মানবীয় আচরণ
মানবীয় আচরণের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি

মানুষ একটি জটিল প্রাণী। প্রতিটি মানুষের মধ্যে সুখ-দুঃখ, আনন্দ- বেদনা, ভালো লাগা, ভালোবাসা এবং হতাশার অনুভ্রতি বিদ্যমান। এসব কারণেই মানুষের আচরণও ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। অর্থাৎ মানবীয় আচরণের দৃষ্টিভঙ্গি গুলো নানা রকম হয়ে থাকে। তাই আচরণগত কারনে মানুষে মানুষে বিভিন্নতা লক্ষণীয়।

নিচে মানবীয় আচরণে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করা হলোঃ

০১। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষঃ

মানুষ জন্মগতভাবেই সামাজিক জীব হিসেবে পরিচিত। অর্থাৎ এটি মানুষের একটি সহজাত আচরণ। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের আচরণের দৃষ্টিভঙ্গি বহুকাল পূর্বের। আদিম মানুষের মধ্যে এ প্রবৃত্তি বিরাজমান ছিল। কোন কালেই মানুষ একা বাস করতে পারেনি। মানুষের এ আচরণগত দৃষ্টিভঙ্গি কখনোই পালটাবার নয়।

শিল্প সংগঠনেও মানুষ দলবদ্ধভাবে কাজ করতে পছন্দ করে এবং গবেষণায় দেখা যাক যে, এককভাবে কাজ করার চেয়ে গ্রুপ বা দলীয় কাজের ফলাফল বরাবরই সন্তোষজনক হয়। তাই কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তি প্রেষণা ব্রিদ্ধির চাইলে দলীয় প্রেষণা বৃদ্ধিতেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। দলীয় মনোবল উন্নত না হলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাম্য লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

০২। যুক্তিবাদী হিসেবে মানুষঃ

মানুষের আচরণের আর একটি দিক হলো মানুষ কোন না কোনোভাবে যুক্তিবাদী। অর্থাৎ যেকোনো কাজে বা যেকোনো বিষয়ে মানুষ তার নিজস্ব দাঁড় করাতে অভ্যস্ত। এটিও একটি আচরণের বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে কোন পথে চললে নিজের লাভটি হবে সর্বাধিক সেইটা নিশ্চিত হয়েই সে সেই পথে পা বাড়ায়।

এছাড়া এখানে আর একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, মানুষ যে যুক্তি নির্ভর তা নয়। বরং সে সর্বদা নিজের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতেই বেশি পছন্দ করে। এটি একধরনের আত্মরক্ষা বা আত্মতৃপ্তি বোধক কৌশল। শিল্প কারখানা গুলোতেও আচরণ পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, শ্রমিক কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কাজের ব্যাপারে তাদের যুক্তি দিয়ে বিচার করে কাজ করতে চায়। যার ফলে অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের কোনো নিয়ম নীতির সাথে তাদের যুক্তির মিল হয় না বলেই তারা তা মেনে নিতে অমত প্রকাশ করে।

০৩। জটিল মানুষঃ

মানুষ এর চারনের আর একটি অন্যতম আলোচ্য বিষয় দিক হলো মানুষ বড়ই জটিল প্রকৃতির এবং পাশাপাশি মানুষের আচরণ স্থির নয় বরং সদা পরিবর্তনশীল। কোনো একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত একজন ব্যক্তিগত প্রয়োজনসমূহকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় এবং সময় ও পরিস্থতির সাথে সাথে এ প্রয়োজনবোধ টুকুও জলিতভাবে পরিবর্তিত হয়।

সে মানুষের আচরণ জটিল হওয়ার কারনেই তাকে প্রেষিত করাও খুব কঠিন। সকল মানুষের এক পদ্ধতিতে যেমন প্রেষিত করা যায় না, তেমনি একই পদ্ধতিতে আবার দীর্ঘদিন যাবত প্রেষণা দেয়া সম্ভব হয় না। এজন্য ব্যবস্থাপনাকে প্রেষণাদানের নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হয়।

০৪। অলসতাঃ

মানুষের আচরণ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে অধিকাংশ ব্যক্তির মদ্ধের অলসতার একটি প্রবণতা থাকে। কাজ করে ঠিকই তারপরেও অলস সময় কাটাতে অনেকেই পছন্দ করে। তবে যদি যোগ্যতা অনুযায়ী এবং পছন্দ সই কাজ দেয়া হই বা পায়, তবে এ অলসতা ততটা থাকে না। শিল্পক্ষেত্রেও শ্রমিকদের মধ্যে এ দিকটা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। অলসতা মানুষের আচরণের একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক দিক। অনেক মানুষ আছে, যারা কাজকে উপভোগ করে আবার অনেক মানুষ আছে যারা কাজ করার চাইলে অলস সময় কাটানোই বেশি পছন্দ করে।

০৫। সৃষ্টিশীলতাঃ

মানবীয় আচরণের উল্লেখযোগ্য দিকগুলর মধ্যে আর একটি হচ্ছে সৃষ্টিশীল আচরণ। কম-বেশি সকল মানুষের মধ্যে কোনো কোনো দিকে সৃষ্টিশীল গুণাবলী বা বৈশিষ্ট থাকে। যা সুযোগ সুবিধা উপযুক্ত কর্মপরিবেশ ইত্যাদি পেলে প্রস্ফুটিত হয়। মানুষের আচরণের সৃষ্টিশীল দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি যত বেশি ব্যক্তির মধ্যে থাকবে, ততই ভালো। কারণ সৃষ্টিশীল আচরণের দ্বারা অনেক নতুন নতুন কাজ করা সম্ভব।

শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক কর্মীরা সৃষ্টিশীল আচরণের অধিকারী বলে এবং তা প্রকাশের সুযোগ পেলে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে তারা অনেক অবদান রাখতে সক্ষম। সেজন্য ব্যবস্থাপনারও উচিত হবে সংগঠনের সৃষ্টিশীল কর্মী খুঁজে বের করা এবং তাদেরকে সৃষ্টিশীল কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। যাতে তারা তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ লাভ হয়।

(তথ্যসুত্রঃ বিবিএ (অনার্স) প্রথম বর্ষের হিসাববিজ্ঞান ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ব্যস্থাপনার নীতিমালা থেকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here