কিভাবে সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করবেন
কিভাবে সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করবেন

আপনি কী সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করেছেন? নাকি এই ব্যাপারে এখনও চিন্তিত আছেন অথবা কোন চিন্তায় করছেন না, কিভাবে সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করবেন বুঝতে পারছেন না? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে এই অনুচ্ছেদটি আপনার জন্য উপযুক্ত, এখানে জানতে পারবেন –

ক্যারিয়ার কী?
ক্যারিয়ার নির্বাচন করার গুরুত্ব?
মাত্র ৫ টি ধাপে ক্যারিয়ার নির্বাচন করার উপায়।
এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও সফল হওয়ার কিছু কার্যকারী ফর্মুলা।

প্রকৃতপক্ষে আমরা অনেকে ভালো করে জানিই না ক্যারিয়ার কী, এইটার গুরুত্ব কতটুকু এবং কিভাবে সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করবো? তাহলে শুরু করা যাক –

প্রথমেই জানি ক্যারিয়ার কী?

কোনো মানুষ তার জীবন বাঁচানোর জন্য যে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে, সেই কাজটাই হচ্ছে তার ক্যারিয়ার।

একটু সহজ ভাষাই যদি বলি, মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য জীবিকা হিসেবে কোন না কোন কাজ করে থাকে। এই কাজ করার মাধ্যমেই কোন একটি বিষয়ে নিজেকে দক্ষ করে তুলে এবং এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জীবিকার পথ হিসেবে বেঁচে নেয়। জীবিকার পথ হিসেবে মানুষ যে কাজটি নির্বাচন করে থাকে, এইটাই হচ্ছে তার ক্যারিয়ার। যেমনঃ একজন ইঞ্জিনিয়ার জীবিকা হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ করে থাকে, ডাক্তার জীবিকা হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করে থাকেন এইগুলোই হচ্ছে তাদের ক্যারিয়ার। এখন আপনার ক্যারিয়ার কোনটা, নির্বাচন করেছেন কী, না করে থাকলে কিভাবে করবেন? নিচের ৫ টি ধাপ দেখুন, সবকিছুই সহজে বুঝতে পারবেন এবং উপযুক্ত একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

ক্যারিয়ার নির্বাচন করার গুরুত্ব?

ক্যারিয়ার জিনিসটা ভালো করে না বুঝার এবং এইটার গুরুত্ব না জানার কারণে, আমরা সঠিকভাবে নির্বাচন করতে পারি না এবং উপযুক্ত সময়ে ভালো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করার গুরুত্ব অনেক, আপনার পুরো জীবন নির্বর করবে এইটার উপর। আপনি ভবিষ্যতে কি ধরনের কাজ করে জীবিকা সংগ্রহ করবেন, কিভাবে পরিবারের জন্য আয় করবেন এবং কোন পজিশনে থাকবেন এই সব কিছুই সঠিক পেশা নির্বাচন করার উপর নির্বর করবে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত অনেকেই আছে যারা এখনও সিরিয়াস ভাবে কোন চিন্তা করছে না ক্যারিয়ার নিয়ে। মনে রাখবেন সফলতার জন্য ভালো একটা ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপনাকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত আপকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

চলুন একটা বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে কারিয়ারের গুরুত্ব বুঝি।

আচ্ছা ধরুন আপনি কি একবারও ভেবে দেখেছেন ১০ বছর পর আপনার পজিশন কি দেখতে চান? ১০ বছর পর আপনি কতটা বড় হতে চান, কতটা সম্মান এবং মানুষের ভালবাসা পেতে চান, কিভাবে বাকি দিন পার করতে চান সবার সাথে বিশেষ করে পরিবারের সাথে? চিন্তা করছেন কি নিজের বাবা মাকে শেষ পর্যায়ে কতটা সুখী রাখবেন এবং সাধারন মানুষের কল্যাণের জন্য ও দেশের জন্য কি করতে চান ? আসলে আমরা এই বাস্তব জিনিস গুলো নিয়ে একবারও ভাবি না, এইজন্যই তো ক্যারিয়ারের গুরুত্ব বুঝি না এবং নিজের জীবনকে প্রতিষ্ঠাও করতে পারি না, ভালো এবং বড় বড় স্বপ্ন দেখতে পারি না।

সবসময় একটা কথা মনে রাখবেন – “জীবনে সবকিছু নিয়ে সুখী থাকার চেয়ে বড় কোন আনন্দ পৃথিবীতে আর কিছু নেই”। তাই সময় নষ্ট না করে, ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিন এবং ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করুন, সুন্দর একটা জীবন কাঁটাতে পারবেন।

ক্যারিয়ার নির্বাচন করার সময় ৫ টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

০১। প্রাথমিকভাবে ব্যাপারটা বুঝা শুরু করুন।
০২। ক্যারিয়ারের সেক্টরগুলো সম্পর্কে ধারণা নিন।
০৩। ভালোবাসার কাজকে নির্বাচন করুন।
০৪। অভিজ্ঞ মেন্টর নির্বাচন করুন।
০৫। কাজে দক্ষ ও পরিশ্রমী হন এবং নতুন কিছু শিখুন।

০১। প্রাথমিকভাবে ব্যাপারটা বুঝা শুরু করুন।

প্রাথমিকভাবে ব্যাপারটা বুঝা শুরু করুন বলতে বুঝাচ্ছি – ক্যারিয়ার কী, এর গুরুত্ব এবং অন্যরা কতটা সিরিয়াস ভাবে ব্যাপারটা নিচ্ছে এবং নিজেকে কিভাবে ভালো একটা পজিসনে প্রতিষ্ঠা করেছে, সফল মানুষরা কিভাবে ক্যারিয়ার প্লানিং এবং ডেভেলপ করেছে, এইসব কিছুর সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা নিয়ে রাখা, সফল মানুষদের ছোট ছোট কৌশল গুলো বুঝা। সবকিছু বুঝার সাথে সাথেই ক্যারিয়ার প্লানিং শুরু করা উচিত।

আপনি একটা কাজ যত আগে শুরু করবেন, দিন দিন কিন্ত এই কাজটা সম্পর্কে তত ধারণা হতে থাকবে। এখনই রির্সাচ করা শুরু করে দেন, বর্তমানে কোন পেশাটির চাহিদা বেশি এবং ৫/৬ বছর পর কোন ফিল্ডের চাহিদা বাড়বে, রিসার্চ করেন সেই কাজের ফিল্ড গুলোর সফলতার মানুষদের কে নিয়ে, তারা কিভাবে শুরু করেছিল, কখন শুরু করেছিল, কিভাবে নিজের স্কিল বাড়িয়েছে এবং ডেভেলপ করেছে এবং কি পরিমাণ সময় ও পরিশ্রম করেছে। এর ফলে আপনার আত্মবিশ্বাস, কাজের প্রতি অনুপ্রেরণা বেড়ে যাবে এবং লেগে থাকার যতেষ্ট ধৈর্য শক্তি পাবেন। তাই আমরা যারা নতুন ভাবে ভালো ও সঠিক একটা ক্যারিয়ার নির্বাচন করবো, প্রথমেই এই ব্যাপার গুলো নিয়ে একটু স্টাডি করা দরকার, ভালো করে রির্সাচ করা প্রয়োজন। ফলে খুব সহজেই উপযুক্ত কাজটি বাছাই করতে পারবেন এবং সফল হওয়ার সম্ভবনা থাকবে।

০২। ক্যারিয়ারের সেক্টরগুলো সম্পর্কে ধারণা নিন।

আপনার জন্য কোন সেক্টরটা উপযুক্ত জানেন কি? কি ধরনের কাজ করতে আপনি বেশি পছন্দ করেন বা কোন কাজে আপনার দক্ষতা আছে, এবং দক্ষতা গুলো কাজে লাগিয়ে কোন সেক্টর গুলোতে আপনার ক্যারিয়ার গঠন করবেন, তার একটা কার্যকরী প্লানিং করতে হবে।

এইজন্য প্রথমেই আপনাকে জানতে হবে- বর্তমানে কি কি ধরনের ভালো পেশা আছে? কোন কাজ গুলো চাহিদা বেশি এবং ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরও বাড়বে? তাহলে দেখে নেন ভালো করে ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা করার কী কী পেশা আছে। বর্তমানে পৃথিবীতে অনেক পেশা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে – আইনজীবী, ডাক্তার, বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, প্রফেসর, জেনেটিক নার্স, কম্পিউটার ফরেনসিক ইনভেস্টিগেটর, অর্থ বিষয়ক পরামর্শক, অভিবাসন বা ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞ। এবং অনলাইনে গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোশন গ্রাফিক্স ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, অনলাইন বা ডিজিটাল মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, থ্রিডি এনিমেশন, গেইম ডেভেলপমেন্ট,ডাটা ডিটেকটিভ, সাইবার সিকিউরিটি ছাড়াও অনেক রয়েছে। তবে অফলাইনে ও অনলাইনের মধ্যে এই পেশা গুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়।

০৩। ভালোবাসার কাজকে নির্বাচন করুন।

বিশ্বের শ্রেষ্ট মনিষীরা সবসময় একটা কথা বেশি বলেছেন, নিজের কাজকে ভালোবাসোন। কাজের প্রতি যদি ভালোবাসা থাকে, তাহলে আপনি ব্যর্থতাকে মেনে নিয়ে আবার কাজ শুরু করার মতো শক্তি পাবেন। ভালবাসা এমন ব্যাপার বা শক্তি, যা কঠিন পরাজয় কেও হার মানাতে পারে। তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ভালোভাবে দেখে নিবেন সেই কাজটিকে আপনার সাথে যায় কিনা, মানে মন থেকে ভালোবেসে কাজটি করতে পারবেন কিনা। আর এই সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে আপনি সাফল্যের একধাপ এগিয়ে যেতে পারছেন খুব সহজে।

০৪। অভিজ্ঞ মেন্টর নির্বাচন করুন।

ভালো এবং অভিজ্ঞ মেন্টর বাছাই করা, জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। বর্তমান সময়ে আপনি যেই কাজই করেন না কেন, তাঁর অবশ্যই বস রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটা সেক্টরে অভিজ্ঞ লোক রয়েছে, আপনাকে অবশ্যই তাদের কাছ থেকে কিছু শিখতে হবে, তাদের কৌশল গুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। এইজন্যই বলা হয়েছে অভিজ্ঞ মেন্টর নির্বাচন করতে। অর্থাৎ আপনার ইচ্ছা যদি থাকে একজন প্রফেশনাল ডিজিটাল মার্কেটার হওয়ার, মানে ডিজিটাল মার্কেটিং এ একজন বিশেষজ্ঞ হওয়া, তাহলে অবশ্যই আপনাকে খুব অভিজ্ঞ ডিজিটাল মার্কেটারের কাছ থেকে স্ট্রেটেজি গুলো ভালো করে শিখতে হবে, তাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। তাইলেই কিন্ত আপনি সঠিক ও উপযুক্ত ব্যাপার গুলো সম্পর্কে ধারণা পাবেন এবং ভালো কিছু করতে পারবেন।

০৫। কাজে দক্ষ ও পরিশ্রমী হন এবং নতুন কিছু শিখুন।

সবাই যে ভালো কিছু করবে, বড় হবে, এইসব নিয়ে চিন্তা করবে, তা কিন্ত নয়, তবে আপনাকে করতে হবে। হ্যাঁ আপনাকে ভালো কিছু করতে হবে সমাজের জন্য দেশের জন্য এবং সাধারন মানুষের কল্যাণের জন্য। অসহায়, দরিদ্র মানুষের জন্য আপনাকে বড় কিছু করতে হবে, টাকা ইনকাম করতে হবে এবং টাকা গুলো ভালো কাজে ব্যবহার করতে হবে। আমরা অনেকেই বলে থাকি – “এমন জীবন করিব গঠন”মরিলে হাসিব আমি,কাঁদিবে ভুবন”। তাহলে কেন বসে আছেন, কেন চিন্তা করছেন না কিভাবে সাহায্য করবেন গরীব, অসহায়, হত দরিদ্র মানুষদেরকে। কেনই বা ক্যারিয়ার ডেভেলপ করছেন না, বড় এবং ভালো কিছুর জন্য উঠে পরে লাগছেন না।

হ্যাঁ অবশ্য সফলতা এত সহজ নয়, ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠা করা ভালো একটা পজিশনে যাওয়া খুব কষ্ট, বিশেষ করে আমার মতো নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে। কিন্ত সম্ভব যদি নিজের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট করেন প্রতিনিয়ত। ক্যারিয়ারকে ভালো করে সাজানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট প্লান করে থাকেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here