পেয়ারার উপকারিতা
পেয়ারা

পেয়ারার উপকারিতা এককথায় অতুলনীয়। দেশী ফলগুলোর মধ্যে পেয়ারা একটি জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু ফল। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই পেয়ারা প্রচুর পাওয়া যায়। কিছু কিছু জেলাতে পেয়ারা বাগান করে চাষ করা হয়। প্রায় সবাই পেয়ারা খেতে পছন্দ করি। কারণ এটি রুচিশীল, খেতে অনেক ভালো লাগে ও যথেষ্ট সুস্বাদু। এছাড়াও এটিতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, এবং আরও অন্যান্য পুষ্টিগুণ। শরীরের জন্য বেশ উপকারি একটি ফল।

নিয়মিত পেয়ারা খেতে পারলে, শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য এটি বিরাট ভূমিকা রাখে। পেয়ারার উপকারিতা অনেক তবে নিচে পেয়ারা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

পেয়ারা খাওয়ার ১০টি উপকারিতা

০১। ওজন কমাতে সহায়তা করে।
০২। ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।
০৩। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
০৪। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
০৫। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
০৬। ত্বক সুস্থ রাখতে সহায়তা রাখে।
০৭। পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
০৮। হার্টের সমস্যা কমায়।
০৯। চুল ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।
১০। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

০১। ওজন কমাতে সহায়তা করে।

পেয়ারার উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ওজন কমানো। পেয়ারা ওজন কমাতে যথেষ্ট সহায়তা করে। ওজন কমানোর জন্য অনেকেই কত ধরনের উপায় যে অবলম্বন করে, বলার আর অপেক্ষা রাখে না। কিন্ত মজার ব্যাপার হচ্ছে, সবচেয়ে সহজ উপায় গুলো অনেকেই জানে না। কিছু খাবার আছে যা ওজন কমাতে বিরাট ভূমিকা রাখে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেয়ারা। নিয়মিত একটি করে পেয়ারা খেলে শরীরের অতিরিক্ত ওজন খুব সহজেই কমানো যেতে পারে। কারণ পেয়ারাতে গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকে আর তাই ওজন কমানোতে এটি বেশ ভাল একটি প্রতিষেধক। তারজন্য, অবশ্যই নিয়মিত ভালো মানের ১/২টি পেয়ারা ধুয়ে পরিষ্কার করে খেতে হবে। ১/২ মাসের মধ্যেই ভালো ফল পাবেন। এটি ওজন কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায়।

ওজন কমানোর ৭টি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকারী উপায় জানতে, এখানে কিল্ক করুন!

০২। ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।

বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার থেকে মুক্তি পেতে হলে নিয়মিত ভালো ও সুস্বাদু পেয়ারা খাওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ পেয়ারা ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে থাকে বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সার কমাতে অনেক সাহায্য করে। তাছাড়া, প্রতিদিন ১টি পেয়ারা খেলে মেয়েদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। কারণ এটিতে রয়েছে ভিটামিন সি, লাইকোপেন (Lycopene), কোয়ারকেটিন (Quercetin), এবং আরো কিছু পলিফেনল আছে যা কিনা শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে অনেক কাজ করে। এবং এই এন্টি-অক্সিডেন্ট বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কমাতে বিরাট সহায়তা করে থাকে। তাই আপনার শরীর থেকে যদি বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে বিশেষ করে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে চান, তাহলে প্রতিদিন ১/২টি করে পেয়ারা খাওয়া উচিত।

০৩। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

অনেক চিকিৎসকরা ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য অন্যান্য উপায় ও খাবারের পাশাপাশি পেয়ারা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। কারণ ডায়াবেটিস কমাতে বা প্রতিরোধে এটি ভালো ভূমিকা রাখে। ১৯৮৩ সালে American Journal of Chinese Medicine প্রকাশ করেন যে, পেয়ারার রসে থাকা বিভিন্ন উপাদান ডায়াবেটিস মেলাইটাসের চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। তাছাড়া পেয়ারাতে ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে এটি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ যতেষ্ট পরিমাণে নিয়ন্ত্রণে থাকে আর এর ফলেই ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুকি কিছুটা কম থাকে। তাই আপনি যদি নিয়মিত ১/২টি পেয়ারা খেতে পারেন, তাহলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা খুব কম থাকবে এবং যাদের আছে তাদের ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

০৪। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

পেয়ারার সবচেয়ে বড়, গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকারী উপকার হচ্ছে এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। কারণ এটিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে। প্রতিদিন ১টি ভালো মানের বড় পেয়ারা পরিষ্কার করে খেলে শরীরের সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম এর ব্যালান্স বাড়াতে সহায়তা করে থাকে যা কিনা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। যাদের উচচ রক্তচাপ আছে তাদেরকে ডাক্তাররা সোডিয়াম ও পটাশিয়াম যুক্ত খাবার খেতে বলেন। আর এইগুলো পেয়ারাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে যা কিনা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা রাখে। যদি আপনার উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তাহলে নিয়মিত পেয়ারা খেতে পারেন।

০৫। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে পেয়ারার গুরুত্ব অপরিসীম। চোখের সুরক্ষায় আপনি নিয়মিত অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি পেয়ারা খেতে পারেন। এই ফল খেলে, চোখ সুস্থ্য থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করে। কারণ পেয়ারায় আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ যার ফলে এটি খেলে আমাদের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী। তাছাড়া এটি খেলে চোখের ছানি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। তাই দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে অবশ্যই পেয়ারা খাওয়া উচিত, বিশেষ করে ছোট শিশুদের পেয়ারা ফল খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত, যেন তাদের চোখের জ্যোতি ভালো থাকে।

১০টি স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে জানতে, এখানে ক্লিক করুন!

০৬। ত্বক সুস্থ রাখতে সহায়তা রাখে।

ত্বক সুস্থ সতেজ রাখতে পেয়ারা খেতে পারেন। কারণ এটিতে প্রায় ৮১% পানি থাকে। অর্থাৎ প্রতিদিন ১টি পেয়ারা খেলে দেহ পানিশূন্যতার থেকে রক্ষা পায়, ফলে ত্বক সুস্থ সতেজ ও কোমল থাকে। পেয়ারাতে রয়েছে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি, এটি ত্বকের কোলাজেন টিস্যুর সুরক্ষাতেও যতেষ্ট কাজ করে। পেয়ারা ত্বককে ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ ত্বক সুস্থ, সতেজ রাখতে ও পেয়ারা ভুমিকা অতুলনীয়।

০৭। পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

পাকস্থলী সুস্থ রাখার জন্য পেয়ারার উপকারিতা এক ও অনন্য। আপনি কি পাকস্থলী সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে নিয়মিত পরিষ্কার কাঁচা পেয়ারা খেতে পারেন, কিছু দিন পর দেখবেন সমস্যা অনেকটায় সমাধান হয়ে যাবে। নিয়মিত পেয়ারা খেলে পেট, লিভার, পাকস্থলী পরিষ্কার রাখে। এটি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করার সাথে সাথে অন্যান্য অংশগুলোও ভালো রাখে। অর্থাৎ পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পেয়ারার ভূমিকা অনন্য।

০৮। হার্টের সমস্যা কমায়।

অনেকেরই হার্টের সমস্যা হয়ে থাকে এবং বর্তমানে এই রোগীর সংখ্যা প্রচুর। হার্টের সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের সঠিক দিক নির্দেশনা ও কার্যকরী পরামর্শ নিতে হবে। আর প্রাকৃতিকভাবে যদি কিছুটা সমধান করতে চান অথবা হার্টের সমস্যায় যেন না পড়তে হয়। তাহলে আপনাকে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অর্থাৎ হার্টের সমস্যা কমানোর জন্য কার্যকরী খাবার রয়েছে আর সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেয়ারা। নিয়মিত পেয়ারা খেলে হার্টের সমস্যা অনেকখানি কমে যাবে।

০৯। চুল ভালো রাখতে ভূমিকা রাখে।

আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি পেয়ারার উপকারিতা অনেক। হ্যাঁ, চুল ভালো রাখতে ও কাঁচা পেয়ারা ভূমিকা যথেষ্ট। পেয়ারার মধ্যে রয়েছে আশ্চর্যজনক পুষ্টি উপাদান, রয়েছে পর্যাপ্ত বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ক্যারোটিনয়েডস, ফোলেট, পটাশিয়াম ও আরও উপাদান রয়েছে। এছাড়াও পেয়ারায় কমলার চেয়ে ৪গুণ বেশি ভিটামিন সি আছে। সবকিছু মিলে শরীরের যত্নের ও ভালো রাখার জন্য পেয়ারা বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই চুলের যত্নে নিয়মিত পেয়ারা খেতে পারেন অনেক কাজে দিবে।

১০। বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। এরজন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার, যা নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর মধ্যে পেয়ারা ও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ পেয়ারা ফলে থাকা ভিটামিন সি, এ, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়ামও আরও অনেক ধরনের উপাদানের কারণে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here