ভিডিও গেমসের সুবিধা ও অসুবিধা
ভিডিও গেমসের সুবিধা ও অসুবিধা

কোন কারন ছাড়া আপনার বাচ্চা ভিডিও গেমস পছন্দ করে এটা আসলে সম্ভব নয়। এমন হতে পারে সে হয়তো তার বন্ধুদের সাথে ভিডিও গেমস এর বিভিন্ন সমস্যা এবং সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করে অথবা এমনও হতে পারে যে আপনার বাচ্চা ভিডি গেমসের বিভিন্ন লেভেল গুলো একের পর এক অতিক্রম করে সর্বশেষ লেভেল এ পৌছানোকে অনেক দুঃসাহসিক এবং প্রচন্ড আত্মসম্মানের কাজ মনে করে।

শিশুরা জন্মগত ভাবেই প্রচন্ডরকম কল্পনাপ্রবণ এবং কৌতুহলী। শিশুদের এই বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা মাথায় রেখেই ভিডিও গেমসগুলোর ডিজাইন করা হয়েছে তাদের সহজাত কল্পনা এবং কৌতুহল মেটানোর উপায়ে গেমস গুলোকে তাদের কাছে উপভোগ্য করে তুলতে।

যাই হোক, আপনার শিশুকে ভিডিও গেমসের সাথে পরিচয় করানোর আগে ভিডিও গেমসের সুবিধা এবং অসুবিধা দুটোই আপনার এবং আপনার শিশুর ভালো করে জেনে নেওয়া উচিৎ।
আজকের আর্টিকেলে আমরা ভিডিও গেমস নিয়ে যথাযথ আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

ভিডিও গেমসের সুবিধাঃ

প্রথমেই জানি ভিডিও গেমসের সুবিধা গুলো কি হতে পারে-

১. যে কোন ভিডিও গেমসের প্রতিটি স্তরে বিভিন্ন ধাঁধার সমাধান করে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। এর ফলে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের লজিক ডেভেলপমেন্ট এর বিকাশ হয়।

২. নিউইয়র্কের রচেস্টার ইউনিভার্সিটি বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে, কোন খেলোয়ার যখন কোন খেলা খেলে তখন তার আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে তার বেশ ভালো ধারনা হয়। তেমনি ভিডিও গেমস খেলেও বাচ্চারা খেলার সম্পুর্ন পরিবেশ সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে এবং এর ফলে কখন কোন বিকল্প এবং সর্বোত্তম উপায় টি বের করে তার ব্যবহার করতে হবে এই দক্ষতায় তারা নিজেদের দক্ষ করে তোলে।

৩. মেলবোর্নের ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুসারে প্রিস্কুলের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ভিডিও গেমসের ইন্টারেকশন বাচ্চাদের সুক্ষ্ম মোটর স্কিল বাড়াতে এবং চোখ আর মুখের সমন্বয় প্রক্রিয়াকেও যথেষ্ট তড়ান্বিত করে।

৪.দলীয় অনলাইন গেমস অথবা বিভিন্ন ভিডিও গেমসগুলি বাচ্চাদের এমনকি প্রাপ্তবয়স্ক দের ও সামাজিক হবার, দলীয় কাজ করার এবং যে কোন সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা বাড়ায়।

৫.ভিডিও গেমস নিয়ে ব্যস্ত হলে বিভিন্নরকম স্বাস্থ্য সুবিধা যেমন, শরীর ব্যথা,মানসিক হতাশা, মানসিক ক্ষোভ, আক্রমণাত্মক আচরণ ইত্যাদি অনেক কমে যায়। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান পেইন সোসাইটি এবং যুক্তরাজ্যের কেইল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় এটা প্রকাশ হয়েছে যে ভার্চুয়াল ভিডিও গেমসে অভ্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের হার্ট রেট এবং হতাশার বিভিন্ন রিসেপ্টর বা চ্যানেল আশাজনক উপায়ে পরিবর্তিত হয়।

ভিডিও গেমসের অসুবিধা সমুহঃ

যদিও নিয়মিত ভিডিও গেমস খেলা বাচ্চারা অনেক ইন্টেলেকচুয়াল হয় তবুও ভিডিও গেমসের অনেক নেগেটিভ প্রভাব বাচ্চাদের এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের উপরেও রয়েছে।
চলুন দেখি ভিডিও গেমসের অসুবিধা সমুহ-

১.অনলাইন ভিডিও গেমস খেলার সময় বাচ্চারা বিভিন্ন এগ্রেসিভ অনলাইন কন্টেন্ট দেখার সুযোগ পায়। এসব ভায়োলেন্ট কন্টেন্ট দেখার ফলে বাচ্চাদের বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

২. আঠারো বছরেরও বেশি সময় ধরে “গ্র্যান্ড থিফ অটো” এবং “কল অফ ডিউটি” এর মতো ভিডিও গেমসগুলি বাচ্চাদেরকে অনলাইনে গুলি করার এবং হত্যা করার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যা শিশুর কোমল বিকাশের অন্তরায়।

৩. নিউরোসাইকোলজিস্ট আলভারো বিলবাও এর মতে অনস্ক্রিন যে কোন নতুন প্রযুক্তি আমাদের প্রচণ্ড অধৈর্য্য করে তোলে এবং হতাশা সহ্য করার সহনশীলতা ও অনেক হ্রাস করে। এছাড়া এসব প্রযুক্তি আমাদের মস্তিস্কের এমন এক অংশকে শান্ত করে রাখে আসলে সেটার শান্ত না থেকে নিয়মিত কাজ করা উচিৎ।

৪.যে কোন ভিডিও গেমসের কোন স্তর উত্তীর্ণ হতে পারলে খেলোয়ারদের মস্তিস্কে ডোপামিন নামক এক আনন্দ হরমোন এর নিঃস্বরন বেড়ে যায়। এবং এই ডোপামিনের দীর্ঘমেয়াদি নিঃস্বরণ নিঃসন্দেহে ভিডিও গেমসের প্রতি মানুষের এডিকশন প্রবলবেগে বাড়িয়ে দেয়।

৫. ২০১১ সালের মে মাসে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য ওয়্যারলেস ডিভাইসগুলিকে কে সম্ভাব্য কারসিনোজেন হিসেবে ঘোষনা করে। এসব ডিভাইস সাধারণত এক বৈদ্যুতিক অতীচৌম্বকীয় বিকিরণ নির্গমন করে যেটা আমাদের জন্য কারসিনোজেনিক। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব ডিভাইস কে ক্লাস টু-বি কারসিনোজেন ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্ত করে রেখেছে।

ভিডিও গেমস আসক্তিঃ

ভিডিও গেমসের আসক্তির প্রধান সংবেদনশীল লক্ষন গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, খেলতে না পারলে অস্থিরতায় ভোগা এবং প্রচণ্ড বিরক্ত হওয়া। এছাড়া পরবর্তী সেশনের চিন্তা অথবা পূর্ববর্তী এক্টিভিটির চিন্তায় সবসময় বিভোর হয়ে থাকা।

যাই হোক, ভিডিও গেমস এ ব্যয় করা সময়ের লাগাম টেনে ধরার জন্য যে কোন প্রাপ্ত বয়স্ক অথবা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যা করণীয় তা হলো, প্রথমেই ভিডিও গেমস খেলার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা বেঁধে নিন এবং এই সময়সীমায় মেনে চলার ক্ষেত্রে নিজেকে কঠোর হতে বাধ্য করুন।

দ্বিতীয়ত ফোন, ভিডিও গেমস খেলার ডিভাইস অথবা অন্যান্য অনলাইন ডিভাইস গুলো সব আপনার খাবার রুম আর বেড রুম থেকে দুরে রাখুন। এবং সর্বশেষে অন্যান্য বিভিন্ন কার্যকলাপ যেমন, গান শোনা, প্রার্থনা করা, ব্যায়াম করা, ঘুরতে যাওয়া, বন্ধু অথবা পরিবারের অন্য সকল সদস্যদের সাথে গল্প গুজব করায় বেশী করে নিজেকে ব্যস্ত করুন।

কম্পিউটার গেমস আসক্তিঃ

কম্পিউটার গেম আসক্তি বলতে কম্পিউটারে অতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক গেমস খেলা কে বুঝায়। সত্যিকারের দুনিয়ায় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার পরিবর্তে একজন এডিক্টেড কম্পিউটার খেলোয়ার সবসময়ই কম্পিউটার গেম নিয়ে ব্যস্ত থাকে।আসক্ত খেলোয়ার প্রায়শই নিজেকে পরিবার এবং সমাজের অন্য সকল সদস্যদের থেকে দুরে রাখে। পরিবারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার পরিবর্তে সে ব্যস্ত থাকে কম্পিউটার গেমসে তার র‍্যাঙ্কিং ,উচ্চতর মর্যাদা এবং সফলতার চিন্তা নিয়ে।

কম্পিউটার গেমস এর আসক্তির চিকিৎসা এখনো তেমন প্রতিষ্ঠিত নয়।যাই হোক, ওয়ান টু ওয়ান কাউন্সেলিং এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পরামর্শ এখানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

কম্পিউটার গেমস এ আসক্ত একজন খেলোয়ারের একজন সাইক্রিয়াটিস্টের পরামর্শ নেওয়া অতীব জরুরী । একজন সাইক্রিয়াটিস্ট ভুক্তভোগীর সাথে বিস্তারিত কথা বলে তার আসক্ত হওয়ার লেভেল এবং রিকোভার করার পর্যায় ও ভালো বুঝতে পারবেন।

গেমস এপসঃ

বছর কয়েক আগেও ভিডিও গেমস খেলার জন্য আমাদের সিডি ইউজ করতে হতো। কিন্তু প্রযুক্তি নিত্য নতুন আপডেট হওয়ার সুবাধে বিভিন্ন গেমস এপসগুলো এখন সিডি ইনপুট না করেও, মোবাইল বা কম্পিউটারে গেমস খেলার এক কার্যকরী উপায় আমাদের করে দেয়। প্রতিবছর অসংখ্য গেমস এপস বাজারে বের হচ্ছে। সেলফোন গুলোর বিস্তৃত প্রসার, কাস্টমারদের প্রচুর চাহিদা গেমস এপস ডেভেলপারদের দের আরো বেশী করে গেমস এপস ডেভেলপ করার জন্য প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে যাচ্চে। এমনও দেখা গেছে, শুধুমাত্র গেমিং এর জন্য বিভিন্ন গেমস এপস এর সুবিধা সহ কোন কোন সেলফোন এর ফিচার করে সেটা বাজারে উন্মুক্ত করা হয়েছে।

প্লে স্টোর গেমসঃ

এটি আপনার অ্যান্ড্রয়েড চালিত ফোন, ট্যাবলেট বা অ্যান্ড্রয়েড টিভি ডিভাইসের জন্য অ্যান্ড্রয়েড গেমস এপস স্টোর।
গুগলের অফিসিয়াল এই স্টোর এপস থেকে আপনি কম সময়ে, এবং নিরাপদে বিভিন্ন গেমস এপসগুলো ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

পরিশেষে, ভিডিও গেমস আসক্তি একটি ভয়াবহ মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধি যা অনেকের জীবনে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। একটি ভিডিও গেমস আসক্ত লোকের পক্ষে সাধারণত ১০ ঘন্টার বেশি গেমিং এ ব্যস্ত থাকা খুবই স্বাভাবিক , যা সাধারণত বেশীরভাগ রাত্রেই হয় এবং এজন্য অনেকে না ঘুমের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ও ভোগেন।

একজন ভিডিও গেমসে আসক্ত ছাত্র বা ছাত্রীর পড়াশোনা ঠিকমতো হয় না যার ফলে পড়াশোনা মাঝ পথে বন্ধ হয়ে স্কুল বা কলেজ থেকে ঝরে পরার সম্ভাবনা ও থাকে।
উন্নত বিশ্বে এমনও নজীর আছে, অতিরিক্ত ভিডিও গেমস আসক্তির জন্য স্বামী স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদ ও হয়ে গেছে।

ভিডিও গেমস আসক্তি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সমস্যার মধ্যে এখন আর সীমাবদ্ধ নেই, বরংচ এটি এখন একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধির মত নীরবে এক সকরুণ ধ্বংসের পথে আমাদের ক্রমশ টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তাই, এই ধ্বংস থেকে পরিত্রাণ পেতে এখনই আমাদের সবার সর্বোচ্চ সচেতন হওয়ার সময় এসেছে।

আরও জানুন –

অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার সুবিধা অসুবিধা ও ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে জেনে নিন

সঠিক উপায়ে গুগলে সার্চ করার নিয়ম

এন্ড্রয়েড ফোনের সকল সমস্যার সমাধান ও ১০টি টিপস

3 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here