পানি পান করার উপকারিতা
পানির উপকারিতা

পানি পান করার উপকারিতা গুলো ঠিক জানা নেই আমাদের, এইজন্যই হইতো বা আমরা নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করি না এবং দৈনিক কত লিটার পানি পান করা উচিত, সেটাও জানি না। প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত ও এর উপকারিতা গুলো জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

প্রতিনিয়ত আমাদের এতই পানির প্রয়োজন যা ছাড়া আমরা এক মুহূর্ত বেঁচে থাকার কল্পনা করতে পারি না। পানিকে খাবারের মূল উপাদান বলা চলে কারণ যাকিছু খান না কেন পানি অবশ্যই খেতে হয়। এবং কিছু না খেলেও জীবন বাঁচানোর তাগিদে, তৃষ্ণা মিটাতে ও শরীর স্বাস্থ্য সতেজ রাখতে, ও মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য, সুস্থ ত্বক, ঝলমলে চুল আর উজ্জ্বল চেহারার জন্য অবশ্যই নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।

তবে দেখে শুনে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে, কারণ বর্তমানে পানির মধ্যেও অনেক ভেজাল ও সমস্যা আছে। পানি ও ভালো খারাপ রয়েছে, এখন আপনি যদি ভালো, স্বাস্থ্যকর ও বিশুদ্ধ পানি না পান করে, অবিশুদ্ধ ও অস্বাস্থ্যকর পানি পান করেন, তাহলে উপকারের চেয়ে অনেক ক্ষতি হবে।

পানি পান করার উপকারিতা এবং প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত? এইরকম অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন। আসলে এই প্রশ্নটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমরা অনেকেই নিয়মিত পানি পান করি না, কতটুকু পানি খেলে কি উপকার পাওয়া যায় এই সম্পর্কে ধারণা খুবই কম। আর এই কারণ গুলোই কম পানি খেতে সহায়তা করে থাকে। এখানে আপনি জানতে পারবেন বিস্তারিত ও কার্যকরী তথ্যের সাথে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে প্রতিদিন কত লিটার পানি পান করা উচিত ও পানি খেলে কি কি উপকার পাওয়া।

মানবদেহে পানির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

মানব দেহে পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ও অতুলনীয়। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, পানির অপর না জীবন। বিশুদ্ধ পানির রয়েছে অনেক কার্যকরী উপকারিতা। সুস্থ সুন্দর জীবনে যাপনের, মন মেজাজ সতেজ রাখার জন্য ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য এটির যথেষ্ট প্রয়োজন। মানবদেহের ৭০ ভাগই পানি। অর্থাৎ মানবদেহের দুই তৃতীয়াংশই হচ্ছে পানি। এর মদ্ধে আমাদের রক্তে ৮৩%, হাড়ে ২২%, মস্তিস্কে ৭৪% এবং পেশিতে ৭৫% পানি রয়েছে। বিশেষজ্ঞ্যদের মতে শরীরের বেশিরভাগ রোগ হয় অবিশুদ্ধ পানির কারনে। সে কারণে পানি বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকা খুবেই জরুরী। এবং অবশ্যই জানা উচিত পানির উপকারিতা গুলোর সম্পর্কে, কিভাবে কখন, কতটুকু পানি খাওয়া উচিত ইত্যাদি।

স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতে, প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস বা ২ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। তবে আপনি যদি এর চেয়ে বেশি খেতে পারেন তাহলে আরও ভালো এবং গরমকালে ২ লিটারের চেয়ে বেশি অর্থাৎ কমপক্ষে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। এছাড়াও যারা পরিশ্রম করে বেশি এবং বেশি বেশি ঘামে তাদের পানির প্রয়োজনীয়তা আরও অনেক। এবং যাদের ওজন বেশি তাঁদের ও বেশি পানি খাওয়া উচিত। অর্থাৎ বিশুদ্ধ পানি কমপক্ষে ২ লিটার পানি খেতে হবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বেশি খেতে পারেন।

বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজনীয়তা

দূষিত পানি পান করার দ্বারা মানবদেহে বিভিন্ন প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়। দূষিত পানি পান করার ফলে বিশেষ করে কিডনি আক্রান্ত হয়। আমরা অনেকে বিশুদ্ধ পানি পান করার প্রতি মনোযোগী নয়। আমরা যারা শহরে বসবাস করি তারা অন্তত পানি ফুটিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করি। শহরের মানুষেরা সাধারণত সকলে ট্যাংকির পানি ব্যবহার করে থাকি। অনেক দিন যাবত ট্যাংকি পরিস্কার না করার কারণে ট্যাংকিতে শেওলা ও ময়লাতে পরিপূর্ণ থাকে। আমরা অনেকে সে দিকে মনোযোগ দেই না। আমরা চেষ্টা করব পানির ট্যাংকি যাতে পরিস্কার পরিছন্ন থাকে। তাহলে আমরা পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ হতে মুক্তি পাব।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

০১। শরীর ও মন সতেজ রাখে।
০২। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
০৩। চুল পড়া প্রতিরোধ করে।
০৪। ওজন কমাতে সাহায্য করে।
০৫। পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে।
০৬। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
০৭। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
০৮। কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে।
০৯। রক্ত পরিষ্কার ও উৎপাদন করে।
১০। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

০১। শরীর ও মন সতেজ রাখে।

পানি পান করার উপকারিতা গুলোর মধ্যে প্রথম উপকারটি হচ্ছে শরীর ও মন সতেজ রাখে। অর্থাৎ নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেলে শরীর ও মন যথেষ্ট সজেত থাকে। শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে, ক্লান্তি দূর করতে, তৃষ্ণা মিটাতে ও মন মানসিকতা কোমল ও ঠাণ্ডা রাখতে যথেষ্ট বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেক।

০২। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

বিশুদ্ধ পানির গুরুত্বপূর্ণ একটি উপকার হলো, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানো। নিয়মিত ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন, দেখবেন ত্বকের উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং ত্বক কোমল হবে। বেশি পানি খেলে দেহের রক্তের ক্ষতিকর টক্সিন দ্রুত শরীর থেকে বের হয়ে যায়, এতে করে আমাদের ত্বকের লুকোনো উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। ত্বক হয়ে উঠে ভেতর থেকে উজ্জ্বল।

০৩। চুল পড়া প্রতিরোধ করে।

চুল পড়া প্রতিরোধ করতে ও বিশুদ্ধ পানির অনেক অবদান রয়েছে। চুল পড়া কমাতে খাবারের পানি ও ব্যবহার পানি উভয়েরই অবদান রয়েছে। অবিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করলে চুলের গোঁড়ায় গোঁড়ায় ময়লা জমে নষ্ট হয়ে যাবে এবং অপরদিকে বিশুদ্ধ পানি পান করলে খুশকির মতো মাথার ত্বকের সমস্যা থেকে দিতে পারে মুক্তি। শুধু পানি পান করা নয়, পানি ব্যবহার করে চুলের গঠন পরিবর্তন করাও অনেক সহজ। ঠান্ডা, পরিষ্কার পানিতে গোসল চুলকে আরো ঝলমলে আর ঝরঝরে করে তোলে।

০৪। ওজন কমাতে সাহায্য করে।

যাদের ওজন বেশি বা যারা ওজন কমাতে চান, তাদেরকে যথেষ্ট পানি পান করতে হবে। নিয়মিত পানি পান করার চেয়ে ২ গুণ বেশি খেতে হবে। অর্থাৎ ৪ থেকে ৫ লিটার পানি পান করা উচিত। প্রতিদিন সকালে একটি বড় গ্লাস পানি পান করুন। এটি মেটাবলিজম ২৪% পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। যা আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।

০৫। পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করলে পাকস্থলী পরিষ্কার ও সুস্থ থাকে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ গ্লাস পানি পান করলে মাসিকের কারণে যে পেট ব্যথা হয়, পাকস্থলীর ব্যথা এবং মাংস পেশীর ব্যথা অপসারণ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

০৬। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

পানি পান করার উপকারিতা গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান, পড়াশোনায় বা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে অনেক মনযোগী করে তুলতে চান, তাহলে প্রতিদিন ২ -৩ লিটার বিশুদ্ধ পানি পান করুন। আমাদের মস্তিষ্কে ৭৫% পর্যন্ত পানি। সকালে এক গ্লাস পানি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সারাদিন মস্তিষ্ক সচল রাখে। তাই অবশ্যই নিয়মিত পানি পান করুন।

০৭। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে অনেক পুষ্টিকর খাবার রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে পানি অনেক অবদান রাখে। অর্থাৎ আপনি যদি হজম শক্তি খুব ভালোভাবে বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে যেকোনো খাবারের আগেও পরে ১ ক্লাস পানি খেয়ে নিন। পানি শুধু শরীর থেকে টক্সিন পর্দাথ পরিষ্কার করে না বরং হজম তন্ত্রের উন্নতি সাধন করে ও খাবার দ্রুত হজমে সহায়তা করে। কেবল সকালেই নয়, যে কোন বেলার খাবারের সময় বা পরে উষ্ণ পানি পান খাবার দ্রুত হজম করতে সহায়ক।

০৮। কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যায় অনেকেই পড়ে থাকেন, তাঁদের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। প্রতিদিন সকালে ২ গ্লাস পানি পান করে দিন শুরু করলে পরিপাকতন্ত্র সুস্থ থাকে, এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। মলাশয়কে ঠিকঠাক ও সচল রাখতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়ে যায়।

০৯। রক্ত পরিষ্কার ও উৎপাদন করে।

বেশি বেশি পানি খেলে রক্ত পরিষ্কার ও উৎপাদন হয়। প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি খেলে দেহে রক্ত উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং নতুন রক্তের কোষ গঠিত হয়, একইভাবে দেহের মাংসপেশির কোষ গঠনে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

১০। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

বিশুদ্ধ পানি আমাদের জন্য অনেক উপকারী যা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। উপরোক্ত উপকার গুলো ছাড়াও এটি বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক সহায়তা করে। তাই এখন থেকে চেষ্টা করবেন প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করার, কমপক্ষে ২ লিটার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বেশি খাওয়া উচিত।

আরও জানুন –

পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর সহজ ৫টি উপায়

স্মার্ট হওয়ার ১০টি সহজ ও কার্যকরী উপায়

ভিটামিন সি রয়েছে যেসব খাবারে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here