pornography

তথ্য প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে সারা পৃথিবী এখন সকলের হাতে মুঠোয় চলে এসেছে, সাথে সাথে পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। স্কুল পড়ুয়া ছোট ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝেও আসক্তির মাত্রা প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে। সারা বিশ্বে পর্ণো দর্শক বেড়েছে চলেছে । অনেকে আবার  পর্ণো দেখাটাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন, যা নেশায় বা আসক্তিতে পরিণত হয়ে গিয়েছে। কখনো কখনো তা সম্পর্কচ্ছেদের করুণ পরিণতিতে গিয়ে ঠেকছে। নিয়মিত পর্ণোগ্রাফিতে মত্ত হয়ে নিজের অজান্তেই নিজের ক্ষতির করে ফেলছেন অসংখ্য পুরুষ ও নারী। 

চলুন জেনে নেয়া যাক পর্ণোগ্রাফি আসক্তির শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিকর দিকগুলো এবং কিভাবে পর্নোগ্রাফির ভয়াবহ ছোবল থেকে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন।

পর্ণোগ্রাফি আসক্তির কুফলঃ  

  • পর্ণো আসক্তি আপনার কামশক্তিকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়।গবেষণায় দেখা গেছে অতিরিক্ত পর্ণো দেখার ফলে উত্তেজিত হওয়ার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো পর্ণোগ্রাফিক ভিডিওগুলো ধারণ করা হয় হাই-ডেফিনিশন ক্যামেরায় যার ফলে নিয়মিত পর্ণ ছবি দেখতে দেখতে বাস্তব জগৎ ছেড়ে আপনি  ফ্যান্টাসির  দুনিয়াতে চলে যাবেন। কিন্তু বাস্তব জীবনে আপনার সঙ্গীকে এইভাবে দেখতে পারবেন  না ফলে আপনার সঙ্গীর প্রতি আকর্ষণ কমে যাবে এবং সহজে উত্তেজিত হবেন না এইভাবে  পর্ণো আসক্তরা ফ্যান্টাসি দুনিয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে  বাস্তব জীবনের সুখ শান্তি হারায়।
  • পর্ণো আসক্তির ফলে আপনার মস্তিষ্কের গ্রহণ ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা গবেষনায় দেখেছেন যে পর্ণোগ্রাফি মানুষের স্মরনশক্তি কমিয়ে দেয়, চিন্তাশক্তি হ্রাস করে, অমনোযোগী করে, ডিপ্রেসশন বাড়িয়ে দেয় এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এবং একাকি থাকার প্রবণতা বেড়ে যায় এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে ।
  • মাত্রাতিরিক্ত পর্ণো দেখার ফলে পুরুষদের সাধারণ নারীদের প্রতি বিতৃষ্ণা চলে আসে। ফলে পর্ণোতে দেখা মডেলদের মত আকর্ষনীয় দেহ এবং চেহারা কে বাস্তবের নিজের সঙ্গীর সাথে মেলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পর্ণো ভিডিওতে  ব্যবহৃত নারীদের সৌন্দর্য্য মূলত প্লাস্টিক সার্জারী, কড়া মেকাপ এবং এডিটিং এর অবদান।বাস্তবে জীবনে সেগুলোর সাথে মিল না পেয়ে পর্ণো আসক্তরা হতাশ হয়ে পড়ে। ফলে বৈবাহিক জীবনে স্ত্রীর সাথে মিলনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে । 
  • নিয়মিত পর্ণো দেখতে থাকলে সাথে সাথে মাস্টারবেশন বা হস্ত মৈথুনের অভ্যাস হয়ে যায় যা আর এক ভয়ঙ্কর অভ্যাস। মাত্রারিক্ত হস্ত মৈথুনের ফলে নানান রকম স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া হস্ত মৈথুনের ফলে যৌন জীবনেও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। 

পর্ণো আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলেঃ

  • প্রথমত পর্ণো আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে সবার আগে আপনাকে মনস্থির করতে হবে যে আমি আর পর্ণো দেখবো না। মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে । নিজের মনকে কন্ট্রোল করতে পারলেই মুক্তি পেতে পারেন এই ভয়াল আসক্তি থেকে এবং মনে মনে এই ব্যপারে নেগেটিভ ধারনা পোষণ করতে হবে তাহলে আপনি অর্ধেক এগিয়ে গেলেন।
  • দ্বিতীয়ত যে কাজটি করতে হবে সেটা হলো স্মার্ট ফোন , ল্যাপটপ, ট্যাব থেকে সকল প্রকার পর্ণোগ্রাফিক ছবি , ভিডিও আছে সেগুলো ডিলিট করে ফেলুন কারণ আপনি নিজে নিজে যতই মনস্থির করুন যে দেখবেন না যদি আপনার কাছে কালেকশন থাকে তাহলে দেখা হইয়েই যাবে। তাই হাতের কাছে যাতে না পাওয়া যায় সে জন্য সকল প্রকার ভিডিও ,ছবি ডিলিট করে ফেলুন।
  • আপনার ওয়েব ব্রাউজার থেকে পর্ণো সাইটগুলো ব্লক করে দিন এবং পাশাপাশি গুগল সার্চের Safe search অপশন টি এনাবল করে দিন। ব্রাউজার থেকে পর্ণো সাইটের বুকমার্ক ও ব্রাউজার হিস্টোরি ক্লিয়ার করে দিন। পিসি বা ল্যাপটপ এমন স্থানে রাখবেন যেন কেউ রুমে ঢুকলে দৃষ্টিগোচর হয়। এক কথায় আপনি ইচ্ছা করলেও যেন পর্ণো সাইটে প্রবেশ করতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করে ফেলুন।
  • সবসময় রুমের দরজা খোলা রেখে কম্পিউটার ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ রুমের দরজা বন্ধ থাকলে কম্পিউটার বা ল্যাপটপে কাজ করার সময় হটাত করেই মনের মধ্যে পর্ণো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার ইচ্ছা জাগতে পারে। অথবা কোনো ওয়েবসাইট ব্রাউজের সময় পর্ণো এ্যাডভার্টাইজমেন্ট দেখেও ইচ্ছে করতে পারে। 
  • ঘরে একা একা ল্যাপটপ মোবাইল নিয়ে সময় কাটানোর চেয়ে নিজেকে অন্য কোন প্রোডাক্টিভ কাজে নিয়োজিত করার চেষ্টা করুন যেটা আপনার ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করবে। যখনি পর্ণো দেখতে মন চাইবে সাথে সাথে উঠে পড়ুন এবং নিজেকে অন্য কোন কাজে ব্যস্ত করে ফেলুন। ঘরের থেকে বাইরে বেশি সময় কাটাতে চেষ্টা করুন। কম্পিউটার এবং মোবাইলের স্ক্রিনের সামনে সময় কমিয়ে আউটডোর লাইফে সময় বেশি দিন। খেলাধুলা করুন এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিন। ব্যস্ত সময় কাটাতে চেষ্টা করুন। আর যদি ঘরে সময় কাটাতেই হয়, তবে একা একা রুমে বসে না থেকে পরিবারের মানুষদের সাথে গল্প করুন অথবা ঘরের কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। কারণ আমরা সবাই জানি অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা। বেশিরভাগ মানুষ ই মূলত নিজের অলস সময় কাটাতে পর্ণো দেখা শুরু করে এবং ধীরে ধীরে সেটা আসক্তিতে পরিণত হয়। 
  • নিজের মনকে কন্ট্রোল করার আরেকটি কার্যকরী উপায় হলো মেডিটেশন করা। প্রতিদিন মেডিটেশনের অভ্যাস গড়ে তুলুন তাহলে দেখবেন নিজের মনকে যে দিকে নিবেন সেদিকেই যাবে । মেডিটেশন না পারলে ইন্টারনেটে প্রচুর ভিডিও পাবেন সেখান থেকে শিখে নিতে পারেন এটা আহামরি কোন কঠিন কাজ নয়। নিয়মিত মেডিটেশন করলে আপনার মন শান্ত থাকবে এবং মনের উপরে নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। মন আপনাকে চালাবেনা, আপনিই মন কে চালাবেন।
  • পর্ণো দেখার প্রতি কোন কোন জিনিস গুলো আপনার মনকে ট্রিগার করে বা উৎসাহ প্রদান করে  সেগুলো খুঁজে বের করুন। সেটা হতে পারে কোনো ভিডিও গান, পিসিতে থাকা ক্বণ ভিডিও গান কিংবা অন্য কোনো মডেলের ছবি যা দেখার সাথে সাথে আপনার ভেতরে লাস্টি মুড তৈরি করছে। খুঁজে বের করার পর সেগুলোকে ল্যাপটপ/পিসি থেকে ডিলিট করুন এবং এই টাইপ যতগুলো জিনিস আছে যা আপনাকে পর্ণো  প্রতি আকৃষ্ট করে সেগুলো থেকে দূরে থাকুন।
  • সব শেষে, ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলার চেষ্টা করুন। যেমন মুসলমান ধর্মের অনুসারীরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করুন , কারণ নামায আদায় করলে আপনার মন শান্ত এবং পরিশুদ্ধ থাকে। একবার সাহাবারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -কে জানালো, অমুক সাহাবী বিভিন্ন ধরনের খারাপ কাজে লিপ্ত পড়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তখন সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন, সে কি এখনো নামাজ আদায় করে? সবাই বলল, হ্যাঁ, সে এখনো নামায আদায় করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তখন সাহাবাদের বললেন, সে যদি নামাজ পড়তে থাকে তাহলে নামাজ তাকে অবশ্যই একদিন খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। (মুসনাদে আহমাদ ২/৪৪৭)। কাজেই আমরা নামাযের গুরুত্ব বুঝতে পারছি। তাই নামায আদায় করলে পর্ণোগ্রাফির মত খারাপ কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারবেন ইনশাল্লাহ। 

আপনি যে ধর্মের অনুসারীই হোন না কেন, নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন এবং ধর্মীয় উপাসনাতে মনোযোগ দিলে মনের পরিশুদ্ধি এবং পবিত্রতা বেড়ে যাবে। আপনি যদি ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন পর্ণোগ্রাফির ভয়াল আসক্তি থেকে নিজেকে খুব সহজেই দূরে রাখতে পারবেন।

নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষ মাত্রই আকর্ষণ, কিন্তু সেই কৌতূহল মেটাতে গিয়ে নিজেকে শারীরিক-মানসিক হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন না তো ? আরেকবার ভেবে দেখুন ,পর্ণোগ্রাফির আসক্তি কী ভয়ংকর সব ক্ষতি করছে আপনার! পর্ণোর  ভয়াল মোহ থেকে নিজেকে বের করে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে একজন সুন্দর মনের মানুষ উপহার দিন। 

এই লেখাটা অনেকের মনে হতে পারে শুধুর মাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কিন্তু না এই লেখাটা সকল বয়সের মানুষের জন্য । এছাড়া বাবা-মা  শিক্ষকদের উচিত শিশু কিশোরদের পর্ণোগ্রাফির ভয়াবহতা সম্পর্কে জানানো । 

পরিশেষে , আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনি এই লেখাটি শেষ করেছেন । আরও ধন্যবাদ নিজেকে চেঞ্জ করবার উদ্যোগ নিয়েছেন । ধন্যবাদ আপনার এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুজছেন । আপনি নিজেকে সুস্থ্য মস্তিষ্কের মানুষ হিসাবে গড়ে তুলে এই সমাজ ও দেশকে একজন সচেতন নাগরিক উপহার দিচ্ছেন। 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here