রাত জেগে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কুফল
রাত জেগে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কুফল

বর্তমান সময়ে মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী হলো মোবাইল ফোন। আমরা একবেলা না খেয়ে থাকতে রাজি আছি কিন্তু নিজের প্রানপ্রিয় মোবাইলটি ছাড়া এক মুহূর্ত নিজেদের কল্পনাও করতে পারি না।

এর কারণ হলো মোবাইল আমাদের প্রিয়জনের সাথে যোগাযোগ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে এবং মোবাইল এখন শুধু আর যোগাযোগের মাধ্যম নয় মোবাইল এখন বিনোদনের এক বিশাল মাধ্যম হিসবে দাড়িয়েছে। গেমস খেলা, ভিডিও দেখা এইসব ব্যপার মোবাইলের মাধ্যমে খুবি সহজেই করা যাচ্ছে। যার কারণে বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীরা ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল ব্যবহার করে ধীরে ধীরে চরম আকারের মোবাইল আসক্ততে পরিণত হচ্ছে। অথচ তারা জানেই না এই অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার করার ফলে তাদের মস্তিষ্ক, মন ও শরীরের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি রাত জেগে থাকে তারা মানসিক অবসাদ গ্রস্থ হয়ে পরছে এমনকি মানসিক বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রাত জেগে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলোঃ

১। ঘুম আসা বাধাগ্রস্ত করেঃ

অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের মধ্যে পাইনিল গ্ল্যান্ড থেকে মেলাটোনিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ হয় যার ফলে ঘুম আসা বাধাগ্রস্ত হয়। এইজন্যে বিশেষজ্ঞরা  পরামর্শ দিয়েছে যে , ঘুমানোর প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা আগে সব ধরণের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে বিরত থাকা উচিত।

২। দেহ ঘড়ির স্বাভাবিকতায় ছন্দপতন হয়ঃ 

অতিরিক্ত রাত জেগে মোবাইলফোন ব্যবহার  করলে দেহ ঘড়ির স্বকীয়তায় ছন্দপতন হয় যার ফলে দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপ  ব্যহত হয় এর ফলে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয় তা হয় দীর্ঘমেয়াদি। মানুষের শরীরের একটি প্রাকৃতিক ছন্দ রয়েছে, যার ছন্দ হচ্ছে রাতে ঘুম আর দিনে কাজ। রাতে জাগার ফলে হরমোন পরিবর্তন, দেহের তাপমাত্রায় রদবদল, মেজাজ ও মস্তিষ্কের কাজকর্মে ব্যাপকভাবেদেখা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

৩। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়ঃ

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একটি জার্নালে  বলা হয়েছে, একজন সুস্থ মানুষ প্রতি ৯০ মিনিট পর পর ঘুমের গভীর থেকে গভীরতর ধাপের দিকে যায়। যার মধ্যে সবচেয়ে গভীর ঘুমের সময় মানুষের ফিজিওলজিক্যাল পরিবর্তন আনে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অনিয়মিত ঘুমের কারণে ঘুমের ধাপে বিঘ্ন ঘটে, ফলে মানুষ গভীর ঘুমের ধাপ পর্যন্ত যেতে পারে না। ফলশ্রুতিতে মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়

৪। চোখের সমস্যাঃ

রাত জেগে লম্বা সময় ধরে মোবাইলফোন ব্যবহার করলে মোবাইল স্ক্রিনের নীল আলো সরাসরি চোখের উপর পড়তে থাকে। যে কারণে চোখে যন্ত্রণা হতে পারে। আর দীর্ঘদিন ধরে এরকম হলে কমে যেতে পারে আপনার মূল্যবান দৃষ্টিশক্তি। মোবাইল ফোনের নীল আলো রেটিনার কর্মক্ষমতা হ্রাস করে যার ফলে আপনি স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।

৫। মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়ঃ

কিশোর কিশোরীরা পড়াশুনো বা অন্যান্য কাজ বাদ দিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলা, ফেসবুকে চ্যাটিং, গেমিং করতে ব্যস্ত থাকে ।গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে  কিশোর কিশোরীরা দীর্ঘ সময় মোবাইলফোন ব্যবহার করে তারা মানসিক তীব্র চাপ ও ক্লান্তিতে ভোগে। যার ফলে নানারকম মানসিক ব্যাধি দেখা যেতে পারে।

৬। স্নায়বিক ঝুঁকিঃ

রাত জেগে মোবাইলফোন ব্যবহারের ফলে স্মার্ট ফোন থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রশ্নি বিচ্ছুরিত হয় যা মস্তিষ্কের  কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। মস্তিষ্কের কোষগুলো ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকলে স্নায়বিক সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিবে। 

রাত জেগে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কুফল
রাত জেগে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কুফল

উপরোক্ত সমস্যগুলো ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের সমস্য দেখা দিতে পারে যেমনঃ  

  1. পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট  হতে পারে 
  2. কিশোর-কিশোরীদের লেখাপড়ায় অমনোযোগীতা বেড়ে যেতে পারে
  3. মাথা ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে
  4. অল্প বয়সে দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া
  5. চোখ দিয়ে পানি ঝরা
  6. ডায়াবেটিসের আশঙ্কা থাকে
  7. হার্টের সমস্যা দেখা যেতে পারে
  8. মেজাজ খিটখিটে থাকা
  9. সকালে ঘুম থেকে উটতে না পারা

তাই রাত জেগে মোবাইলে চ্যাটিং বা মোবাইল ঘাটাঘাটি করার অভ্যাস যদি আপনারও থেকে থাকে তাহলে আজই এই অভ্যাস ত্যাগ করুন। গবেষকদের মতে ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ২ থেকে ৩ ঘন্টা আগে সকল প্রকার ডিজিটাল ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন।

আশা করি রাত জেগে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে বিস্তারিত ও প্রয়োজনীয় তথ্য জেনেছেন।

আরও জানুন –

রাত জেগে কাজ করলে কি খাওয়া উচিত

স্মৃতি শক্তি কমে যাওয়ার ৭টি কারণ

পড়ার সময় ঘুম তাড়ানোর সহজ ৫টি উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here