প্রেষণা দেয়ার উপায়
প্রেষণা দেয়ার উপায়

প্রেষণা একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। এটি কর্মীদের উদ্দীপ্ত করে তোলে। প্রতিষ্ঠান কর্মীদেরকে প্রেষণাদানের মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জনের চেষ্টা চালায়। প্রেষণার অবর্তমানে কর্মীদের সামর্থে্র পূর্ণমাত্রার যোগান পাওয়া যায় না। কর্মীদের বিভিন্নমুখী আচরণের কারনে প্রেষণা সাধারণ উদ্দীপক নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন।

তবুও ব্যবস্থাপনার বিশারদ ও মনোবিজ্ঞানীরা কর্মীদের প্রেষণাদানের বিভিন্ন উদ্দীপকের কথা বলছেন। এ কৌশল বা উদ্দীপকগুলোকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করে আলোচনা করা যায়।

০১। আর্থিক প্রেষণাঃ

অর্থের সাথে সম্পৃক্ত প্রেষণাদানের এমন কৌশলগুলোকে আর্থিক কৌশল হিসেবে অভিহিত করা হয়। যেমনঃ –

• উপযুক্ত বেতনঃ

কর্মীদের প্রাথমিক চাহিদাপূরণের অন্যতম উপায় হলো তার শ্রম বা মেধার বিনিময়ে অর্জিত বেতন। সঠিক সময়ে উপযুক্ত বেতন পেলে কর্মী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্বচ্ছন্দে বাঁচতে পারে। তাই বেতনকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্মীদের প্রেষিত করার একটি শক্তিশালী কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

• বোনাসঃ

বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের প্রাপ্য বেতনের অতিরিক্ত অর্থ বিভিন্ন উপলক্ষে বোনাস হিসেবে প্রদান করা হয়। বোনাস বিভিন্ন নামে দেওয়া হয় যেমন – উৎসব বোনাস, উৎপাদন বোনাস, ইত্যাদি। বোনাসকে কর্মীদের অতিরিক্ত অর্থপ্রাপ্তি মনে করে। এটি পেয়ে তারা উৎসাহিত হয়, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে অধিকতর কর্মতৎপর হয়। বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বছরে দুটো মূল বেতনের সমান উৎসব বোনাস দেয়া হয়ে থাকে।

• চিকিৎসা সুবিধাঃ

শারীরিক সুস্থতাসম্পন্ন কর্মী ছাড়া প্রতিষ্ঠান তার উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারে না। কর্মী শারীরিক সুস্থ না হলে সে মন দিয়ে কাজ করতে পারে না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্নভাবে চিকিৎসা সুবিধে দিয়ে কর্মীদের প্রেষিত করে। অনেক প্রতিষ্ঠান এ সুযোগ কর্মীর ওপর নির্ভরশীল সদস্যদের পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।

কর্মীর কর্মস্থলে চিকিৎসক নিয়োগ কিংবা চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন, বিনামূলে সম্পূর্ণ চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন, নগদ আর্থিক চিকিৎসাভাতা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করে থাকে। বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্যে প্রতিমাসে নগদ চিকিৎসা ভাতা এবং জরুরী অবস্থায় সরকারী হাসপাতালে ব্যয়ব্যতিরেকে চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।

• পদোন্নতিঃ

পদোন্নতি কর্মজীবনে এক বিরাট প্রাপ্তি ও আকাঙ্খিত বিষয়। পদোন্নতি প্রাপ্তিতে কর্মীর যেমন দায়িত্ব ও কর্তিতের পরিসর বৃদ্ধি পায় তেমনি তার আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়। প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু, নিরপক্ষে নীতিমালার ভিত্তিতে পদোন্নতির ব্যবস্থা করার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে, প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনে সচেষ্ট হয় এবং নিজের সামর্থের পূর্ণমাত্রা ব্যবহার করে।

• পরিবহন ভাতাঃ

প্রতিষ্ঠান তার কর্মীদের পরিবহনের ব্যবস্থা করলে কর্মীরা প্রেষিত হয়। অনেক সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান কর্মীদের অফিসে আনা নেওয়ার জন্য পরিবহন ব্যবস্থা করে থাকে। কর্মীদের পরিবহন সুবিধে কিংবা যাতায়াত ভাতার ব্যবস্থা থাকলে কর্মীরা যথাসময়ে বাড়তি অর্থ ব্যয়ব্যতি রেখে প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করতে পারে। এতে করে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়।

০২। অনার্থিক প্রেষণাঃ

অর্থের সাথে সম্পৃক্ত নয় প্রেষণাদানের এমন কৌশলগুলোকে অনার্থিক প্রেষণা বা কৌশল হিসেবে অভিহিত করা হয়। নিচে এগুলো আলোচনা করা হল –

• সুষ্ঠু কার্যপরিবেশঃ

কর্মীদের কার্যস্থলের পরিবেশ উন্নত হলে কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ বেড়ে যায়। কর্মীর কাজের স্থান, যন্ত্রপাতি বিন্যাস, অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ ব্যবস্থা কর্মীদের পারস্পরিক সম্পর্ক এগুলো কার্যপরিবেশের অন্তর্গত। কর্মীর প্রেষণা সৃষ্টির জন্যে কার্যপরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।

• চাকরীর নিরাপত্তাঃ

কার্যক্ষেত্রে সকল ধরনের অনিশ্চয়তার বিপক্ষে চাকরীর নিরাপত্তা কর্মীকে কাজে সস্তি দেয়, কাজে অনুপ্রানিত করে। অধিকাংশ কর্মীর উপার্জনের প্রধান উৎস চাকরী। চাকরীর নিরাপত্তা হীনতায় কর্মী উদ্যম হারিয়ে ফেলে। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন আত্মপ্রত্যয়ী, আত্মবিশ্বাসী ও উদ্যম কর্মী। চাকরীর নিরাপত্তা প্রদানকে প্রেষণার অন্যতম উদ্দীপক হিসেবে ব্যবহার করলে প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কর্মী পেতে পারে।

• কাজের প্রশংসা ও স্বীকৃতিঃ

ভালো কাজের প্রশংসা ও স্বীকৃতি লাভ কর্মীর স্বাভাবিক প্রত্যাশা। প্রশংসা ও স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে কর্মী আত্মতৃপ্তি লাভ করে আর এ আত্মতৃপ্তি কর্মীকে আরও ভালো কাজ করার অনুপ্রেরণা যোগায়, কর্মী প্রতিষ্ঠানের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ও উৎসর্গকৃত হয়। ফলে প্রতিষ্ঠান তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।

• সুনামঃ

প্রতিষ্ঠানের সুনাম কর্মীর মনোবল ও সমাজিক অবস্থান বাড়িয়ে দেয়। প্রতিষ্ঠানের সুনামের অংশীদার হয়ে কর্মী তার আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে সচেষ্ট থাকে।

• অনানুষ্ঠানিক সুবিধাঃ

প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ চালু থাকলে কর্মীরা কাজের প্রতি অনুরক্ত হয়। বনভোজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিচিত্রা অনুষ্ঠান ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে উর্ধবতন ও অধস্তন জনশক্তির মধ্যে আন্তরিক আন্তঃব্যক্তিল সম্পর্ক গড়ে উঠে। এতে কর্মীদের মন মানসিকতার উন্নতি হয়, তারা প্রতিষ্ঠানের কার্যসম্পাদনে উদ্দীপ্ত হয়।

০৩। নেতিবাচক প্রেষণাঃ

অনাকাঙ্খিত আচরণ থেকে কর্মীকে নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রতিষ্ঠানের নেতিবাচক প্রেষণার ব্যবহার দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্যে কর্মীদের কার্যসম্পাদনে বাধ্য করা হয় এবং নানা প্রকার শাস্তি ও বিলপ্তকরণ উদ্দীপক ব্যবহার করা হয়, কর্মচ্যুতির ভয়, বেতন হ্রাস, পদাবনতি, তিরস্কার, কর্তিত্ব হ্রাস, প্রাপ্য পুরস্কার স্থগিতকরন ইত্যাদি নেতিবাচক কৌশল প্রেষণার উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। ইতিবাচক প্রেষণায় যখন কর্মীদের উদ্দীপ্ত করা যায় না তখন ব্যবস্থপনায় বাধ্য হয়ে নেতিবাচক প্রেষণার আশ্রয় নেন। নেতিবাচক প্রেষণা সাম্যিকভাবে এবং সাবধানতার সাথে প্রয়োগ করা উচিত। দীর্ঘ সময়ের জন্যে এটি ব্যবহার করলে কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here