলাদেশের স্থানীয় মাছ। কাতলা মাছ বায়ু পিত্ত ও কফ কমায় কিন্তু শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

০৪। বোয়াল মাছ

বোয়াল হচ্ছে সিলুরিডে গোত্রের অন্তর্গত একটি ক্যাটফিশ। মালয়েশিয়ায় একে ইকান তাপাহ নামে ডাকা হয়, যা কিনা মালয়েশিয়ার তাপাহ শহরের নাম থেকে এসেছে। বাংলাদেশে বোয়াল ও খুব জনপ্রিয় মাছ। এটি বিশেষ করে খাল ও বিলে পাওয়া যায়। এই মাছ শক্তি বাড়ায়, রক্ত ও পিত্তকে দুষিত করে কিন্তু ত্রিদোষ বাড়ায় অম্লপিত্ত কুষ্ট ও হাপানি প্রভৃতি কঠিন রোগ উৎপাদন করে।

০৫। চিতল মাছ

চিতল একটি চ্যাপ্টা দেহের মাছ। বৃহদাকার দেহের তুলনায় মাথা ছোট । এটি মিঠা পানির মাছ। বাংলাদেশে সাধারণত নদী, খাল এবং বিল এ পাওয়া যায়, পুকুরেও চাষ করা যায়। চিতল মাছ শুক্র ও বল বাড়ায়।

০৬। শোল মাছ

সুস্বাদু এই মাছ মানবদেহের হাড় ও মাংসপেশি গঠনে সাহায্য করে, রুচিও বাড়ায়। ১০০ গ্রাম শোল মাছে আছে ৯৪ ক্যালরি, ১৬ দশমিক ২ গ্রাম প্রোটিন, ১৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, শূন্য দশমিক ৫ মিলিগ্রাম আয়রন, ৯৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ১ হাজার ৮০ মাইক্রোগ্রাম জিংক। এই মাছ পায়খানা কষায়, পিত্ত ও রক্তের জন্য খুবই উপকারী। (সূত্রঃ প্রথম আলো)

০৭। গজার মাছ

গজার বাংলাদেশের মোটামুট জনপ্রিয় একটি মাছ। বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায় না। পূর্ণবয়স্ক মাছ মাঝারি আকারের হয়। গজার মাছও শরীরের জন্য অনেক উপকারি। গজার পায়খানা কষায়, শরীরে শক্তি বাড়ায়।

০৮। মাগুর মাছ

মাগুর বাংলাদেশের বহুল প্রচলিত মাছগুলোর মধ্যে একটি যার মূল প্রাপ্তিস্থান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। মাগুর মাছের পুষ্টিগুণ ব্যাপক। অসুস্থ রোগীর খাদ্য হিসেবে এই মাছ বহুল প্রচলিত। প্রতি ১০০ গ্রাম মাগুর মাছে ৩২.০ গ্রাম আমিষ, ২.০ গ্রাম চর্বি, ১৭২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩০০ মিলিগ্রাম ফসফরাস এবং ০.৭ মিলিগ্রাম লোহা থাকে। (সূত্রঃ উকিপিডিয়া) মাগুর মাছ শুক্র, বল ও রক্ত বাড়ায়, রক্তহীন ও পউরানা রুগীদের জন্য ভাল খাবার।

০৯। শিং মাছ

শিং মাছ হচ্ছে Siluriformes বর্গের একটি পরিবারের নাম। এরা এশিয়ায় বাস করে। এদের মুখে গোঁফ আছে। বাংলাদেশে এটির অনেক চাহিদা রয়েছে। শিং মাছ কফ, মায়ের দুধ ও শক্তি বাড়ায় এবং শরীরের বাত কমায়

১০। কই মাছ

প্রায় সবাই কই মাছের সম্পর্কে জানি। এটি অনেক তেজীয় মাছ যা সহজেই মরতে চাই না। কই বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের খুব সুস্বাদু মাছগুলোর অন্যতম। বর্তমানে এটি খুব দামী মাছ হিসাবে পরিচিত। কই মাছ শক্তি ও পিত্ত বাড়ায়, বায়ু কমায়।

১১। পুঁটি মাছ

ছোট মাছ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাছ হচ্ছে পুঁটি। অনেক ধরনের পুঁটি মাছ পাওয়া যায়। এই মাছ অনেকেই কাঁটা সহকারে খেতে পছন্দ করে। অবশ্য তার রয়েছে অনেক সুবিধা ও উপকার। ছোট মাছ গুলোতে পর্যাপ্ত পুঁটি মাছ পাওয়া যায়। এটি শুক্র বাড়ায়, কফ, বাত, কুষ্ঠ রোগ দূর করে। ঘিয়ে ভাজা পুটি মাছে ধ্বজ ভঙ্গ রোগে উপকার হয়।

১২। চিংড়ি মাছ

রুচিশীল মাছের মধ্যে চিংড়ি অনেক কার্যকরী। বাংলাদেশে প্রায় সব জায়গায় চিংড়ি পাওয়া যায়। এটি দেহের জন্য বেশ সহায়ক। রুচি, বল, শুক্র ও কফ বাড়ায়। শরীরের মেদ পিত্ত ও রক্ত দোষে খুবই উপকারী। এবং এটি শীত পিত্ত বা শরীরে এলার্জি বৃদ্ধি করে।

১৩। টেংরা মাছ

টেংরা ছোট একটি মাছ। দেহ প্রায় গোলাকার। মুখের সম্মুখে গোঁফ আছে। এদের দেহে আঁইশ নেই তবে দেহ বেশ পিচ্ছিল। টেংরা মাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে এবং এটি বিশেষ ভাবে কফ ও পিত্ত কমায়, শরীরে বল বাড়ায়।

১৪। টাকি মাছ

দেশের দামী মাছ গুলোর মধ্যে টাকি অন্যতম। এই প্রজাতিটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় মাছ। এটি স্বাদু পানির মাছ, দেখতে শোল মাছের ক্ষুদ্র সংস্করণ। অনেকে এই মাছ ভর্তা করে খায়। ১০০ গ্রাম টাকি মাছে ১৭ দশমিক ১৮ গ্রাম প্রোটিন, ৭৫৭ মাইক্রোগ্রাম জিংক, ১ দশমিক ১৭ মিলিগ্রাম আয়রন ও ১৫৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম আছে। এর রয়েছে অনেক উপকারিতা।

আশা করি, কোন মাছে কি গুণাগুণ আছে সেই সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পেরেছেন।

আরও জানুন –

মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও কিছু ক্ষতিকর দিক

শরীরের পানিশূন্যতা দূর করবে যেসব খাবার

ভিটামিন সি এর উপকারিতা গুলো কী কী জানুন

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here