সফল এসইও এক্সপার্ট
এসইও এক্সপার্ট থেকে ডিজিটাল উদ্যোক্তা

এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা সফল হতে চাই না? তবে এমন কিছু মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা সফল হওয়ার জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেয় না। হ্যাঁ এটাই সফল ও ব্যর্থ মানুষের মধ্যে অন্যতম পার্থক্য।

সবাই চায় জীবনে ভালো কিছু করতে, বড় হতে, সবার কাছে সম্মান পেতে এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে। তারজন্য আপনাকে প্রথমে একটা লক্ষ্য নির্ধারন করতে হবে এবং সঠিকভাবে প্ররিশ্রম ও সততার সহিত কাজ করে যেতে হবে। চারপাশে নানান সমস্যা দেখে আপনি হইতো হতাশ হয়ে যেতে পারেন, ঠিক চারপাশে কিছু সফল মানুষও আছে যাদের দেখলে আপনার হতাশা কেটে যাবে।

আপনাকে লেগে থাকতেই হবে, শুধু স্বপ্ন দেখে গেলেন কিন্ত বাস্তবে কাজ করলেন না, তাহলে সফলতা আপনার জন্য না।

বিল গেটস একটা কথা বলেছেন, “আপনি যদি আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজে না নামেন, তাহলে অন্য কেউ আপনার সুযোগটা কাজে লাগাবে।” তাই দ্রুত শুরু করুন। সফল হওয়ার অনেক গুলো ধাপের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, সফল ব্যক্তিদের গল্প পড়া তাদের সম্পর্কে ভালোকরে জানা, কিভাবে তারা সফল হয়েছে?

সফল এসইও এক্সপার্ট
অনলাইন মার্কেটপ্লেস সেমিনার

আজকে ট্রেন্ডি বাংলায় এমন একজন সফল ব্যক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো, যিনি খুব অল্প সময়েই পেয়েছেন সাফল্যের ছোঁয়া। একজন ডিজিটাল মার্কেটার ও এসইও এক্সপার্ট হিসেবে অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে যেমন প্রতিনিয়ত কাজ করছে, ঠিক অপরদিকে ৩ থেকে ৪ টা ইন্সটিটিউটে এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর উপর প্রশিক্ষণও দিয়ে যাচ্ছে এছাড়াও নিজের কোম্পানি তো আছেই।

একজন এসইও এক্সপার্ট থেকে ডিজিটাল উদ্যোক্তা – আকাশ ঘোষ

চলুন সফলতার গল্পটা উনার কাছ থেকেই শুনে আসি –

আমি আকাশ ঘোষ, ডিজিটাল মার্কেটিং, এসইও ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ এক্সপার্ট। আমার জন্ম ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ ভোলা শহরে। লালমোহন হা-মিম একাডেমি থেকে আমার মাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করেছি। মাধ্যমিক শেষ করার পরে ডাঃ আজহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছি এবং অবশেষে শাইখ বুরহান উদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছি।

আমার ক্যারিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একটি যুক্তিসঙ্গত এবং চ্যালেঞ্জিং গ্রহণ করা যেখানে আমার জীবনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে শীর্ষস্থান অর্জন করা। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি আমার সাংস্কৃতিক জ্ঞান, সৃজনশীলতা এবং অভিক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ক্যারিয়ারের জন্য ভালো একটা সুযোগ তৈরি করা।

আমার ডিগ্রী শেষ হওয়ার পর BITM থেকে এসইও এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর একটি কোর্স করি যার সময়কাল ছিল তিন মাস। তারপর থেকে গুগল এবং ইউটিউব এ প্রতিনিয়ত রিসার্চ শুরু করে দেয়।

আমার প্রফেশনাল ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১৫ সালে লিংক-সফট বিডিতে এসএমএস প্রজেক্টে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে যেখানে মূল দায়িত্ব ছিল ডেটা সংরক্ষণ ও বজায় রাখা। ২০১৭ সালে আমি ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষক হিসাবে এসইও স্কুল বিডিতে কাজ শুরু করি। পরের বছর (২০১৮) আমি আমার নিজের কোম্পানি Technocastles প্রতিষ্ঠা করি।

বর্তমানে আমি Global Skills Development Agency এ হেড অব মার্কেটিং হিসেবে কাজ করছি এবং eShikhon.com – ইশিখন.কম এর ডিজিটাল মার্কেটিং এবং ই-কমার্স এসইও এর প্রশিক্ষক, এবং CVLinked Training এ এসইও এবং ডিজিটাল মার্কেটিং প্রশিক্ষক হিসাবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কাজ করছি এছাড়াও skill hunt এ ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েব ডেভলপমেন্ট এবং এসইও প্রশিক্ষক হিসাবেও কাজ করছি।

আপওয়ার্ক এবং ফাইভার মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সার হিসাবে কাজ করছি ২০১৮ সাল থেকে। আমি কাজ করার জন্য যে কোনও ধরণের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারি এবং নমনীয়, নির্ভরযোগ্য এবং কড়া নির্দেশিকা, চ্যালেঞ্জিং শর্ত এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার চেষ্টা করি। আমি সারা জীবনের ক্যারিয়ারের মধ্যে সততা বজায় রাখতে চাই। এজন্য সবসময় সমস্ত কাজ খুব নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা করি এবং এটিই ছিল আমার জীবনের মূল শক্তি।

এসইও এক্সপার্ট

আমার কাজের সেক্টরে কতটা সফল হতে পেরেছি?

কাজের ক্ষেত্রে সফলতা বলতে আমি বিশ্বাস করি কখনোই এত অল্পতেই সফল বলা যায় না নিজেকে। তবে ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে কাজ করছি ৪ বছর যাবৎ। নিজের স্বপ্ন গুলো নিজেই পূরণ করতে পারছি ফ্যামিলি কে সাপোর্ট দিতে পারছি সুতরাং আপাত দৃষ্টিতে সফল বলা যায়। তবে স্বপ্ন গুলো এইখানেই শেষ নয় আরো বড় স্বপ্ন আছে সেই গুলো পূরণ হলে বলতে পারবো পুরোপুরি সফল। তবে আশা করি খুব শীঘ্রয় হবে, কারণ সেই পথেই আছি এবং যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

কিভাবে আজকের পজিশনে আসতে পেরেছি?

শুরুটা মোটেও সহজ ছিল না। প্রথম কাজ শিখি ইন্ডিপেন্ডেন্ট আইটি নামের প্রতিষ্ঠানে। দুপুরে ভার্সিটি থেকে এসে কোনো রকম খেয়ে বাস এ ঝুলে মিরপুর যেতাম ২+২= ৪ ঘন্টা জ্যাম এ কাটাতাম কিন্তু ক্লাস মিস করি নি কখনও। তারপর বিআইটিম এ কাজ শিখি এবং পাশাপাশি আমার বন্ধুদের কাজ শেখানো শুরু করি। আমার ট্রেইনার শ্রদ্ধেয় ফারুক খান স্যার আমাকে প্রথম অফিসিয়ালি ক্লাস নেবার সুযোগ করে দেন। এবং এর পর আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি এর একটি প্রতিষ্ঠান এ ক্লাস নেবার সুযোগ পাই। তার পর এই ভাবে আরো ৩/৪ টি প্রতিষ্ঠান থেকে অফার আসা শুরু হয়।

কিন্তু কাজ শেখাটা ছিল নিজের ভিতর এর সংগ্রাম টাও নিজের কারণ কেউ এ আপনাকে সবকিছু গুলিয়ে দিবে না। কাজ করেছি দিনে ১৬ ঘন্টার ওপরেও পড়াশুনা যদিও কম করা হতো কিন্তু ভার্সিটি যেতাম নিয়মিত। লড়াইটা ছিল মধ্যবিত্ত এর জীবনের সাথে শেষে হয়তো জীবনটাই জিতে গেছে তাই আজকের এই অবস্থাতে আসতে পেরেছি, যদিও এখনো মধ্যবিত্তই আছি।

সংগ্রাম নিয়ে এর বেশি কিছু বলতে চাই না তাহলে সবাই বলবে যত সফল মানুষ আছে সবাই শুধু গরিব ছিল, শুধু কষ্ট ছিল এবং তাদের সবার কাহিনী এক। শুধু এই টুকু বলবো সত্যি সত্যি ১৬ ঘন্টার ওপরে কাজ করে গেছি প্রতিদিন এবং এখনো কম করা হয় না। তাই ভুল করেও মনে করবেন না যে যত টুকুও আছি এইটা এত তাই সহজ।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার

কাজের সেক্টেরের ভবিষ্যৎ

আমার কাজের সেক্টর নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই যদি ফিউচার না থাকতো তাহলে আমাকে নিয়ে ফীচার হয়তো না এই পোর্টাল এ। ডিজিটাল মার্কেটিং একটা এভার গ্রীন নিস্ যার ডিমান্ড সারা জীবন থাকবে। আমাদের জীবনে যত দিন বেচা কেনা আছে যত দিন প্রোডাক্ট আছে ততো দিন মার্কেটিং চলমান। এবং দিন দিন ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা বাড়তে থাকবে।

কাজ শেখার পর ট্রেনিং লাইফ এ তো চলে আসলাম খুবই ফাস্ট। কিন্তু আমি খুব ফাস্ট আমার নিজের স্টার্টআপ টাও করে ফেলি। শুরু করি আমার নিজের কোম্পানি Technocastle.

তখন কাজের মাত্রা টাও আরো বেড়ে যায় ৩/৪ টা ট্রেনিং সেন্টারে এ ক্লাস নেওয়া, লোকাল ক্লায়েন্ট দেড় কাজ, freelancing মার্কেটপ্লেস এর কাজ, নিজের কোম্পানি এর কাজ সব মিলিয়ে অনেক অনেক দৌড়ানো এবং অনেক অনেক কাজ।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার
এসইও ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সেমিনার

শুরুটা ভালো ছিল কারণ ওপর আল্লাহ এর রহমত এ কাজ শেখাকালীনই প্রথম কাজ পেয়ে যাই Fiverr এ। এরপর তো ট্রেনিং এবং লোকাল কাজ সব কিছু চলতেই থাকে। এই ভাবেই ট্রাকে চলে আসি এর এখনো একই ট্র্যাক এ আছি ট্র্যাক চেঞ্জ করি নি।

ভবিষ্যতে আমার প্লান হচ্ছে

ভবিষ্যত নিয়ে অনেক কিছু ভেবে রাখি নি তবে একটা স্বপ্ন আছে সেটা হলো বেশি দিন অন্যের কাজ করবো না। সব স্বপ্ন আমার কোম্পানি কে ঘিরে যদি আল্লাহ রহমত দেন একদিন আমার কোম্পানি তে হাজার ছেলে মেয়ে কাজ করবে। যদিও এখন আমার কোম্পানিতে আমার সাথে আরো ৬ জন কাজ করছে। তবে আসা করি এই নম্বর টা ৬০০ হবে খুব শীঘ্রই এর পর হয়তো ৬০০০।

নতুনদের জন্য কিছু কথা বলে যায়

আমার ৪ বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে নতুনদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী পরামর্শ দিয়ে যায়।

  • কাজে নামার আগে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে, যে সবাই পারছে আমি ও পারবো।
  • গুগল এবং ইউটিউবে অনেক কার্যকরী তথ্য আছে, সেগুলো থেকে ব্যাসিক ধারণা নিতে হবে।
  • সময় নষ্ট করা যাবে না, নতুনদের একটাই বেশি সমস্যা একটানা কাজে লেগে থাকতে পারেন না।
  • প্রতিদিন নতুন কিছু শিখতে হবে, দক্ষতা বাড়ানো জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করতে হবে।
  • ফ্রীলান্সিং করে রাতারাতি হাজার হাজার ডলার ইনকাম করা যায়, এইসব চিন্তা বাদ দিতে হবে।
  • এবং প্রথমে যেকোনো একটা বিষয়ে আপনাকে এক্সপার্ট হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো টার্গেট শিফট করা যাবে না। একটাই ট্র্যাক এ থাকতে হবে এবং কাজ করে যেতে হবে। কোনো ভাবেই হেরে গেছি বলা যাবে না। নিজের কাজ কে অনেক বেশি ভালোবাসতে হবে এবং ভ্যালু দিতে হবে। নিজেকে কখনোই ফ্রি করে দেওয়া যাবে না। কারণ একবার যদি আপনি ফ্রি করে দেন বা একবার যদি নিজের কাজের ভ্যালু কম নেন তাহলে ফিউচার এ আপনার ভ্যালু আর গ্রো করতে পারবেন না।

আর কাল থেকে শুরু করবো এই কথাটা ভুলে যান এখনই শুরু করুন এবং সর্বদা পজিটিভ থাকুন। যত বাধা আসুক না কেন বি পজেটিভ। মনে রাখবেন জীবন একটাই প্যারা নেওয়া যাবে না জাস্ট চিল এবং অনেক বেশি কাজ করতে হবে অল্প টাকা তে যেমন আপনার মন ভোরে না ঠিক তেমনি অল্প কাজে সফলতার ও মন ভোরে না। তাই সফলতা নামক বান্ধবীকে পটাতে হলে তাকে নিজের করে নিতে হলে অনেক বেশি কাজ করে তাকে ইমপ্রেস করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here