একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার
একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার

বর্তমানে সাফল্য যেন একটা সোনার হরিণ, সফল হতে কেইবা না চাই। কিন্ত সফল হওয়ার জন্য যা যা করা দরকার আমরা কি সেগুলো আদৌ করছি নাকি শুধু স্বপ্নও দেখেই যাচ্ছি। স্বপ্ন দেখা ভালো, তবে সেই সাথে সঠিক পথে যথেষ্ট পরিশ্রমও করা প্রয়োজন। শুধু অযথা পরিশ্রম করলেই হবে না, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা এবং পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্টলি পরিশ্রম করতে হবে।

যারা সফল হয়েছেন, তাদের সম্পর্কে অবশ্যই জানা প্রয়োজন। কিভাবে শুরু করেছে তাদের এই অবিস্মরণীয় যাত্রা, কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং কিভাবে সমস্যা সমাধান করে দুর্গম পথ পারি দিয়ে সাফল্যের উচ্চ স্থরে পৌঁছিয়েছেন? এই বিষয় গুলো সম্পর্কে আপনি যত বেশি জানবেন ঠিক তত আপনার কঠিন পথটা সহজ হবে, এবং তত বেশি সফল হওয়ার সম্ভবনা থাকবে।

যারা কঠিন পথকে সহজ করে সফল হয়েছে, তাদের জীবন খুবই আনন্দময়। সফলতার মূলমন্ত্র আমাদের শিক্ষা দেয়, “সফলতা আসবেই, সফলরা হাসবেই।” সবাই চায় জীবনে ভালো কিছু করতে, বড় হতে, সবার কাছে সম্মান পেতে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সবাই।  সফল হতে চাইলে, জীবনকে ভালোকরে জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই সফলতার গল্প প্রতিনিয়ত পড়া উচিত।

একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটারের গল্প

আজকে এমন একজন মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো, যিনি একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার এবং সফটওয়্যার বিজনেসম্যান, থাইল্যান্ডে গড়েছেন নিজের অফিস। অসাধারণ, স্মার্ট এবং একজন সফল উদ্যোক্তা বলা চলে, তিনি প্রযুক্তি খাতে যথেষ্ট কাজ করেছেন এবং কাজ করে যাচ্ছেন।

একজন সফল ডিজিটাল মার্কে
প্রাইভেট জেটে ঘোরাঘুরি

তাহলে চলুন জেনে আসি, কিভাবে একজন সফল সফটওয়্যার বিজনেসম্যান ও ডিজিটাল মার্কেটার হলেন। সফলতার গল্প শুনার জন্য ট্রেন্ডি বাংলা থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রেখেছি এবং তিনি যথেষ্ট সুন্দর ভাবে সাড়া দিয়েছেন।

আপনার সংক্ষিপ্ত পরিচয় এবং বর্তমানে কি কি নিয়ে কাজ করছেন?

ওবায়দূর রহমান আমার নাম, কিশোরগঞ্জ জেলায় বেড়ে উঠা। আমি সেখান থেকেই এসএসসি এবং এইচএসসি দিয়ে ঢাকা থেকে HNd – Higher National Diploma in Accounting, CAT- Certified Accounting Technician এবং ACCA- Association of Chartered Certified Accountants Part 2 কমপ্লিট করেছি।

বর্তমানে আমি Platinum IT Co. (Thailand) কোম্পানির CEO. থাইল্যান্ডে আমার অফিস এবং এছাড়াও আমি সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছি ফুলটাইম।

আপনার কাজের সেক্টরে কতটা সফল?

আমি আসলে কাজের সেক্টর কে নির্দিষ্ট করে বলতে পারিনা। আমি মনে করি অনলাইন প্রতিটা সেক্টর এই কাজ করার মত মানসিকতা এবং দক্ষতা দরকার । সেই হিসেবে আমি আমার অনলাইন কাজের সব ধরনের সেক্টর হিসেব করে এভারেজ ৫০ ভাগ সফল। সফলতার আসলে বর্তমান সময়ে কোন মাপ কাঠি নাই। তাই আমি সব সময় বলবো আমি ৫০ ভাগ সফল। আমার কাছে সফলতা হচ্ছে ট্রেন স্টেশন যা কিনা একটার পর একটা আসতেই থাকবে যদি আপনি মনোযোগ দিয়ে কাজ চালিয়ে যান। আর যদি আপনি মনে করেন কোনরকম কাজ করলেই হল তাহলে আপনি শুধু স্টেশন দেখেই যাবেন কিন্তু সেখানে আর নামতে পারবেন না।

কিভাবে আপনি আজকের পজিশনে আসতে পেরেছেন?

আমি অনেক ধরনের প্রফেশান নিয়েই কাজ করেছি। আমি সময়ের সাথে সাথে প্রফেশান এর সেক্টর পরিবর্তন করেছি। ২০০৮ সালে প্রথম অনলাইন কাজের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করি এর পর থেকে প্রচুর সময় দিতে হয়েছে।
প্রথম শেয়ার মার্কেট দিয়ে শুরু তারপর অনেকগুলো অনলাইন কোর্স করে শুরু করলাম টেকনিক্যাল এনালাইসিস এর উপর ট্রেনিং দেয়া। এরপর মনে হল এফিলিয়েট মার্কেট নিয়ে কাজ করতে হবে। সেটা ও শিখা শুরু করলাম।

সেই থেকে মাথায় চিন্তা আসলো আমাকে অনেক বন্ধু বানাতে হবে। যা বুঝতে পেরেছি বাইরের দেশের বিশেষ করে ইউরোপ, আমেরিকা এইসকল দেশের বন্ধু বানাতে হবে আমাকে। এবং তাদের সাহায্য নিতে হবে। আসলে কারো সাহায্য ছাড়া কোন কাজই সফলতার সাথে করা সম্ভব না।

আমি অনেক অভাব টানা পুরুন সবই ফেস করেছি। কিন্তু আমি সবসময় হাসিমুখেই ফেস করেছি সব কিছু। কারন আল্লাহ তালা ধৈর্যশীলদের পছন্দ করেন, আর হাসি মুখে কথা বলাও হচ্ছে ইবাদত এর সামিল। তাই খারাপ সময়ে সব কিছু হাসিমুখে ধৈর্যধরে ফেস করেছি।

 

একজন সফল ডিজিটাল মার্কে
থাইল্যান্ডে গড়েছেন নিজের অফিস

১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা ও কখনও কখনও কাজ করতে হয়েছে। এর পর একসময় ভাল কিছু বন্ধু পেয়ে যাই । ওরা সবাই ইউরোপিয়ান। ওদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে থাইল্যান্ড এ একটি সফটওয়্যার কোম্পানি দিতে সক্ষম হই। এর পর সেই কোম্পানিতে ৩ জন বন্ধু কে সফটওয়্যার ডেভলাপার হিসেবে পার্টনার করে নেয়ার পর ইউরোপ এর দেশ গুলোকে কাজের জন্যে টার্গেট করি।

প্রথমেই এস্টোনিয়ার বন্ধুর মাধ্যমে বেশ কিছু সিআরএম বেজ সফটওয়্যার এর কাজে নিয়ে আসি। তারপর থেকেই, বাইরের বন্ধুদের রেফেরাল এ কাজ আসতে থাকে। প্রথমে শুধুই মোবাইল এপ নিয়ে কাজ করার প্ল্যান থাকলেও পরে দেখা যায় এপ্লিকেশান টাইপ সফটওয়্যার এর কাজই বেশী আশা শুরু করে।

এনালাইটিকেল টাইপ যেমন ডাটা মাইনিং, অনলাইন এনালাইটিকেল প্রোসেসিং এই টাইপের সফটওয়ার কাজ অর্ডার পাই। কলাবোরেট এবং অপেরেশনাল সফটওয়্যার এর মাঝে মার্কেটিং অটোমেশান, সেলস এবং সার্ভিস অটোমেশান সফটওয়্যার ও বেশ ডিম্যান্ড আছে মার্কেট এ।

আপনি যেই সেক্টরে কাজ করে সফল হয়েছেন, তার ভবিষ্যৎ কেমন?

আমি মেইনলি এখন ডিজিটাল মার্কেটিং এবং সফটওয়্যার সেক্টর টাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। এবং অসাধারণ ভবিষ্যৎ এই সেক্টর এর। দিন দিন মানুষ সফটওয়্যার নির্ভর হচ্ছে এবং আরও হবে, এর পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং করে নিজ ব্যবসা এর ব্র্যান্ডিং করতেই হবে। সেই জন্যে আমি বলবো এই দুইটা সেক্টর এ সবারই কাজ করার জন্যে নিজেদের কে প্রস্তুত করতে চেষ্টা করা যেতে পারে।

একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার
থাইল্যান্ডে নেটওয়ার্কিং তৈরি

সাফল মানুষ হতে কি কি করেছেন, কিভাবে যাত্রা শুরু করেছেন?

সততার সাথে চলা, কথা দিয়ে কথা রাখা, সরাসরি কথা বলা, নিষ্ঠার সাথে কাজ করা, নিজেকে বিশেষ দক্ষতায় দক্ষ করা এবং স্মার্ট ওয়ার্ক এ বিশ্বাস করতে হবে। শুধু একটা ব্যবসায় মনোযোগ দিলে সফলতা আসবেনা এই জন্যে বিভিন্ন ধরনের কাজে দক্ষ হতে হবে। আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ হতে ব্যর্থ হয়ে যান তখন চেষ্টা করতে হবে নেটওয়ার্কিং মেইনটেইন করা। মানুষের সাথে সম্পর্কও এখন এক ধরনের বড় দক্ষতা।

ভবিষ্যতে আপনার প্লান কি, কি কি করতে যাচ্ছেন।

অদুর ভবিষ্যৎ নিয়ে আসলে সত্যি বলতে এখন আমার কোন প্ল্যান নাই। আমি মনে করি সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ আগামী দিনগুলোতে আরও বেশী জনপ্রিয় হবে। তাই এইগুলো নিয়েই আপাতত থাকতে চাই।

সফল ডিজিটাল মার্কেটার
কাজে গভীরভাবে মগ্ন

নতুনদের জন্য কিছু দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দিন।

নতুনদের বলবো এক মিনিট সময় ও নষ্ট করা যাবেনা। মুসলিম হলে নামায পড়তে হবে এবং ধৈর্য নিয়ে কাজে লেগে থাকতে হবে। নিজেকে যেকোনো কাজে খুব ভালোভাবে দক্ষ করতে হবে। আগের মত দেশের মধ্যে চাকুরী করে জীবনধারন করবো, এই ধরনের চিন্তা ভাবনা বাদ দিতে হবে। চিন্তা করতে হবে বিশ্বব্যাপী।

গুগল আর ইউটিউব এর টিউটোরিয়াল দেখেও বিভিন্ন অনলাইন সেক্টর এর কাজে নিজেকে দক্ষ করা সম্ভব। শুধু কাজ শুরু করতে হবে এবং সততার সহিত যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে।
সবার জন্যে শুভকামনা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here