ব্যবস্থাপকের বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী
ব্যবস্থাপকের বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী

ব্যবস্থাপক বা চিন্তাবিদগণের দেয়া ব্যবস্থাপকের গুণাবলী ও যোগ্যতাকে একত্রিত করে এবং বর্তমান বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে একজন সফল বা আদর্শ ব্যবস্থাপকের যেসব গুণ থাকা প্রয়োজন তাকে নিম্নোক্তভাবে চিহ্নিত করে নিম্নে আলোচনা করা হয়েছে।

০১। শিক্ষা ও প্রশিক্ষনঃ

ব্যবস্থাপকের ব্যবস্থাপনা সামগ্রিক কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। এজন্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত হওয়া আবশ্যক। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া, উৎপাদন, হিসাবরক্ষণ, যোগাযোগ, বাজারজাতকরণ, অর্থনীতি বিষয়ক জ্ঞানের অধিকারী হতে পারে না। আনুষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহনের মাধ্যমে লব্ধ তত্ত্বমূলক জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের জন্য এবং এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা আবশ্যক।

০২। দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতনতাঃ

একজন আদর্শ ব্যবস্থাপক তার নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞানের অধিকারী হবেন এবং এ সম্পর্কে তিনি সচেতন থাকবেন। একজন আদর্শ ব্যবস্থাপক দায়িত্ব ও কর্তব্যের সংজ্ঞা জানবেন এবং তিনি দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে কোন সংঘাত যাতে না ঘটে সে বিষয়ে অবশ্যই সচেতন থাকবেন।

০৩। দূরদর্শিতাঃ

ব্যবস্থাপককে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং প্রতিনিয়ত নানা রকম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। ভবিষ্যৎ সর্বদা অনিশ্চিত এই অনিশ্চিত পরিস্থিতির জন্য কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে যত নির্ভুল অনুমান করবেন তিনি তত সাফল্যের সাথে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কার্য সম্পাদন করতে পারবেন। একজন আদর্শ ব্যবস্থাপকের মধ্যে ভবিষ্যতের নির্ভুল অনুমান করার গুণ থাকা আবশ্যক। একজন দূরদর্শী ব্যবস্থাপককে একজন আদর্শ ও সফল ব্যবস্থাপক বলা হয়ে থাকে।

০৪। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতাঃ

ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ অর্থাৎ ব্যবস্থাপকদের একটি অন্যতম বড় গুণ হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। নেতাকে যেমন সব ধরনের পরিস্থিতি অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে হয় তেমনি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক নেতাকে সব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মত ধৈর্য থাকতে হবে। তাকে অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে। জটিল ও সমস্যা সংকুল পরিবেশ তিনি অত্যন্ত ধীর স্থির চিত্তে বিভিন্ন দিক চিন্তা ভাবনা করে সমস্যা মোকাবেলা করবেন। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা তার চলার পথের পাথেয় হবে।

০৫। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতাঃ

ব্যবস্থাপককে প্রচুর মানসিক ও শারীরিক শ্রম দিতে হয়। যে কারনে তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা দরকার। সুস্থ দেহে সুন্দর মন বিরাজ করে। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে ব্যবস্থাপকগণ মানসিকভাবে অনেকখানি সুস্থ থাকতে পারেন। ব্যবস্থাপককে প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় ব্যয় করতে হয় এবং শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকলে দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে সক্ষম হবে না। আর যেহেতু ব্যবস্থাপকগণকে সিদ্ধান্তমূলক এবং নির্দেশনামূলক কর্মকাণ্ডে অধিক সময় ব্যয় করতে হয় বলে তাদেরকে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা আবশ্যক।

০৬। সততা ও নৈতিকতাঃ

একজন আদর্শ ব্যবস্থাপক অবশ্যই সৎ ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হবেন। সততা ও নৈতিকতাহীন ব্যবসায়ী প্রকৃত ব্যবসায়ী নন, তিনি নীতিহীন তস্কর হিসেবে চিহ্নিত হন। অর্থাৎ ব্যবসায়ী স্বল্পমেয়াদে সফল হলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা বিলীন হয়ে যাবে। সৎ ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ব্যবস্থাপক কর্মীদের নিকট অনুসরনীয় ব্যক্তিতে পরিণত হন এবং তাদের পরিচালিত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সুনাম সমাজের সক্ল পর্যায় ছড়িয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থাপকগন সমাজে সকলের নিকট সমাদৃত হন।

০৭। যোগাযোগ নৈপুণ্যঃ

ব্যবস্থাপকগণ তাদের কর্মসময়ের বড় অংশ যোগাযোগ করে ব্যয় করেন। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কর্মীদের সাথে এবং প্রতিষ্ঠানের বাইরে সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষের সাথে ব্যস্থাপকগণ যোগাযোগ রক্ষা করেন। যোগাযোগ যদি উপযুক্ত মানসম্পন্ন এবং যথা সময়ে না হয় তাহলে সেরূপ যোগাযোগ থেকে আশানুরূপ ফলাফল অর্জন সম্ভব হবে না। প্রতিষ্ঠান অভ্যন্তরে পরিকল্পনা প্রণয়ন, নির্দেশনা, সমন্বয়, প্রেষণা, নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ব্যবস্থাপকীয় কর্ম যোগাযোগ প্রক্রিয়া মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। সুতরাং যোগাযোগের কাজতি যত নিপুনভাবে সম্পাদিত হবে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনের পথও তত সুগম হবে। তাই ব্যবস্থাপকের জন্য যোগাযোগ নৈপুণ্য অর্জন আবশ্যক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here