সামান্য বৃক্ষের দিকে গভীরভাবে থাকিয়ে এর মর্ম ও উদ্দেশ্য গুলো বুঝতে পারলেই আমাদের জীবনকে খুব সহজেই পরিবর্তন করতে পারবো। নিজেকে নিয়ে যেতে পারবো সাফল্যের উচ্চ স্তরে। যারা ভালো কিছু অর্জন করতে চান তাদেরকে অবশ্যই পরিবর্তন হতে হবে, নিজেকে আপডেট রাখতে হবে, দিনের পর দিন উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে।
আমরা অনেকেই বড় হতে চাই, উচ্চ আসরে অবস্থান করতে চাই, কিন্ত সাধারণ মানুষদের কে কষ্ট দিয়ে উচ্চ পর্যায়ে গেলেও এর মধ্যে প্রকৃত শান্তি নেই, থাকবে না তাদের মানুষের ভালোবাসা। আপনি যদি নিজের কাজের পাশাপাশি অসহায় মানুষদের সাহায্য করেন, তাহলে তাদের ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। জীবনটা শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যের ভালোর জন্যও ব্যবহার করুন। সমাজের দুর্বল, অসহায় মানুষদেরকে আত্মত্যাগ ও সহযোগিতা করতে পারলে দেশ সমাজ হবে অনেক উন্নত।
সমাজের জন্য, সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের কি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, তা আধৌ কি জানি? কি ধরনের ও কেন উপকার করা উচিত এবং প্রকৃত মানুষ কিভাবে হওয়া যায়? এইগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
বৃক্ষদের থেকে প্রধানত আত্মত্যাগ ও সহযোগিতা শেখা উচিত।
এইযে আমাদের চারপাশে কত ধরনের বৃক্ষ রয়েছে, সেগুলো আমাদের কি কি উপকারিতা, আত্মত্যাগ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে, তার খবর কি রাখি? একটা জীবনের অর্থ কি, শুধু নিজের সুবিধা, স্বার্থ বুঝে খেয়ে বেঁচে থাকা, অবশ্যই না শুধু নিজের চিন্তা করে প্রকৃতি জীবন গঠন করা যায় না।
আপনি বড় হয়েছেন, এখন পাশের দুর্বল মানুষ গুলোকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্ত আমরা কয়জনই বা করে থাকি। বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু। বৃক্ষ শুধু প্রাকৃতিক শোভাই বর্ধন করে না, মাটির ক্ষয় রোধ করে, বন্যা প্রতিরোধ করে, ঝড় তুফানকে বাধা দিয়ে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবী মরুভূমিতে পরিণত হতো। বৃক্ষ অক্সিজেন সরবরাহ করে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। তাই বৃক্ষকে বলা হয় প্রাণের অগ্রদূত। এইজন্য বৃক্ষদের থেকে আমাদের শেখা উচিত।
কাজী মোতাহার হোসেন চৌধুরী তার জীবন ও বৃক্ষ প্রবন্ধে যা বুঝিয়েছেন –
মানুষকে বিকশিত হতে সাহায্য করাই সমাজের কাজ। পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষই কেবল নিজের জন্য চিন্তা করে। তাই তারা নিজের জীবনকে সার্থক ও সুন্দর করে তোলেই না। বরং অন্যের সারথকতার পথেও বাধা সৃষ্টি করে। এ সমস্ত মানুষ সব সময় অহংকারে মত্ত থাকে। মাঝে মাঝে মানব প্রেমের কথাও বলে, কিন্ত আন্তরিকাশূন্য।
পৃথিবীতে এমন মানুষের সংখ্যা কমিয়ে এদের জাইগায় আনতে হবে উদার হৃদয়ের ব্যক্তি। যাদের উদ্দেশ্য সমাজে কেবল টিকে থাকা নয়, বরং জীবনকে সুন্দরভাবে বিকশিত করা।
লেখকের মতে, এদের জীবনাদর্শের প্রতীক হবে সজীব বৃক্ষ। কারণ মানব জীবনের আর্দশ হিসেবে বৃক্ষের মতো জীবন্ত উপমা আর নেই। বৃক্ষের কাজ শুধু মাটির রস টেনে নিয়ে নিজেকে মোটাসোটা করে তোলা নয়, বৃক্ষকে ফুল ফোটাতে হয়, ফল ধরাতে হয়। মানুষের জীবন গোপন ও নীরব সাধনা দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত, যা আমরা বৃক্ষের মধ্যে দেখতে পাই।
পরের কল্যাণে নিজেকে গড়ে তোলার সাধনা ও চেওনার জন্য বৃক্ষের উদাহরণ দিয়ে লেখক বলেছেন, বৃক্ষের ন্যায় মানুষকেও জগতের কল্যাণে নীরবে ধূপের গন্ধের ন্যায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার সাধনা করতে হবে
তাহলেই প্রকৃত সমাজ গঠন করা যাবে, সুন্দরভাবে সবাইকে নিয়ে বেঁচে থাকা যাবে।