কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ উপায়
কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের উপায় ও সফটওয়্যারের গুরুত্ব

কম্পিউটার ছাড়া আমাদের জীবন কল্পনা করা শক্ত। যখন আমরা কম্পিউটারগুলি বিল পরিশোধ করতে, গেম খেলতে, ইন্টারনেট সার্ফ করার জন্য বা অন্যান্য কাজে অধিক ব্যবহার করি, সেই সময়গুলোতে আমাদের পেশাগত কাজটি করার জন্য কম্পিউটারের প্রয়োজন।

যেহেতু কম্পিউটারগুলি আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তাই সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে এগুলোর যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের উপায় গুলো সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক। আজকে আমরা কম্পিটার ঠিক রাখার উপায় এবং কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণে সফটওয়্যারের গুরুত্ব বিস্তারিত কথা বলব। তো চলুন প্রথমেই জেনে নিই কেন কম্পিউটার ও সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে এবং কিভাবে তা করব।

১। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যাকআপ

শেষবার কখন আপনি আপনার ডেটা ব্যাক আপ করেছিলেন? একটু ভাবুন তো, এখনই যদি আপনার হার্ড ড্রাইভটি নষ্ট হয়, তাহলে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য হারানোর সম্ভাবনা কতটুকু? কতটা ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে আপনাকে যদি এমনটা ঘটে? তাই নিয়মিত একটি ফ্ল্যাশ ড্রাইভে ফাইলগুলি কপি করুন। এটি দ্রুত, সস্তা এবং আপনার প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট সুরক্ষিত। আরেকটি উপায় হল সমাধান আপনি গুগল ড্রাইভ কিংবা ক্লাউডশেয়ারের মত প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন আপনার তথ্য সংরক্ষণের জন্য।

২। এক্সটারনাল হার্ডড্রাইভ ব্যবহার

আপনার কম্পিউটারটির মূল হার্ডড্রাইভ ডাটা দিয়ে ভরে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না, সুতরাং একটি এক্সটারনাল হার্ডড্রাইভ আপনার সমস্ত ডিজিটাল ডাটা জমা করার জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত স্থান সরবরাহ করতে পারে। এক্সটারনাল হার্ডড্রাইভ গুলি হস্তান্তরযোগ্য, সহজেই ব্যবহারযোগ্য ডিভাইস যা যখনই আপনার ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তাৎক্ষনিক স্টোরেজ সরবরাহ করতে পারে। একটি এক্সটারনাল হার্ডড্রাইভ ব্যবহার করার জন্য শুধু একটি মাত্র ক্যাবলের প্রয়োজন হয়। এক্সটারনাল হার্ডড্রাইভ ব্যবহারে সবচেয়ে বড় সুবিধা হ’ল এগুলি অত্যন্ত পোর্টেবল – এগুলি অসংখ্য কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত হতে পারে এবং আপনার অবস্থান নির্বিশেষে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে স্টোরেজ ব্যবহারের সুযোগ দেয়।

৩। কম্পিউটার থেকে ধুলো পরিষ্কার করুন

আমরা সকলেই বেশ ভাল ভাবে জানি যে কম্পিউটার খুব দ্রুত ময়লা টেনে নেয়। এর জন্য মূলত দায়ী এর সাথে সংযুক্ত এয়ার কুলার, যা ময়লা ধুলো কে খুব সহজেই কম্পিউটারের ভেতর টেনে নেয়। এই ধুলো ময়লা, কম্পিউটারের কার্য ক্ষমতা এবং স্থায়ীত্ব হ্রাস করতে পারে। তাই নিয়মিত এটিকে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। এটি করার সবচেয়ে সহজতম উপায় বাতাসের চাপকে কাজে লাগানো। এইজন্য প্রথমে – কেসিংটি খুলুন, বাইরে নিয়ে যান এবং ধুলো ময়লা বাতাসের চাপে পরিষ্কার করুন। কেসিংটির বাহিরের অংশটি একটা শুকনো কাপড় দিয়ে মুছতে পারেন। ঘর পরিষ্কারের যন্ত্রপাতি এই কাজে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন, কারণ তারা সহজেই সার্কিট বোর্ডগুলি নষ্ট করে দিতে পারে। দুই মাস অন্তর অন্তর কম্পিউটার থেকে ধুলো পরিষ্কার করুন।

৪। ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার প্রতিরোধ

কোন কম্পিউটার যা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে তার কিছু প্রকার অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার থাকা দরকার। এক ধরনের প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার হচ্ছে ম্যালওয়্যার। এটি কম্পিউটার অকার্যকর করে দেয়। বেশিরভাগ অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার রিয়েল টাইমে হুমকির জন্য সিস্টেমটি নিয়মিত স্ক্যান করবে, সুতরাং প্রতিদিন পূর্ণ স্ক্যানের প্রয়োজন সাধারণত হয় না। তবে প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি পূর্ণ স্ক্যান চালান এবং ক্ষতিকর ভাইরাস ও ম্যালওয়্যারকে দূর করুন। বাজারে অনেক অ্যান্টিভাইরাস রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, অ্যাভাস্ট, অ্যাডওয়্যার, এভিজ, বিট ডিফেন্ডার, নর্টন বা ক্যাসপারস্কি, ইসেট প্রভৃতি। তাই পছন্দ মতো বা প্রয়োজনীয় ফিচার অনুযায়ী যে কোনো একটি ডাউনলোড করে কম্পিউটারকে ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম অ্যাডওয়্যার এবং স্পাইওয়্যার থেকে সুরক্ষা দেয়, কিন্তু তা সবসময়ের জন্য নয়। তাই সম্ভব হলে টাকা দিয়ে কিনে অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম ব্যবহার করুন।

৫। অপ্রয়োজনীয় ফাইল সরানো

সময় বাড়ার সাথে সাথে আপনার পিসি অস্থায়ী ফাইল, থাম্বনেইলস, ওয়েব পৃষ্ঠাগুলি, পুরানো উইন্ডোজ ইনস্টলেশন এবং আরও অনেকগুলি সহ প্রচুর পরিমাণে অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ভরে যায়। এগুলো ডিস্কের প্রচুর স্টোরেজ দখল করে। ফলে, পিসি ধীর হয়ে যেতে পারে। এজন্য সকল অপ্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় ফাইল মুছে, আপনি আপনার কম্পিউটার এর কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারেন। এছাড়া, প্রয়োজনীয় ফাইল এবং ফোল্ডারলো সাজিয়ে রাখা জরুরী। কারণ, ছড়ানো-ছিটানো বা অসংগঠিত ফোল্ডারগুলো প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো খুঁজে পাওয়াটা কঠিন করে তুলবে। তাই, প্রয়োজনীয় ফাইল এবং ফোল্ডারলো গুছিয়ে রাখুন।

৬। অব্যবহৃত সফটওয়্যার মুছে ফেলুন

প্রতি মাসে, কন্ট্রোল প্যানেলে পাওয়া ‘প্রোগ্রামগুলি যোগ করুন বা সরান’ ইন্টারফেসটি দেখুন। যদি সেখানে কোনও সফ্টওয়্যার থাকে, যা আপনি আর ব্যবহার করছেন না, তবে তা মুছে ফেলুন। একি কথা প্রযোজ্য ব্রাউজারের টুলবার, ফ্রি গেমস এবং অন্যান্য এডঅনসের জন্য। অযথা কম্পিউটারের মূল্যবান স্টোরেজ ভরে রাখা ঠিক না। তাই অব্যবহৃত সফটওয়্যার মুছে ফেলুন। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন, যাতে কিছু সিস্টেম ড্রাইভারের কোন কিছু মুছে না যায়। আপনি যদি এগুলো মুছে ফেলেন, তবে কিছু হার্ডওয়্যার কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে।

৭। নিয়মিত ডিস্ক ডিফ্রাগমেন্ট ব্যবহার করুন

আপনার হার্ড ড্রাইভ একবার পরিষ্কার হয়ে গেলে, ডিফ্র্যাগমেন্ট করার জন্য এটি ভাল সময়। এটি আপনার ফাইলগুলি সংগঠিত করে, দ্রুত ডিস্ক অ্যাক্সেসের সময় এবং সিস্টেমের কার্যকারিতা উন্নত করে। যদি আপনার কম্পিউটার ধীরে ধীরে কাজ করতে থাকে, তাহলে ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্টার চালানোর ফলে এটি দ্রুত গতিতে কম্পিউটারকে কাজ করতে সাহায্য করবে।

৮। নিয়মিত সবকিছু আপডেট রাখুন

কম্পিউটারের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সফটওয়্যার। তাই সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণের উপায় জানা একান্ত প্রয়োজন। আপনার হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যার জন্য আপডেট পরীক্ষা করুন। এগুলি খোজার সবচেয়ে সহজ উপায় হল প্রস্তুতকারকের ওয়েবসাইটে যাওয়া। সেখানের তাদের সাপোর্ট বিভাগে সকল দরকারী আপডেট পাওয়া সম্ভ। যদি আপনার কোনও হার্ডওয়ার বা সফ্টওয়্যার নিয়ে সমস্যা হয়, তবে সেগুলোর ড্রাইভার আপডেট করে নিন। এর ব্যতিক্রম হ’ল মাদারবোর্ড বিআইওএস আপডেট। বায়োস ফ্ল্যাশ করা কঠিন, তাই এক্ষেত্রে পেশাদার মেকানিকের সাহায্য নেয়াই বুদ্ধিমানের মত কাজ হবে।

কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণে সফটওয়্যারের গুরুত্ব বর্ণনা

কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ এক ক্লান্তিকর কাজের মতো শোনাচ্ছে। নিয়ম অনুসারে, বেশিরভাগ অপারেটিং সিস্টেমে ম্যানুয়ালি আপনার সিস্টেমকে কার্যকর করে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু রয়েছে, যা বাস্তবে প্রয়োগ করে আপনার সিস্টেমের সর্বোত্তম পারফরম্যান্সের নিশ্চিত করা সম্ভব। কম্পিউটার গুলির দুর্দান্ত ব্যবহার নিশ্চিত করতে নিরবিচ্ছিন্ন রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন।

অপ্রয়োজনীয় ডেটা পরিষ্কার করা, সফ্টওয়্যারটি আপডেট করা, ক্ষতিকারক প্রোগ্রামগুলি থেকে সিস্টেমকে নিরাপদ রাখা এবং সংযুক্ত হার্ডওয়্যারটির যত্ন নেওয়া বড় কাজ এবং নিয়মিত তা করা উচিৎ। তবে এগুলি সব কিছু কার্যকর করতে কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার ব্যবহার করে করা যেতে পারে। এটি লক্ষণীয় যে কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করলে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ক্ষমতা নষ্ট হয় না, বরং আরো ভাল হয়। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা এবং গতি উন্নত করে। এটির কারণ, কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ সফটওয়্যারগুলো কম্পিউটারকে ভার্চুয়াল বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্তি দেয়। তাই সহজে বুঝা যাচ্ছে যে, কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণে সফটওয়্যারের গুরুত্ব অপরিসীম।

পরিশেষে বলা যায় যে, আজকের ডিজিটাল বিশ্বে কম্পিউটারগুলি আমাদের অবকাঠামো, শিল্প এবং ব্যবসায়িক পরিবেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একই কথা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে প্রযোজ্য, কারণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করি। এটি মাথায় রেখে, কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের উপায় গুলো নিয়া আমাদের নিয়মিত কাজ করা দরকার। কম্পিউটার থেকে সর্বোচ্চ সেবা পাওয়ার আশা করলে এটি অবশ্যই করতে হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যা প্রতিটি কম্পিউটার ব্যবহারকারীর জানা প্রয়োজন। তাই, আমরা কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণের উপর বেশি জোর দিয়েছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here