দাঁত সুস্থ রাখার উপায়
দাঁত সুস্থ রাখার উপায়

আপনি কি দাঁত সুস্থ ও সুন্দর রাখার উপায় গুলো জানেন? দাঁত কিভাবে পরিষ্কার ও ভালো রাখা যায়, কিভাবে দাঁতের হলদে ভাব দূর করা যায়, দাঁতের যত্ন নেওয়ার উপায়, দাঁতের গোড়া শক্ত করার এবং সবশেষে দাঁত ঝকঝকে সাদা করার উপায় গুলো সঠিক জানা আছে কি আপনার? যদি না জানা থাকে, তাহলে এই অণুচ্ছেদটি আপনাকে সবকিছু সঠিকভাবে জানাতে যতেষ্ট পরিমাণে সাহায্য করবে। অর্থাৎ আপনি এখানে জানতে পারবেন দাঁত সুস্থ, সুন্দর ও সাদা রাখার ১০ টি কার্যকর উপায়। তাহলে শুরু করা যাক –

আমরা সবাই জানি সুন্দর হাসির জন্য সুন্দর দাঁতের প্রয়োজনীয়তা অতুলনীয়। সুস্থ, সুন্দর ও সাদা দাঁত সবাইকেই অনেক আকর্ষণীয় করে তুলে, সঠিক? তাহলে আপনার দাঁত কি সুস্থ, সুন্দর ও সাদা আছে? যদি আপনি ভালো করে সঠিক উপায়ে দাঁত পরিষ্কার করে থাকেন এবং আপনার দাঁত সুস্থ ও সুন্দর থাকে, তাহলে ভালো। যদি সবকিছু ঠিক না থাকে তাহলে নিচের ১০ টি উপায় আপনার জন্য কার্যকর হতে পারে।

প্রথমেই জেনে নেই, দাঁত সুস্থ, সুন্দর ও সাদা রাখার গুরুত্ব।

দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়া সব কাজের মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ। দাঁতে ব্যাথা থাকলে অথবা দাঁত অপরিষ্কার থাকলে, দেখতে অসুন্দর লাগলে ভালো করে সবার সাথে কথা বলতে পারবেন না। আপনি যদি নিজেকে উন্নত করতে চান, তাহলে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। যেমনঃ শরীর সুস্থ রাখা, সময় নিয়ন্ত্রণ করা ও উপযুক্ত ব্যবহার করা, সবসময় সেরাটা দিয়ে কাজ করা এবং আরও কিছু।
এইগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সুস্বাস্থ্য। অর্থাৎ যদি আপনার স্বাস্থ্য যদি ভালো না থাকে, তাহলে কিছুই করতে পারবেন না। দাঁত ও শরীরের একটা বড় অংশ তাই এটি সুস্থ, সুন্দর রাখাও কিন্ত খুব জরুরি। যদি দাঁত ভালো না থাকে, অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের পোকার দ্বারা কোন একটা নষ্ট হয়ে যায় বা দাঁতে হলুদে ভাব থাকে তাহলে কিন্ত আপনাকে দেখতে যেমন অসুন্দর লাগবে ঠিক যতেষ্ট পরিমাণে ব্যাথা সহ্য করতে হবে। ফলে কথা বলার সময় আপনাকে খুব অসহ্য লাগবে, বিভিন্ন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং আপনার উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করবে।
তাহলে কেনই বা দাঁতের সঠিক যত্ন নিবেন না এবং সাদা ঝকঝকে, সুস্থ ও সুন্দর রাখবেন না।

দাঁত সুস্থ, সুন্দর ও সাদা রাখার ১০ টি উপায়

০১। প্রতিদিন ২ বার করে দাঁত ব্রাশ করুন।
০২। দাঁত আলতো করে ও ভালো ভাবে মাজুন।
০৩। দাঁতকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করুন।
০৪। অ্যালকোহলমুক্ত মাউথ্ওয়াশ ব্যবহার করুন।
০৫। খাবারের পর দাঁত পরিষ্কার ও ফ্লসিং করুন।
০৬। প্রতিদিন কিছু সময় পর মুখ কুলকচি করুন।
০৭। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
০৮। কিছু ক্ষতিকর খাবার বর্জন করতে হবে।
০৯। দাঁত সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
১০। কয়েক মাস পর পর ডেন্টাল চেক আপ করাতে হবে।

০১। প্রতিদিন ২ বার করে দাঁত ব্রাশ করুন।

আমরা দাঁতের যত্নে এতটাই অবহেলিত যে ঠিকভাবে ব্রাশ ও করি না। প্রতিদিন কমপক্ষে ২ বার দাঁত ব্রাশ করতে হবে। এবং অবশ্যই একবার রাতের খাবারের পর অর্থাৎ ঘুমানোর আগে এবং সকাল ঘুম থেকে উঠে একবার ভালো করে ব্রাশ করা উচিত। এছাড়া আপনি ইচ্ছা করলে প্রতিবার বারি খাবারের পর, অর্থাৎ সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের পরও দাঁত ব্রাশ করতে পারেন। এতে করে দাঁতের চিপায় বিভিন্ন খাদ্য কণা দূর হয়ে যাবে খুব সহজেই এবং দাঁত সুস্থ, সুন্দর, সাদা ও পরিষ্কার থাকবে।
তাড়াহুড়া না করে ৩/৪ মিনিট ধরে হালকা ভাবে ঘুরিয়ে ব্রাশ করা উচিত। ভালোমানের টুথব্রাশ ব্যবহার করুন এবং প্রতি ২/৩ মাস পর পর টুথব্রাশ পরিবর্তন করুন। না হলে দাঁতের ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকবে।

০২। দাঁত আলতো করে ও ভালো ভাবে মাজুন।

সবকিছুরই ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম থাকে। আর সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারলেই ভালো ফল পাওয়া সম্ভব অন্যথায় ভালো কিছুর চেয়ে খারাপ ও হয়ে যেতে পারে। দাঁত মাজার ব্যপারে ও বিভিন্ন কিছু নয়। আপনাকে অবশ্যই সঠিক ভাবে দাঁত মাজতে হবে, না হলে পরিস্কার বা ভালোর চেয়ে আরও ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ তাড়াহুড়া করে বেশিক্ষণ জোরে ব্রাশ করা উচিত না, মারি ফুলে যেতে পারেন, মানসম্মত ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে, এবং ২/৩ মাস পর পর ও ব্রাশের ফাইবার গুলো বেঁকে যাওয়ার পর পরিবর্তন করা উচিত।
এবং কয়লা, গুল, টুথ পাউডার, ছাই, মাটি ও গাছের ডাল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এইগুলো দাঁতের বিরাট সমস্যা তৈরি করতে পারে।

০৩। দাঁতকে সঠিক ভাবে ব্যবহার ও রক্ষা করুন।

হ্যাঁ, দাঁতকেও সঠিক ভাবে এবং সঠিক জায়গায় ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই দাঁত সুস্থ, সুন্দর ও সাদা থাকবে। বোতলের মুখ খোলা, বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট ছেঁড়া বা শ্যাম্পু ছেঁড়ার কাজটি, অনেকেই দাঁত দিয়ে করে থাকে। এইটা করা যাবে না, দাঁতের গঠন নষ্ট হয়ে যেতে পারে, জোরে ছুট পেলে রক্তও চলে আসতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত শক্ত খাবার বা শক্ত হাড় বেশি কামড়ানো যাবে না।
এবং এরই সাথে অবশ্যই দাঁতকে বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে হবে। যেমন অনেক সময় বিভিন্ন খেলাধুলা করতে গিয়ে, ফিটনেস ভালো রাখতে জিম করে গিয়ে এবং অনেক কষ্টকর কাজ করতে গিয়ে অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। তখন যদি দাঁতে আঘাত লাগে, ভেঙ্গে ও যেতে পারে। তাই সবসময় এইসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

০৪। অ্যালকোহলমুক্ত মাউথ্ওয়াশ ব্যবহার করুন।

০৫। খাবারের পর দাঁত পরিষ্কার ও ফ্লসিং করুন।

০৬। প্রতিদিন কিছু সময় পর মুখ কুলকচি করুন।

০৭। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং ব্যবহার করার সময় ও খেয়াল রাখবেন, যেন পানি বিশুদ্ধ থাকে। পিরিমিত পানি খেয়ে শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এবং বেশি বেশি পানি বিশুদ্ধ পান করলে দাঁতও যতেষ্ট পরিষ্কার ও ভালো থাকে।

০৮। কিছু ক্ষতিকর খাবার বর্জন করতে হবে।

কিছু খাবার আছে শুধু শরীরেরই ক্ষতি করে না, দাঁতের ও যতেষ্ট পরিমাণে ক্ষতি করে। বিভিন্ন ধরনের সিগারেট, জর্দা ও তামাক জাতীয় খাবার দাঁতের রঙ নষ্ট করে ফেলে, দাঁতের হলদে ভাব হয়ে যাই। অর্থাৎ দাঁত নষ্ট করার জন্য এই খাবার গুলো বেশি ভূমিকা রাখে। এইগুলো শুধু দাঁত ও মুখই না শরীরের ও ক্ষতি করে। এছাড়া শর্করা জাতীয় খাবার ও বর্জন করা উচিত। দাঁতের যত্নে সবসময় সীমিত হারে শর্করা ও সোডা জাতীয় খাবার খুব কম খাওয়া উচিত।

০৯। দাঁত সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

এমন কিছু পুষ্টিকর খাবার আছে, যেগুলো দাঁতের মাড়ি ফুলা বা ব্যথা দূর করা সহ পরিষ্কার, সুন্দর ও ঝকঝকে সাদা করতে যতেষ্ট সহায়তা করে। ভালো ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার প্রত্যেকটা মানুষকে সুস্থ রাখতে বিরাট ভূমিকা রাখে। তাই দাঁত সুস্থ ও সাদা রাখার জন্য নিয়মিত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবারের বেশ দরকার আছে। মাড়ি সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত শাক সবজি যেমন লাল শাক, পালং শাক, পুই শাক, গাজর, টমেটো, শশা ও লেবু খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়া আপেল, পেয়ারা, কমলা ও মাল্টা পানি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। আপেল ও পেয়ারা ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে অনেকটা টুথব্রাশের মতোই কাজ করে, যা দাঁত সুস্থ রাখার পাশাপাশি পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। উপরের খাবার গুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, ফলে দাঁত সুস্থ, সুন্দর ও ভালো রাখতে।

জেনে নিন, দাঁতের সৌন্দর্য ও মাড়ি শক্ত করার ১০ টি স্বাস্থ্যকর খাবার। এখানে কিল্ক করুন!

১০। কয়েক মাস পর পর ডেন্টাল চেক আপ করাতে হবে।

অনেকেই আছে ৫/৬ মাস পর পর ডাক্তারের কাছে স্বাস্থ্য চেক আপ করার জন্য বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যাই। কিন্ত দাঁতের ব্যাপারে একবারেই অনীহা। যখন দাঁত থেকে রক্ত পড়ে, দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, নষ্ট হয়ে যায় অথবা ব্যথায় গাল ফুলে যায় তখনই আমরা ডাক্তারের কাছে যাই। এইটা ঠিক না বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কয়েক মাস পর পর ডেন্টাল চেক আপ করাতে হবে। দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝার চেষ্টা করুন। আবার দাঁতের সমস্যা দূর করতে অনেকে বাসায় চেষ্টা করেন। এইটা ভুলেও করবেন না একটু ভুলের কারনের, অনেক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই সবারই উচিত নির্দিষ্ট কয়েক মাস পর পর ডেন্টাল চেক আপ করা, ফলে ডেন্টিস্টদের পরামর্শে দাঁত সুস্থ, সুন্দর ও সাদা করতে পারবেন সহজেই।

শেষকথাঃ

সবসময় মনে রাখবেন, প্রত্যেকটা জিনিসের সাথেই সঠিক ও ভালো ব্যবহার করা উচিত। তাহলেই সবকিছু ঠিক থাকবে। আমাদের জন্য দাঁত একটা মূল্যবান সম্পদ। চেয়ারার সৌন্দর্যের ও মুখের হাসি ভালো লাগার জন্য অবশ্যই আপনাকে দাঁতের পরিচর্যা করতে হবে, ভালো করে যত্ন নিতে হবে। তাহলেই কিন্ত দাঁত সুস্থ, সুন্দর ও সাদা থাকবে। যদি ধাপে ধাপে উপরের ১০টি খুব গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকারী উপায় গুলো সম্পন্ন করতে পারেন, তাহলে দাঁত সুস্থ, সুন্দর ও সাদা রাখতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

জেনে নিন, শরীরের যত্ন নেওয়ার জন্য ১০টি পরামর্শ, এখানে ক্লিক করুন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here